দেশ স্বাধীনের পর অনিয়মিত ছাত্র সংসদ: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

লেখক, সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের সময়ে টিকে থাকলেও অনিয়মিত হয়ে যায় বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর। সামরিক শাসনামলে তিনবার নির্বাচন হলেও ১৯৯১ সালের পর সেটি বন্ধ হয়ে যায়। ২৮ বছর পর ২০১৯ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও নির্বাচিতরা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাকে সাংস্কৃতিক কর্মে মুখর করে রাখতে পেরেছে- এমন নয়।

শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মোজাফ্‌ফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে প্রয়াত অধ্যাপক আহমদ কবির প্রথম স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করে সমাজ রূপায়ণ অধ্যয়ন কেন্দ্র। এতে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ: বিচারের দুই নিরিখে’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ক্লাব আছে, তাদের এবং বিভাগীয় উদ্যোগেও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়; কিন্তু এরা মোটেই ছাত্র সংসদের বিকল্প নয়। সাংস্কৃতিক জীবন শিক্ষাজীবনের শুধু যে পরিপূরক তাই নয়, একে অপরের জন্য সহায়কও বটে। সাংস্কৃতিক জীবন সজীব না থাকলে শিক্ষাজীবনের স্বাস্থ্যও দুর্বল হতে বাধ্য।

 

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ১৯২৩ সালে প্রথম সমাবর্তনে গভর্নর লর্ড লিটন ভাষণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে ঢাকার খ্যাতি বৃদ্ধি করা ও সেই খ্যাতিকে ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে দেওয়াটা অনেকাংশেই পূরণ হয়েছিল। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয় মুসলিম শিক্ষার কেন্দ্র হবে- এই প্রত্যাশাটি মোটেই পূরণ হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মক্কা বিশ্ববিদ্যালয় না হয়ে একটি পাক্কা বিশ্ববিদ্যালয়ই হয়েছে। এখানে জ্ঞানের অনিয়ন্ত্রিত ও অব্যাহত চর্চা সম্ভব হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতারই একটি সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে গড়ে উঠেছে।

 

দেশ ভাগ-পরবর্তী ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে এ অধ্যাপক বলেন, দেশ ভাগের পর শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীদেরও বড় একটা অংশ দেশত্যাগ করলেন। বিশ্ববিদ্যালয় আর আগের মতো রইল না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নানা পেশায় এবং বহু দেশে ছড়িয়ে পড়েছেন। গৌরব অর্জন করেছেন। শিক্ষক, আইনজীবী, বিজ্ঞানী, রাজনীতিক, গবেষক হিসেবে তাঁরা পূর্ববঙ্গে তো অবশ্যই, পশ্চিমবঙ্গে এবং ভারতের নানা প্রদেশে নিজেদের যোগ্যতা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ব্রাহ্মণ্যবাদী মহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে উদারতার সঙ্গে গ্রহণ করতে না পারার মনোভাবটা রয়েই গেছে।

তিনি বলেন, এটা ঠিক যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে এগোচ্ছিল, সেভাবে এগোতে পারেনি। ইতিহাসের ধারাবাহিকতার ছেদ ঘটেছে, ঐতিহ্যের সঠিক সম্প্রসারণ ঘটেনি। স্বভাবগতভাবে রাষ্ট্র বিশ্ববিদ্যালয়কে পছন্দ করে না। রাষ্ট্র চায় আনুগত্য, বিশ্ববিদ্যালয় চায় মুক্তি। দুইয়ের ভেতর বিরোধ তাই অনিবার্য।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, অভিযোগ আছে যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান এখন আর আগের মতো নেই, নেমে গেছে। গবেষণা যে হচ্ছে না, এটা মোটেই সত্য নয়; গবেষণা অবশ্যই চলছে, বহু শিক্ষার্থী পিএইচডি ডিগ্রি পাচ্ছে; শিক্ষকরা গবেষণা করছেন, তাঁদের প্রকাশনাও আছে; বিভাগীয় ও অনুষদীয় জার্নালও বের হয়। হয়তো আরও হলে ভালো হতো।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আহমদ কবিরকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা ক্রান্তিলগ্নের ইতিহাস তুলে ধরেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।

দেশ স্বাধীনের পর অনিয়মিত ছাত্র সংসদ: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

লেখক, সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের সময়ে টিকে থাকলেও অনিয়মিত হয়ে যায় বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর। সামরিক শাসনামলে তিনবার নির্বাচন হলেও ১৯৯১ সালের পর সেটি বন্ধ হয়ে যায়। ২৮ বছর পর ২০১৯ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও নির্বাচিতরা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাকে সাংস্কৃতিক কর্মে মুখর করে রাখতে পেরেছে- এমন নয়।

শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মোজাফ্‌ফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে প্রয়াত অধ্যাপক আহমদ কবির প্রথম স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করে সমাজ রূপায়ণ অধ্যয়ন কেন্দ্র। এতে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ: বিচারের দুই নিরিখে’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ক্লাব আছে, তাদের এবং বিভাগীয় উদ্যোগেও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়; কিন্তু এরা মোটেই ছাত্র সংসদের বিকল্প নয়। সাংস্কৃতিক জীবন শিক্ষাজীবনের শুধু যে পরিপূরক তাই নয়, একে অপরের জন্য সহায়কও বটে। সাংস্কৃতিক জীবন সজীব না থাকলে শিক্ষাজীবনের স্বাস্থ্যও দুর্বল হতে বাধ্য।

 

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ১৯২৩ সালে প্রথম সমাবর্তনে গভর্নর লর্ড লিটন ভাষণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে ঢাকার খ্যাতি বৃদ্ধি করা ও সেই খ্যাতিকে ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে দেওয়াটা অনেকাংশেই পূরণ হয়েছিল। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয় মুসলিম শিক্ষার কেন্দ্র হবে- এই প্রত্যাশাটি মোটেই পূরণ হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মক্কা বিশ্ববিদ্যালয় না হয়ে একটি পাক্কা বিশ্ববিদ্যালয়ই হয়েছে। এখানে জ্ঞানের অনিয়ন্ত্রিত ও অব্যাহত চর্চা সম্ভব হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতারই একটি সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে গড়ে উঠেছে।

 

দেশ ভাগ-পরবর্তী ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে এ অধ্যাপক বলেন, দেশ ভাগের পর শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীদেরও বড় একটা অংশ দেশত্যাগ করলেন। বিশ্ববিদ্যালয় আর আগের মতো রইল না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নানা পেশায় এবং বহু দেশে ছড়িয়ে পড়েছেন। গৌরব অর্জন করেছেন। শিক্ষক, আইনজীবী, বিজ্ঞানী, রাজনীতিক, গবেষক হিসেবে তাঁরা পূর্ববঙ্গে তো অবশ্যই, পশ্চিমবঙ্গে এবং ভারতের নানা প্রদেশে নিজেদের যোগ্যতা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ব্রাহ্মণ্যবাদী মহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে উদারতার সঙ্গে গ্রহণ করতে না পারার মনোভাবটা রয়েই গেছে।

তিনি বলেন, এটা ঠিক যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে এগোচ্ছিল, সেভাবে এগোতে পারেনি। ইতিহাসের ধারাবাহিকতার ছেদ ঘটেছে, ঐতিহ্যের সঠিক সম্প্রসারণ ঘটেনি। স্বভাবগতভাবে রাষ্ট্র বিশ্ববিদ্যালয়কে পছন্দ করে না। রাষ্ট্র চায় আনুগত্য, বিশ্ববিদ্যালয় চায় মুক্তি। দুইয়ের ভেতর বিরোধ তাই অনিবার্য।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, অভিযোগ আছে যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান এখন আর আগের মতো নেই, নেমে গেছে। গবেষণা যে হচ্ছে না, এটা মোটেই সত্য নয়; গবেষণা অবশ্যই চলছে, বহু শিক্ষার্থী পিএইচডি ডিগ্রি পাচ্ছে; শিক্ষকরা গবেষণা করছেন, তাঁদের প্রকাশনাও আছে; বিভাগীয় ও অনুষদীয় জার্নালও বের হয়। হয়তো আরও হলে ভালো হতো।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আহমদ কবিরকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা ক্রান্তিলগ্নের ইতিহাস তুলে ধরেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।