ছাত্র মৃত্যুর দায় এড়ানো যাবে না

সম্পাদকীয়

একটি উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন নিয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের মধ্যে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় বল্লম বিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে ওই বিদ্যালয়েরই অষ্টম শ্রেণির ছাত্র রমজান আলী। রমজানের বাবা একজন দিনমজুর, নাম আনোয়ার ইসলাম। বিষয়টি খুবই বেদনাদায়ক এবং আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব কতটা প্রকট হয়ে উঠেছে, তার এক নগ্ন প্রকাশ।

দুঃখজনক এ ঘটনাটি ঘটেছে গত সোমবার রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের খেতাবেরপাড়া পল্লী মঙ্গল উচ্চবিদ্যালয়ে।

মঙ্গলবার আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, পল্লী মঙ্গল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী তালুকদার গোপনে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বানান মদনখালী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবুকে। কিন্তু গোপনে এটা করা হলেও বিষয়টি শেষ পর্যন্ত গোপন থাকেনি।

বিষয়টি জানাজানি হলে একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলামসহ এলাকার অভিভাবকদের কেউ কেউ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী, সভাপতি শহিদুলসহ কয়েকজন মোটরসাইকেলে করে বিদ্যালয়ে আসার পথে তাঁদের ওপর হামলা হয়। প্রধান শিক্ষককে মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দেওয়ার পর লাঠিসোঁটা, বল্লম, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে শুরু হয় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। একপর্যায়ে প্রধান শিক্ষকের উদ্দেশে ছুড়ে মারা একটি বল্লম সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা রমজানের গলায় বিদ্ধ হয়। ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকেও হিমশিম খেতে হয়েছে। ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহতও হয়েছেন। ওসি আব্দুল আউয়ালসহ আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সহকারী শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলামসহ ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে। সহকারী শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম বলেছেন, ‘প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী সরকারি বিধিমালা না মেনে অভিভাবকদের বাদ দিয়ে নিজের মনমতো গোপনে কমিটি গঠন করেছেন। সেই কমিটির সঙ্গে আমরা শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক ও এলাকাবাসী কেউ একমত নই। বিষয়টি আমরা পুলিশ, ইউএনওসহ সব জায়গায় লিখিতভাবে জানিয়েছি।’

প্রশ্ন হলো, লিখিতভাবে অভিযোগ জানানোর পর হামলার ঘটনা কেন ঘটল? এলাকাবাসীকে বিক্ষুব্ধ করে তোলার পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন কে বা কারা? ব্যবস্থাপনা কমিটিতে থাকা একটি লাভজনক বিষয় বলেই তো এ নিয়ে সংঘাত। নয় কি? এখন একজন ছাত্রের মৃত্যুর দায় কে নেবে? নিহত রমজানের মা গোলাপী বেগম তাঁর নির্দোষ সন্তান হত্যার বিচার চেয়েছেন। কিন্তু রমজান হত্যার বিচার কি সত্যি হবে? প্রভাব-প্রতিপত্তিশালীদের বেপরোয়া মনোভাব আইনের তোয়াক্কা করছে না।

স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন নিয়ম মেনে না হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় যা করা হয়েছে এবং যার সঙ্গে একজন সহকারী শিক্ষক ও কয়েকজন অভিভাবক জড়িত, তা আরও ভয়ংকর। একটি অনিয়মের প্রতিবাদের নামে যেভাবে পরিকল্পিতভাবে মারপিটের আয়োজন করে একজন ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে, তা বড় ধরনের অন্যায় এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

ছাত্র মৃত্যুর দায় এড়ানো যাবে না

সম্পাদকীয়

একটি উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন নিয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের মধ্যে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় বল্লম বিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে ওই বিদ্যালয়েরই অষ্টম শ্রেণির ছাত্র রমজান আলী। রমজানের বাবা একজন দিনমজুর, নাম আনোয়ার ইসলাম। বিষয়টি খুবই বেদনাদায়ক এবং আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব কতটা প্রকট হয়ে উঠেছে, তার এক নগ্ন প্রকাশ।

দুঃখজনক এ ঘটনাটি ঘটেছে গত সোমবার রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের খেতাবেরপাড়া পল্লী মঙ্গল উচ্চবিদ্যালয়ে।

মঙ্গলবার আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, পল্লী মঙ্গল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী তালুকদার গোপনে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বানান মদনখালী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবুকে। কিন্তু গোপনে এটা করা হলেও বিষয়টি শেষ পর্যন্ত গোপন থাকেনি।

বিষয়টি জানাজানি হলে একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলামসহ এলাকার অভিভাবকদের কেউ কেউ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী, সভাপতি শহিদুলসহ কয়েকজন মোটরসাইকেলে করে বিদ্যালয়ে আসার পথে তাঁদের ওপর হামলা হয়। প্রধান শিক্ষককে মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দেওয়ার পর লাঠিসোঁটা, বল্লম, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে শুরু হয় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। একপর্যায়ে প্রধান শিক্ষকের উদ্দেশে ছুড়ে মারা একটি বল্লম সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা রমজানের গলায় বিদ্ধ হয়। ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকেও হিমশিম খেতে হয়েছে। ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহতও হয়েছেন। ওসি আব্দুল আউয়ালসহ আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সহকারী শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলামসহ ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে। সহকারী শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম বলেছেন, ‘প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী সরকারি বিধিমালা না মেনে অভিভাবকদের বাদ দিয়ে নিজের মনমতো গোপনে কমিটি গঠন করেছেন। সেই কমিটির সঙ্গে আমরা শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক ও এলাকাবাসী কেউ একমত নই। বিষয়টি আমরা পুলিশ, ইউএনওসহ সব জায়গায় লিখিতভাবে জানিয়েছি।’

প্রশ্ন হলো, লিখিতভাবে অভিযোগ জানানোর পর হামলার ঘটনা কেন ঘটল? এলাকাবাসীকে বিক্ষুব্ধ করে তোলার পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন কে বা কারা? ব্যবস্থাপনা কমিটিতে থাকা একটি লাভজনক বিষয় বলেই তো এ নিয়ে সংঘাত। নয় কি? এখন একজন ছাত্রের মৃত্যুর দায় কে নেবে? নিহত রমজানের মা গোলাপী বেগম তাঁর নির্দোষ সন্তান হত্যার বিচার চেয়েছেন। কিন্তু রমজান হত্যার বিচার কি সত্যি হবে? প্রভাব-প্রতিপত্তিশালীদের বেপরোয়া মনোভাব আইনের তোয়াক্কা করছে না।

স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন নিয়ম মেনে না হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় যা করা হয়েছে এবং যার সঙ্গে একজন সহকারী শিক্ষক ও কয়েকজন অভিভাবক জড়িত, তা আরও ভয়ংকর। একটি অনিয়মের প্রতিবাদের নামে যেভাবে পরিকল্পিতভাবে মারপিটের আয়োজন করে একজন ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে, তা বড় ধরনের অন্যায় এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।