চবিতে ৫৬ বছরে চার সমাবর্তন

আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চে পঞ্চম সমাবর্তনের চিন্তা উপাচার্যের

রোকনুজ্জামান, চবি

দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) প্রতিষ্ঠার ৫৬ বছরে সমাবর্তন হয়েছে মাত্র চারবার। শুক্রবার বিভিন্ন আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়টির ৫৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর চবি প্রতিষ্ঠিত হয়। পথচলার দীর্ঘ এই সময়ে সফলতার পাশাপাশি ব্যর্থতার গল্পও কম নয় বিশ্ববিদ্যালয়টির। ব্যর্থতার গল্পের একটি হলো সমাবর্তন।

চবিতে সর্বশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রায় সাত বছর আগে ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি। এতে ২০০৪ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এবং ২০০৮ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পিএইচডি-এমফিলসহ বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা অংশ নেয়। রাষ্ট্রপতি ও আচার্য আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে ও সাত হাজার ১৯৪ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে এটিই ছিল চবির সবচেয়ে বড় সমাবর্তন। এর আগে তৃতীয় সমাবর্তন হয় তারও আট বছর আগে ২০০৮ সালে। প্রথম সমাবর্তন হয় প্রতিষ্ঠার প্রায় ২৮ বছর পর ১৯৯৪ সালে এবং দ্বিতীয়বার সমাবর্তন হয় আরও পাঁচ বছর পর ১৯৯৯ সালে। ’৭৩-এর অধ্যাদেশে পরিচালিত অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে প্রায় দুই বছরে একবার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে ছয় বছরে ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১০ বছরে একবার সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেখানে চবিতে গড়ে ১৪ বছরে একবার সমাবর্তন হচ্ছে। এদিকে চট্টগ্রামের অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ও নিয়মিত সমাবর্তন আয়োজন করে চলেছে। এসব অনুষ্ঠানে চবির উপাচার্য, উপ-উপাচার্যের অতিথি হয়ে যাওয়া নিয়েও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, কর্তৃপক্ষ বহুবার সমাবর্তনের আশ্বাস দিলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা ও যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের অভাবই নিয়মিত সমাবর্তন না হওয়ার প্রধান কারণ। এসব বিষয়ে বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিরূপ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করতে দেখা গেছে।

এদিকে নিয়মিত সমাবর্তন না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের অর্জিত ডিগ্রির আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিও মিলছে না। সাময়িক সনদপত্র নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে হচ্ছে তাদের। ২০১১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৩৩ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন। তবে কেউই আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাননি।

যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সাবরিনা তাহসিন বলেন, নিয়মিত সমাবর্তন আয়োজন করা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের দায়িত্বের প্রতি অবহেলাই প্রকাশ পাচ্ছে। রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মো. মঈন উদ্দীন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে সবার আশা থাকে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্বীকৃতি পাবেন। দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসাবে চবির নিয়মিত সমাবর্তন আয়োজন করতে না পারা আমাদের জন্য লজ্জার ব্যাপার।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ও আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ৫৬ বছরে মাত্র চারবার সমাবর্তন হওয়াটা দুঃখজনক ও লজ্জাজনক। এটা আমাদের সক্ষমতার ঘাটতিও প্রকাশ করে। কারণ, দেশের অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মিতভাবে সমাবর্তন আয়োজন করে যাচ্ছে। এ ছাড়া সমাবর্তন অনুষ্ঠানের জন্য আমাদের যতটুকু দায়িত্বশীলতা বা মনোযোগ প্রদর্শনের দরকার ছিল সেটাও আমরা করিনি। শিক্ষার্থীদের অনেক স্বপ্নের মধ্যে একটি হচ্ছে সমাবর্তনের মাধ্যমে সনদপত্র গ্রহণ করা। সেই স্বপ্নভঙ্গের জন্যও বিশ্ববিদ্যালয় দায়ী। তাই প্রতিশ্রুতির মধ্যে আবদ্ধ না থেকে দায়িত্বপ্রাপ্তদের উচিত নিয়মিত সমাবর্তন আয়োজনের ব্যবস্থা করা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার বলেন, সমাবর্তনের লক্ষ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। সিন্ডিকেটে এটি অনুমোদন হয়েছে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে যাব। আগামী ফেব্রুয়ারির শেষে অথবা মার্চের প্রথম সপ্তাহে যেদিন রাষ্ট্রপতি সময় দেবেন সেদিনই সমাবর্তন হবে।

চবিতে ৫৬ বছরে চার সমাবর্তন

আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চে পঞ্চম সমাবর্তনের চিন্তা উপাচার্যের

রোকনুজ্জামান, চবি

দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) প্রতিষ্ঠার ৫৬ বছরে সমাবর্তন হয়েছে মাত্র চারবার। শুক্রবার বিভিন্ন আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়টির ৫৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর চবি প্রতিষ্ঠিত হয়। পথচলার দীর্ঘ এই সময়ে সফলতার পাশাপাশি ব্যর্থতার গল্পও কম নয় বিশ্ববিদ্যালয়টির। ব্যর্থতার গল্পের একটি হলো সমাবর্তন।

চবিতে সর্বশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রায় সাত বছর আগে ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি। এতে ২০০৪ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এবং ২০০৮ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পিএইচডি-এমফিলসহ বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা অংশ নেয়। রাষ্ট্রপতি ও আচার্য আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে ও সাত হাজার ১৯৪ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে এটিই ছিল চবির সবচেয়ে বড় সমাবর্তন। এর আগে তৃতীয় সমাবর্তন হয় তারও আট বছর আগে ২০০৮ সালে। প্রথম সমাবর্তন হয় প্রতিষ্ঠার প্রায় ২৮ বছর পর ১৯৯৪ সালে এবং দ্বিতীয়বার সমাবর্তন হয় আরও পাঁচ বছর পর ১৯৯৯ সালে। ’৭৩-এর অধ্যাদেশে পরিচালিত অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে প্রায় দুই বছরে একবার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে ছয় বছরে ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১০ বছরে একবার সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেখানে চবিতে গড়ে ১৪ বছরে একবার সমাবর্তন হচ্ছে। এদিকে চট্টগ্রামের অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ও নিয়মিত সমাবর্তন আয়োজন করে চলেছে। এসব অনুষ্ঠানে চবির উপাচার্য, উপ-উপাচার্যের অতিথি হয়ে যাওয়া নিয়েও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, কর্তৃপক্ষ বহুবার সমাবর্তনের আশ্বাস দিলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা ও যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের অভাবই নিয়মিত সমাবর্তন না হওয়ার প্রধান কারণ। এসব বিষয়ে বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিরূপ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করতে দেখা গেছে।

এদিকে নিয়মিত সমাবর্তন না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের অর্জিত ডিগ্রির আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিও মিলছে না। সাময়িক সনদপত্র নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে হচ্ছে তাদের। ২০১১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৩৩ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন। তবে কেউই আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাননি।

যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সাবরিনা তাহসিন বলেন, নিয়মিত সমাবর্তন আয়োজন করা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের দায়িত্বের প্রতি অবহেলাই প্রকাশ পাচ্ছে। রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মো. মঈন উদ্দীন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে সবার আশা থাকে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্বীকৃতি পাবেন। দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসাবে চবির নিয়মিত সমাবর্তন আয়োজন করতে না পারা আমাদের জন্য লজ্জার ব্যাপার।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ও আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ৫৬ বছরে মাত্র চারবার সমাবর্তন হওয়াটা দুঃখজনক ও লজ্জাজনক। এটা আমাদের সক্ষমতার ঘাটতিও প্রকাশ করে। কারণ, দেশের অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মিতভাবে সমাবর্তন আয়োজন করে যাচ্ছে। এ ছাড়া সমাবর্তন অনুষ্ঠানের জন্য আমাদের যতটুকু দায়িত্বশীলতা বা মনোযোগ প্রদর্শনের দরকার ছিল সেটাও আমরা করিনি। শিক্ষার্থীদের অনেক স্বপ্নের মধ্যে একটি হচ্ছে সমাবর্তনের মাধ্যমে সনদপত্র গ্রহণ করা। সেই স্বপ্নভঙ্গের জন্যও বিশ্ববিদ্যালয় দায়ী। তাই প্রতিশ্রুতির মধ্যে আবদ্ধ না থেকে দায়িত্বপ্রাপ্তদের উচিত নিয়মিত সমাবর্তন আয়োজনের ব্যবস্থা করা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার বলেন, সমাবর্তনের লক্ষ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। সিন্ডিকেটে এটি অনুমোদন হয়েছে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে যাব। আগামী ফেব্রুয়ারির শেষে অথবা মার্চের প্রথম সপ্তাহে যেদিন রাষ্ট্রপতি সময় দেবেন সেদিনই সমাবর্তন হবে।