দখল করা কক্ষ থেকে ছাত্রলীগ কর্মীদের বের করে দিলেন আবাসিক শিক্ষক

প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

হাজী মুহাম্মদ মহসিন হল। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মহসিন হলের একটি কক্ষের বৈধ শিক্ষার্থীকে জোর করে বের করে দিয়ে সেই কক্ষের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী। পরে হলের আবাসিক শিক্ষক এসে সেই কর্মীদের বের করে দিয়ে কক্ষটিতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ফারহান সাইফুলের অভিযোগ, বের করে দেওয়ার সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা তার গায়েও হাত তুলেছে। এই ঘটনায় সেই শিক্ষার্থী হল প্রাধ্যক্ষকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

আবাসিক শিক্ষক বলছেন, এই ঘটনার তদন্ত শেষে বৈধ শিক্ষার্থীকে কক্ষটি বুঝিয়ে দেওয়া হবে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটায় হলটির ৫৬২ নং কক্ষে এই ঘটনা ঘটে। যাদের কক্ষটি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে তারা হলেন ছাত্রলীগ কর্মী
শিক্ষা ও গবেষণা ইনিস্টিউটের সাখাওয়াত হোসেন শান্ত, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের তাওহীদুল ইসলাম, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শাখাওয়াত ওভি, ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি বিভাগের শেখ ইমরান ইসলাম ইমন।
এরা সবাই হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেনের অনুসারী।
ফারহান সাইফুল বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে আমাকে হল থেকে এই রুমে সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়। তাই আমি বিকেলের দিকে রুমে আসি এবং বিছানাপত্র নিয়ে সিটে উঠি। এসময় আমার সাথে আমার কয়েকজন বন্ধুও ছিলো। তিনি বলেন অভিযুক্তদের কয়েকজন এসে বলে, তোরা এই রুমে কেন? এই রুম তো আমাদের। আমি বলি, হল প্রশাসন আমাকে বৈধভাবে দিয়েছে। এই রুম আমার। এরপর তারা বলে হল কীভাবে চলে তুই জানোস না? হল কি প্রশাসন চালায়? এর কিছুক্ষণ পর অভিযুক্ত বাকিরাও চলে আসে।

তারা খুব উগ্রভাবে বলে, তোরা কারা?এই রুমের মধ্যে ঢুকছস কেন? সাহস পাইছস কই? এই সময় আমার সাথে থাকা অন্যান্য হলের বন্ধুদের তারা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় এবং শেষে আমাকেও টেনে বের করে দেয়। বের হওয়ার সময় পিছন থেকে কয়েকজন লাথিও দেয়। তবে এসময় আরও কয়েকজন ছিল। ভিড়ের মধ্যে সবাইকে চিনতে পারিনি।

হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ওই রুমে তিনমাস আগে আমাদের ছেলেরা উঠেছিল। এক বড় ভাই তাদের সিট দিয়ে গেছে। পরে রকি নামের এক বড় ভাই নাকি বহিরাগত ছাত্র তুলতে চেয়েছিল তার কারণে ঝামেলা হয়েছিল। আজকে সে যখন বের হয়ে যাচ্ছিল তখনও আমাদের চারজন কর্মী সেখানে থাকতো। কিন্তু পরে জানা যায়, সাইফুলকেও সেই রুমে বরাদ্দ দেওয়া হয়। সে উঠে গেলে ঝামেলাটা শুরু হয়। এর বেশি কিছু আমি জানি না।’

এক শিক্ষার্থীকে রুম থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনাটি প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মাসুদুর রহমানকে জানালে তিনি বাইরে আছেন জানিয়ে হলের আবাসিক শিক্ষক আইনুল ইসলাম ও মো. ইমাউল হক সরকারকে ঘটনাস্থলে পাঠান।

শিক্ষক এসেছেন জানিয়ে তাদের দরজা খুলতে বলা হলে সেখানে থাকা ছাত্রলীগ কর্মীরা কর্ণপাত করেনি। তারা শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, বড় ভাইরা না বলা পর্যন্ত আমরা দরজা খুলতে পারবো না। এরপর তারা রুমের বাতি বন্ধ করে দেয়।

এভাবে আধা ঘন্টা সময় অতিবাহিত হয়ে যায়। তখনও আবাসিক শিক্ষকবৃন্দ রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে বারবার দরজা খুলত৷ তাগাদা দিতে থাকেন।

পরে আবাসিক শিক্ষক আইনুল ইসলাম হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেনকে ফোন দিয়ে কর্মীদের দরজা খুলতে নির্দেশ দিতে বলেন।
পরে ছাত্রলীগ কর্মীরা দরজা খুলে দিলে আবাসিক শিক্ষকরা তাদের সবাইকে বের করে দিয়ে রুম তালাবদ্ধ করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন।

আবাসিক শিক্ষক ও কক্ষ বরাদ্দ বিষয়ক কমিটির আহবায়ক আইনুল ইসলাম বলেন, নিঃসন্দেহে শিক্ষকদের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা একটি অপরাধ। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডিকে জানানো হয়েছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিষদের সভায়ও আমরা জানাবো। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে নিশ্চয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাসুদুর রহমান বলেন, হল কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে রুমটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে রুমটি বৈধ শিক্ষার্থীর কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

দখল করা কক্ষ থেকে ছাত্রলীগ কর্মীদের বের করে দিলেন আবাসিক শিক্ষক

প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

হাজী মুহাম্মদ মহসিন হল। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মহসিন হলের একটি কক্ষের বৈধ শিক্ষার্থীকে জোর করে বের করে দিয়ে সেই কক্ষের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী। পরে হলের আবাসিক শিক্ষক এসে সেই কর্মীদের বের করে দিয়ে কক্ষটিতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ফারহান সাইফুলের অভিযোগ, বের করে দেওয়ার সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা তার গায়েও হাত তুলেছে। এই ঘটনায় সেই শিক্ষার্থী হল প্রাধ্যক্ষকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

আবাসিক শিক্ষক বলছেন, এই ঘটনার তদন্ত শেষে বৈধ শিক্ষার্থীকে কক্ষটি বুঝিয়ে দেওয়া হবে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটায় হলটির ৫৬২ নং কক্ষে এই ঘটনা ঘটে। যাদের কক্ষটি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে তারা হলেন ছাত্রলীগ কর্মী
শিক্ষা ও গবেষণা ইনিস্টিউটের সাখাওয়াত হোসেন শান্ত, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের তাওহীদুল ইসলাম, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শাখাওয়াত ওভি, ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি বিভাগের শেখ ইমরান ইসলাম ইমন।
এরা সবাই হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেনের অনুসারী।
ফারহান সাইফুল বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে আমাকে হল থেকে এই রুমে সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়। তাই আমি বিকেলের দিকে রুমে আসি এবং বিছানাপত্র নিয়ে সিটে উঠি। এসময় আমার সাথে আমার কয়েকজন বন্ধুও ছিলো। তিনি বলেন অভিযুক্তদের কয়েকজন এসে বলে, তোরা এই রুমে কেন? এই রুম তো আমাদের। আমি বলি, হল প্রশাসন আমাকে বৈধভাবে দিয়েছে। এই রুম আমার। এরপর তারা বলে হল কীভাবে চলে তুই জানোস না? হল কি প্রশাসন চালায়? এর কিছুক্ষণ পর অভিযুক্ত বাকিরাও চলে আসে।

তারা খুব উগ্রভাবে বলে, তোরা কারা?এই রুমের মধ্যে ঢুকছস কেন? সাহস পাইছস কই? এই সময় আমার সাথে থাকা অন্যান্য হলের বন্ধুদের তারা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় এবং শেষে আমাকেও টেনে বের করে দেয়। বের হওয়ার সময় পিছন থেকে কয়েকজন লাথিও দেয়। তবে এসময় আরও কয়েকজন ছিল। ভিড়ের মধ্যে সবাইকে চিনতে পারিনি।

হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ওই রুমে তিনমাস আগে আমাদের ছেলেরা উঠেছিল। এক বড় ভাই তাদের সিট দিয়ে গেছে। পরে রকি নামের এক বড় ভাই নাকি বহিরাগত ছাত্র তুলতে চেয়েছিল তার কারণে ঝামেলা হয়েছিল। আজকে সে যখন বের হয়ে যাচ্ছিল তখনও আমাদের চারজন কর্মী সেখানে থাকতো। কিন্তু পরে জানা যায়, সাইফুলকেও সেই রুমে বরাদ্দ দেওয়া হয়। সে উঠে গেলে ঝামেলাটা শুরু হয়। এর বেশি কিছু আমি জানি না।’

এক শিক্ষার্থীকে রুম থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনাটি প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মাসুদুর রহমানকে জানালে তিনি বাইরে আছেন জানিয়ে হলের আবাসিক শিক্ষক আইনুল ইসলাম ও মো. ইমাউল হক সরকারকে ঘটনাস্থলে পাঠান।

শিক্ষক এসেছেন জানিয়ে তাদের দরজা খুলতে বলা হলে সেখানে থাকা ছাত্রলীগ কর্মীরা কর্ণপাত করেনি। তারা শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, বড় ভাইরা না বলা পর্যন্ত আমরা দরজা খুলতে পারবো না। এরপর তারা রুমের বাতি বন্ধ করে দেয়।

এভাবে আধা ঘন্টা সময় অতিবাহিত হয়ে যায়। তখনও আবাসিক শিক্ষকবৃন্দ রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে বারবার দরজা খুলত৷ তাগাদা দিতে থাকেন।

পরে আবাসিক শিক্ষক আইনুল ইসলাম হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেনকে ফোন দিয়ে কর্মীদের দরজা খুলতে নির্দেশ দিতে বলেন।
পরে ছাত্রলীগ কর্মীরা দরজা খুলে দিলে আবাসিক শিক্ষকরা তাদের সবাইকে বের করে দিয়ে রুম তালাবদ্ধ করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন।

আবাসিক শিক্ষক ও কক্ষ বরাদ্দ বিষয়ক কমিটির আহবায়ক আইনুল ইসলাম বলেন, নিঃসন্দেহে শিক্ষকদের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা একটি অপরাধ। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডিকে জানানো হয়েছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিষদের সভায়ও আমরা জানাবো। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে নিশ্চয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাসুদুর রহমান বলেন, হল কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে রুমটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে রুমটি বৈধ শিক্ষার্থীর কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।