নিয়মে ফিরে উল্টো বিপাক

পিএসসির খেসারত

আশরাফুল হক

দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা না দিলে বিপদে পড়তে হয়। তেমনি নিয়ম থাকতেও নিয়ম না মেনে এখন সেই নিয়মে ফিরতে গিয়ে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) বিপদে পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সাংবিধানিক এ সংস্থাটিকে ঘিরে খুব একটা বিতর্ক ছিল না। কিন্তু এখন সেই পিএসসির সামনে শত শত চাকরিপ্রার্থী বিক্ষোভ করছেন।

এই বিক্ষোভের নেপথ্যে রয়েছে বিক্ষোভকারীদের স্বার্থ, পিএসসির নিয়ম না মানা এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তদারকির অভাব। এসব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিয়ম হচ্ছে ক্যাডার পদের পাশাপাশি নন-ক্যাডার পদের সংখ্যাও বিসিএসের বিজ্ঞাপনে উল্লেখ থাকবে। কিন্তু সেই পথে না হেঁটে পিএসসি শুধু বিভিন্ন ক্যাডারের শূন্য পদের সংখ্যা উল্লেখ করে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে। আর নন-ক্যাডারের শূন্য পদের তথ্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি নেয়। এবার অব্যাহতি না নিয়ে নিয়মে ফিরতে গিয়েই বিপত্তির মধ্যে পড়েছে পিএসসি।

গত ১ নভেম্বর ৪০তম বিসিএসে ১ হাজার ৯২৯ জনকে নিয়োগ দেয় জনপ্রশাসন। এর আগে ক্যাডার পদে ১ হাজার ৯৬৩ পদে সুপারিশ করে পিএসসি। এই সুপারিশের পরই নন-ক্যাডারে সুপারিশ করার কাজ শুরু হয়। রেওয়াজ অনুযায়ী, সংস্থাটি নন-ক্যাডারের যেসব শূন্য পদের চাহিদা পেয়েছে বা জমিয়েছে, তা ৪০তম বিসিএস থেকেই সুপারিশ করার কথা। কিন্তু পিএসসি নিয়মে ফেরার জন্য ৪০তম বিসিএসকে পাস কাটিয়ে ৪৫তম বিসিএস থেকে সুপারিশ করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়। এ মাসেই ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞাপন প্রকাশ করার কথা, যেখানে নন-ক্যাডারের শূন্য পদের সংখ্যা উল্লেখ থাকবে। পিএসসির প্রাথমিক এ সিদ্ধান্তে ৪০তম বিসিএসে যারা নন-ক্যাডারের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছেন, তারা বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

হাতের মুঠোয় পেয়েও চাকরি নামের সোনার হরিণ না পাওয়ার আশঙ্কায় তারা রাজপথ বেছে নিয়েছেন। গত ৩০ অক্টোবর থেকে তারা কমিশনের সামনে অবস্থান নেন।

৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডারের একজন চাকরিপ্রার্থী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা শুনেছি ৪০তম বিসিএস থেকেও নন-ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়া হবে। ঠিক কতজনকে দেওয়া হবে তা জানাচ্ছে না পিএসসি। আমরা বিসিএস পাস করে নন-ক্যাডারের জন্য অপেক্ষা করছি ৮ হাজার ১৬৬ জন। সবাইকে চাকরির জন্য সুপারিশ করতে হবে। তা না হলে আমরা ঘরে ফিরব না। কাজেই ৪০তম বিসিএসকে বেশি পদ দেওয়া হলেও শিগগিরই সমাধান হচ্ছে না বলেই আমার মনে হচ্ছে।’

প্রচলিত ধারায় বিসিএস উত্তীর্ণদের নন-ক্যাডারে নিয়োগের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে, যারা নিয়োগ পাচ্ছেন, তারা তাদের পছন্দ অনুযায়ী দপ্তরে চাকরি পাচ্ছেন না। নন-ক্যাডারদের মধ্যে মেধাতালিকায় শীর্ষে অবস্থানকারীরা যে দপ্তর আগে চাহিদা বা অধিযাচনপত্র দেয়, সেখানেই চাকরি পান। এই সুযোগে মেধাতালিকার নিচে অবস্থান করেও অনেকে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে চাকরি পাচ্ছেন। এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে হলে বিজ্ঞাপনে ক্যাডার পদের মতো নন-ক্যাডারেরও শূন্য পদের সংখ্যা উল্লেখ করতে হবে। বিজ্ঞাপন অনুযায়ী চাকরির আবেদনেই দপ্তর বা পদের নাম জানাতে হবে।

সরকারি দপ্তরে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ হয় তিন প্রক্রিয়ায়। সরাসরি সংশ্লিষ্ট সংস্থা নিয়োগ দেয়, পিএসসি নিজেও সরাসরি সুপারিশ করে এবং বিসিএস-উত্তীর্ণ কিন্তু ক্যাডার পদ স্বল্পতার কারণেও নন-ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশও করে পিএসসি। একই পদে তিন ধারার জনবল থাকায় কে সিনিয়র আর কে জুনিয়র, তা নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। সিনিয়রিটির এই সংকট সমাধানে জনপ্রশাসন দুই দফা আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে সমাধান দিলেও অনেক দপ্তর তা মানছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

সময় বেশি লাগাও আরেকটি সমস্যা। একটা বিসিএসের ক্যাডার পদে সুপারিশ করার পর শুরু হয় নন-ক্যাডারের নিয়োগ কার্যক্রম। পরের বিসিএসের সুপারিশ করা পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলতে থাকে। এটা কখনো এক বছর, দুই বা তিন বছরও চলতে থাকে। এভাবে নন-ক্যাডারের নিয়োগ কার্যক্রম চালাতে গিয়ে পিএসসির কাজও গতিহীন হয়ে পড়ে। এই সমস্যা সমাধানের সূত্র খুঁজতে গিয়েই পিএসসি বুঝতে পারে সরকার যে বিধিমালা করে দিয়েছে, সেই বিধিমালাতেই এ সমস্যার সমাধান রয়েছে; অর্থাৎ পিএসসি যদি বিসিএসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাডারের মতো নন-ক্যাডারের পদের সংখ্যা উল্লেখ করে দেয়, তাহলে এই সমস্যা থেকে সহজেই বের হয়ে আসতে পারবে। ঠিক এ কারণেই পিএসসি ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞাপনে ক্যাডার পদের পাশাপাশি নন-ক্যাডার পদের পদসংখ্যা উল্লেখ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

৪০তম বিসিএসের মতো একইভাবে বঞ্চিত হবেন ৪১, ৪৩ ও ৪৪তম সাধারণ বিসিএসের প্রার্থীরাও। কারণ ৪৫তম বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়া চলতে থাকা অবস্থাতেই শুরু হবে ৪৬ বা তার পরের সাধারণ বিসিএসের প্রক্রিয়া। তখন ৪১তম বিসিএসের উত্তীর্ণ নন-ক্যাডার প্রার্থীরাও একইভাবে তাদের নিয়োগ দাবি করবেন। ধারাবাহিকভাবে ৪৩ বা ৪৪তম বিসিএসেও একই সংকট দেখা দেবে।

প্রশ্ন হচ্ছে, পাবলিক সার্ভিস কমিশন কোন প্রক্রিয়ায় এ সমস্যার সমাধান করবে। পিএসসি সঠিক অবস্থানে থাকলেও ৪০তম বিসিএসে যারা উত্তীর্ণ হয়ে ক্যাডার না পেয়ে নন-ক্যাডারে নিয়োগের জন্য অপেক্ষা করছেন, তাদের বিষয়টিও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখছে পিএসসি। এ কারণে পিএসসি এবং চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থান বিপরীতমুখী হলেও সমস্যার সমাধানে আন্তরিক কমিশন।

পিএসসির চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চাকরিপ্রার্থীদের চাকরির জন্য সুপারিশ করাই আমাদের কাজ। আমরা কারও প্রতিপক্ষ নই। সবার স্বার্থেই আমাদের একটা নিয়মে আসতে হবে।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪০, ৪১, ৪৩ ও ৪৪তম বিসিএসের নন-ক্যাডার প্রার্থীরাও নিয়োগের সুপারিশ পাবেন। এখন দেখা যাক, পিএসসি কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়।

২৮তম বিসিএস থেকে ক্যাডার কর্মকর্তাদের সঙ্গে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিয়োগের বিষয়টি যুক্ত করা হয়। ফলে উপকৃত হয় দেশের শিক্ষিত বেকার, পাশাপাশি সরকারও। বেকাররা চাকরি পেয়ে আর সরকার শূন্য পদে জনবল পেয়ে লাভবান হয়েছে। এই দুইয়ের লাভের ফলে সেবা পেয়ে উপকৃত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

কিন্তু এখন যে সংকট তৈরি হয়েছে তা থেকে পিএসসি কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মো. ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডারের জন্য যারা যোগ্য, তাদের চাকরি দিতে হবে। পাশাপাশি ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞাপনেও নন-ক্যাডার পদের সংখ্যা উল্লেখ করতে হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, অল্প সময়ের মধ্যে সরকার কীভাবে এত শূন্য পদের সন্ধান পাবে। এ ক্ষেত্রে বিধিবদ্ধ সংস্থাগুলোর নিয়োগও পিএসসির আওতায় আনা যায়। তাদের কাছ থেকে সাত দিনের মধ্যে শূন্য পদের তথ্য এনে তা ৪৫তম বিসিএসের মাধ্যমে পূরণ করা যেতে পারে।’

ফিরোজ মিয়া আরও বলেন, দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর যারা নিয়োগের জন্য অপেক্ষা করছেন, সেই মুহূর্তে তাদের বঞ্চিত করা ‘মুখের গ্রাস কেড়ে নেওয়ার মতো’। এ কারণে বিক্ষোভকারীদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দিতে হবে। আবার ৪৫তম বিসিএস থেকেই সমস্যার সমাধান করতে হবে।

নিয়মে ফিরে উল্টো বিপাক

পিএসসির খেসারত

আশরাফুল হক

দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা না দিলে বিপদে পড়তে হয়। তেমনি নিয়ম থাকতেও নিয়ম না মেনে এখন সেই নিয়মে ফিরতে গিয়ে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) বিপদে পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সাংবিধানিক এ সংস্থাটিকে ঘিরে খুব একটা বিতর্ক ছিল না। কিন্তু এখন সেই পিএসসির সামনে শত শত চাকরিপ্রার্থী বিক্ষোভ করছেন।

এই বিক্ষোভের নেপথ্যে রয়েছে বিক্ষোভকারীদের স্বার্থ, পিএসসির নিয়ম না মানা এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তদারকির অভাব। এসব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিয়ম হচ্ছে ক্যাডার পদের পাশাপাশি নন-ক্যাডার পদের সংখ্যাও বিসিএসের বিজ্ঞাপনে উল্লেখ থাকবে। কিন্তু সেই পথে না হেঁটে পিএসসি শুধু বিভিন্ন ক্যাডারের শূন্য পদের সংখ্যা উল্লেখ করে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে। আর নন-ক্যাডারের শূন্য পদের তথ্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি নেয়। এবার অব্যাহতি না নিয়ে নিয়মে ফিরতে গিয়েই বিপত্তির মধ্যে পড়েছে পিএসসি।

গত ১ নভেম্বর ৪০তম বিসিএসে ১ হাজার ৯২৯ জনকে নিয়োগ দেয় জনপ্রশাসন। এর আগে ক্যাডার পদে ১ হাজার ৯৬৩ পদে সুপারিশ করে পিএসসি। এই সুপারিশের পরই নন-ক্যাডারে সুপারিশ করার কাজ শুরু হয়। রেওয়াজ অনুযায়ী, সংস্থাটি নন-ক্যাডারের যেসব শূন্য পদের চাহিদা পেয়েছে বা জমিয়েছে, তা ৪০তম বিসিএস থেকেই সুপারিশ করার কথা। কিন্তু পিএসসি নিয়মে ফেরার জন্য ৪০তম বিসিএসকে পাস কাটিয়ে ৪৫তম বিসিএস থেকে সুপারিশ করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়। এ মাসেই ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞাপন প্রকাশ করার কথা, যেখানে নন-ক্যাডারের শূন্য পদের সংখ্যা উল্লেখ থাকবে। পিএসসির প্রাথমিক এ সিদ্ধান্তে ৪০তম বিসিএসে যারা নন-ক্যাডারের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছেন, তারা বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

হাতের মুঠোয় পেয়েও চাকরি নামের সোনার হরিণ না পাওয়ার আশঙ্কায় তারা রাজপথ বেছে নিয়েছেন। গত ৩০ অক্টোবর থেকে তারা কমিশনের সামনে অবস্থান নেন।

৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডারের একজন চাকরিপ্রার্থী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা শুনেছি ৪০তম বিসিএস থেকেও নন-ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়া হবে। ঠিক কতজনকে দেওয়া হবে তা জানাচ্ছে না পিএসসি। আমরা বিসিএস পাস করে নন-ক্যাডারের জন্য অপেক্ষা করছি ৮ হাজার ১৬৬ জন। সবাইকে চাকরির জন্য সুপারিশ করতে হবে। তা না হলে আমরা ঘরে ফিরব না। কাজেই ৪০তম বিসিএসকে বেশি পদ দেওয়া হলেও শিগগিরই সমাধান হচ্ছে না বলেই আমার মনে হচ্ছে।’

প্রচলিত ধারায় বিসিএস উত্তীর্ণদের নন-ক্যাডারে নিয়োগের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে, যারা নিয়োগ পাচ্ছেন, তারা তাদের পছন্দ অনুযায়ী দপ্তরে চাকরি পাচ্ছেন না। নন-ক্যাডারদের মধ্যে মেধাতালিকায় শীর্ষে অবস্থানকারীরা যে দপ্তর আগে চাহিদা বা অধিযাচনপত্র দেয়, সেখানেই চাকরি পান। এই সুযোগে মেধাতালিকার নিচে অবস্থান করেও অনেকে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে চাকরি পাচ্ছেন। এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে হলে বিজ্ঞাপনে ক্যাডার পদের মতো নন-ক্যাডারেরও শূন্য পদের সংখ্যা উল্লেখ করতে হবে। বিজ্ঞাপন অনুযায়ী চাকরির আবেদনেই দপ্তর বা পদের নাম জানাতে হবে।

সরকারি দপ্তরে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ হয় তিন প্রক্রিয়ায়। সরাসরি সংশ্লিষ্ট সংস্থা নিয়োগ দেয়, পিএসসি নিজেও সরাসরি সুপারিশ করে এবং বিসিএস-উত্তীর্ণ কিন্তু ক্যাডার পদ স্বল্পতার কারণেও নন-ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশও করে পিএসসি। একই পদে তিন ধারার জনবল থাকায় কে সিনিয়র আর কে জুনিয়র, তা নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। সিনিয়রিটির এই সংকট সমাধানে জনপ্রশাসন দুই দফা আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে সমাধান দিলেও অনেক দপ্তর তা মানছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

সময় বেশি লাগাও আরেকটি সমস্যা। একটা বিসিএসের ক্যাডার পদে সুপারিশ করার পর শুরু হয় নন-ক্যাডারের নিয়োগ কার্যক্রম। পরের বিসিএসের সুপারিশ করা পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলতে থাকে। এটা কখনো এক বছর, দুই বা তিন বছরও চলতে থাকে। এভাবে নন-ক্যাডারের নিয়োগ কার্যক্রম চালাতে গিয়ে পিএসসির কাজও গতিহীন হয়ে পড়ে। এই সমস্যা সমাধানের সূত্র খুঁজতে গিয়েই পিএসসি বুঝতে পারে সরকার যে বিধিমালা করে দিয়েছে, সেই বিধিমালাতেই এ সমস্যার সমাধান রয়েছে; অর্থাৎ পিএসসি যদি বিসিএসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাডারের মতো নন-ক্যাডারের পদের সংখ্যা উল্লেখ করে দেয়, তাহলে এই সমস্যা থেকে সহজেই বের হয়ে আসতে পারবে। ঠিক এ কারণেই পিএসসি ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞাপনে ক্যাডার পদের পাশাপাশি নন-ক্যাডার পদের পদসংখ্যা উল্লেখ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

৪০তম বিসিএসের মতো একইভাবে বঞ্চিত হবেন ৪১, ৪৩ ও ৪৪তম সাধারণ বিসিএসের প্রার্থীরাও। কারণ ৪৫তম বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়া চলতে থাকা অবস্থাতেই শুরু হবে ৪৬ বা তার পরের সাধারণ বিসিএসের প্রক্রিয়া। তখন ৪১তম বিসিএসের উত্তীর্ণ নন-ক্যাডার প্রার্থীরাও একইভাবে তাদের নিয়োগ দাবি করবেন। ধারাবাহিকভাবে ৪৩ বা ৪৪তম বিসিএসেও একই সংকট দেখা দেবে।

প্রশ্ন হচ্ছে, পাবলিক সার্ভিস কমিশন কোন প্রক্রিয়ায় এ সমস্যার সমাধান করবে। পিএসসি সঠিক অবস্থানে থাকলেও ৪০তম বিসিএসে যারা উত্তীর্ণ হয়ে ক্যাডার না পেয়ে নন-ক্যাডারে নিয়োগের জন্য অপেক্ষা করছেন, তাদের বিষয়টিও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখছে পিএসসি। এ কারণে পিএসসি এবং চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থান বিপরীতমুখী হলেও সমস্যার সমাধানে আন্তরিক কমিশন।

পিএসসির চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চাকরিপ্রার্থীদের চাকরির জন্য সুপারিশ করাই আমাদের কাজ। আমরা কারও প্রতিপক্ষ নই। সবার স্বার্থেই আমাদের একটা নিয়মে আসতে হবে।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪০, ৪১, ৪৩ ও ৪৪তম বিসিএসের নন-ক্যাডার প্রার্থীরাও নিয়োগের সুপারিশ পাবেন। এখন দেখা যাক, পিএসসি কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়।

২৮তম বিসিএস থেকে ক্যাডার কর্মকর্তাদের সঙ্গে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিয়োগের বিষয়টি যুক্ত করা হয়। ফলে উপকৃত হয় দেশের শিক্ষিত বেকার, পাশাপাশি সরকারও। বেকাররা চাকরি পেয়ে আর সরকার শূন্য পদে জনবল পেয়ে লাভবান হয়েছে। এই দুইয়ের লাভের ফলে সেবা পেয়ে উপকৃত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

কিন্তু এখন যে সংকট তৈরি হয়েছে তা থেকে পিএসসি কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মো. ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডারের জন্য যারা যোগ্য, তাদের চাকরি দিতে হবে। পাশাপাশি ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞাপনেও নন-ক্যাডার পদের সংখ্যা উল্লেখ করতে হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, অল্প সময়ের মধ্যে সরকার কীভাবে এত শূন্য পদের সন্ধান পাবে। এ ক্ষেত্রে বিধিবদ্ধ সংস্থাগুলোর নিয়োগও পিএসসির আওতায় আনা যায়। তাদের কাছ থেকে সাত দিনের মধ্যে শূন্য পদের তথ্য এনে তা ৪৫তম বিসিএসের মাধ্যমে পূরণ করা যেতে পারে।’

ফিরোজ মিয়া আরও বলেন, দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর যারা নিয়োগের জন্য অপেক্ষা করছেন, সেই মুহূর্তে তাদের বঞ্চিত করা ‘মুখের গ্রাস কেড়ে নেওয়ার মতো’। এ কারণে বিক্ষোভকারীদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দিতে হবে। আবার ৪৫তম বিসিএস থেকেই সমস্যার সমাধান করতে হবে।