সুইড বাংলাদেশের মতবিনিময়-সভা

প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ শিক্ষামন্ত্রণালয়ের আওতায় আনার তাগিদ

ছবি- আব্দুল গনি

অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়তে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করা দেশের প্রবীণ প্রতিষ্ঠান সোসাইটি ফর দ্য ওয়েলফেয়ার অব দ্য ইন্টেলেকচুয়ালি ডিসএবল্ড, বাংলাদেশ (সুইড বাংলাদেশ)। আর এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার বিষয়টি সমাজ কল্যাণ অধিদপ্তরে ‘চ্যারাইটি’ পর্যায়ে না রেখে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় আনার সুপারিশ করেন সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞজনেরা।

মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) ইস্কাটন গার্ডেনে সুইড বাংলাদেশ-এর প্রধান শাখায় ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষা এবং জীবন মান উন্নয়নে বর্তমান অবস্থা ও অগ্রগতি’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তারা।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রতিষ্ঠানের মেন্টর জওয়াহেরুল ইসলাম মামুন। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠানের মহাসচিব মো. মাহবুবুল মুনির। সম্মানিত আলোচক ছিলেন, দৈনিক ইত্তেফাকের বার্তা সম্পাদক মো. সাজ্জাত হোসেন, এটিএন বাংলার সিনিয়র উপদেষ্টা তাসিক আহমেদ, দি বিজসেন স্ট্যান্ডার নিবার্হী সম্পাদক মো. শাহরিয়ার খান।

বিষয়বস্তুর ওপর প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন সিডিডির নির্বাহী পরিচালক এ এইচ এম নোমান খানা, অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আলবার্ট মোল্লা, সরকারের আইসটি ডিভিশনের জাতীয় পরামর্শ দাতা ভাস্কর ভট্টাচার্য, তরী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আশফাক উল কবীর, ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি পর অটিজম অ্যান্ড নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজাবিলিটিজ-এর কাউন্সিলিং সাইকোলজিস্ট ড. মোহাম্মদ সেলিম চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দৈনিক ইত্তেফাকের সাংবাদিক রাবেয়া বেবী।

এ এইচ এম নোমান খানা বলেন, এক সময় প্রতিবন্ধী ব্যক্তির বিষয় কেউ কথা বলতো না। সে সময় সুইড বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়ে তাদের অধিকার আদায়ে কাজ করেছে। আমি ৩০ বছর কাজের অভিজ্ঞতায় বলতে পারি কাজ হয়েছে। আজকের অবস্থানে আসতে সরকারের সঙ্গে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোন অংশে কম অবদান রাখেনি। তবে অনেক পথ বাকি আছে। এই পথ পাড়ি দিতে সরকারের সাথে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।

আলবার্ট মোল্লা বলেন, আমাদের আইন আছে, বিধি আছে কিন্তু বাস্তবায়ন নেই। বাস্তবায়ন করতে হলে সঠিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করতে সুনির্দিষ্ট বাজেট বাজেট বরাদ্দ জরুরি।

ভাস্কর ভট্টাচার্য বলেন, আর এজন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক ,আইনি ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি। এই তিনটিই আমাদের আছে-এখন প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে।

তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের এগিয়ে নিতে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তির শক্তির সাথে সংযোগ ঘটানো প্রয়োজন।

আশফাক উল কবীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রবেশগম্য না করতে পারার পেছনে আইনের ফাঁকের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ঢাকা কেন্দ্রিক শিক্ষার উন্নয়ন হলেও প্রান্তিক অঞ্চলে ততটা হয়নি। তিনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষায় ধর্মীয় নেতাদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর ওপর জোর দেন।

ড. মোহাম্মদ সেলিম চৌধুরী বলেন, প্রতি ২ জনে এক জন প্রতিবন্ধী শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। কিন্তু তারা সুবিচার নিয়ে কেউ কথা বলে না।

মো. সাজ্জাত হোসেন বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা নিজের নিষ্ঠায় অনেক ক্ষেত্রে সফলতার উদাহরণ রেখেছেন। তাই প্রতিবন্ধী শব্দ ব্যবহার না করে ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যবহার করারা কথা বলেন তিনি। তিনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার আদায়ে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।

তাসিক আহমেদ, গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধী অধিকার নিয়ে বেশি প্রচারণার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, প্রচারণা নীতি বাস্তবায়নেও ভূমিকা রাখবে।

মো. শাহরিয়ার খান বলেন, একজন প্রতিবন্ধী শিশু সংসারে এলে বাবা-মার যুদ্ধটা সব চেয়ে বড় হয়ে দাড়ায়। আজ যে সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সফল হয়েছে তার পেছনে পরিবারের অবদান সবচেয়ে বেশি।

জওয়াহেরুল ইসলাম মামুন বলেন,সরকার ৪৭টি মন্ত্রণালয়ে ৪৭ জন ফোকাল পয়েন্ট নিযুক্ত করেছে সরকার। তারা যুগ্ম সচিব পর্যায়ে। কিন্তু আইন বাস্তবায়ন হয় না। যারা আইন বাস্তবায়ন করবে তাদের ঘুম কে ভাঙ্গাবে। অবস্থা এক দিনে পরিবর্তন হবে না।সে বিষয় গণমাধ্যমে প্রচারণার ওপর জোর দেন তিনি।

মো. মাহবুবুল মুনির প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠ্যসূচীতে এবং বিসিএস প্রশিক্ষণেও প্রতিবন্ধীদের অধিকার বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে আরও কথা বলেন, ব্র্যাকের উপদেষ্টা লিমিয়া দেওয়ান, সিআরপির প্রতিনিধি নূসরাত জাহান, জাতীয় বধির সংস্থার সাধারণ সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস, নূরুল ইসলাম, মাহমুদুল হাসান প্রমুখ।

উল্লেখ্য, ১৯৭৭ সালে ২৪ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত সুইড বাংলাদেশ ৭ দিন অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। অনুষ্ঠানের সহযোগিতা করছে দৈনিক ইত্তেফাক, এটিএন বাংলা ও দি বিজসেন স্ট্যান্ডার।

ইত্তেফাক/এআই

সুইড বাংলাদেশের মতবিনিময়-সভা

প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ শিক্ষামন্ত্রণালয়ের আওতায় আনার তাগিদ

ছবি- আব্দুল গনি

অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়তে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করা দেশের প্রবীণ প্রতিষ্ঠান সোসাইটি ফর দ্য ওয়েলফেয়ার অব দ্য ইন্টেলেকচুয়ালি ডিসএবল্ড, বাংলাদেশ (সুইড বাংলাদেশ)। আর এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার বিষয়টি সমাজ কল্যাণ অধিদপ্তরে ‘চ্যারাইটি’ পর্যায়ে না রেখে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় আনার সুপারিশ করেন সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞজনেরা।

মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) ইস্কাটন গার্ডেনে সুইড বাংলাদেশ-এর প্রধান শাখায় ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষা এবং জীবন মান উন্নয়নে বর্তমান অবস্থা ও অগ্রগতি’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তারা।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রতিষ্ঠানের মেন্টর জওয়াহেরুল ইসলাম মামুন। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠানের মহাসচিব মো. মাহবুবুল মুনির। সম্মানিত আলোচক ছিলেন, দৈনিক ইত্তেফাকের বার্তা সম্পাদক মো. সাজ্জাত হোসেন, এটিএন বাংলার সিনিয়র উপদেষ্টা তাসিক আহমেদ, দি বিজসেন স্ট্যান্ডার নিবার্হী সম্পাদক মো. শাহরিয়ার খান।

বিষয়বস্তুর ওপর প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন সিডিডির নির্বাহী পরিচালক এ এইচ এম নোমান খানা, অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আলবার্ট মোল্লা, সরকারের আইসটি ডিভিশনের জাতীয় পরামর্শ দাতা ভাস্কর ভট্টাচার্য, তরী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আশফাক উল কবীর, ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি পর অটিজম অ্যান্ড নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজাবিলিটিজ-এর কাউন্সিলিং সাইকোলজিস্ট ড. মোহাম্মদ সেলিম চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দৈনিক ইত্তেফাকের সাংবাদিক রাবেয়া বেবী।

এ এইচ এম নোমান খানা বলেন, এক সময় প্রতিবন্ধী ব্যক্তির বিষয় কেউ কথা বলতো না। সে সময় সুইড বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়ে তাদের অধিকার আদায়ে কাজ করেছে। আমি ৩০ বছর কাজের অভিজ্ঞতায় বলতে পারি কাজ হয়েছে। আজকের অবস্থানে আসতে সরকারের সঙ্গে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোন অংশে কম অবদান রাখেনি। তবে অনেক পথ বাকি আছে। এই পথ পাড়ি দিতে সরকারের সাথে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।

আলবার্ট মোল্লা বলেন, আমাদের আইন আছে, বিধি আছে কিন্তু বাস্তবায়ন নেই। বাস্তবায়ন করতে হলে সঠিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করতে সুনির্দিষ্ট বাজেট বাজেট বরাদ্দ জরুরি।

ভাস্কর ভট্টাচার্য বলেন, আর এজন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক ,আইনি ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি। এই তিনটিই আমাদের আছে-এখন প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে।

তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের এগিয়ে নিতে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তির শক্তির সাথে সংযোগ ঘটানো প্রয়োজন।

আশফাক উল কবীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রবেশগম্য না করতে পারার পেছনে আইনের ফাঁকের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ঢাকা কেন্দ্রিক শিক্ষার উন্নয়ন হলেও প্রান্তিক অঞ্চলে ততটা হয়নি। তিনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষায় ধর্মীয় নেতাদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর ওপর জোর দেন।

ড. মোহাম্মদ সেলিম চৌধুরী বলেন, প্রতি ২ জনে এক জন প্রতিবন্ধী শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। কিন্তু তারা সুবিচার নিয়ে কেউ কথা বলে না।

মো. সাজ্জাত হোসেন বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা নিজের নিষ্ঠায় অনেক ক্ষেত্রে সফলতার উদাহরণ রেখেছেন। তাই প্রতিবন্ধী শব্দ ব্যবহার না করে ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যবহার করারা কথা বলেন তিনি। তিনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার আদায়ে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।

তাসিক আহমেদ, গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধী অধিকার নিয়ে বেশি প্রচারণার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, প্রচারণা নীতি বাস্তবায়নেও ভূমিকা রাখবে।

মো. শাহরিয়ার খান বলেন, একজন প্রতিবন্ধী শিশু সংসারে এলে বাবা-মার যুদ্ধটা সব চেয়ে বড় হয়ে দাড়ায়। আজ যে সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সফল হয়েছে তার পেছনে পরিবারের অবদান সবচেয়ে বেশি।

জওয়াহেরুল ইসলাম মামুন বলেন,সরকার ৪৭টি মন্ত্রণালয়ে ৪৭ জন ফোকাল পয়েন্ট নিযুক্ত করেছে সরকার। তারা যুগ্ম সচিব পর্যায়ে। কিন্তু আইন বাস্তবায়ন হয় না। যারা আইন বাস্তবায়ন করবে তাদের ঘুম কে ভাঙ্গাবে। অবস্থা এক দিনে পরিবর্তন হবে না।সে বিষয় গণমাধ্যমে প্রচারণার ওপর জোর দেন তিনি।

মো. মাহবুবুল মুনির প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠ্যসূচীতে এবং বিসিএস প্রশিক্ষণেও প্রতিবন্ধীদের অধিকার বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে আরও কথা বলেন, ব্র্যাকের উপদেষ্টা লিমিয়া দেওয়ান, সিআরপির প্রতিনিধি নূসরাত জাহান, জাতীয় বধির সংস্থার সাধারণ সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস, নূরুল ইসলাম, মাহমুদুল হাসান প্রমুখ।

উল্লেখ্য, ১৯৭৭ সালে ২৪ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত সুইড বাংলাদেশ ৭ দিন অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। অনুষ্ঠানের সহযোগিতা করছে দৈনিক ইত্তেফাক, এটিএন বাংলা ও দি বিজসেন স্ট্যান্ডার।

ইত্তেফাক/এআই