পরীক্ষার খাতায় অদ্ভুত নম্বর!

নাঈমুর রহমান রিজভী
পরীক্ষা ১০ নম্বরের। দুই শিক্ষার্থী পেয়েছেন ০.৩৩ ও ০.৬৭। অবাক করা এমন নম্বর পেয়েছেন কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক শ্রেণির প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের দুই শিক্ষার্থী। অষ্টম সেমিস্টারের একটি কোর্সের মিডটার্ম পরীক্ষায় তাদের খাতা মূল্যায়ন করে এ নম্বর দিয়েছেন শিক্ষক।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সেশনজট নিরসন ও একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করায় এ দুই শিক্ষার্থীর মিডটার্ম পরীক্ষায় নম্বর কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ অভিযোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মুর্শেদ রায়হানের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক মুর্শেদ রায়হান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এটা শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বিষয়, সাংবাদিকদের কাছে গেল কেন? শিক্ষার্থীরা যা লিখেছে, সে অনুযায়ী নম্বর পেয়েছে। এ বিষয়ে যদি তাদের কোনো অভিযোগ থেকেও থাকে তাহলে বিভাগের ছাত্র উপদেষ্টা, চেয়ারম্যান আছেন এবং কোর্স টিচার আছেন, একাডেমিকভাবে সমাধান হতে পারত।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ট্যুরিজম অ্যান্ড হেরিটেজ ম্যানেজমেন্ট কোর্স (এআরসি-৪২৩) পড়ান মুর্শেদ রায়হান। চূড়ান্ত পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার দেড় মাসেও ইনকোর্সে ফলাফল দিতে পারেননি কোনো শিক্ষক। এর মধ্যে ২৩ অক্টোবর এআরসি-৪২৩ কোর্সের ইনকোর্স ফলাফল প্রকাশ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, ১০ নম্বরের মিডটার্ম পরীক্ষায় ১১৭১৬০৩৬ ও ১১৭১৬০১০ রোলধারী শিক্ষার্থীরা যথাক্রমে ০.৩৩ ও ০.৬৭ নম্বর পেয়েছেন। ২ নম্বরের নিচে ১৩ জন, ২১ জনকে ৩-৪ নম্বরের নিচে দেওয়া হয়েছে। গত ২৩ অক্টোবর পরীক্ষার ফলাফল দেওয়া হয়। এরপর মঙ্গলবার রাতে নম্বরপত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা। তারা মনে করছেন, বিভাগের সেশনজট নিয়ে বারবার আন্দোলন করায় নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে এমন বৈষম্য করেছেন শিক্ষক।জানা যায়, বিভাগটিতে শুরু থেকে সেশনজটের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে ২০১৯ ও ২০২১ সালে দুই দফা আন্দোলন করেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। সে সময় শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে সেশনজট দ্রুত নিরসনের আশ্বাস দেওয়া হয়। ২০২১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর আন্দোলন করা ও ফেসবুকে লেখালেখি করায় ১১তম ব্যাচের ৪০ শিক্ষার্থীকে শোকজ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে ওই সময় প্রতিবাদ করেন শিক্ষার্থীরা।
প্রতœতত্ত্ব বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী দেশ রূপান্তরকে বলেন, সেশনজট নিয়ে আন্দোলন, দ্রুত পরীক্ষা নেওয়ার দাবি এবং শিক্ষকদের সিন্ডিকেট রাজনীতির কবলে পড়তে হয়েছে তাদের। পরিচিত একটি কোর্সের মিডটার্মে ০.৩৩, ০.৬৭ দেওয়া স্পষ্ট করে দেয়, শিক্ষকের ব্যক্তিগত ক্ষোভ-আক্রোশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা প্রথম চার বছরে পাঁচটা সেমিস্টার দিয়েছিলাম। তখন থেকে দ্রুত পরীক্ষা নেওয়ার দাবি করে আসছি। এ কারণে শিক্ষকরা আমাদের সঙ্গে ক্লাসে, পরীক্ষায় বিমাতাসুলভ আচরণ করে আসছেন।’ তাদের অভিযোগ, সহকারী অধ্যাপক মুর্শেদ রায়হান কোনো ধরনের নিয়ম মানেন না। হাতে লেখা অ্যাসাইনমেন্ট করতে বাধ্য করেন, সেমিস্টারের এক দিন আগে মিডটার্ম পরীক্ষা নেন। অথচ জুলাইয়ে এ সেমিস্টার শেষ করার কথা ছিল।
সেমিস্টার শেষ করার বিষয়ে জানতে চাইলে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ড. মাহামুদুল হাসান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ সময় দুটি বন্ধ থাকায় এক মাস পেছাতে হয়। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।’
এদিকে সেমিস্টার ফাইনালের আগে ইনকোর্সের রেজাল্ট দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানেননি কোনো কোর্স শিক্ষক। এ ব্যাপারে ড. মাহামুদুল বলেন, ‘ইনকোর্সের রেজাল্ট শিট দিয়েই ওই শিক্ষক সেমিস্টারের খাতা নিয়েছেন। এখানে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি।’
বিভাগটির সভাপতি ড. মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দীন বলেন, ‘শিক্ষকরা গার্ডিয়ানের মতো। আমার মনে হয় না, কোনো শিক্ষক ব্যক্তিগত ক্ষোভ শিক্ষার্থীর ওপর তুলবে। ওরা আমাদের শিক্ষার্থীর পাশাপাশি ছোট ভাইবোনও। তবে কোর্স টিচারের এখতিয়ার আছে কেমন নম্বর দেবে। শিক্ষার্থীরা যে রকম লিখেছে, হয়তো সে রকম নম্বর পেয়েছে। এ ব্যাপারে কোর্স টিচারই ভালো বলতে পারবে।’
এ বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে সাড়া না পেয়ে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। তাতেও তিনি সাড়া দেননি।
তবে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইনকোর্সের পরীক্ষায় এমন রেজাল্ট তো অস্বাভাবিক। শিক্ষকের এমন আচরণ কাম্য নয়। আমি বিভাগের চেয়ারম্যান ও কোর্স টিচারের সঙ্গে কথা বলে ব্যাপারটি জানার এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করব।’

পরীক্ষার খাতায় অদ্ভুত নম্বর!

নাঈমুর রহমান রিজভী
পরীক্ষা ১০ নম্বরের। দুই শিক্ষার্থী পেয়েছেন ০.৩৩ ও ০.৬৭। অবাক করা এমন নম্বর পেয়েছেন কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক শ্রেণির প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের দুই শিক্ষার্থী। অষ্টম সেমিস্টারের একটি কোর্সের মিডটার্ম পরীক্ষায় তাদের খাতা মূল্যায়ন করে এ নম্বর দিয়েছেন শিক্ষক।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সেশনজট নিরসন ও একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করায় এ দুই শিক্ষার্থীর মিডটার্ম পরীক্ষায় নম্বর কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ অভিযোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মুর্শেদ রায়হানের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক মুর্শেদ রায়হান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এটা শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বিষয়, সাংবাদিকদের কাছে গেল কেন? শিক্ষার্থীরা যা লিখেছে, সে অনুযায়ী নম্বর পেয়েছে। এ বিষয়ে যদি তাদের কোনো অভিযোগ থেকেও থাকে তাহলে বিভাগের ছাত্র উপদেষ্টা, চেয়ারম্যান আছেন এবং কোর্স টিচার আছেন, একাডেমিকভাবে সমাধান হতে পারত।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ট্যুরিজম অ্যান্ড হেরিটেজ ম্যানেজমেন্ট কোর্স (এআরসি-৪২৩) পড়ান মুর্শেদ রায়হান। চূড়ান্ত পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার দেড় মাসেও ইনকোর্সে ফলাফল দিতে পারেননি কোনো শিক্ষক। এর মধ্যে ২৩ অক্টোবর এআরসি-৪২৩ কোর্সের ইনকোর্স ফলাফল প্রকাশ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, ১০ নম্বরের মিডটার্ম পরীক্ষায় ১১৭১৬০৩৬ ও ১১৭১৬০১০ রোলধারী শিক্ষার্থীরা যথাক্রমে ০.৩৩ ও ০.৬৭ নম্বর পেয়েছেন। ২ নম্বরের নিচে ১৩ জন, ২১ জনকে ৩-৪ নম্বরের নিচে দেওয়া হয়েছে। গত ২৩ অক্টোবর পরীক্ষার ফলাফল দেওয়া হয়। এরপর মঙ্গলবার রাতে নম্বরপত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা। তারা মনে করছেন, বিভাগের সেশনজট নিয়ে বারবার আন্দোলন করায় নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে এমন বৈষম্য করেছেন শিক্ষক।জানা যায়, বিভাগটিতে শুরু থেকে সেশনজটের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে ২০১৯ ও ২০২১ সালে দুই দফা আন্দোলন করেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। সে সময় শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে সেশনজট দ্রুত নিরসনের আশ্বাস দেওয়া হয়। ২০২১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর আন্দোলন করা ও ফেসবুকে লেখালেখি করায় ১১তম ব্যাচের ৪০ শিক্ষার্থীকে শোকজ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে ওই সময় প্রতিবাদ করেন শিক্ষার্থীরা।
প্রতœতত্ত্ব বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী দেশ রূপান্তরকে বলেন, সেশনজট নিয়ে আন্দোলন, দ্রুত পরীক্ষা নেওয়ার দাবি এবং শিক্ষকদের সিন্ডিকেট রাজনীতির কবলে পড়তে হয়েছে তাদের। পরিচিত একটি কোর্সের মিডটার্মে ০.৩৩, ০.৬৭ দেওয়া স্পষ্ট করে দেয়, শিক্ষকের ব্যক্তিগত ক্ষোভ-আক্রোশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা প্রথম চার বছরে পাঁচটা সেমিস্টার দিয়েছিলাম। তখন থেকে দ্রুত পরীক্ষা নেওয়ার দাবি করে আসছি। এ কারণে শিক্ষকরা আমাদের সঙ্গে ক্লাসে, পরীক্ষায় বিমাতাসুলভ আচরণ করে আসছেন।’ তাদের অভিযোগ, সহকারী অধ্যাপক মুর্শেদ রায়হান কোনো ধরনের নিয়ম মানেন না। হাতে লেখা অ্যাসাইনমেন্ট করতে বাধ্য করেন, সেমিস্টারের এক দিন আগে মিডটার্ম পরীক্ষা নেন। অথচ জুলাইয়ে এ সেমিস্টার শেষ করার কথা ছিল।
সেমিস্টার শেষ করার বিষয়ে জানতে চাইলে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ড. মাহামুদুল হাসান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ সময় দুটি বন্ধ থাকায় এক মাস পেছাতে হয়। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।’
এদিকে সেমিস্টার ফাইনালের আগে ইনকোর্সের রেজাল্ট দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানেননি কোনো কোর্স শিক্ষক। এ ব্যাপারে ড. মাহামুদুল বলেন, ‘ইনকোর্সের রেজাল্ট শিট দিয়েই ওই শিক্ষক সেমিস্টারের খাতা নিয়েছেন। এখানে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি।’
বিভাগটির সভাপতি ড. মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দীন বলেন, ‘শিক্ষকরা গার্ডিয়ানের মতো। আমার মনে হয় না, কোনো শিক্ষক ব্যক্তিগত ক্ষোভ শিক্ষার্থীর ওপর তুলবে। ওরা আমাদের শিক্ষার্থীর পাশাপাশি ছোট ভাইবোনও। তবে কোর্স টিচারের এখতিয়ার আছে কেমন নম্বর দেবে। শিক্ষার্থীরা যে রকম লিখেছে, হয়তো সে রকম নম্বর পেয়েছে। এ ব্যাপারে কোর্স টিচারই ভালো বলতে পারবে।’
এ বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে সাড়া না পেয়ে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। তাতেও তিনি সাড়া দেননি।
তবে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইনকোর্সের পরীক্ষায় এমন রেজাল্ট তো অস্বাভাবিক। শিক্ষকের এমন আচরণ কাম্য নয়। আমি বিভাগের চেয়ারম্যান ও কোর্স টিচারের সঙ্গে কথা বলে ব্যাপারটি জানার এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করব।’