প্রধান ফটক মরণফাঁদ, নিয়মিত ঘটছে দুর্ঘটনা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের রাস্তায় যানজট। ছবি: দৈনিক বাংলা

মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ

 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের রাস্তাটি দিন দিন মরণফাঁদে পরিণত হচ্ছে। রাস্তায় কোনো গতিরোধক না থাকায় বেপরোয়াভাবে চালানো হয় যানবাহন। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সাধারণ পথচারীরা। নেই কোনো ফুটওভারব্রিজও। এতে করে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পারাপার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে মিলিত হয়েছে বেশ কয়েকটি রাস্তা। লক্ষ্মীবাজার, গুলিস্তান ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালসহ শ্যামবাজার ও ইসলামপুরমুখী গাড়ি চলাচল করে এই রাস্তা দিয়েই। বাহাদুরশাহ পরিবহনসহ অন্যান্য গাড়ির বেপরোয়া গতির কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। কোনোরকম গতিরোধক না থাকায় বেপরোয়াভাবে চালানো হচ্ছে যানবাহন। কোনো ফুটওভারব্রিজ না থাকায় দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেশি। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো বিকল্পব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

 

এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিতে দিনের অধিকাংশ সময় থাকে যানজট। তা ছাড়া যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা যায় বিভিন্ন মিনিবাস, রিকশা ও সিএনজি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। আবার রাস্তার দুই পাশ দখল করে চায়ের টংদোকানগুলোর কারণেও যানজট সৃষ্টি হয়। তা ছাড়া মূল ফটকের পাশে বাসস্ট্যান্ড না হওয়া সত্ত্বেও অনেক বাস দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী ওঠা-নামা করায় যানজট আরও তীব্র হয়েছে। এতে রাস্তা পার হতে গিয়ে দুর্ভোগের পাশাপাশি দুর্ঘটনায় পড়ছেন অনেকে।

 

শিক্ষার্থীরা জানান, রাস্তা পার হওয়ার সময় তাদের মধ্যে সবসময় ভয় ও আতঙ্ক কাজ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেটের সামনে হলেও এখানে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো হয়। গতিরোধক না থাকায় গাড়িচালকরা হুট করে এসে ধাক্কা মেরে দেয়। প্রায় প্রতিদিনই এমন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে আহত হচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী।

 

সম্প্রতি বাহাদুরশাহ পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি মিনিবাস, রিকশা আরোহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সহকারী প্রক্টরকে ধাক্কা দেয়। এতে দুজনই রাস্তায় পড়ে যান এবং রিকশাচালক গুরুতর আহত হন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বাসের ধাক্কায় এক রিকশা আরোহী নিহত হয়েছেন। এই দুর্ঘটনায় আরও দুজন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্নতাকর্মী, আরেকজন রিকশাচালক।

 

এ দিকে রাস্তা পারাপারে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আহনাফ তাহমিদ ফাইয়াজ জানান, ‘আমাদের ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনেই চার রাস্তার একটা মোড়। ফুটওভারব্রিজটি শাঁখারীবাজার মোড়ে না দিয়ে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকসংলগ্ন ভিক্টোরিয়া পার্কের এক কর্ণারে বৃহৎ আকারে দিলে সবাই উপকৃত হতো।’

 

এ দিকে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল’-এর প্রায় ১২০০ ছাত্রীর রাস্তা পার হতে হয়। হলের আবাসিক ছাত্রী জান্নাতুল মাওয়া শশী দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম ও দ্বিতীয় ফটক ব্যবহার করে ছাত্রীরা হলে আসা-যাওয়া করেন। রাস্তা পারাপারের সময় তারা ঝুঁকিতে পড়েন এবং যানবাহন চালকরা তাদের গতি নিয়ন্ত্রণে সচেতন হন না বরং তারা মেয়েদের বিভিন্নভাবে হেনস্তা করেন।’

 

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল দৈনিক বাংলাকে জানান, স্পিডব্রেকার বসানোর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিটি করপোরেশনকে একাধিকবার চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘প্রধান ফটকে ফুটওভারব্রিজ নির্মাণের জন্য সিটি করপোরেশন বরাবর আবেদন জানানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সদুত্তর পাইনি।’

 

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অধীন ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আব্দুর রহমান মিয়াজী দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো চিঠি দেয়া হয়েছে কি না তা আমার জানা নেই। আমাকে কোনো অনুলিপি দেয়া হয়নি।’ কাউন্সিলর জানান, ওয়াসার কাজ চলছে। সেটা শেষ হলে আমরা স্পিডব্রেকার বসানোর কাজ শুরু করব।

 

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হককে অবহিত করলে দৈনিক বাংলাকে তিনি বলেন, ‘দ্রুতই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনে চিঠি হাতে পৌঁছে দেয়া হবে।’

প্রধান ফটক মরণফাঁদ, নিয়মিত ঘটছে দুর্ঘটনা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের রাস্তায় যানজট। ছবি: দৈনিক বাংলা

মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ

 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের রাস্তাটি দিন দিন মরণফাঁদে পরিণত হচ্ছে। রাস্তায় কোনো গতিরোধক না থাকায় বেপরোয়াভাবে চালানো হয় যানবাহন। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সাধারণ পথচারীরা। নেই কোনো ফুটওভারব্রিজও। এতে করে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পারাপার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে মিলিত হয়েছে বেশ কয়েকটি রাস্তা। লক্ষ্মীবাজার, গুলিস্তান ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালসহ শ্যামবাজার ও ইসলামপুরমুখী গাড়ি চলাচল করে এই রাস্তা দিয়েই। বাহাদুরশাহ পরিবহনসহ অন্যান্য গাড়ির বেপরোয়া গতির কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। কোনোরকম গতিরোধক না থাকায় বেপরোয়াভাবে চালানো হচ্ছে যানবাহন। কোনো ফুটওভারব্রিজ না থাকায় দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেশি। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো বিকল্পব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

 

এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিতে দিনের অধিকাংশ সময় থাকে যানজট। তা ছাড়া যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা যায় বিভিন্ন মিনিবাস, রিকশা ও সিএনজি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। আবার রাস্তার দুই পাশ দখল করে চায়ের টংদোকানগুলোর কারণেও যানজট সৃষ্টি হয়। তা ছাড়া মূল ফটকের পাশে বাসস্ট্যান্ড না হওয়া সত্ত্বেও অনেক বাস দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী ওঠা-নামা করায় যানজট আরও তীব্র হয়েছে। এতে রাস্তা পার হতে গিয়ে দুর্ভোগের পাশাপাশি দুর্ঘটনায় পড়ছেন অনেকে।

 

শিক্ষার্থীরা জানান, রাস্তা পার হওয়ার সময় তাদের মধ্যে সবসময় ভয় ও আতঙ্ক কাজ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেটের সামনে হলেও এখানে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো হয়। গতিরোধক না থাকায় গাড়িচালকরা হুট করে এসে ধাক্কা মেরে দেয়। প্রায় প্রতিদিনই এমন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে আহত হচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী।

 

সম্প্রতি বাহাদুরশাহ পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি মিনিবাস, রিকশা আরোহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সহকারী প্রক্টরকে ধাক্কা দেয়। এতে দুজনই রাস্তায় পড়ে যান এবং রিকশাচালক গুরুতর আহত হন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বাসের ধাক্কায় এক রিকশা আরোহী নিহত হয়েছেন। এই দুর্ঘটনায় আরও দুজন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্নতাকর্মী, আরেকজন রিকশাচালক।

 

এ দিকে রাস্তা পারাপারে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আহনাফ তাহমিদ ফাইয়াজ জানান, ‘আমাদের ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনেই চার রাস্তার একটা মোড়। ফুটওভারব্রিজটি শাঁখারীবাজার মোড়ে না দিয়ে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকসংলগ্ন ভিক্টোরিয়া পার্কের এক কর্ণারে বৃহৎ আকারে দিলে সবাই উপকৃত হতো।’

 

এ দিকে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল’-এর প্রায় ১২০০ ছাত্রীর রাস্তা পার হতে হয়। হলের আবাসিক ছাত্রী জান্নাতুল মাওয়া শশী দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম ও দ্বিতীয় ফটক ব্যবহার করে ছাত্রীরা হলে আসা-যাওয়া করেন। রাস্তা পারাপারের সময় তারা ঝুঁকিতে পড়েন এবং যানবাহন চালকরা তাদের গতি নিয়ন্ত্রণে সচেতন হন না বরং তারা মেয়েদের বিভিন্নভাবে হেনস্তা করেন।’

 

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল দৈনিক বাংলাকে জানান, স্পিডব্রেকার বসানোর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিটি করপোরেশনকে একাধিকবার চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘প্রধান ফটকে ফুটওভারব্রিজ নির্মাণের জন্য সিটি করপোরেশন বরাবর আবেদন জানানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সদুত্তর পাইনি।’

 

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অধীন ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আব্দুর রহমান মিয়াজী দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো চিঠি দেয়া হয়েছে কি না তা আমার জানা নেই। আমাকে কোনো অনুলিপি দেয়া হয়নি।’ কাউন্সিলর জানান, ওয়াসার কাজ চলছে। সেটা শেষ হলে আমরা স্পিডব্রেকার বসানোর কাজ শুরু করব।

 

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হককে অবহিত করলে দৈনিক বাংলাকে তিনি বলেন, ‘দ্রুতই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনে চিঠি হাতে পৌঁছে দেয়া হবে।’