বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকৌশল শিক্ষায় দেশসেরা বিদ্যাপীঠ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল তথা কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ৮৩.৯ একরের এই বিশ্ববিদ্যালয়টি রাজধানী শহর ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত।

কারিগরি ক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তি তথা মাঠ পর্যায়ের সার্ভেয়ার তৈরি করার লক্ষ্যে ১৮৭৬ সালে ঢাকা সার্ভে স্কুল নামে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক ও মূল ভিত্তি। ঢাকার নওয়াব আহসানউল্লাহ এই স্কুলটির সার্বিক উন্নয়নের জন্য সহযোগিতাসহ আর্থিক অনুদান দেন। ১৯০৮ সালে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ স্কুলটির নামকরণ করা হয় আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল। ১৮৭৬ থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত নলগোলায় একটি ভাড়াবাড়িতে এর কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। স্কুলটি ১৯২০ সালে বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৬২ সালে প্রকৌশল ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হয়। স্বাধীনতার পরেই ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে এর নামকরণ হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়।

শিক্ষা কার্যক্রম
১৯৬২ সালেই স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদ গঠিত হয় এবং টেক্সাস এ অ্যান্ড এম কলেজের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এভাবেই প্রথমে প্রকৌশল ও স্থাপত্য এ দুটি অনুষদের অধীন পুরকৌশল, যন্ত্রকৌশল, কেমিকৌশল, ধাতব কৌশল ও স্থাপত্য বিভাগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠাকালে মোট আসনসংখ্যা ছিল ২৪০। ১৯৬৪ সালে ৭ তলাবিশিষ্ট পুরকৌশল ভবনের ভিত্তি স্থাপিত হয় এবং আসনসংখ্যা ৩৬০-এ উন্নীত করা হয়। ১৯৬৯-৭০ সাল পর্যন্ত আসনসংখ্যা ছিল ৪২০।পরবর্তীকালে বিদেশি, আদিবাসী এবং সামরিক বাহিনীর জন্য অতিরিক্ত ৫০টি আসন চালু করা হয়েছিল। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭ হাজার। এই বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক ডিগ্রি ছাড়াও স্নাতকোত্তর কোর্সে বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, এম. ইঞ্জিনিয়ারিং, এম. ফিল, এম. ইউআরপি, এম. আর্ক এবং পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করে চলেছে। বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত সমাবর্তনের মাধ্যমে বিভিন্ন ডিগ্রি ছাড়াও উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়ে থাকে।

বিভাগ ও অনুষদ
বুয়েট বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে ৫টি অনুষদের অধীনে ১২টি বিভাগে শক্তিশালী এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ গবেষণা ও শিক্ষাদান কার্যক্রম রয়েছে। প্রকৌশল অনুষদের অধীনে কেমিকৌশল বিভাগ এবং বস্তু ও ধাতব কৌশল বিভাগ। পুরকৌশল অনুষদের অধীনে পুরকৌশল বিভাগ এবং পানিসম্পদ কৌশল বিভাগ। যন্ত্রকৌশল অনুষদের অধীনে যন্ত্রকৌশল বিভাগ, নৌযান ও নৌযন্ত্র কৌশল বিভাগ এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন প্রকৌশল বিভাগ। তড়িৎ এবং ইলেকট্রনিক কৌশল অনুষদের অধীনে থাকা তিনটি বিভাগ হলো, তড়িৎ এবং ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগ, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড প্রকৌশল বিভাগ এবং বায়োমেডিক্যাল প্রকৌশল বিভাগ।স্থাপত্য এবং পরিকল্পনা অনুষদে রয়েছে দুটি বিভাগ; স্থাপত্য বিভাগ এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ। সম্প্রতি আরও নতুন তিনটি অনুষদ চালুর চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। অনুমোদন পাওয়া নতুন তিনটি অনুষদ হলো—ফ্যাকাল্টি অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন স্টাডিজ, ফ্যাকাল্টি অব কেমিক্যাল অ্যান্ড ম্যাটারিয়ালস ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ফ্যাকাল্টি অব সায়েন্স।

আরও রয়েছে 
শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষদের অধীনে বিভিন্ন বিভাগ ছাড়াও গবেষণা কার্যক্রমের অগ্রগতি সাধনের জন্য দুটি ইনস্টিটিউট, দুটি সেন্টার এবং একটি কনটিনিউইং এডুকেশন পরিদপ্তর রয়েছে। এগুলো বিভিন্ন গবেষণা কাজে অব্যাহতভাবে অবদান রেখে চলেছে। দেশের শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যবস্থা, উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ এবং নির্মাণকাজের মান বজায় রাখার কাজে ব্যুরো অব রিসার্চ অ্যান্ড টেস্টিং ও কম্পিউটার সেন্টার কাজ করে যাচ্ছে। সম্প্রতি রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নামে আরেকটি ইনস্টিটিউটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

পদক্ষেপ
গবেষণা কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্য collaborative গবেষণা সংখ্যা বাড়ানোর জন্য এবং নতুন নতুন উদ্ভাবনকে incubate করার জন্য Research and Innovation Centre for Science and Engineering (RISE) স্থাপন করা হয়েছে। Centre for Energy Studies (CES)-কে Institute of Energy and Sustainable Development (IESD)-এ রূপান্তর করা হয়েছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা ও ভিশন ২০৪১-কে সামনে রেখে নতুন নতুন কোর্স চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সংগঠনসমূহ
বুয়েটে রয়েছে ক্যারিয়ার ক্লাব, ডিবেটিং ক্লাব, এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট ক্লাব, অটোমোবাইল ক্লাব, ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, সেলফ ডিফেন্স ক্লাব, রোবোটিকস ক্লাব, ড্যান্স ক্লাব, ফিল্ম সোসাইটি, ড্রামা সোসাইটি, বুয়েট সাংবাদিক সমিতি, বুয়েট সাহিত্য সংসদ, সত্যেন বোস বিজ্ঞান ক্লাব, কণ্ঠঃবুয়েট, মূর্ছনা প্রমুখ ক্রিয়াশীল সংগঠন। খেলাধুলা, বিজ্ঞান, সাহিত্য, সংস্কৃতি-সংশ্লিষ্ট এসব সংগঠনে, নেতৃত্বের দক্ষতা বিকাশের এবং একটি স্বাচ্ছন্দ্যময়, স্বাগত পরিবেশে প্রতিযোগিতা করার একটি দুর্দান্ত উপায় হলো ক্লাব কার্যক্রম।

সহশিক্ষা কার্যক্রম
লেখাপড়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা ও শরীরচর্চামূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তর প্রতিবছর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আন্তবিশ্ববিদ্যালয় খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করে থাকে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বরাবরই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা প্রথম পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধি করেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাতেও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় অংশগ্রহণ করে এবং প্রায়ই পুরস্কার অর্জন করে।

অর্জন ও সাফল্য
যুক্তরাজ্যভিত্তিক কিউএস র‍্যাঙ্কিং সিস্টেম থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ ফলাফল অনুযায়ী, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) প্রকৌশল ও প্রযুক্তি ক্যাটাগরিতে বিশ্বে ১৮৫তম স্থান অর্জন করেছে। পরিবেশবিষয়ক গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বিশেষ অবদানের জন্য জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২০ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। আন্তর্জাতিক কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা-২০২১-এ এশিয়ার পশ্চিম অঞ্চলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বুয়েট। বুয়েটের একটি টিম আইইই সিগন্যাল প্রসেসিং কাপ-২০২২-এ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বাল আন্ডারগ্র্যাজুয়েট অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন আর্কিটেকচার ও ডিজাইন বিভাগের শিক্ষার্থী জারিন তাসনিম শরিফ। ‘দ্য গ্লোবাল উইনার ২০২২’ হয়েছেন তিনি। নাসা ইন্টারন্যাশনাল স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতায় স্পেস অ্যাপ চ্যালেঞ্জে অনারেবল মেনশন বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন বুয়েটের একদল শিক্ষার্থী।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরাসরি অংশগ্রহণ করেন এবং তাদের মধ্যে ২০ জন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন।

ড. সত্য প্রসাদ মজুমদারড. সত্য প্রসাদ মজুমদার

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব প্রকৌশল এবং প্রযুক্তির বিভিন্ন শাখায় অগ্রগতির সংমিশ্রণে ভৌত, ডিজিটাল এবং জৈবিক বিশ্বের মধ্যে সীমানার সীমাবদ্ধতা দূর করে দিয়েছে। আমাদের অবশ্যই সময়োপযোগী ও টেকসই বিষয়াবলি নিয়ে আরও বেশি কথা বলতে হবে এবং আমাদের চিন্তাভাবনা ও ধারণাগুলো ভাগ করতে হবে। বছরে একবার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ব্যাপী ‘গবেষণা দিবস’ আমাদের গবেষণার ধারণা এবং সম্ভাবনাকে শেয়ার করতে, প্রদর্শন করতে, উৎসাহিত করতে সাহায্য করতে পারে। আমাদের অবশ্যই গবেষণার জন্য আরও বেশি করে তহবিল আনার পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে, আমাদের সক্ষমতা জোরদার করতে হবে, আমাদের গবেষণা বৃদ্ধি করতে হবে, উদ্ভাবনী এবং সৃজনশীল হতে হবে। এবং স্থানীয় ও বৈশ্বিক চাহিদা মেটাতে আমাদের গবেষণার প্রয়োজনীয়তা প্রমাণ করতে হবে।

ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার,উপাচার্য, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকৌশল শিক্ষায় দেশসেরা বিদ্যাপীঠ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল তথা কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ৮৩.৯ একরের এই বিশ্ববিদ্যালয়টি রাজধানী শহর ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত।

কারিগরি ক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তি তথা মাঠ পর্যায়ের সার্ভেয়ার তৈরি করার লক্ষ্যে ১৮৭৬ সালে ঢাকা সার্ভে স্কুল নামে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক ও মূল ভিত্তি। ঢাকার নওয়াব আহসানউল্লাহ এই স্কুলটির সার্বিক উন্নয়নের জন্য সহযোগিতাসহ আর্থিক অনুদান দেন। ১৯০৮ সালে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ স্কুলটির নামকরণ করা হয় আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল। ১৮৭৬ থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত নলগোলায় একটি ভাড়াবাড়িতে এর কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। স্কুলটি ১৯২০ সালে বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৬২ সালে প্রকৌশল ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হয়। স্বাধীনতার পরেই ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে এর নামকরণ হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়।

শিক্ষা কার্যক্রম
১৯৬২ সালেই স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদ গঠিত হয় এবং টেক্সাস এ অ্যান্ড এম কলেজের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এভাবেই প্রথমে প্রকৌশল ও স্থাপত্য এ দুটি অনুষদের অধীন পুরকৌশল, যন্ত্রকৌশল, কেমিকৌশল, ধাতব কৌশল ও স্থাপত্য বিভাগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠাকালে মোট আসনসংখ্যা ছিল ২৪০। ১৯৬৪ সালে ৭ তলাবিশিষ্ট পুরকৌশল ভবনের ভিত্তি স্থাপিত হয় এবং আসনসংখ্যা ৩৬০-এ উন্নীত করা হয়। ১৯৬৯-৭০ সাল পর্যন্ত আসনসংখ্যা ছিল ৪২০।পরবর্তীকালে বিদেশি, আদিবাসী এবং সামরিক বাহিনীর জন্য অতিরিক্ত ৫০টি আসন চালু করা হয়েছিল। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭ হাজার। এই বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক ডিগ্রি ছাড়াও স্নাতকোত্তর কোর্সে বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, এম. ইঞ্জিনিয়ারিং, এম. ফিল, এম. ইউআরপি, এম. আর্ক এবং পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করে চলেছে। বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত সমাবর্তনের মাধ্যমে বিভিন্ন ডিগ্রি ছাড়াও উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়ে থাকে।

বিভাগ ও অনুষদ
বুয়েট বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে ৫টি অনুষদের অধীনে ১২টি বিভাগে শক্তিশালী এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ গবেষণা ও শিক্ষাদান কার্যক্রম রয়েছে। প্রকৌশল অনুষদের অধীনে কেমিকৌশল বিভাগ এবং বস্তু ও ধাতব কৌশল বিভাগ। পুরকৌশল অনুষদের অধীনে পুরকৌশল বিভাগ এবং পানিসম্পদ কৌশল বিভাগ। যন্ত্রকৌশল অনুষদের অধীনে যন্ত্রকৌশল বিভাগ, নৌযান ও নৌযন্ত্র কৌশল বিভাগ এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন প্রকৌশল বিভাগ। তড়িৎ এবং ইলেকট্রনিক কৌশল অনুষদের অধীনে থাকা তিনটি বিভাগ হলো, তড়িৎ এবং ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগ, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড প্রকৌশল বিভাগ এবং বায়োমেডিক্যাল প্রকৌশল বিভাগ।স্থাপত্য এবং পরিকল্পনা অনুষদে রয়েছে দুটি বিভাগ; স্থাপত্য বিভাগ এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ। সম্প্রতি আরও নতুন তিনটি অনুষদ চালুর চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। অনুমোদন পাওয়া নতুন তিনটি অনুষদ হলো—ফ্যাকাল্টি অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন স্টাডিজ, ফ্যাকাল্টি অব কেমিক্যাল অ্যান্ড ম্যাটারিয়ালস ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ফ্যাকাল্টি অব সায়েন্স।

আরও রয়েছে 
শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষদের অধীনে বিভিন্ন বিভাগ ছাড়াও গবেষণা কার্যক্রমের অগ্রগতি সাধনের জন্য দুটি ইনস্টিটিউট, দুটি সেন্টার এবং একটি কনটিনিউইং এডুকেশন পরিদপ্তর রয়েছে। এগুলো বিভিন্ন গবেষণা কাজে অব্যাহতভাবে অবদান রেখে চলেছে। দেশের শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যবস্থা, উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ এবং নির্মাণকাজের মান বজায় রাখার কাজে ব্যুরো অব রিসার্চ অ্যান্ড টেস্টিং ও কম্পিউটার সেন্টার কাজ করে যাচ্ছে। সম্প্রতি রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নামে আরেকটি ইনস্টিটিউটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

পদক্ষেপ
গবেষণা কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্য collaborative গবেষণা সংখ্যা বাড়ানোর জন্য এবং নতুন নতুন উদ্ভাবনকে incubate করার জন্য Research and Innovation Centre for Science and Engineering (RISE) স্থাপন করা হয়েছে। Centre for Energy Studies (CES)-কে Institute of Energy and Sustainable Development (IESD)-এ রূপান্তর করা হয়েছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা ও ভিশন ২০৪১-কে সামনে রেখে নতুন নতুন কোর্স চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সংগঠনসমূহ
বুয়েটে রয়েছে ক্যারিয়ার ক্লাব, ডিবেটিং ক্লাব, এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট ক্লাব, অটোমোবাইল ক্লাব, ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, সেলফ ডিফেন্স ক্লাব, রোবোটিকস ক্লাব, ড্যান্স ক্লাব, ফিল্ম সোসাইটি, ড্রামা সোসাইটি, বুয়েট সাংবাদিক সমিতি, বুয়েট সাহিত্য সংসদ, সত্যেন বোস বিজ্ঞান ক্লাব, কণ্ঠঃবুয়েট, মূর্ছনা প্রমুখ ক্রিয়াশীল সংগঠন। খেলাধুলা, বিজ্ঞান, সাহিত্য, সংস্কৃতি-সংশ্লিষ্ট এসব সংগঠনে, নেতৃত্বের দক্ষতা বিকাশের এবং একটি স্বাচ্ছন্দ্যময়, স্বাগত পরিবেশে প্রতিযোগিতা করার একটি দুর্দান্ত উপায় হলো ক্লাব কার্যক্রম।

সহশিক্ষা কার্যক্রম
লেখাপড়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা ও শরীরচর্চামূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তর প্রতিবছর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আন্তবিশ্ববিদ্যালয় খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করে থাকে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বরাবরই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা প্রথম পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধি করেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাতেও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় অংশগ্রহণ করে এবং প্রায়ই পুরস্কার অর্জন করে।

অর্জন ও সাফল্য
যুক্তরাজ্যভিত্তিক কিউএস র‍্যাঙ্কিং সিস্টেম থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ ফলাফল অনুযায়ী, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) প্রকৌশল ও প্রযুক্তি ক্যাটাগরিতে বিশ্বে ১৮৫তম স্থান অর্জন করেছে। পরিবেশবিষয়ক গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বিশেষ অবদানের জন্য জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২০ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। আন্তর্জাতিক কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা-২০২১-এ এশিয়ার পশ্চিম অঞ্চলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বুয়েট। বুয়েটের একটি টিম আইইই সিগন্যাল প্রসেসিং কাপ-২০২২-এ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বাল আন্ডারগ্র্যাজুয়েট অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন আর্কিটেকচার ও ডিজাইন বিভাগের শিক্ষার্থী জারিন তাসনিম শরিফ। ‘দ্য গ্লোবাল উইনার ২০২২’ হয়েছেন তিনি। নাসা ইন্টারন্যাশনাল স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতায় স্পেস অ্যাপ চ্যালেঞ্জে অনারেবল মেনশন বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন বুয়েটের একদল শিক্ষার্থী।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরাসরি অংশগ্রহণ করেন এবং তাদের মধ্যে ২০ জন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন।

ড. সত্য প্রসাদ মজুমদারড. সত্য প্রসাদ মজুমদার

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব প্রকৌশল এবং প্রযুক্তির বিভিন্ন শাখায় অগ্রগতির সংমিশ্রণে ভৌত, ডিজিটাল এবং জৈবিক বিশ্বের মধ্যে সীমানার সীমাবদ্ধতা দূর করে দিয়েছে। আমাদের অবশ্যই সময়োপযোগী ও টেকসই বিষয়াবলি নিয়ে আরও বেশি কথা বলতে হবে এবং আমাদের চিন্তাভাবনা ও ধারণাগুলো ভাগ করতে হবে। বছরে একবার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ব্যাপী ‘গবেষণা দিবস’ আমাদের গবেষণার ধারণা এবং সম্ভাবনাকে শেয়ার করতে, প্রদর্শন করতে, উৎসাহিত করতে সাহায্য করতে পারে। আমাদের অবশ্যই গবেষণার জন্য আরও বেশি করে তহবিল আনার পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে, আমাদের সক্ষমতা জোরদার করতে হবে, আমাদের গবেষণা বৃদ্ধি করতে হবে, উদ্ভাবনী এবং সৃজনশীল হতে হবে। এবং স্থানীয় ও বৈশ্বিক চাহিদা মেটাতে আমাদের গবেষণার প্রয়োজনীয়তা প্রমাণ করতে হবে।

ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার,উপাচার্য, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়