পাবিপ্রবিতে নারী বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসরীন আহমাদের স্মৃতিচারণ

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ। মঞ্চে উপস্থিত আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম মোস্তফা কামাল খান এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কে এম সালাহ্ উদ্দীন।

শিক্ষা-শিক্ষাঙ্গন ডেস্ক 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ ১৯৭১ সালের মে মাসের প্রথম দিকে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সাথে বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতায় গিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সাথে জড়িয়ে পড়েন।

পরবর্তীতে স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের কার্যক্রম, তাঁর নিজের অবদান সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন আজ শনিবার (৫ নভেম্বর) পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণমূলক এক অনুষ্ঠানে।
স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্র কিভাবে পরিচালিত হতো, অনুষ্ঠান নির্মাণ, প্রচারসহ সার্বিক কর্মকান্ড তুলে ধরেন তিনি। অনুষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠানে ১৯৭১-এর পূর্বাপর ঘটনাপ্রবাহ, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের গৌরবগাঁথা স্মৃতিচারণের সময় উপস্থিতদের মধ্যে ফিরে এসেছিল ১৯৭১-এর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যালারী ২ তে অনুষ্ঠানটি হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শব্দসৈনিক অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিক পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ও পরিবেশ বিজ্ঞানী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপ-উপাচার্য। স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের পাঠক ফোরামের সভাপতি।তিনি ১৯৭০ সালে ডাকসু নির্বাচনে কমনরুম বিষয়ক সম্পাদিকা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় জেরিনা আহমেদ ছদ্মনামে স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রে খবর পড়তেন। ১৯৬২ সাল থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও নাসরিন আহমাদের পরিবার ধানমন্ডিতে পাশাপাশি বাড়িতে থাকতেন। পরর্তীতে দুই পরিবারের ঘনিষ্ঠতা এবং সেই সুবাদে বঙ্গবন্ধুকে কাছ থেকে দেখা। নাসরিন আহমাদের পারিবারিক সেই বাড়িটি পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু যাদুঘরকে দান করে দেয় তাঁর পরিবার।

স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠানে নাসরীন আহমাদ বলেন, প্রথম দিকে স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের সাথে আমিনুল হক বাদশা, কামাল লোহানী, আলমগীর কুমকুম, পারভীন হোসেনসহ অনেকে জড়িত ছিলেন। কিছুদিনের মধ্যে এটি সুসংগঠিত হয় এবং আরও অনেকেই জড়িত হন। নিরাপত্তার কারণে তাঁদের ছদ্মনাম ব্যবহার করা হত। ৬ ডিসেম্বর প্রথম তিনি নিজের নাম নাসরিন আহমাদ শিলু নামে খবর পড়েন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ২২ ডিসেম্বর থেকে ঢাকায় স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রোগাম শুরু হয়। স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের গান, নাটক, খবর, চরমপত্রসহ সকল অনুষ্ঠান মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করতো। ফলে মুক্তিযুদ্ধ ত্বরান্বিত হয়। অনেক বিখ্যাত গায়ক, সুরকার, অভিনেতা এর সাথে জড়িত ছিলেন। স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের কলাকুশলী আর বাঙালি তখন একাকার হয়েছিল। মুক্তিকামী মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মতো স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান শুনতো। মুক্তিযোদ্ধারা সবসময় রেডিও কাছে রাখতো। প্রবাসী সরকারের সকল প্রজ্ঞাপন প্রচার করা হতো। মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরব, ত্যাগ, দেশপ্রেম তুলে ধরা হতো বালিগঞ্জের ছোট্ট দোতলা সেই ভবনে। সেখানেই অনেকে লিখতেন, খবর পড়তেন, সেখানেই ঘুমিয়ে পড়েতন। চরমপত্র লিখে প্রচারের পর সেখানেই ঘুমাতেন এম আর আখতার মুকুল। মুক্তিকামী মানুষের স্বাধীনতার জন্য সবাই ত্যাগ স্বীকার করেছেন। ফলে আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। যে স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

প্রধান অতিথিকে শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন।

বিশেষ অতিথি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম মোস্তফা কামাল খান বলেন, ৩০ লক্ষ শহিদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা যে দেশ পেয়েছি, সেই দেশের কোনো মানুষ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট লালন করতে পারে না, ৩ নভেম্বরের জেলহত্যা লালন করে না, ২১ আগস্ট ধারণ করতে পারে না। আমরা রবীন্দ্রনাথের সোনার বাংলা, নজরুল, লালন, জীবনানন্দের বাংলাদেশ চাই। যেখানে ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে সাম্যের সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সবাই একত্রে থাকবে।

বিশেষ অতিথি অধ্যাপক ড. কে এম সালাহ্ উদ্দীন বলেন, স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিকেরা মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করতেন। তাঁদের অবদান নতুন প্রজম্মের কাছে ছড়িয়ে দিতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন বলেন, ১৯৭১ সালের শব্দ সৈনিকদের যে অনুভূতি হতো, সেই একই অনুভূতি আমাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল, আমরা যারা মুক্তি চেয়েছিলাম। স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করা দরকার। এর সাথে জড়িতদের বীরত্বগাথা পাঠ্যবইয়ে তুলে ধরে, আগামী প্রজম্মকে ইতিহাস জানাতে হবে। তবেই তাদের ত্যাগ স্বার্থক হবে।

এমবিএইচ/এসএস

পাবিপ্রবিতে নারী বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসরীন আহমাদের স্মৃতিচারণ

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ। মঞ্চে উপস্থিত আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম মোস্তফা কামাল খান এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কে এম সালাহ্ উদ্দীন।

শিক্ষা-শিক্ষাঙ্গন ডেস্ক 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ ১৯৭১ সালের মে মাসের প্রথম দিকে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সাথে বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতায় গিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সাথে জড়িয়ে পড়েন।

পরবর্তীতে স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের কার্যক্রম, তাঁর নিজের অবদান সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন আজ শনিবার (৫ নভেম্বর) পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণমূলক এক অনুষ্ঠানে।
স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্র কিভাবে পরিচালিত হতো, অনুষ্ঠান নির্মাণ, প্রচারসহ সার্বিক কর্মকান্ড তুলে ধরেন তিনি। অনুষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠানে ১৯৭১-এর পূর্বাপর ঘটনাপ্রবাহ, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের গৌরবগাঁথা স্মৃতিচারণের সময় উপস্থিতদের মধ্যে ফিরে এসেছিল ১৯৭১-এর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যালারী ২ তে অনুষ্ঠানটি হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শব্দসৈনিক অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিক পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ও পরিবেশ বিজ্ঞানী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপ-উপাচার্য। স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের পাঠক ফোরামের সভাপতি।তিনি ১৯৭০ সালে ডাকসু নির্বাচনে কমনরুম বিষয়ক সম্পাদিকা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় জেরিনা আহমেদ ছদ্মনামে স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রে খবর পড়তেন। ১৯৬২ সাল থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও নাসরিন আহমাদের পরিবার ধানমন্ডিতে পাশাপাশি বাড়িতে থাকতেন। পরর্তীতে দুই পরিবারের ঘনিষ্ঠতা এবং সেই সুবাদে বঙ্গবন্ধুকে কাছ থেকে দেখা। নাসরিন আহমাদের পারিবারিক সেই বাড়িটি পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু যাদুঘরকে দান করে দেয় তাঁর পরিবার।

স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠানে নাসরীন আহমাদ বলেন, প্রথম দিকে স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের সাথে আমিনুল হক বাদশা, কামাল লোহানী, আলমগীর কুমকুম, পারভীন হোসেনসহ অনেকে জড়িত ছিলেন। কিছুদিনের মধ্যে এটি সুসংগঠিত হয় এবং আরও অনেকেই জড়িত হন। নিরাপত্তার কারণে তাঁদের ছদ্মনাম ব্যবহার করা হত। ৬ ডিসেম্বর প্রথম তিনি নিজের নাম নাসরিন আহমাদ শিলু নামে খবর পড়েন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ২২ ডিসেম্বর থেকে ঢাকায় স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রোগাম শুরু হয়। স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের গান, নাটক, খবর, চরমপত্রসহ সকল অনুষ্ঠান মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করতো। ফলে মুক্তিযুদ্ধ ত্বরান্বিত হয়। অনেক বিখ্যাত গায়ক, সুরকার, অভিনেতা এর সাথে জড়িত ছিলেন। স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের কলাকুশলী আর বাঙালি তখন একাকার হয়েছিল। মুক্তিকামী মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মতো স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান শুনতো। মুক্তিযোদ্ধারা সবসময় রেডিও কাছে রাখতো। প্রবাসী সরকারের সকল প্রজ্ঞাপন প্রচার করা হতো। মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরব, ত্যাগ, দেশপ্রেম তুলে ধরা হতো বালিগঞ্জের ছোট্ট দোতলা সেই ভবনে। সেখানেই অনেকে লিখতেন, খবর পড়তেন, সেখানেই ঘুমিয়ে পড়েতন। চরমপত্র লিখে প্রচারের পর সেখানেই ঘুমাতেন এম আর আখতার মুকুল। মুক্তিকামী মানুষের স্বাধীনতার জন্য সবাই ত্যাগ স্বীকার করেছেন। ফলে আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। যে স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

প্রধান অতিথিকে শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন।

বিশেষ অতিথি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম মোস্তফা কামাল খান বলেন, ৩০ লক্ষ শহিদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা যে দেশ পেয়েছি, সেই দেশের কোনো মানুষ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট লালন করতে পারে না, ৩ নভেম্বরের জেলহত্যা লালন করে না, ২১ আগস্ট ধারণ করতে পারে না। আমরা রবীন্দ্রনাথের সোনার বাংলা, নজরুল, লালন, জীবনানন্দের বাংলাদেশ চাই। যেখানে ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে সাম্যের সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সবাই একত্রে থাকবে।

বিশেষ অতিথি অধ্যাপক ড. কে এম সালাহ্ উদ্দীন বলেন, স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিকেরা মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করতেন। তাঁদের অবদান নতুন প্রজম্মের কাছে ছড়িয়ে দিতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন বলেন, ১৯৭১ সালের শব্দ সৈনিকদের যে অনুভূতি হতো, সেই একই অনুভূতি আমাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল, আমরা যারা মুক্তি চেয়েছিলাম। স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করা দরকার। এর সাথে জড়িতদের বীরত্বগাথা পাঠ্যবইয়ে তুলে ধরে, আগামী প্রজম্মকে ইতিহাস জানাতে হবে। তবেই তাদের ত্যাগ স্বার্থক হবে।

এমবিএইচ/এসএস