বছরের শুরুটা এবার ভালো যায়নি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। অন্যান্য বছর শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনে পুরো বই পেলেও এবার পায়নি। আর নতুন শিক্ষাক্রমে যাত্রা শুরু হলেও প্রশিক্ষণ ছাড়াই শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়েছে। পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়াই এভাবে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। প্রশিক্ষণ নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
নতুন শিক্ষাক্রমের কারণে বদলে গেছে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পুরো বই। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে আসবে ভিন্নতা। শিক্ষার্থী মূল্যায়ন পদ্ধতিতে রয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন। তাই শিক্ষক প্রশিক্ষণ ছাড়া এই তিন শ্রেণির পাঠদান কোনো ফল বয়ে আনবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিবি) নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করলেও মাধ্যমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের কাজটি বাস্তবায়ন করার কথা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি)। পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত বছরের অক্টোবর মাসে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ৬৪ জেলায় প্রতি বিষয়ে তিন জন করে ‘কোর প্রশিক্ষক’ এবং নভেম্বর মাসে ‘কোর প্রশিক্ষকেরা’ নিজ জেলার প্রতিটি উপজেলায় প্রতি বিষয়ে তিন জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিয়ে বাছাই করার কথা ছিল। এরপর মাধ্যমিক স্কুলের প্রায় ৪ লাখ এবং প্রাথমিকে ৩ লাখ ৭৭ হাজার শিক্ষককে গত বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এ বছরের মধ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষা বিভাগ এই প্রশিক্ষণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এই সময়ে মাত্র ১৮ হাজার কোর শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিতে পেরেছে সরকার।
এখন প্রশিক্ষণ চলছে। শিক্ষকদের প্রথম পর্যায়ের প্রশিক্ষণ পেতে জানুয়ারির ১৫ তারিখ পর্যন্ত লেগে যাবে। ইতিমধ্যে গত ৬ ও ৭ জানুয়ারি দুই দিনের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন শিক্ষকরা। বাকি প্রশিক্ষণ হবে আগামী ১৩, ১৪ ও ১৫ জানুয়ারি। শিক্ষকরা বিষয়ভিত্তিক এই পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণ পাবেন। কিন্তু কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকরা কবে প্রশিক্ষণ পাবেন তা এখনো বলতে পারছে না শিক্ষা বিভাগ।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) অধ্যাপক প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, কিন্ডারগার্টেনের প্রশিক্ষণের বিষয় এখনো ভাবিনি। প্রথমে ‘আমাদের’ শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শেষ করে তারপর ভাবব, কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেব কি না।
কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে অনেক পরিবর্তন আসছে। যা প্রশিক্ষণ ছাড়া পাঠদান ও মূল্যায়ন সম্ভব নয়। কিন্তু কিন্ডারগার্টেনের ৪ লাখ শিক্ষকের বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা নেই। প্রশিক্ষণ পেতে দেরি হলে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়বে। তাই দ্বিতীয় ধাপে হলেও তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তিনি জানান, দেশে ৩০ হাজারের মতো কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। এর বেশির ভাগেই ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে পাঠদান হচ্ছে। নিয়মিত বই পায় এসব কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীরা।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, আমাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১ কোটি শিক্ষার্থী কিন্ডারগার্টেনে পড়ে। যেখানে ১০ লাখের মতো শিক্ষক রয়েছেন। এসব শিক্ষককে নতুন এই শিক্ষাক্রমের আওতায় প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য সব জেলাতে আবেদন করেছি। শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবরেও আবেদন করেছি। বাংলাদেশে বিশাল সেক্টরকে বাদ দিয়ে, প্রশিক্ষণের বাইরে রেখে এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে তিনি মত দেন।