এইচএসসির প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক উসকানি নিয়ে তোলপাড়
নিজস্ব প্রতিবেদক
![](https://shikkha-shikkhangan.com/wp-content/uploads/2022/11/sss.jpg)
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসির বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, যা নিয়ে সারা দেশে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। প্রণীত প্রশ্নপত্র ধর্মীয় সংবেদনশীলতাকে ক্ষুণœ করেছে, অমূলক প্রসঙ্গ টেনে ধর্মীয় উসকানি দেওয়া হয়েছে; যা মোটেও ঠিক হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রশ্নপত্রে সাম্প্রদায়িক উসকানির বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছে শিক্ষা প্রশাসন। আজ মঙ্গলবারের মধ্যে এ ধরনের প্রশ্ন তৈরির সঙ্গে জড়িত প্রশ্নকর্তা ও মডারেটরদের খুঁজে বের করে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে বলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।
গত রবিবার এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর দিনে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বোর্ডের বাংলা প্রথম পত্রের সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে নাটক সিরাজউদ্দৌলা অংশের ১১ নম্বর প্রশ্নের উদ্দীপকে বলা হয়েছে, ‘নেপাল ও গোপাল দুই ভাই। জমি নিয়ে বিরোধ তাদের দীর্ঘদিনের। অনেক সালিশ-বিচার করেও কেউ তাদের বিরোধ মেটাতে পারেনি। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এখন জমির ভাগ বণ্টন নিয়ে মামলা চলছে আদালতে। ছোট ভাই নেপাল বড় ভাইকে শায়েস্তা করতে আব্দুল নামে এক মুসলমানের কাছে ভিটের জমির এক অংশ বিক্রি করে। আব্দুল সেখানে বাড়ি বানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। কোরবানির ঈদে সে নেপালের বাড়ির সামনে গরু কোরবানি দেয়। এই ঘটনায় নেপালের মন ভেঙে যায়। কিছুদিন পর কাউকে কিছু না বলে জমি-জায়গা ফেলে সপরিবারে ভারতে চলে যায় সে।’
শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িকতা শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলেও প্রশ্নপত্রে ভিন্ন চিত্র ফুটে উঠেছে। দেশের বাস্তবিক চিত্রও এমন নয়। ধর্মীয় নানা উৎসবে দল-মত নির্বিশেষে এ দেশের মানুষ অংশগ্রহণ করে। পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন কাঠামো কেমন হবে সে ব্যাপারে প্রশ্নকর্তা ও মডারেটরদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরপরও পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ধর্মকে সামনাসামনি আনা হয়েছে। এতে করে সমাজে বিদ্বেষ ছড়াতে পারে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘এইচএসসির প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক উসকানি গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক দেশ। এ দেশে কোনো পরীক্ষার প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক কিছু থাকবে সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা চিহ্নিত করছি, এ প্রশ্নটি কে করেছেন, কোন মডারেটর করেছেন। আমরা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রশ্ন সেটিং প্রশ্ন মডারেটিং কাজগুলো এমনভাবে হয়, যিনি প্রশ্ন সেট করে যান তিনি আর ওই প্রশ্ন দেখতে পারেন না। যিনি মডারেট করে যান তিনিও ওই প্রশ্ন দেখতে পারেন না। সেটার ও মডারেটর ছাড়া প্রশ্নের একটি অক্ষরও কারও আর দেখার সুযোগ থাকে না। আমাদের একটা সুস্পষ্ট নির্দেশিকা আছে, কী কী বিষয় মাথায় রেখে প্রশ্নগুলো তারা করবেন। প্রশ্নে সাম্প্রদায়িকতার কিছু যাতে না থাকে সেটিও সে নির্দেশিকায় থাকে।’
প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক উসকানির বিষয়টি খুবই দুঃখজনক উল্লেখ করে ডা. দীপু মনি আরও বলেন, ‘কোনো একজন প্রশ্নকর্তা প্রশ্নটি করেছেন। যিনি মডারেট করেছেন তার দৃষ্টিও হয়তো কোনো কারণে এটি এড়িয়ে গেছে বা তিনিও হয়তো এটি স্বাভাবিকভাবে নিয়েছেন। আমরা চিহ্নিত করছি এ প্রশ্নটি কোন সেটার করেছেন, কোন মডারেটর করেছেন। আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। যারা চিহ্নিত হবেন তাদের আর প্রশ্ন প্রণয়নের কার্যক্রমের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত রাখা হবে না।’
গতকাল রাতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে প্রশ্ন হয়েছে তা অবশ্যই সাম্প্রদায়িক উসকানির মধ্যে পড়ে। এতে আমরা মর্মাহত। কোনোভাবেই এ ধরনের প্রশ্ন করা ঠিক হয়নি। কিন্তু বোর্ডের কারও যেহেতু প্রশ্ন দেখার সুযোগ নেই, তাই আমরা এ বিষয়টি আগে থেকে ধরতে পারিনি। তবে প্রশ্নের পা-ুলিপি বিজি প্রেসে জমা আছে। আমরা মঙ্গলবারের মধ্যে পা-ুলিপি দেখে প্রশ্নকর্তা ও মডারেটরদের চিহ্নিত করব। এরপর তাদের কঠিন শাস্তির আওতায় আনা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রশ্নপত্রে সাম্প্রদায়িক ও বিদ্বেষপূর্ণ কোনো বক্তব্য যেন না থাকে সেজন্য লিখিত নির্দেশনা দেওয়া হয়। প্রশ্নপত্র প্রণয়নে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা নিয়ে ওরিয়েন্টশন করানো হয়। ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে আমরা আরও কঠোর হব।’
![](https://shikkha-shikkhangan.com/wp-content/uploads/2023/01/logo-removebg-preview-1.png)
এইচএসসির প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক উসকানি নিয়ে তোলপাড়
নিজস্ব প্রতিবেদক
![](https://shikkha-shikkhangan.com/wp-content/uploads/2022/11/sss.jpg)
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসির বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, যা নিয়ে সারা দেশে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। প্রণীত প্রশ্নপত্র ধর্মীয় সংবেদনশীলতাকে ক্ষুণœ করেছে, অমূলক প্রসঙ্গ টেনে ধর্মীয় উসকানি দেওয়া হয়েছে; যা মোটেও ঠিক হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রশ্নপত্রে সাম্প্রদায়িক উসকানির বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছে শিক্ষা প্রশাসন। আজ মঙ্গলবারের মধ্যে এ ধরনের প্রশ্ন তৈরির সঙ্গে জড়িত প্রশ্নকর্তা ও মডারেটরদের খুঁজে বের করে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে বলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।
গত রবিবার এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর দিনে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বোর্ডের বাংলা প্রথম পত্রের সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে নাটক সিরাজউদ্দৌলা অংশের ১১ নম্বর প্রশ্নের উদ্দীপকে বলা হয়েছে, ‘নেপাল ও গোপাল দুই ভাই। জমি নিয়ে বিরোধ তাদের দীর্ঘদিনের। অনেক সালিশ-বিচার করেও কেউ তাদের বিরোধ মেটাতে পারেনি। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এখন জমির ভাগ বণ্টন নিয়ে মামলা চলছে আদালতে। ছোট ভাই নেপাল বড় ভাইকে শায়েস্তা করতে আব্দুল নামে এক মুসলমানের কাছে ভিটের জমির এক অংশ বিক্রি করে। আব্দুল সেখানে বাড়ি বানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। কোরবানির ঈদে সে নেপালের বাড়ির সামনে গরু কোরবানি দেয়। এই ঘটনায় নেপালের মন ভেঙে যায়। কিছুদিন পর কাউকে কিছু না বলে জমি-জায়গা ফেলে সপরিবারে ভারতে চলে যায় সে।’
শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িকতা শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলেও প্রশ্নপত্রে ভিন্ন চিত্র ফুটে উঠেছে। দেশের বাস্তবিক চিত্রও এমন নয়। ধর্মীয় নানা উৎসবে দল-মত নির্বিশেষে এ দেশের মানুষ অংশগ্রহণ করে। পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন কাঠামো কেমন হবে সে ব্যাপারে প্রশ্নকর্তা ও মডারেটরদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরপরও পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ধর্মকে সামনাসামনি আনা হয়েছে। এতে করে সমাজে বিদ্বেষ ছড়াতে পারে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘এইচএসসির প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক উসকানি গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক দেশ। এ দেশে কোনো পরীক্ষার প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক কিছু থাকবে সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা চিহ্নিত করছি, এ প্রশ্নটি কে করেছেন, কোন মডারেটর করেছেন। আমরা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রশ্ন সেটিং প্রশ্ন মডারেটিং কাজগুলো এমনভাবে হয়, যিনি প্রশ্ন সেট করে যান তিনি আর ওই প্রশ্ন দেখতে পারেন না। যিনি মডারেট করে যান তিনিও ওই প্রশ্ন দেখতে পারেন না। সেটার ও মডারেটর ছাড়া প্রশ্নের একটি অক্ষরও কারও আর দেখার সুযোগ থাকে না। আমাদের একটা সুস্পষ্ট নির্দেশিকা আছে, কী কী বিষয় মাথায় রেখে প্রশ্নগুলো তারা করবেন। প্রশ্নে সাম্প্রদায়িকতার কিছু যাতে না থাকে সেটিও সে নির্দেশিকায় থাকে।’
প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক উসকানির বিষয়টি খুবই দুঃখজনক উল্লেখ করে ডা. দীপু মনি আরও বলেন, ‘কোনো একজন প্রশ্নকর্তা প্রশ্নটি করেছেন। যিনি মডারেট করেছেন তার দৃষ্টিও হয়তো কোনো কারণে এটি এড়িয়ে গেছে বা তিনিও হয়তো এটি স্বাভাবিকভাবে নিয়েছেন। আমরা চিহ্নিত করছি এ প্রশ্নটি কোন সেটার করেছেন, কোন মডারেটর করেছেন। আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। যারা চিহ্নিত হবেন তাদের আর প্রশ্ন প্রণয়নের কার্যক্রমের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত রাখা হবে না।’
গতকাল রাতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে প্রশ্ন হয়েছে তা অবশ্যই সাম্প্রদায়িক উসকানির মধ্যে পড়ে। এতে আমরা মর্মাহত। কোনোভাবেই এ ধরনের প্রশ্ন করা ঠিক হয়নি। কিন্তু বোর্ডের কারও যেহেতু প্রশ্ন দেখার সুযোগ নেই, তাই আমরা এ বিষয়টি আগে থেকে ধরতে পারিনি। তবে প্রশ্নের পা-ুলিপি বিজি প্রেসে জমা আছে। আমরা মঙ্গলবারের মধ্যে পা-ুলিপি দেখে প্রশ্নকর্তা ও মডারেটরদের চিহ্নিত করব। এরপর তাদের কঠিন শাস্তির আওতায় আনা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রশ্নপত্রে সাম্প্রদায়িক ও বিদ্বেষপূর্ণ কোনো বক্তব্য যেন না থাকে সেজন্য লিখিত নির্দেশনা দেওয়া হয়। প্রশ্নপত্র প্রণয়নে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা নিয়ে ওরিয়েন্টশন করানো হয়। ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে আমরা আরও কঠোর হব।’