ইসলাম প্রতিবেশীর পাশে থাকার শিক্ষা দেয়

আরিফ খান সাদ
প্রতীকী ছবি।

পাশের বাড়ির পরিবারটি হতে পারে হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ বা অন্য কোনো ধর্মের অনুসারী। কিংবা গাড়িতে আমার পাশের সিটে বসা মানুষটিও হতে পারেন অমুসলিম একজন। অফিসের সহকর্মী কিংবা সহপাঠী হতে পারেন অমুসলিম। সে ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্প্রীতি বজায় রাখা খুবই জরুরি। ইসলাম এ শিক্ষাই দেয় মুসলিমদের।

মানুষ হিসেবে মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাওয়া ধর্মের বার্তা। ইসলাম ধর্মেও সে মানুষকে শ্রেষ্ঠ বলে ঘোষণা করা হয়েছে, যে মানবতার কল্যাণের কারণ হয়। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘সর্বোত্তম মানুষ সে, যে মানবতার জন্য অধিক কল্যাণকর ও উপকারী।’ (সহিহুল জামে, হাদিস : ৩২৮৯)। মানুষকে ঘিরেই আমাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র। যখন যেখানেই আমি যাই, পাশের মানুষটি আমার প্রতিবেশী।বাঁশবাগানের সারি সারি গাছের মতো প্রতিবেশীরাও দাঁড়িয়ে থাকে পাশাপাশি। পরস্পরকে জড়িয়ে রাখে সুখে-দুঃখ ও জীবনের নানা আয়োজনে। প্রতিবেশী মানে আমার জীবনের ছায়া; আমার হাঁটা, চলা, বসা, আচরণ, উচ্চারণ যেমন হবে—প্রতিবেশী থেকে আমি অনুরূপ প্রাপ্যই আশা করতে পারি। অন্তত আমার সৃষ্টিকর্তা যিনি আমাকে প্রতিমুহূর্তে দেখছেন—তিনি উত্তম প্রতিদানই দেবেন। এ প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম সঙ্গী সে, যে তার সঙ্গীর কাছে উত্তম। আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম প্রতিবেশী সে, যে তার প্রতিবেশীর কাছে উত্তম।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৪৪)

ধর্মকে যে ধারণ করে চলে, তার পাশের মানুষ-প্রতিবেশী কখনো তার থেকে ক্ষতিগ্রস্ত বা ভীতসন্ত্রস্ত হতে পারে না। ইসলাম যে শান্তি ও নিরাপত্তার বার্তা নিয়ে পৃথিবীতে নিয়ে এসেছে তার ভাগ পাবে প্রতিটি মানুষ। প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়ার বিষয়টিকে নবীজী (সা.) ইমানের দুর্বলতা বলে চিহ্নিত করেছেন। কোনো ব্যক্তি মুমিন, আবার প্রতিবেশীকে কষ্টও দেয়, তা হতে পারে না। নবীজী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়! আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়! আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়!’ সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, সে কে হে আল্লাহর রাসুল? রাসুল (সা.) বললেন, ‘যে ব্যক্তির অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০১৬)।

আরেক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যে আল্লাহর প্রতি ইমান রাখে ও আখেরাতে বিশ্বাস করে সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০১৮)। কষ্ট দেওয়ার বিভিন্ন রূপ হতে পারে। যেমন, জানালা দিয়ে উঁকি দেওয়া, চলফেরার ক্ষেত্রে দৃষ্টি অবনত না রাখা, প্রতিবেশীর বাসার সামনে ময়লা ফেলা, জোরে ক্যাসেট বাজানো, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সময় প্রতিবেশীর ঘুম বা বিশ্রামের ক্ষতি করা, প্রতিবেশীর চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া, গৃহপালিত পশুর মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া ইত্যাদি।

নিজের গৃহপালিত পশু ছেড়ে দিলাম আর তা প্রতিবেশীর ফসলের ক্ষতি করল কিংবা প্রতিবেশীর অবলা পশু এসে কিছু নষ্ট করেছে বলে আমি পশুটির কোনো ক্ষতি করলাম বা পশুর মালিককে গালি দিলাম। এসব ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া ও ধৈর্য ধারণ করা মানবিক দায়িত্ব।

আমার প্রতিবেশী মুসলিম হোক বা অমুসলিম; তার প্রতি সদয় হওয়া, সুখ-দুঃখের ভাগাভাগি করা, বিপদে পাশে দাঁড়ানো, ঘরে ভালো খাবার রান্না হলে তাদের ঘরে পাঠানো আমার মানবিক ও ধার্মিক দায়িত্বেরই অংশ। আমার পাশের বাড়ির পরিবারটি হতে পারে হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ বা অন্য কোনো ধর্মের অনুসারী। কিংবা গাড়িতে আমার পাশের সিটে বসা মানুষটিও হতে পারেন অমুসলিম একজন। অফিসের সহকর্মী কিংবা ক্লাসমেটও হতে পারেন অমুসলিম। সে ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্প্রীতি বজায় রাখা খুবই জরুরি। ইসলাম এ শিক্ষাই দেয় মুসলিমদের।

রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম মুসলিম-অমুসলিম সব ধরনের প্রতিবেশীর সঙ্গেই সদ্ভাব বজায় রেখে চলতেন। বিখ্যাত তাবেয়ি মুজাহিদ (রহ.) বলেন, একবার আমি সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.)-এর কাছে ছিলাম। তার গোলাম একটি বকরির চামড়া ছাড়াচ্ছিল। তখন তিনি বললেন, ‘তোমার এ কাজ শেষ হলে সর্বপ্রথম আমাদের ইহুদি প্রতিবেশীকে দেবে।’ তখন এক ব্যক্তি বলল, ‘আল্লাহ আপনার পরিশুদ্ধি করুন, আপনি ইহুদিকে আগে দিতে বলছেন?’

তখন তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, আমি রাসুল (সা.)-কে প্রতিবেশীর হকের বিষয়টি এত বেশি গুরুত্ব দিয়ে বলতে শুনেছি যে, আমাদের আশঙ্কা হয়েছে, প্রতিবেশীকে মিরাসের হকদার (উত্তরাধিকার সম্পদের অংশীদার) বানিয়ে দেওয়া হবে।’ (আল আদাবুল মুফরাদ, বুখারি, হাদিস : ১২৮)

মুসলিম হোক বা অমুসলিম, কোনো প্রতিবেশীর সঙ্গেই মন্দ আচরণ করা যাবে না। অনেক নামাজ-রোজা করেও অনেক মানুষ পরকালে জাহান্নামে যাবে প্রতিবেশীর সঙ্গে মন্দ আচরণের কারণে। বিখ্যাত সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি এসে নবীজী (সা.)-কে বলল, ‘এক নারী অনেক বেশি নফল নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, দুই হাতে দান করে। কিন্তু জবানের দ্বারা তার প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়; তার অবস্থা কী হবে?’

নবীজী (সা.) বললেন, ‘সে জাহান্নামে যাবে।’ আচ্ছা, আরেক নারী খুব বেশি নফল নামাজও পড়ে না, খুব বেশি রোজাও রাখে না আবার তেমন দান-সদকাও করে না; সামান্য দু-এক টুকরা পনির দান করে। তবে সে জবানের দ্বারা প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় না; এই নারীর ব্যাপারে কী বলেন? নবীজী (সা.) বললেন, ‘সে জান্নাতে যাবে।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ, বুখারি, হাদিস : ১১৯)

প্রতিবেশীর হক নষ্ট করা বা তাকে কষ্ট দেওয়া অনেক বড় অন্যায়। কখনো দুনিয়াতেই এর সাজা পেতে হয় আর আখেরাতের পাকড়াও তো আছেই। আমার অর্থবল বা জনবল আছে বলে আমি প্রতিবেশীর হক নষ্ট করে পার পেয়ে যাব এমনটি নয়। হ্যাঁ, দুনিয়ার আদালত থেকে হয়তো পার পেয়ে যাব, কিন্তু আখেরাতের আদালত থেকে আমাকে কে বাঁচাবে?

সাহাবি উকবা ইবনে আমের (রা.) বলেন, নবীজী (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন প্রথম বাদী-বিবাদী হবে দুই প্রতিবেশী।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৭৩৭২)। সুতরাং যার পরকালে বিশ্বাস আছে, সে অন্তত তার পাশের মানুষকে কষ্ট দেবে না, অহেতুক অত্যাচার বা রূঢ় ব্যবহার করবে না।

মুসলিম-অমুসলিম সব ধরনের প্রতিবেশীর সঙ্গে সুন্দর সদ্ভাব বজায় রেখে চলবে। হাত, পা, চোখ, কান, কণ্ঠ, জিহ্বার শক্তি ও সুস্থতায় যেমন একজন মানুষ শক্তিমান হয়ে ওঠে, তেমনি সমাজের প্রতিটি মানুষ যদি কল্যাণকামী হয়, প্রতিবেশীর জন্য উপকারী হয় তাহলে সমাজ ও রাষ্ট্র হবে নিরাপদ। মানুষ ও প্রতিবেশীর অধিকার রক্ষায় সবাই যদি স্বপ্রণোদিত ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়, তাহলে সমাজে চুরি, ডাকাতি, বিশৃঙ্খলা থাকতে পারে না। শান্তির ধর্ম ইসলাম আমাদের এ বার্তাই দিয়ে যায়।

লেখক : আলেম ও গণমাধ্যমকর্মী

ইসলাম প্রতিবেশীর পাশে থাকার শিক্ষা দেয়

আরিফ খান সাদ
প্রতীকী ছবি।

পাশের বাড়ির পরিবারটি হতে পারে হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ বা অন্য কোনো ধর্মের অনুসারী। কিংবা গাড়িতে আমার পাশের সিটে বসা মানুষটিও হতে পারেন অমুসলিম একজন। অফিসের সহকর্মী কিংবা সহপাঠী হতে পারেন অমুসলিম। সে ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্প্রীতি বজায় রাখা খুবই জরুরি। ইসলাম এ শিক্ষাই দেয় মুসলিমদের।

মানুষ হিসেবে মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাওয়া ধর্মের বার্তা। ইসলাম ধর্মেও সে মানুষকে শ্রেষ্ঠ বলে ঘোষণা করা হয়েছে, যে মানবতার কল্যাণের কারণ হয়। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘সর্বোত্তম মানুষ সে, যে মানবতার জন্য অধিক কল্যাণকর ও উপকারী।’ (সহিহুল জামে, হাদিস : ৩২৮৯)। মানুষকে ঘিরেই আমাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র। যখন যেখানেই আমি যাই, পাশের মানুষটি আমার প্রতিবেশী।বাঁশবাগানের সারি সারি গাছের মতো প্রতিবেশীরাও দাঁড়িয়ে থাকে পাশাপাশি। পরস্পরকে জড়িয়ে রাখে সুখে-দুঃখ ও জীবনের নানা আয়োজনে। প্রতিবেশী মানে আমার জীবনের ছায়া; আমার হাঁটা, চলা, বসা, আচরণ, উচ্চারণ যেমন হবে—প্রতিবেশী থেকে আমি অনুরূপ প্রাপ্যই আশা করতে পারি। অন্তত আমার সৃষ্টিকর্তা যিনি আমাকে প্রতিমুহূর্তে দেখছেন—তিনি উত্তম প্রতিদানই দেবেন। এ প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম সঙ্গী সে, যে তার সঙ্গীর কাছে উত্তম। আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম প্রতিবেশী সে, যে তার প্রতিবেশীর কাছে উত্তম।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৪৪)

ধর্মকে যে ধারণ করে চলে, তার পাশের মানুষ-প্রতিবেশী কখনো তার থেকে ক্ষতিগ্রস্ত বা ভীতসন্ত্রস্ত হতে পারে না। ইসলাম যে শান্তি ও নিরাপত্তার বার্তা নিয়ে পৃথিবীতে নিয়ে এসেছে তার ভাগ পাবে প্রতিটি মানুষ। প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়ার বিষয়টিকে নবীজী (সা.) ইমানের দুর্বলতা বলে চিহ্নিত করেছেন। কোনো ব্যক্তি মুমিন, আবার প্রতিবেশীকে কষ্টও দেয়, তা হতে পারে না। নবীজী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়! আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়! আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়!’ সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, সে কে হে আল্লাহর রাসুল? রাসুল (সা.) বললেন, ‘যে ব্যক্তির অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০১৬)।

আরেক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যে আল্লাহর প্রতি ইমান রাখে ও আখেরাতে বিশ্বাস করে সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০১৮)। কষ্ট দেওয়ার বিভিন্ন রূপ হতে পারে। যেমন, জানালা দিয়ে উঁকি দেওয়া, চলফেরার ক্ষেত্রে দৃষ্টি অবনত না রাখা, প্রতিবেশীর বাসার সামনে ময়লা ফেলা, জোরে ক্যাসেট বাজানো, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সময় প্রতিবেশীর ঘুম বা বিশ্রামের ক্ষতি করা, প্রতিবেশীর চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া, গৃহপালিত পশুর মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া ইত্যাদি।

নিজের গৃহপালিত পশু ছেড়ে দিলাম আর তা প্রতিবেশীর ফসলের ক্ষতি করল কিংবা প্রতিবেশীর অবলা পশু এসে কিছু নষ্ট করেছে বলে আমি পশুটির কোনো ক্ষতি করলাম বা পশুর মালিককে গালি দিলাম। এসব ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া ও ধৈর্য ধারণ করা মানবিক দায়িত্ব।

আমার প্রতিবেশী মুসলিম হোক বা অমুসলিম; তার প্রতি সদয় হওয়া, সুখ-দুঃখের ভাগাভাগি করা, বিপদে পাশে দাঁড়ানো, ঘরে ভালো খাবার রান্না হলে তাদের ঘরে পাঠানো আমার মানবিক ও ধার্মিক দায়িত্বেরই অংশ। আমার পাশের বাড়ির পরিবারটি হতে পারে হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ বা অন্য কোনো ধর্মের অনুসারী। কিংবা গাড়িতে আমার পাশের সিটে বসা মানুষটিও হতে পারেন অমুসলিম একজন। অফিসের সহকর্মী কিংবা ক্লাসমেটও হতে পারেন অমুসলিম। সে ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্প্রীতি বজায় রাখা খুবই জরুরি। ইসলাম এ শিক্ষাই দেয় মুসলিমদের।

রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম মুসলিম-অমুসলিম সব ধরনের প্রতিবেশীর সঙ্গেই সদ্ভাব বজায় রেখে চলতেন। বিখ্যাত তাবেয়ি মুজাহিদ (রহ.) বলেন, একবার আমি সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.)-এর কাছে ছিলাম। তার গোলাম একটি বকরির চামড়া ছাড়াচ্ছিল। তখন তিনি বললেন, ‘তোমার এ কাজ শেষ হলে সর্বপ্রথম আমাদের ইহুদি প্রতিবেশীকে দেবে।’ তখন এক ব্যক্তি বলল, ‘আল্লাহ আপনার পরিশুদ্ধি করুন, আপনি ইহুদিকে আগে দিতে বলছেন?’

তখন তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, আমি রাসুল (সা.)-কে প্রতিবেশীর হকের বিষয়টি এত বেশি গুরুত্ব দিয়ে বলতে শুনেছি যে, আমাদের আশঙ্কা হয়েছে, প্রতিবেশীকে মিরাসের হকদার (উত্তরাধিকার সম্পদের অংশীদার) বানিয়ে দেওয়া হবে।’ (আল আদাবুল মুফরাদ, বুখারি, হাদিস : ১২৮)

মুসলিম হোক বা অমুসলিম, কোনো প্রতিবেশীর সঙ্গেই মন্দ আচরণ করা যাবে না। অনেক নামাজ-রোজা করেও অনেক মানুষ পরকালে জাহান্নামে যাবে প্রতিবেশীর সঙ্গে মন্দ আচরণের কারণে। বিখ্যাত সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি এসে নবীজী (সা.)-কে বলল, ‘এক নারী অনেক বেশি নফল নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, দুই হাতে দান করে। কিন্তু জবানের দ্বারা তার প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়; তার অবস্থা কী হবে?’

নবীজী (সা.) বললেন, ‘সে জাহান্নামে যাবে।’ আচ্ছা, আরেক নারী খুব বেশি নফল নামাজও পড়ে না, খুব বেশি রোজাও রাখে না আবার তেমন দান-সদকাও করে না; সামান্য দু-এক টুকরা পনির দান করে। তবে সে জবানের দ্বারা প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় না; এই নারীর ব্যাপারে কী বলেন? নবীজী (সা.) বললেন, ‘সে জান্নাতে যাবে।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ, বুখারি, হাদিস : ১১৯)

প্রতিবেশীর হক নষ্ট করা বা তাকে কষ্ট দেওয়া অনেক বড় অন্যায়। কখনো দুনিয়াতেই এর সাজা পেতে হয় আর আখেরাতের পাকড়াও তো আছেই। আমার অর্থবল বা জনবল আছে বলে আমি প্রতিবেশীর হক নষ্ট করে পার পেয়ে যাব এমনটি নয়। হ্যাঁ, দুনিয়ার আদালত থেকে হয়তো পার পেয়ে যাব, কিন্তু আখেরাতের আদালত থেকে আমাকে কে বাঁচাবে?

সাহাবি উকবা ইবনে আমের (রা.) বলেন, নবীজী (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন প্রথম বাদী-বিবাদী হবে দুই প্রতিবেশী।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৭৩৭২)। সুতরাং যার পরকালে বিশ্বাস আছে, সে অন্তত তার পাশের মানুষকে কষ্ট দেবে না, অহেতুক অত্যাচার বা রূঢ় ব্যবহার করবে না।

মুসলিম-অমুসলিম সব ধরনের প্রতিবেশীর সঙ্গে সুন্দর সদ্ভাব বজায় রেখে চলবে। হাত, পা, চোখ, কান, কণ্ঠ, জিহ্বার শক্তি ও সুস্থতায় যেমন একজন মানুষ শক্তিমান হয়ে ওঠে, তেমনি সমাজের প্রতিটি মানুষ যদি কল্যাণকামী হয়, প্রতিবেশীর জন্য উপকারী হয় তাহলে সমাজ ও রাষ্ট্র হবে নিরাপদ। মানুষ ও প্রতিবেশীর অধিকার রক্ষায় সবাই যদি স্বপ্রণোদিত ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়, তাহলে সমাজে চুরি, ডাকাতি, বিশৃঙ্খলা থাকতে পারে না। শান্তির ধর্ম ইসলাম আমাদের এ বার্তাই দিয়ে যায়।

লেখক : আলেম ও গণমাধ্যমকর্মী