প্রশ্নফাঁসে বিমানের এক ‘স্যারকে’ খুঁজছে ডিবি


আতাউর রহমান

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বিমানের এক ‘স্যার’কে খুঁজছে তদন্ত সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ওই প্রশ্নফাঁসের পর জড়িতদের কাছ থেকে উদ্ধার করা চার ডায়েরিতে রয়েছে সেই স্যারের কথা। যেখানে প্রশ্ন বিক্রি করে তাকে টাকা দেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। ‘স্যার’ লেখা থাকলেও তার পুরো নাম ও পদবি তাতে লেখা নেই। ধারণা করা হচ্ছে, এই স্যার সরকারি এয়ারলাইন্সটির দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য মিলেছে।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উদ্ধার করা চারটি ডায়েরির ভেতর বিমানে চালকসহ বিভিন্ন ধরনের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস করে টাকা নেওয়ার তথ্য রয়েছে। এতে কে কত টাকা নিয়েছেন, কত টাকায় প্রশ্ন বিক্রি করা হয়েছে—এ ধরনের তথ্য রয়েছে। কথিত সেই স্যারের নামে লেখা রয়েছে কয়েক লাখ টাকার অঙ্ক। ডায়েরিগুলোর পাতায় পাতায় রয়েছে দুর্নীতির হিসাবের ছক। পরিকল্পিতভাবেই যে এই প্রশ্নফাঁস করা হয়েছে, তা ডায়েরিতে থাকা লেখা দেখলেই বোঝা যায়। তবে সেখানে স্যার লেখা থাকলেও তার পুরো নাম ও পদবি লেখা নেই।গত শুক্রবার বিকেল ৩টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ১০০ চালকসহ বেশ কয়েকটি পদে নিয়োগে এক ঘণ্টার এমসিকিউ পরীক্ষা ছিল। ওই পরীক্ষার আগের রাতে

প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ পাওয়ার ডিবির লালবাগ বিভাগের সদস্যরা জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করেন। পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর সেই পরীক্ষা বাতিল করা হয়।

গ্রেপ্তার পাঁচজন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এমটি অপারেটর জাহাঙ্গীর আলম, মোহাম্মদ মাহফুজ আলম ভূঁইয়া, এনামুল হক, অফিস সহায়ক আওলাদ হোসেন ও হারুনুর রশিদকে পরে ছয় দিনের রিমান্ডে নেয় তদন্ত সংস্থাটি। তারা বর্তমানে ডিবি হেফাজতে রয়েছেন।

ওই ঘটনায় দায়ের মামলার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা আলামতও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। প্রশ্নফাঁস করে তা বিক্রির টাকা এই আসামিরা ছাড়াও যে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কেউ পেয়েছেন, সে আভাস মিলেছে। তবে আসামিরা তথ্য এড়ানোর চেষ্টা করছেন। ডায়েরিতে ‘স্যারের’ নামে বরাদ্দ করা কয়েক লাখ টাকা দেওয়া হলেও সেই স্যার কে—তা বলতে গড়িমসি করছেন তারা। তবে সেই স্যারের নাম-পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।

ওই অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া ডিবির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান কালবেলাকে বলেন, রিমান্ডে থাকা আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই চলছে। মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রিমান্ডে থাকা পাঁচজনই প্রশ্ন প্রণয়ন, প্রিন্টিং ও সংরক্ষণ কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা নিয়োগ-বাণিজ্য করতেন। এর আগেও বিভিন্ন পদের নিয়োগ-বাণিজ্যে সম্পৃক্ততা থাকতে পারে তাদের। তবে ওই পাঁচজন ছাড়াও এয়ারলাইন্সটির ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা এই অপকর্মে জড়িত। কে সেই কর্মকর্তা, এখন সেই অনুসন্ধান চলছে। জড়িত পুরো গ্রুপটিকেই আইনের আওতায় নেওয়া হবে।

এর আগে ওই পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানিয়েছিলেন, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা একটি প্রশ্নের বিনিময়ে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেন। কারও কারও কাছ থেকে ২ লাখ টাকাও নিয়েছেন। আবার দরিদ্র চাকরিপ্রার্থীদের প্রশ্নপত্র সরবরাহ করার বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখিত জায়গা-জমি নিত চক্রটি।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, জব্দ করা ডায়েরিগুলোতে প্রায় অর্ধকোটি টাকার হিসাবে থাকলেও বিমানের ফাঁস হওয়া প্রশ্ন কতজনের কাছ থেকে বিক্রি করা হয়েছে, মোট কত টাকা পেয়েছে—সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। কারা কিনেছিল এই প্রশ্ন, তাও যাচাই করা হচ্ছে।

প্রশ্নফাঁসে বিমানের এক ‘স্যারকে’ খুঁজছে ডিবি


আতাউর রহমান

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বিমানের এক ‘স্যার’কে খুঁজছে তদন্ত সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ওই প্রশ্নফাঁসের পর জড়িতদের কাছ থেকে উদ্ধার করা চার ডায়েরিতে রয়েছে সেই স্যারের কথা। যেখানে প্রশ্ন বিক্রি করে তাকে টাকা দেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। ‘স্যার’ লেখা থাকলেও তার পুরো নাম ও পদবি তাতে লেখা নেই। ধারণা করা হচ্ছে, এই স্যার সরকারি এয়ারলাইন্সটির দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য মিলেছে।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উদ্ধার করা চারটি ডায়েরির ভেতর বিমানে চালকসহ বিভিন্ন ধরনের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস করে টাকা নেওয়ার তথ্য রয়েছে। এতে কে কত টাকা নিয়েছেন, কত টাকায় প্রশ্ন বিক্রি করা হয়েছে—এ ধরনের তথ্য রয়েছে। কথিত সেই স্যারের নামে লেখা রয়েছে কয়েক লাখ টাকার অঙ্ক। ডায়েরিগুলোর পাতায় পাতায় রয়েছে দুর্নীতির হিসাবের ছক। পরিকল্পিতভাবেই যে এই প্রশ্নফাঁস করা হয়েছে, তা ডায়েরিতে থাকা লেখা দেখলেই বোঝা যায়। তবে সেখানে স্যার লেখা থাকলেও তার পুরো নাম ও পদবি লেখা নেই।গত শুক্রবার বিকেল ৩টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ১০০ চালকসহ বেশ কয়েকটি পদে নিয়োগে এক ঘণ্টার এমসিকিউ পরীক্ষা ছিল। ওই পরীক্ষার আগের রাতে

প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ পাওয়ার ডিবির লালবাগ বিভাগের সদস্যরা জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করেন। পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর সেই পরীক্ষা বাতিল করা হয়।

গ্রেপ্তার পাঁচজন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এমটি অপারেটর জাহাঙ্গীর আলম, মোহাম্মদ মাহফুজ আলম ভূঁইয়া, এনামুল হক, অফিস সহায়ক আওলাদ হোসেন ও হারুনুর রশিদকে পরে ছয় দিনের রিমান্ডে নেয় তদন্ত সংস্থাটি। তারা বর্তমানে ডিবি হেফাজতে রয়েছেন।

ওই ঘটনায় দায়ের মামলার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা আলামতও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। প্রশ্নফাঁস করে তা বিক্রির টাকা এই আসামিরা ছাড়াও যে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কেউ পেয়েছেন, সে আভাস মিলেছে। তবে আসামিরা তথ্য এড়ানোর চেষ্টা করছেন। ডায়েরিতে ‘স্যারের’ নামে বরাদ্দ করা কয়েক লাখ টাকা দেওয়া হলেও সেই স্যার কে—তা বলতে গড়িমসি করছেন তারা। তবে সেই স্যারের নাম-পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।

ওই অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া ডিবির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান কালবেলাকে বলেন, রিমান্ডে থাকা আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই চলছে। মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রিমান্ডে থাকা পাঁচজনই প্রশ্ন প্রণয়ন, প্রিন্টিং ও সংরক্ষণ কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা নিয়োগ-বাণিজ্য করতেন। এর আগেও বিভিন্ন পদের নিয়োগ-বাণিজ্যে সম্পৃক্ততা থাকতে পারে তাদের। তবে ওই পাঁচজন ছাড়াও এয়ারলাইন্সটির ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা এই অপকর্মে জড়িত। কে সেই কর্মকর্তা, এখন সেই অনুসন্ধান চলছে। জড়িত পুরো গ্রুপটিকেই আইনের আওতায় নেওয়া হবে।

এর আগে ওই পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানিয়েছিলেন, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা একটি প্রশ্নের বিনিময়ে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেন। কারও কারও কাছ থেকে ২ লাখ টাকাও নিয়েছেন। আবার দরিদ্র চাকরিপ্রার্থীদের প্রশ্নপত্র সরবরাহ করার বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখিত জায়গা-জমি নিত চক্রটি।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, জব্দ করা ডায়েরিগুলোতে প্রায় অর্ধকোটি টাকার হিসাবে থাকলেও বিমানের ফাঁস হওয়া প্রশ্ন কতজনের কাছ থেকে বিক্রি করা হয়েছে, মোট কত টাকা পেয়েছে—সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। কারা কিনেছিল এই প্রশ্ন, তাও যাচাই করা হচ্ছে।