প্রকৌশল শিক্ষা ও গবেষণার অন্যতম প্রতিষ্ঠান

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: লেখক

মো. আশিকুর রহমান

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল শিক্ষা ও গবেষণার একমাত্র উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)। জাতীয় উন্নয়ন ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে পেশাদার প্রকৌশলীদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে এবং প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষা-গবেষণাকে জনকল্যাণে বিস্তৃত করতে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে চুয়েট। পাশাপাশি বিশ্ববাজারের চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার লক্ষ্যে প্রকৌশল ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যথোপযুক্ত মানবসম্পদ তৈরিতেই প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে চুয়েট কাজ করে যাচ্ছে।

যাত্রা শুরু
১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির অধীনে ‘চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ’ হিসেবে মাত্র ৩টি বিভাগ ও ১২০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা এবং পরে ১৯৮৬ সালের ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (বিআইটি), চট্টগ্রাম’ দুই দশকের পথচলায় আজকের দেশের অন্যতম সেরা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৩ সালে স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি গ্রামীণ জনপদে অবস্থান ও নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও সীমিত বাজেটের মধ্যে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় নানা সাফল্য অর্জন করে ইতিমধ্যে দেশে-বিদেশে প্রশংসা কুড়িয়েছে।

অবস্থান
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার পাহাড়তলী ইউনিয়নের চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়কের পাশে উনসত্তরপাড়া মৌজায় অবস্থিত। এটি চট্টগ্রাম শহরের উত্তর-পূর্বে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে এবং কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। চট্টগ্রামের এক মনোরম প্রাকৃতিক পাহাড়ি ভূমিতে প্রায় ১৭১ একর জায়গাজুড়ে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। মনোরম এই ক্যাম্পাসে একই সঙ্গে পাহাড়, সমতলভূমি ও লেকের অপূর্ব সম্মিলন ঘটেছে।

বিভাগ ও অনুষদ
বর্তমানে ৫টি অনুষদের অধীনে ১৮টি বিভাগ রয়েছে। অনুষদগুলো হলো—পুরকৌশল অনুষদ, যন্ত্রকৌশল অনুষদ, তড়িৎ ও কম্পিউটার কৌশল অনুষদ, স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদ এবং প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি অনুষদ ও বিভাগ পৃথকভাবে গবেষণা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে।

আসনসংখ্যা
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার। প্রতিবছর বিএসসি (ইঞ্জিনিয়ারিং) লেভেলে ৯২০টি আসনে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করানো হয়। এ ছাড়া রাখাইন সম্প্রদায়ের জন্য ১টি, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও অন্যান্য জেলার নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ১০টিসহ অতিরিক্ত ১১টি আসন সংরক্ষিত আছে।

আবাসনের ব্যবস্থা
চুয়েটে ৭টি আবাসিক হলে প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে  ৫টি ছাত্রদের ও ২টি মেয়েদের জন্য। শহীদ মোহাম্মদ শাহ হল, শহীদ তারেক হুদা হল, ড. কুদরত-ই-খুদা হল, বঙ্গবন্ধু হল ও শেখ রাসেল হল ছেলেদের জন্য। মেয়েদের জন্য রয়েছে সুফিয়া কামাল হল ও শামসেন নাহার খান হল।

সফলতা, অর্জন ও সুবিধা
প্রতিবছর সফলভাবে একাধিক আন্তর্জাতিক কনফারেন্স-সেমিনার-সিম্পোজিয়াম আয়োজন, বিশ্বমানের ল্যাব ও যন্ত্রপাতি সংযোজন, রোবট গবেষণায় যুগান্তকারী উদ্ভাবন, কর্ণফুলী ও হালদা নদী-সম্পর্কিত গবেষণা এবং বৃহত্তর চট্টগ্রামের ভূমিকম্প, পরিবহন-যানজট, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশদূষণ সমস্যাবিষয়ক জনগুরুত্বপূর্ণ গবেষণা, বিভিন্ন খ্যাতনামা জার্নালে নিয়মিত গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ, বিদেশের বিভিন্ন খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে উচ্চশিক্ষা-গবেষণায় সমঝোতা চুক্তি গড়ে তোলা এবং সরকারের রূপকল্প অনুসরণে ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়ন ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে গৃহীত উদ্যোগ উল্লেখযোগ্য। সম্প্রতি (৬ জুন, ২০২২) বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সফল উদ্যোক্তা তৈরি, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমকে উৎসাহিত করা এবং ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কোলাবরেশনকে আরও সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি আইটি শিল্পে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের সুযোগ আরও অবারিত করার মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের আয় প্রত্যাশিত মাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে চুয়েটে প্রায় ১১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নির্মিত প্রথম ‘চুয়েট শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর’ উদ্বোধনের মাধ্যমে দৃশ্যমান অগ্রগতি সাফল্যের ধারায় নতুন পালক যুক্ত করেছে।

চুয়েটে বর্তমানে মাথাপিছু শিক্ষার্থীর শিক্ষা ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ২০ হাজার ৮৫৪ টাকা। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে চুয়েটের স্নাতক ডিগ্রিপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। পাশাপাশি বিদেশি গ্র্যাজুয়েটের সংখ্যা ১০০ জনের অধিক। চুয়েটে ৩টি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও ৩টি গবেষণা সেন্টারের পাশাপাশি রয়েছে সমৃদ্ধ কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। ব্যুরো অব রিসার্চ, টেস্টিং অ্যান্ড কনসালটেন্সি (BRTC) নামে পৃথক ১টি সেন্টারের মাধ্যমে সারা দেশে বিবিধ শিল্প এবং প্রতিষ্ঠানকে প্রযুক্তি-সংক্রান্ত সেবা ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।

ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম

ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম। ছবি: সংগৃহীত

প্রকৌশল ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণার অন্যতম সেরা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘Center of Excellence’ হিসেবে গড়ার বহুমুখী প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি। আর্থসামাজিক উন্নয়ন অর্জনের লক্ষ্যে প্রকৌশল ও প্রযুক্তিভিত্তিক যুগোপযোগী শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদন করতে বিশ্বে একটি মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা রয়েছে। প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষার অধিকতর প্রসার, গুণগত মান বৃদ্ধি এবং এ ক্ষেত্রে অগ্রসরমাণ বিশ্বের সঙ্গে সংগতি রক্ষা ও সমতা অর্জনের লক্ষ্যে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা, আধুনিক জ্ঞানচর্চা, পঠন-পাঠনের সুযোগ সৃষ্টি ও সম্প্রসারণের সমন্বয়ে দক্ষ ও মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন মানবসম্পদ সৃষ্টি এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে টেকসই উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে আমরা বদ্ধপরিকর। বিশ্বের বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য প্রকৌশল ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যথোপযুক্ত মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানটি আগের ধারাবাহিকতায় বজায় রাখবে বলে আমরা দৃঢ় আশাবাদী।

লেখক: উপাচার্য, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)

প্রকৌশল শিক্ষা ও গবেষণার অন্যতম প্রতিষ্ঠান

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: লেখক

মো. আশিকুর রহমান

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল শিক্ষা ও গবেষণার একমাত্র উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)। জাতীয় উন্নয়ন ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে পেশাদার প্রকৌশলীদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে এবং প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষা-গবেষণাকে জনকল্যাণে বিস্তৃত করতে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে চুয়েট। পাশাপাশি বিশ্ববাজারের চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার লক্ষ্যে প্রকৌশল ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যথোপযুক্ত মানবসম্পদ তৈরিতেই প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে চুয়েট কাজ করে যাচ্ছে।

যাত্রা শুরু
১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির অধীনে ‘চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ’ হিসেবে মাত্র ৩টি বিভাগ ও ১২০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা এবং পরে ১৯৮৬ সালের ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (বিআইটি), চট্টগ্রাম’ দুই দশকের পথচলায় আজকের দেশের অন্যতম সেরা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৩ সালে স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি গ্রামীণ জনপদে অবস্থান ও নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও সীমিত বাজেটের মধ্যে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় নানা সাফল্য অর্জন করে ইতিমধ্যে দেশে-বিদেশে প্রশংসা কুড়িয়েছে।

অবস্থান
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার পাহাড়তলী ইউনিয়নের চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়কের পাশে উনসত্তরপাড়া মৌজায় অবস্থিত। এটি চট্টগ্রাম শহরের উত্তর-পূর্বে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে এবং কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। চট্টগ্রামের এক মনোরম প্রাকৃতিক পাহাড়ি ভূমিতে প্রায় ১৭১ একর জায়গাজুড়ে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। মনোরম এই ক্যাম্পাসে একই সঙ্গে পাহাড়, সমতলভূমি ও লেকের অপূর্ব সম্মিলন ঘটেছে।

বিভাগ ও অনুষদ
বর্তমানে ৫টি অনুষদের অধীনে ১৮টি বিভাগ রয়েছে। অনুষদগুলো হলো—পুরকৌশল অনুষদ, যন্ত্রকৌশল অনুষদ, তড়িৎ ও কম্পিউটার কৌশল অনুষদ, স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদ এবং প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি অনুষদ ও বিভাগ পৃথকভাবে গবেষণা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে।

আসনসংখ্যা
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার। প্রতিবছর বিএসসি (ইঞ্জিনিয়ারিং) লেভেলে ৯২০টি আসনে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করানো হয়। এ ছাড়া রাখাইন সম্প্রদায়ের জন্য ১টি, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও অন্যান্য জেলার নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ১০টিসহ অতিরিক্ত ১১টি আসন সংরক্ষিত আছে।

আবাসনের ব্যবস্থা
চুয়েটে ৭টি আবাসিক হলে প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে  ৫টি ছাত্রদের ও ২টি মেয়েদের জন্য। শহীদ মোহাম্মদ শাহ হল, শহীদ তারেক হুদা হল, ড. কুদরত-ই-খুদা হল, বঙ্গবন্ধু হল ও শেখ রাসেল হল ছেলেদের জন্য। মেয়েদের জন্য রয়েছে সুফিয়া কামাল হল ও শামসেন নাহার খান হল।

সফলতা, অর্জন ও সুবিধা
প্রতিবছর সফলভাবে একাধিক আন্তর্জাতিক কনফারেন্স-সেমিনার-সিম্পোজিয়াম আয়োজন, বিশ্বমানের ল্যাব ও যন্ত্রপাতি সংযোজন, রোবট গবেষণায় যুগান্তকারী উদ্ভাবন, কর্ণফুলী ও হালদা নদী-সম্পর্কিত গবেষণা এবং বৃহত্তর চট্টগ্রামের ভূমিকম্প, পরিবহন-যানজট, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশদূষণ সমস্যাবিষয়ক জনগুরুত্বপূর্ণ গবেষণা, বিভিন্ন খ্যাতনামা জার্নালে নিয়মিত গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ, বিদেশের বিভিন্ন খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে উচ্চশিক্ষা-গবেষণায় সমঝোতা চুক্তি গড়ে তোলা এবং সরকারের রূপকল্প অনুসরণে ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়ন ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে গৃহীত উদ্যোগ উল্লেখযোগ্য। সম্প্রতি (৬ জুন, ২০২২) বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সফল উদ্যোক্তা তৈরি, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমকে উৎসাহিত করা এবং ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কোলাবরেশনকে আরও সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি আইটি শিল্পে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের সুযোগ আরও অবারিত করার মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের আয় প্রত্যাশিত মাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে চুয়েটে প্রায় ১১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নির্মিত প্রথম ‘চুয়েট শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর’ উদ্বোধনের মাধ্যমে দৃশ্যমান অগ্রগতি সাফল্যের ধারায় নতুন পালক যুক্ত করেছে।

চুয়েটে বর্তমানে মাথাপিছু শিক্ষার্থীর শিক্ষা ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ২০ হাজার ৮৫৪ টাকা। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে চুয়েটের স্নাতক ডিগ্রিপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। পাশাপাশি বিদেশি গ্র্যাজুয়েটের সংখ্যা ১০০ জনের অধিক। চুয়েটে ৩টি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও ৩টি গবেষণা সেন্টারের পাশাপাশি রয়েছে সমৃদ্ধ কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। ব্যুরো অব রিসার্চ, টেস্টিং অ্যান্ড কনসালটেন্সি (BRTC) নামে পৃথক ১টি সেন্টারের মাধ্যমে সারা দেশে বিবিধ শিল্প এবং প্রতিষ্ঠানকে প্রযুক্তি-সংক্রান্ত সেবা ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।

ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম

ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম। ছবি: সংগৃহীত

প্রকৌশল ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণার অন্যতম সেরা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘Center of Excellence’ হিসেবে গড়ার বহুমুখী প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি। আর্থসামাজিক উন্নয়ন অর্জনের লক্ষ্যে প্রকৌশল ও প্রযুক্তিভিত্তিক যুগোপযোগী শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদন করতে বিশ্বে একটি মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা রয়েছে। প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষার অধিকতর প্রসার, গুণগত মান বৃদ্ধি এবং এ ক্ষেত্রে অগ্রসরমাণ বিশ্বের সঙ্গে সংগতি রক্ষা ও সমতা অর্জনের লক্ষ্যে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা, আধুনিক জ্ঞানচর্চা, পঠন-পাঠনের সুযোগ সৃষ্টি ও সম্প্রসারণের সমন্বয়ে দক্ষ ও মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন মানবসম্পদ সৃষ্টি এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে টেকসই উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে আমরা বদ্ধপরিকর। বিশ্বের বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য প্রকৌশল ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যথোপযুক্ত মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানটি আগের ধারাবাহিকতায় বজায় রাখবে বলে আমরা দৃঢ় আশাবাদী।

লেখক: উপাচার্য, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)