কাগজসংকটে ঝুঁকিতে পড়তে পারে জানুয়ারির বই উৎসব

প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা
  • মুদ্রণ শিল্প সমিতির অভিযোগ

প্রতিবছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে নতুন বই তুলে দেয়া হলেও এবার সেটি সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি। তবে সরকার বলছে, যেকোনো মূল্যেই বই তুলে দিতে চায় তারা।

মুদ্রণ শিল্প সমিতি বলছে, বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক ছাপাতে যে পরিমাণে কাগজ প্রয়োজন তা পাওয়া যাচ্ছে না। এই সুযোগ নিয়ে কারখানার মালিকরাও কাগজের দাম কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে বিদেশ থেকে শুল্কমুক্ত কাগজ আমদানি না করতে পারলে জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া সম্ভব হবে না।

গতকাল শনিবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চের কাজী বশির মিলনায়তনে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির ৪১তম বার্ষিক সাধারণ সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির কাছে এসব সমস্যার কথা তুলে ধরেন তারা।

কাগজসংকটের কথা তুলে ধরে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম জানান, আগামী বছরের জন্য বিনামূল্যে বই ছাপাতে যে পরিমাণ কাগজ প্রয়োজন সেই কাগজ মজুত নেই। যা আছে তা ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। নির্দিষ্ট সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে কাগজে ৫০ শতাংশ শুল্কমুক্ত আমদানির সুযোগ দিতে হবে। না হলে আগামী বছরে ১ জানুয়ারি বই উৎসবে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া সম্ভব নয়। ফলে বর্তমান সরকারের বই উৎসবের সাফল্য ভূলণ্ঠিত হবে।

সমিতির উপদেষ্টা ওসমান গণি অভিযোগ করেন, কাগজের মিলগুলো তাদের ইচ্ছামতো কাজ করছে। এক বছরের ব্যবধানে বই মুদ্রণের কাগজের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক। মিলগুলো কাগজের ওপর কর বসিয়ে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই সুযোগ দেয়া যাবে না। মুদ্রণ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে কাগজের শুল্কমুক্ত আমদানির সুযোগ দিতে হবে। না হলে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল বইয়ের মান ধরে রাখা যাবে না।’

সভার প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সমিতির অভিযোগের জবাবে বলেন, ‘কয়েক দিন আগেই কাগজের বিষয়টি নিয়ে কারখানা মালিকদের সঙ্গে আমরা সভা করেছি। তাদের কাছে মন্ত্রণালয়ের বার্তা পৌঁছে দিয়েছি। তারা আমাকে কথা দিয়েছেন কাগজের সংকট হবে না। আশা করি, তারা সেই কথা রাখবেন। আমরা জানুয়ারির ১ তারিখেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে চাই। এ বিষয়ে কোনো ছাড় নেই। সন্তানদের শিক্ষার বিষয়ে আপস করার সুযোগ নেই। তারপরও যদি তারা কথার বরখেলাপ করেন তবে সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পিছপা হবে না।’

কাগজের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এই কাজের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জড়িত নয়। তবে কাগজের দাম বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কারণ, বাংলাদেশে বইয়ের সবচেয়ে বড় গ্রাহক আমরা। সে কারণে বিষয়টি নিয়ে আমি বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলব। যাতে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হয়।’

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন বলেন, ‘প্রকাশক ও বিক্রেতার সমিতির ২৬ হাজার সদস্যের পরিবার। কিন্তু কাগজ, কালি, মুদ্রণ ও বাঁধাই মিলে এই পেশায় প্রায় দেড় লাখ মানুষ জড়িত। করোনা মহামারির সময় এই পেশার মানুষ দুঃসহ জীবনযাপন করেছেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা করা হয়নি। কয়েক দফায় জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু কোনো পরিত্রাণ পাইনি। অথচ এই শিল্প থেকে জাতীয় অর্থনীতিতে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার অবদান রাখে। এই খাতে নজর দেয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’

সভায় বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির মো. আরিফ হোসেন ছোটনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সহসভাপতি কায়সার-ই-আলম, মাজহারুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি আলমগীর সিকদার লোটন, বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ পুস্তক বাঁধাই মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুবুল আলম মল্লিক প্রমুখ। ‘প্রকাশনা শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি ও আমাদের ভাবনা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সমিতির সহসভাপতি শ্যামল পাল। এর আগে সমিতির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মহানগর নাট্যমঞ্চ চত্বরে বইমেলার উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী। মূল অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সংগঠনটির বার্ষিক প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করেন তিনি।

কাগজসংকটে ঝুঁকিতে পড়তে পারে জানুয়ারির বই উৎসব

প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা
  • মুদ্রণ শিল্প সমিতির অভিযোগ

প্রতিবছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে নতুন বই তুলে দেয়া হলেও এবার সেটি সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি। তবে সরকার বলছে, যেকোনো মূল্যেই বই তুলে দিতে চায় তারা।

মুদ্রণ শিল্প সমিতি বলছে, বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক ছাপাতে যে পরিমাণে কাগজ প্রয়োজন তা পাওয়া যাচ্ছে না। এই সুযোগ নিয়ে কারখানার মালিকরাও কাগজের দাম কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে বিদেশ থেকে শুল্কমুক্ত কাগজ আমদানি না করতে পারলে জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া সম্ভব হবে না।

গতকাল শনিবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চের কাজী বশির মিলনায়তনে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির ৪১তম বার্ষিক সাধারণ সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির কাছে এসব সমস্যার কথা তুলে ধরেন তারা।

কাগজসংকটের কথা তুলে ধরে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম জানান, আগামী বছরের জন্য বিনামূল্যে বই ছাপাতে যে পরিমাণ কাগজ প্রয়োজন সেই কাগজ মজুত নেই। যা আছে তা ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। নির্দিষ্ট সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে কাগজে ৫০ শতাংশ শুল্কমুক্ত আমদানির সুযোগ দিতে হবে। না হলে আগামী বছরে ১ জানুয়ারি বই উৎসবে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া সম্ভব নয়। ফলে বর্তমান সরকারের বই উৎসবের সাফল্য ভূলণ্ঠিত হবে।

সমিতির উপদেষ্টা ওসমান গণি অভিযোগ করেন, কাগজের মিলগুলো তাদের ইচ্ছামতো কাজ করছে। এক বছরের ব্যবধানে বই মুদ্রণের কাগজের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক। মিলগুলো কাগজের ওপর কর বসিয়ে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই সুযোগ দেয়া যাবে না। মুদ্রণ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে কাগজের শুল্কমুক্ত আমদানির সুযোগ দিতে হবে। না হলে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল বইয়ের মান ধরে রাখা যাবে না।’

সভার প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সমিতির অভিযোগের জবাবে বলেন, ‘কয়েক দিন আগেই কাগজের বিষয়টি নিয়ে কারখানা মালিকদের সঙ্গে আমরা সভা করেছি। তাদের কাছে মন্ত্রণালয়ের বার্তা পৌঁছে দিয়েছি। তারা আমাকে কথা দিয়েছেন কাগজের সংকট হবে না। আশা করি, তারা সেই কথা রাখবেন। আমরা জানুয়ারির ১ তারিখেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে চাই। এ বিষয়ে কোনো ছাড় নেই। সন্তানদের শিক্ষার বিষয়ে আপস করার সুযোগ নেই। তারপরও যদি তারা কথার বরখেলাপ করেন তবে সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পিছপা হবে না।’

কাগজের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এই কাজের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জড়িত নয়। তবে কাগজের দাম বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কারণ, বাংলাদেশে বইয়ের সবচেয়ে বড় গ্রাহক আমরা। সে কারণে বিষয়টি নিয়ে আমি বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলব। যাতে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হয়।’

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন বলেন, ‘প্রকাশক ও বিক্রেতার সমিতির ২৬ হাজার সদস্যের পরিবার। কিন্তু কাগজ, কালি, মুদ্রণ ও বাঁধাই মিলে এই পেশায় প্রায় দেড় লাখ মানুষ জড়িত। করোনা মহামারির সময় এই পেশার মানুষ দুঃসহ জীবনযাপন করেছেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা করা হয়নি। কয়েক দফায় জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু কোনো পরিত্রাণ পাইনি। অথচ এই শিল্প থেকে জাতীয় অর্থনীতিতে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার অবদান রাখে। এই খাতে নজর দেয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’

সভায় বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির মো. আরিফ হোসেন ছোটনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সহসভাপতি কায়সার-ই-আলম, মাজহারুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি আলমগীর সিকদার লোটন, বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ পুস্তক বাঁধাই মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুবুল আলম মল্লিক প্রমুখ। ‘প্রকাশনা শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি ও আমাদের ভাবনা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সমিতির সহসভাপতি শ্যামল পাল। এর আগে সমিতির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মহানগর নাট্যমঞ্চ চত্বরে বইমেলার উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী। মূল অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সংগঠনটির বার্ষিক প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করেন তিনি।