চবিতে আন্দোলনের ৪০ দিন, সমাধানের পথে যত জটিলতা

নুর নওশাদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে আন্দোলন করছেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে। ছবি: দৈনিক বাংলা

মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে অনড় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। তবে আন্দোলনের ৪০ দিন পার হয়ে গেলেও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

আন্দোলনরতদের সঙ্গে বারবার সমঝোতার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন। দফায় দফায় বৈঠক হলেও কোনো পক্ষই সিদ্ধান্তে পৌঁছেনি।

এমন পরিস্থিতিতে আন্দোলনকারী ও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে থাকা শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বললে তারা বেশ কয়েকটি বিষয়ের জটিলতা সামনে এনেছেন। এগুলোর মধ্যে আছে শ্রেণিকক্ষ সংকট, হলের সিট, চারুকলার শিক্ষকদের ‘ইগো’ ও জমির দলিল।

বিশ্ববিদ্যালয় ও চারুকলা-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ইনস্টিটিউটকে ক্যাম্পাসে স্থানান্তর একটি জটিল ও সময় সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। শিক্ষার্থীরা চাইলেও ইনস্টিটিউটের শিক্ষকরা মূল ক্যাম্পাসে ফিরতে চান না। এতে সমাধানের পথ ক্রমশ জটিলতর হচ্ছে।

চলমান সংকট নিয়ে চবির কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মাহবুবুল হক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ২২ দফার মধ্যে কিছু দ্রুত সমাধান করা যেত। কিন্তু তারা এখন ক্যাম্পাসে ফেরার এক দাবিতে আন্দোলন করছে। ক্যাম্পাসে তাদের দেয়ার মতো এত ক্লাসরুম নেই। হলগুলোতেও সবার জায়গা হবে না। তাই চাইলেও সব সংকট একদিনে সমাধান সম্ভব নয়। এর জন্য আলাদা বাজেট ও সময় লাগবে।’

এদিকে জায়গা সংকটের কথা মানতে নারাজ চারুকলার স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী মো. শহীদ। তিনি বলেন, ‘শ্রেণিকক্ষ পাওয়ার প্রক্রিয়া তো শুরু করতে হবে। যদি দেখা যায়, একদমই ক্লাসরুম নাই, যতটা সম্ভব তা যদি দেয়, সেটি দিয়েই শুরু করতে হবে। প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের কিছু কোর্সের জন্য ক্লাসরুম প্রয়োজন। বাকিরা আউটডোরেও ক্লাস করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে।’

শহীদ বলেন, নতুন কলাভবনেও ক্লাসরুম দিতে পারে। নতুন কয়েকটি বিভাগকে সেখানে জায়গা দেয়া হচ্ছে।

শিক্ষকরা কেন বিরোধী

চারুকলার শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তারা শিক্ষকদের ‘ইগোর’ বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন। অনেক শিক্ষক শহরে তাদের ব্যক্তিগত সুবিধার কথা চিন্তা করে মূল ক্যাম্পাসে ফিরতে চান না।

এ বিষয়ে চারুকলার চারজন শিক্ষকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তাদের মধ্যে তিনজন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। আরেকজন ফোন ধরেননি।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী জহির রায়হান বলেন, শিক্ষকরা যাবেন কি না সে বিষয়ে একাডেমিক সিদ্ধান্তটা দিক। না যেতে চাইলে তার কারণও তাদের দর্শাতে হবে।

স্থানান্তরের ধাপ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, চারুকলাকে ক্যাম্পাসে ফেরানোর প্রথম সিদ্ধান্তটি আসতে হবে ইনস্টিটিউটের একাডেমিক কমিটি থেকে। সেখান থেকে শিক্ষকরা সিদ্ধান্ত দেয়ার পর পর্যায়ক্রমে বাকি পর্ষদে তা পাস হতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরও একটি ভূমিকা রয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাসান মুহাম্মদ রোমান বলেন, চারুকলার দলিলে বলা আছে, শহরের জায়গাটা শুধু চারুকলা ইনস্টিটিউটকে পরিচালনার জন্য সরকার বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করেছে। এখন ক্যাম্পাসে আসতে হলে দলিলটাও সংশোধন করতে হবে। এসব প্রক্রিয়া অনুসরণ না করলে আইনি জটিলতা দেখা দেবে।

এদিকে চারুকলাকে স্থানান্তর করলে বর্তমান জায়গাটি কী কাজে ব্যবহার করা হবে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি গণমাধ্যমে চারুকলার অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবুল মনসুর জমি বেদখল হওয়ার একটি প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, জমিটি দখলে স্বার্থান্বেষী মহল অর্থ ব্যয় ও মামলা করে চলেছে। একটি মরীচিকার পেছনে ছুটতে গিয়ে চারুকলার জন্য স্থানটি যেন দখলদারদের হাতে না যায়।

এ প্রসঙ্গে আন্দোলনরতরা বলছেন, এই জায়গার মালিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কেউ না। এটা দেখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা সরকার আছে।

এ বিষয়ে জানতে চবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারকে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেন নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান বলেন, প্রথমত চারুকলার শিক্ষার্থী ও শিক্ষক, দুইদিক থেকে সমঝোতায় আসতে হবে। চারুকলা যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে গেছে, সেটা অনুসরণ করেই আসতে হবে। প্রক্রিয়া শুরুর আগে উভয় পক্ষের ন্যূনতম সম্মতি তো লাগবে। এ ছাড়াও এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপ-মন্ত্রী ও চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষদেরও একটা বক্তব্য জানার দরকার আছে।

চবিতে আন্দোলনের ৪০ দিন, সমাধানের পথে যত জটিলতা

নুর নওশাদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে আন্দোলন করছেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে। ছবি: দৈনিক বাংলা

মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে অনড় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। তবে আন্দোলনের ৪০ দিন পার হয়ে গেলেও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

আন্দোলনরতদের সঙ্গে বারবার সমঝোতার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন। দফায় দফায় বৈঠক হলেও কোনো পক্ষই সিদ্ধান্তে পৌঁছেনি।

এমন পরিস্থিতিতে আন্দোলনকারী ও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে থাকা শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বললে তারা বেশ কয়েকটি বিষয়ের জটিলতা সামনে এনেছেন। এগুলোর মধ্যে আছে শ্রেণিকক্ষ সংকট, হলের সিট, চারুকলার শিক্ষকদের ‘ইগো’ ও জমির দলিল।

বিশ্ববিদ্যালয় ও চারুকলা-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ইনস্টিটিউটকে ক্যাম্পাসে স্থানান্তর একটি জটিল ও সময় সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। শিক্ষার্থীরা চাইলেও ইনস্টিটিউটের শিক্ষকরা মূল ক্যাম্পাসে ফিরতে চান না। এতে সমাধানের পথ ক্রমশ জটিলতর হচ্ছে।

চলমান সংকট নিয়ে চবির কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মাহবুবুল হক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ২২ দফার মধ্যে কিছু দ্রুত সমাধান করা যেত। কিন্তু তারা এখন ক্যাম্পাসে ফেরার এক দাবিতে আন্দোলন করছে। ক্যাম্পাসে তাদের দেয়ার মতো এত ক্লাসরুম নেই। হলগুলোতেও সবার জায়গা হবে না। তাই চাইলেও সব সংকট একদিনে সমাধান সম্ভব নয়। এর জন্য আলাদা বাজেট ও সময় লাগবে।’

এদিকে জায়গা সংকটের কথা মানতে নারাজ চারুকলার স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী মো. শহীদ। তিনি বলেন, ‘শ্রেণিকক্ষ পাওয়ার প্রক্রিয়া তো শুরু করতে হবে। যদি দেখা যায়, একদমই ক্লাসরুম নাই, যতটা সম্ভব তা যদি দেয়, সেটি দিয়েই শুরু করতে হবে। প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের কিছু কোর্সের জন্য ক্লাসরুম প্রয়োজন। বাকিরা আউটডোরেও ক্লাস করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে।’

শহীদ বলেন, নতুন কলাভবনেও ক্লাসরুম দিতে পারে। নতুন কয়েকটি বিভাগকে সেখানে জায়গা দেয়া হচ্ছে।

শিক্ষকরা কেন বিরোধী

চারুকলার শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তারা শিক্ষকদের ‘ইগোর’ বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন। অনেক শিক্ষক শহরে তাদের ব্যক্তিগত সুবিধার কথা চিন্তা করে মূল ক্যাম্পাসে ফিরতে চান না।

এ বিষয়ে চারুকলার চারজন শিক্ষকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তাদের মধ্যে তিনজন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। আরেকজন ফোন ধরেননি।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী জহির রায়হান বলেন, শিক্ষকরা যাবেন কি না সে বিষয়ে একাডেমিক সিদ্ধান্তটা দিক। না যেতে চাইলে তার কারণও তাদের দর্শাতে হবে।

স্থানান্তরের ধাপ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, চারুকলাকে ক্যাম্পাসে ফেরানোর প্রথম সিদ্ধান্তটি আসতে হবে ইনস্টিটিউটের একাডেমিক কমিটি থেকে। সেখান থেকে শিক্ষকরা সিদ্ধান্ত দেয়ার পর পর্যায়ক্রমে বাকি পর্ষদে তা পাস হতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরও একটি ভূমিকা রয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাসান মুহাম্মদ রোমান বলেন, চারুকলার দলিলে বলা আছে, শহরের জায়গাটা শুধু চারুকলা ইনস্টিটিউটকে পরিচালনার জন্য সরকার বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করেছে। এখন ক্যাম্পাসে আসতে হলে দলিলটাও সংশোধন করতে হবে। এসব প্রক্রিয়া অনুসরণ না করলে আইনি জটিলতা দেখা দেবে।

এদিকে চারুকলাকে স্থানান্তর করলে বর্তমান জায়গাটি কী কাজে ব্যবহার করা হবে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি গণমাধ্যমে চারুকলার অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবুল মনসুর জমি বেদখল হওয়ার একটি প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, জমিটি দখলে স্বার্থান্বেষী মহল অর্থ ব্যয় ও মামলা করে চলেছে। একটি মরীচিকার পেছনে ছুটতে গিয়ে চারুকলার জন্য স্থানটি যেন দখলদারদের হাতে না যায়।

এ প্রসঙ্গে আন্দোলনরতরা বলছেন, এই জায়গার মালিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কেউ না। এটা দেখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা সরকার আছে।

এ বিষয়ে জানতে চবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারকে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেন নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান বলেন, প্রথমত চারুকলার শিক্ষার্থী ও শিক্ষক, দুইদিক থেকে সমঝোতায় আসতে হবে। চারুকলা যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে গেছে, সেটা অনুসরণ করেই আসতে হবে। প্রক্রিয়া শুরুর আগে উভয় পক্ষের ন্যূনতম সম্মতি তো লাগবে। এ ছাড়াও এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপ-মন্ত্রী ও চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষদেরও একটা বক্তব্য জানার দরকার আছে।