গাভীর একাধিক ভ্রূণ উৎপাদন-প্রতিস্থাপনে সফল বাকৃবি গবেষকরা

বাকৃবি প্রতিনিধি

বাংলাদেশে গাভীর কৃত্রিম প্রজননে সাধারণত উন্নত গাভীর শুক্রাণু ডিম্বাণুর সঙ্গে নিষিক্ত করে জাত উন্নয়ন করা হয়। কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় একটি সমস্যা হলো শুক্রাণু দিয়ে গাভীর গর্ভে শুধু একটি বাচ্চা জন্ম দেয়া সম্ভব। এ সমস্যা সমাধানে গাভীর গর্ভে একাধিক ভ্রূণ উৎপাদন এবং তা সংরক্ষণ করে একাধিক গাভীর গর্ভে প্রতিস্থাপনে সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক।

গবেষক দলের প্রধান হিসেবে ছিলেন বাকৃবির সার্জারি ও অবস্টেট্রিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. নাছরীন সুলতানা জুয়েনা। এছাড়াও গবেষণা প্রকল্পটির সহকারী গবেষক হিসেবে যুক্ত রয়েছেন বাকৃবির মাইক্রোবায়োলজি ও হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মারজিয়া রহমান এবং সদস্য হিসেবে রয়েছেন অধ্যাপক ড. মো. মাহমুদুল আলম।

দ্য অর্গানাইজেশন ফর উইমেন ইন সায়েন্স ফর দ্যা ডেভেলপিং ওয়ার্ল্ড (ওডব্লিউএসডি) এবং ইউনেস্কোর অর্থায়নে ‘বাংলাদেশের দেশি গাভীতে ভ্রূণ স্থানান্তরের পরে প্রাপকের গ্রহণযোগ্যতা এবং গর্ভধারণকে অনুকূল করা’ শীর্ষক সাব-প্রকল্পের অধীনে এ গবেষণাটি পরিচালিত হয়।

গবেষণার প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. নাছরীন সুলতানা জুয়েনা বলেন, স্বল্পতম সময়ে উচ্চ গুণসম্পন্ন অধিক সংখ্যক গবাদি পশুর বাচ্চা উৎপাদন এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে জাত উন্নয়নের মাধ্যমে দ্রুত দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ গবেষণা করা হয়। সাধারণত গাভী বছরে ১টির মতো বাচ্চা প্রসব করতে পারে। কিন্তু প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় একটি নির্বাচিত উন্নত জাতের গাভী থেকে প্রজননের মাধ্যমে বছরে ২৫ থেকে ৩০টি উচ্চ গুণসম্পন্ন ভ্রূণ উৎপাদন করা সম্ভব এবং যার মাধ্যমে প্রথমবারেই ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করে সাধারণ গাভী থেকে উন্নত জাতের বাছুর উৎপাদন করা যেতে পারে। এতে করে একজন খামারি অতি অল্প সময়ে গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন করতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, শুক্রাণুর তুলনায় ভ্রূণ দীর্ঘদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এই পদ্ধতিতে উৎপাদন খরচ তুলনামূলক বেশি হলেও বাড়তি উৎপাদনে অধিক লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকবে। প্রান্তিক পর্যায়ে খামারিদের কাছে এই প্রযুক্তিটি পৌঁছে দিলে অধিক মাংস ও দুধ উৎপাদন করে লাভবান হবেন তারা। এছাড়া জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা, পশুর জাত উন্নয়ন ও প্রজননে অক্ষম গাভীর জন্য এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তবে ভ্রূণ প্রতিস্থাপন পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা নিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এই পদ্ধতিতে যেসব গবেষণা যন্ত্রাংশ প্রয়োজন তা দেশে অপ্রতুল। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাবও রয়েছে। এসব সীমাবদ্ধতা পূরণ করে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব বৃদ্ধিতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহযোগিতা চান তিনি।

গবেষণা কার্যক্রমটি নিয়ে শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) ঢাকায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে ‘বাংলাদেশে গবাদি পশুর ভ্রূণ উৎপাদন ও স্থানান্তরের সম্ভাবনা’ শীর্ষক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন কালে এসব কথা বলেন বাকৃবির সার্জারি ও অবস্টেট্রিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. নাছরীন সুলতানা জুয়েনা।

সেমিনারে বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. মকবুল হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশনের (বিভিএ) মহাসচিব ডা. মো. হাবিবুর রহমান মোল্লা, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) সভাপতি মশিউর রহমান, দ্যা অর্গানাইজেশন ফর উইমেন ইন সায়েন্স ফর দ্যা ডেভেলপিং ওয়ার্ল্ড (ওডব্লিউএসডি) এর বাংলাদেশ জাতীয় পর্যায়ের সভাপতি ডা. মোছা. মাহবুবা বেগম, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিলের (বিভিসি) সভাপতি ডা. মো. মনজুর কাদির এবং বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) মহাপরিচালক ডা. এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা বলেন, ভ্রূণ স্থানান্তর নিয়ে গবেষণাটি বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও যুগোপযোগী গবেষণা। এ প্রযুক্তি যেন দ্রুতই মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়া যায় এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সবসময় সহযোগিতা করবে।

গাভীর একাধিক ভ্রূণ উৎপাদন-প্রতিস্থাপনে সফল বাকৃবি গবেষকরা

বাকৃবি প্রতিনিধি

বাংলাদেশে গাভীর কৃত্রিম প্রজননে সাধারণত উন্নত গাভীর শুক্রাণু ডিম্বাণুর সঙ্গে নিষিক্ত করে জাত উন্নয়ন করা হয়। কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় একটি সমস্যা হলো শুক্রাণু দিয়ে গাভীর গর্ভে শুধু একটি বাচ্চা জন্ম দেয়া সম্ভব। এ সমস্যা সমাধানে গাভীর গর্ভে একাধিক ভ্রূণ উৎপাদন এবং তা সংরক্ষণ করে একাধিক গাভীর গর্ভে প্রতিস্থাপনে সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক।

গবেষক দলের প্রধান হিসেবে ছিলেন বাকৃবির সার্জারি ও অবস্টেট্রিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. নাছরীন সুলতানা জুয়েনা। এছাড়াও গবেষণা প্রকল্পটির সহকারী গবেষক হিসেবে যুক্ত রয়েছেন বাকৃবির মাইক্রোবায়োলজি ও হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মারজিয়া রহমান এবং সদস্য হিসেবে রয়েছেন অধ্যাপক ড. মো. মাহমুদুল আলম।

দ্য অর্গানাইজেশন ফর উইমেন ইন সায়েন্স ফর দ্যা ডেভেলপিং ওয়ার্ল্ড (ওডব্লিউএসডি) এবং ইউনেস্কোর অর্থায়নে ‘বাংলাদেশের দেশি গাভীতে ভ্রূণ স্থানান্তরের পরে প্রাপকের গ্রহণযোগ্যতা এবং গর্ভধারণকে অনুকূল করা’ শীর্ষক সাব-প্রকল্পের অধীনে এ গবেষণাটি পরিচালিত হয়।

গবেষণার প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. নাছরীন সুলতানা জুয়েনা বলেন, স্বল্পতম সময়ে উচ্চ গুণসম্পন্ন অধিক সংখ্যক গবাদি পশুর বাচ্চা উৎপাদন এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে জাত উন্নয়নের মাধ্যমে দ্রুত দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ গবেষণা করা হয়। সাধারণত গাভী বছরে ১টির মতো বাচ্চা প্রসব করতে পারে। কিন্তু প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় একটি নির্বাচিত উন্নত জাতের গাভী থেকে প্রজননের মাধ্যমে বছরে ২৫ থেকে ৩০টি উচ্চ গুণসম্পন্ন ভ্রূণ উৎপাদন করা সম্ভব এবং যার মাধ্যমে প্রথমবারেই ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করে সাধারণ গাভী থেকে উন্নত জাতের বাছুর উৎপাদন করা যেতে পারে। এতে করে একজন খামারি অতি অল্প সময়ে গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন করতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, শুক্রাণুর তুলনায় ভ্রূণ দীর্ঘদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এই পদ্ধতিতে উৎপাদন খরচ তুলনামূলক বেশি হলেও বাড়তি উৎপাদনে অধিক লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকবে। প্রান্তিক পর্যায়ে খামারিদের কাছে এই প্রযুক্তিটি পৌঁছে দিলে অধিক মাংস ও দুধ উৎপাদন করে লাভবান হবেন তারা। এছাড়া জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা, পশুর জাত উন্নয়ন ও প্রজননে অক্ষম গাভীর জন্য এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তবে ভ্রূণ প্রতিস্থাপন পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা নিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এই পদ্ধতিতে যেসব গবেষণা যন্ত্রাংশ প্রয়োজন তা দেশে অপ্রতুল। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাবও রয়েছে। এসব সীমাবদ্ধতা পূরণ করে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব বৃদ্ধিতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহযোগিতা চান তিনি।

গবেষণা কার্যক্রমটি নিয়ে শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) ঢাকায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে ‘বাংলাদেশে গবাদি পশুর ভ্রূণ উৎপাদন ও স্থানান্তরের সম্ভাবনা’ শীর্ষক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন কালে এসব কথা বলেন বাকৃবির সার্জারি ও অবস্টেট্রিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. নাছরীন সুলতানা জুয়েনা।

সেমিনারে বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. মকবুল হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশনের (বিভিএ) মহাসচিব ডা. মো. হাবিবুর রহমান মোল্লা, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) সভাপতি মশিউর রহমান, দ্যা অর্গানাইজেশন ফর উইমেন ইন সায়েন্স ফর দ্যা ডেভেলপিং ওয়ার্ল্ড (ওডব্লিউএসডি) এর বাংলাদেশ জাতীয় পর্যায়ের সভাপতি ডা. মোছা. মাহবুবা বেগম, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিলের (বিভিসি) সভাপতি ডা. মো. মনজুর কাদির এবং বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) মহাপরিচালক ডা. এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা বলেন, ভ্রূণ স্থানান্তর নিয়ে গবেষণাটি বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও যুগোপযোগী গবেষণা। এ প্রযুক্তি যেন দ্রুতই মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়া যায় এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সবসময় সহযোগিতা করবে।