আইবিএ ভর্তি পরীক্ষা: গণিত অংশে ভালো করবে যেভাবে

জাওয়াদুল ইসলাম

ছবি: সংগৃহীত

প্রস্তুতির শুরু যেভাবে
ব্যক্তিগত কিছু কারণে বেশি সময় নিয়ে আমি আইবিএর প্রস্তুতি নিতে পারিনি। আমাকে দুই মাসের মধ্যে প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল। আমি জানতাম বিষয়টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই প্রতিদিন কমপক্ষে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা পড়ার চেষ্টা করতাম। সময়ের হেরফের হলেও আমি ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করেছি

গণিত অনুশীলন শুরু করি মেন্টরসের প্রশ্নব্যাংক থেকে। বেশির ভাগ বিষয় আগে থেকেই শেখা ছিল, আর নতুন বিষয়গুলো ইউটিউব থেকে দেখে নিতাম। টপিক লিখে ভিডিও সার্চ দিলেই অনেক উপকারী ভিডিও চলে আসে। মেন্টরসের প্রশ্নব্যাংক ভালোভাবে শেষ করলেই গণিতের অনেকখানি এগিয়ে যায়। এ ছাড়া GRE/GMAT Nova Math Bible অনেক উপকারী একটা বই। জ্যামিতি এখান থেকে অনুশীলন করেছিলাম।

কোনো অঙ্ক ভুল করে থাকলে সেই অঙ্ক বারবার অনুশীলন করতাম। মাঝে মাঝে স্টপওয়াচ দিয়ে স্পিড মাপতাম। এভাবে অনুশীলন করলে পরীক্ষার হলে কোন ধরনের অঙ্কে কতটুকু সময় লাগতে পারে তার একটা ধারণা পাওয়া যায়। গণিতে বেশি সময় নেওয়া বা তাড়াহুড়ো করা—দুটোই সমস্যা তৈরি করতে পারে। ভারসাম্য বজায় রেখে সমাধান করতে হবে। আর মাথায় রাখতে হবে, পরীক্ষায় সব অঙ্ক সমাধান করতে যাওয়া ঠিক না। যে অঙ্কগুলো করতে বেশি সময় লাগবে বা একটু কঠিন, সেগুলো শেষের জন্য রাখা বা বাদ দেওয়া উচিত।

প্রশ্নের ওপর খসড়া
অঙ্ক করার সময় পরীক্ষার প্রশ্নের ওপর খসড়া করতে হয়, সেখানে জায়গা অনেক কম থাকে। তাই একদম ছোট হাতে খসড়া করার অনুশীলন থাকতে হবে। ছোটখাটো ভুল হতে পারে এমন অঙ্ক দ্রুত চেক করে নিতে পারো। কিছু অঙ্ক আছে, যেগুলোয় অপশনের মান প্রশ্নের শর্তে বসালেই উত্তর মিলে যায়। পরীক্ষার হলে ক্যালকুলেটর নেওয়া যাবে না—এটা মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। আসলে মূল কথা হচ্ছে অনুশীলন। যত বেশি অনুশীলন করবে, তত বেশি ভয়ভীতি কমবে। এতে করে কোন অঙ্কে কীভাবে করতে হয়, সেটাও বোঝা যায়।

অনুশীলনের সময় বুঝে-শুনে, স্বল্প সময়ে সলভ করার অভ্যাস গড়া অনেক বেশি জরুরি। অল্প কয়েকটা অঙ্ক করেই তুমি প্রশ্নের প্যাটার্ন বুঝতে পারবে। প্রশ্নব্যাংকের সব অঙ্ক আলাদা ধরনের না। প্রতিটি অধ্যায়েই কিছু একই ধরনের অঙ্ক থাকে। সেগুলো বের করে অনুশীলন করা জরুরি।

আরও পড়ুন

আইবিএর ভাইভায় এগিয়ে থাকবে যেভাবে

পরীক্ষার হলে করণীয়
লিখিত পরীক্ষায় খেয়াল রাখতে হবে প্রতি বিষয়ে আলাদা আলাদা পাস এবং প্রতিবছর পরীক্ষার ধরনের ওপর নির্ভর করে পাস নম্বর ওঠানামা করে। উদাহরণস্বরূপ, গণিতে পাস নম্বর ২৫-এ ১২ হতে পারে, যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারকেরা দেখেন যে ১২-এর বেশি পাস নিলে তাঁরা যথেষ্ট ছাত্রকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য নিতে পারছেন না। পাস নম্বর কত হতে পারে এটা বোঝার সঠিক উপায় হচ্ছে মডেল টেস্ট দেওয়া। আমি গণিতের প্রশ্ন দেখে ভেবেছিলাম পাস নম্বর ২৫-এ ১৩/১৪ হবে। ওভাবে পরীক্ষা দিয়ে ১৮-২০টা উত্তর করেছিলাম। এভাবে একটা হিসাব করা ভালো।

নেগেটিভ মার্কিং আছে
পরীক্ষার হলে সাবধানে কাজ করা জরুরি। বেশি দাগাতে গিয়ে অনেকে এত বেশি ঝুঁকি নিয়ে ফেলে যে ফেল করে বসে। আইবিএ ভর্তি পরীক্ষায় নেগেটিভ মার্কিং আছে। তাই ভুল হলে সেটা বিরূপ প্রভাব ফেলে। আবার বেশি সাবধান হয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়ে স্বল্পসংখ্যক প্রশ্নের উত্তর করলে শেষের সারিতে নম্বর চলে আসতে পারে, যেটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

অন্যান্য পরীক্ষার তুলনায় এখানে সময় ব্যবস্থাপনা এবং প্রশ্নের উত্তর করার ক্রম খুব বেশি প্রভাব ফেলে। তাই কোন বিষয়ে কতটা সময় লাগছে, তার হিসাব রাখা খুব দরকার। যদি ঠান্ডা মাথায় আগে অঙ্কগুলো করে ফেলতে পারো, তাহলে আগে সেটাই করো। আর যদি মনে হয় যে আগে সহজ বিষয়গুলো করবে, তাহলে সেটাও করতে পারো। কিন্তু কোনো বিষয় যদি মনে হয় বেশি সহজ এসেছে এবং সেটার ৯০ শতাংশ উত্তর করতেই পারো; সে ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে বাকি বিষয়গুলোতেও পাস নম্বর তুলতে হবে।

জাওয়াদুল ইসলাম, ২য় স্থান অধিকারী, ঢাবি আইবিএ ২০২১-২২

অনুলিখন: ফরিদা আক্তার রুবি

আইবিএ ভর্তি পরীক্ষা: গণিত অংশে ভালো করবে যেভাবে

জাওয়াদুল ইসলাম

ছবি: সংগৃহীত

প্রস্তুতির শুরু যেভাবে
ব্যক্তিগত কিছু কারণে বেশি সময় নিয়ে আমি আইবিএর প্রস্তুতি নিতে পারিনি। আমাকে দুই মাসের মধ্যে প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল। আমি জানতাম বিষয়টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই প্রতিদিন কমপক্ষে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা পড়ার চেষ্টা করতাম। সময়ের হেরফের হলেও আমি ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করেছি

গণিত অনুশীলন শুরু করি মেন্টরসের প্রশ্নব্যাংক থেকে। বেশির ভাগ বিষয় আগে থেকেই শেখা ছিল, আর নতুন বিষয়গুলো ইউটিউব থেকে দেখে নিতাম। টপিক লিখে ভিডিও সার্চ দিলেই অনেক উপকারী ভিডিও চলে আসে। মেন্টরসের প্রশ্নব্যাংক ভালোভাবে শেষ করলেই গণিতের অনেকখানি এগিয়ে যায়। এ ছাড়া GRE/GMAT Nova Math Bible অনেক উপকারী একটা বই। জ্যামিতি এখান থেকে অনুশীলন করেছিলাম।

কোনো অঙ্ক ভুল করে থাকলে সেই অঙ্ক বারবার অনুশীলন করতাম। মাঝে মাঝে স্টপওয়াচ দিয়ে স্পিড মাপতাম। এভাবে অনুশীলন করলে পরীক্ষার হলে কোন ধরনের অঙ্কে কতটুকু সময় লাগতে পারে তার একটা ধারণা পাওয়া যায়। গণিতে বেশি সময় নেওয়া বা তাড়াহুড়ো করা—দুটোই সমস্যা তৈরি করতে পারে। ভারসাম্য বজায় রেখে সমাধান করতে হবে। আর মাথায় রাখতে হবে, পরীক্ষায় সব অঙ্ক সমাধান করতে যাওয়া ঠিক না। যে অঙ্কগুলো করতে বেশি সময় লাগবে বা একটু কঠিন, সেগুলো শেষের জন্য রাখা বা বাদ দেওয়া উচিত।

প্রশ্নের ওপর খসড়া
অঙ্ক করার সময় পরীক্ষার প্রশ্নের ওপর খসড়া করতে হয়, সেখানে জায়গা অনেক কম থাকে। তাই একদম ছোট হাতে খসড়া করার অনুশীলন থাকতে হবে। ছোটখাটো ভুল হতে পারে এমন অঙ্ক দ্রুত চেক করে নিতে পারো। কিছু অঙ্ক আছে, যেগুলোয় অপশনের মান প্রশ্নের শর্তে বসালেই উত্তর মিলে যায়। পরীক্ষার হলে ক্যালকুলেটর নেওয়া যাবে না—এটা মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। আসলে মূল কথা হচ্ছে অনুশীলন। যত বেশি অনুশীলন করবে, তত বেশি ভয়ভীতি কমবে। এতে করে কোন অঙ্কে কীভাবে করতে হয়, সেটাও বোঝা যায়।

অনুশীলনের সময় বুঝে-শুনে, স্বল্প সময়ে সলভ করার অভ্যাস গড়া অনেক বেশি জরুরি। অল্প কয়েকটা অঙ্ক করেই তুমি প্রশ্নের প্যাটার্ন বুঝতে পারবে। প্রশ্নব্যাংকের সব অঙ্ক আলাদা ধরনের না। প্রতিটি অধ্যায়েই কিছু একই ধরনের অঙ্ক থাকে। সেগুলো বের করে অনুশীলন করা জরুরি।

আরও পড়ুন

আইবিএর ভাইভায় এগিয়ে থাকবে যেভাবে

পরীক্ষার হলে করণীয়
লিখিত পরীক্ষায় খেয়াল রাখতে হবে প্রতি বিষয়ে আলাদা আলাদা পাস এবং প্রতিবছর পরীক্ষার ধরনের ওপর নির্ভর করে পাস নম্বর ওঠানামা করে। উদাহরণস্বরূপ, গণিতে পাস নম্বর ২৫-এ ১২ হতে পারে, যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারকেরা দেখেন যে ১২-এর বেশি পাস নিলে তাঁরা যথেষ্ট ছাত্রকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য নিতে পারছেন না। পাস নম্বর কত হতে পারে এটা বোঝার সঠিক উপায় হচ্ছে মডেল টেস্ট দেওয়া। আমি গণিতের প্রশ্ন দেখে ভেবেছিলাম পাস নম্বর ২৫-এ ১৩/১৪ হবে। ওভাবে পরীক্ষা দিয়ে ১৮-২০টা উত্তর করেছিলাম। এভাবে একটা হিসাব করা ভালো।

নেগেটিভ মার্কিং আছে
পরীক্ষার হলে সাবধানে কাজ করা জরুরি। বেশি দাগাতে গিয়ে অনেকে এত বেশি ঝুঁকি নিয়ে ফেলে যে ফেল করে বসে। আইবিএ ভর্তি পরীক্ষায় নেগেটিভ মার্কিং আছে। তাই ভুল হলে সেটা বিরূপ প্রভাব ফেলে। আবার বেশি সাবধান হয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়ে স্বল্পসংখ্যক প্রশ্নের উত্তর করলে শেষের সারিতে নম্বর চলে আসতে পারে, যেটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

অন্যান্য পরীক্ষার তুলনায় এখানে সময় ব্যবস্থাপনা এবং প্রশ্নের উত্তর করার ক্রম খুব বেশি প্রভাব ফেলে। তাই কোন বিষয়ে কতটা সময় লাগছে, তার হিসাব রাখা খুব দরকার। যদি ঠান্ডা মাথায় আগে অঙ্কগুলো করে ফেলতে পারো, তাহলে আগে সেটাই করো। আর যদি মনে হয় যে আগে সহজ বিষয়গুলো করবে, তাহলে সেটাও করতে পারো। কিন্তু কোনো বিষয় যদি মনে হয় বেশি সহজ এসেছে এবং সেটার ৯০ শতাংশ উত্তর করতেই পারো; সে ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে বাকি বিষয়গুলোতেও পাস নম্বর তুলতে হবে।

জাওয়াদুল ইসলাম, ২য় স্থান অধিকারী, ঢাবি আইবিএ ২০২১-২২

অনুলিখন: ফরিদা আক্তার রুবি