ইউজিসির নতুন উদ্যোগ

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গবেষণার সংস্কৃতি গড়ে তুলুন

আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা কার্যক্রম না থাকায় দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিণত হয়েছে শ্রেণি কার্যক্রমভিত্তিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম কাজ হচ্ছে মৌলিক গবেষণা এবং নতুন জ্ঞান সৃষ্টিতে অবদান রাখা। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন জার্নালে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যে সংখ্যক গবেষণাকর্ম স্থান পাওয়ার কথা, তা পাচ্ছে না। আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন নতুন গবেষণায় সাফল্য অর্জন জরুরি। এক্ষেত্রেও আমাদের অবস্থা যে ভালো নয়, তা বৈশ্বিক জ্ঞানসূচকে আমাদের দেশের অবস্থান থেকেই স্পষ্ট। বর্তমানে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক মান এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে, এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায়ও বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান হতাশাজনক। দেশে গবেষণার সুযোগ বাড়লেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরাও তা ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারছেন না। অনেক শিক্ষক নিজ নিজ ক্ষেত্রে গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন; তবে এমন শিক্ষকের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিপুলসংখ্যক শিক্ষকের মৌলিক গ্রন্থ নেই। এটিও হতাশাজনক।

দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় গবেষণায় গতি বাড়াতে নতুন কিছু কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দুভাগ করে পরিচালিত হবে এ কার্যক্রম। এর মধ্যে একধরনের গবেষণাকর্ম বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ একাডেমিক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে এগিয়ে নেওয়া হবে। এতে যুক্ত থাকবেন প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপকরা। আরেক ধরনের গবেষণাকর্ম পরিচালিত হবে সহযোগী অধ্যাপক, অধ্যাপক ও সিনিয়র অধ্যাপকদের মাধ্যমে। মানবজীবনের দৈনন্দিন চাহিদাভিত্তিক প্রায়োগিক এ গবেষণায় নেতৃত্ব দেবেন তারা। এসব গবেষণাকর্ম পরিচালিত হবে শিল্পকারখানার চাহিদা ও বিশ্ববাস্তবতার নিরিখে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দও থাকবে। নতুন জ্ঞান সৃষ্টির এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পৃথক দুটি নীতিমালা তৈরি করছে ইউজিসি। ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়ার সমন্বয়ে উন্নত বিশ্বে যে গবেষণা হয়ে থাকে, সে ধারা দেশে চালু করতে চায় ইউজিসি। সে লক্ষ্যে নতুন নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন নীতিমালা তৈরির পেছনে অন্য কারণও রয়েছে। প্রতিবছর সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে গবেষণা খাতে বরাদ্দ দেয়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ অর্থ ভাগবাঁটোয়ারা হয়। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাসভিত্তিক শিক্ষকদের বেতনের সঙ্গে অর্থ দিয়ে দেওয়া হয়। তারা সেই টাকায় কী কাজ করেছেন, সে হিসাব নেওয়ার কেউ নেই। অন্যদিকে কেউ কেউ প্রকল্প প্রস্তাব দিয়ে বরাদ্দ নিলেও আদৌ কোনো গবেষণা করেছেন কি না কিংবা সেই গবেষণার ফল কী, তা সরকার জানতে পারে না। গত সেপ্টেম্বরে ৫১ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউজিসি চিঠি দিয়ে গবেষণা প্রকল্পগুলোর প্রতিবেদন চেয়েছে। দেড় মাসে মাত্র ৭টি প্রতিবেদন ইউজিসিতে জমা পড়েছে বলে জানা গেছে। ইউজিসির নতুন নীতিমালায় এসব সমস্যা সমাধানে করণীয় নির্ধারণের বিষয়টিও স্থান পাবে। নতুন কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় গবেষণার সংস্কৃতি গড়ে উঠবে, এটাই প্রত্যাশা।

দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা শেষে বিদেশে গিয়ে উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ডে নিয়মিত সাফল্যের পরিচয় দিয়ে আসছেন। দেশে তেমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে আমাদের শিক্ষার্থীরা দেশে বসেই উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ডে বড় সাফল্যের পরিচয় দিতে সক্ষম হবেন, যার ধারাবাহিকতায় দেশে গবেষণা ও জ্ঞান সৃষ্টির নতুন পরিবেশ সৃষ্টি হবে। তেমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারলে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা পিছিয়ে পড়ব।

ইউজিসির নতুন উদ্যোগ

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গবেষণার সংস্কৃতি গড়ে তুলুন

আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা কার্যক্রম না থাকায় দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিণত হয়েছে শ্রেণি কার্যক্রমভিত্তিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম কাজ হচ্ছে মৌলিক গবেষণা এবং নতুন জ্ঞান সৃষ্টিতে অবদান রাখা। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন জার্নালে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যে সংখ্যক গবেষণাকর্ম স্থান পাওয়ার কথা, তা পাচ্ছে না। আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন নতুন গবেষণায় সাফল্য অর্জন জরুরি। এক্ষেত্রেও আমাদের অবস্থা যে ভালো নয়, তা বৈশ্বিক জ্ঞানসূচকে আমাদের দেশের অবস্থান থেকেই স্পষ্ট। বর্তমানে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক মান এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে, এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায়ও বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান হতাশাজনক। দেশে গবেষণার সুযোগ বাড়লেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরাও তা ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারছেন না। অনেক শিক্ষক নিজ নিজ ক্ষেত্রে গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন; তবে এমন শিক্ষকের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিপুলসংখ্যক শিক্ষকের মৌলিক গ্রন্থ নেই। এটিও হতাশাজনক।

দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় গবেষণায় গতি বাড়াতে নতুন কিছু কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দুভাগ করে পরিচালিত হবে এ কার্যক্রম। এর মধ্যে একধরনের গবেষণাকর্ম বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ একাডেমিক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে এগিয়ে নেওয়া হবে। এতে যুক্ত থাকবেন প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপকরা। আরেক ধরনের গবেষণাকর্ম পরিচালিত হবে সহযোগী অধ্যাপক, অধ্যাপক ও সিনিয়র অধ্যাপকদের মাধ্যমে। মানবজীবনের দৈনন্দিন চাহিদাভিত্তিক প্রায়োগিক এ গবেষণায় নেতৃত্ব দেবেন তারা। এসব গবেষণাকর্ম পরিচালিত হবে শিল্পকারখানার চাহিদা ও বিশ্ববাস্তবতার নিরিখে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দও থাকবে। নতুন জ্ঞান সৃষ্টির এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পৃথক দুটি নীতিমালা তৈরি করছে ইউজিসি। ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়ার সমন্বয়ে উন্নত বিশ্বে যে গবেষণা হয়ে থাকে, সে ধারা দেশে চালু করতে চায় ইউজিসি। সে লক্ষ্যে নতুন নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন নীতিমালা তৈরির পেছনে অন্য কারণও রয়েছে। প্রতিবছর সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে গবেষণা খাতে বরাদ্দ দেয়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ অর্থ ভাগবাঁটোয়ারা হয়। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাসভিত্তিক শিক্ষকদের বেতনের সঙ্গে অর্থ দিয়ে দেওয়া হয়। তারা সেই টাকায় কী কাজ করেছেন, সে হিসাব নেওয়ার কেউ নেই। অন্যদিকে কেউ কেউ প্রকল্প প্রস্তাব দিয়ে বরাদ্দ নিলেও আদৌ কোনো গবেষণা করেছেন কি না কিংবা সেই গবেষণার ফল কী, তা সরকার জানতে পারে না। গত সেপ্টেম্বরে ৫১ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউজিসি চিঠি দিয়ে গবেষণা প্রকল্পগুলোর প্রতিবেদন চেয়েছে। দেড় মাসে মাত্র ৭টি প্রতিবেদন ইউজিসিতে জমা পড়েছে বলে জানা গেছে। ইউজিসির নতুন নীতিমালায় এসব সমস্যা সমাধানে করণীয় নির্ধারণের বিষয়টিও স্থান পাবে। নতুন কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় গবেষণার সংস্কৃতি গড়ে উঠবে, এটাই প্রত্যাশা।

দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা শেষে বিদেশে গিয়ে উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ডে নিয়মিত সাফল্যের পরিচয় দিয়ে আসছেন। দেশে তেমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে আমাদের শিক্ষার্থীরা দেশে বসেই উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ডে বড় সাফল্যের পরিচয় দিতে সক্ষম হবেন, যার ধারাবাহিকতায় দেশে গবেষণা ও জ্ঞান সৃষ্টির নতুন পরিবেশ সৃষ্টি হবে। তেমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারলে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা পিছিয়ে পড়ব।