ফেইসবুকে ইংরেজি শেখানোর ধুম নিয়ে দুই কথা

মাছুম বিল্লাহ

ফেইসবুক খুললেই দেখা যায় কিছু কিছু শিক্ষক, শিক্ষার্থী কিংবা কোচিংয়ের মালিক ইংরেজি শেখাচ্ছেন। অনেক শিক্ষার্থী, আগ্রহী লোকজন আবার প্রচুর কমেন্ট করছেন এভাবে : ইংরেজি শেখার সঠিক মাধ্যমটি পেলাম/এত দিন ইংরেজি শেখা থেকে বঞ্চিত ছিলাম/যথার্থ ইংরেজি ক্লাস, সাকসেসফুল ইংলিশ টিচার/এমন ইংরেজি শিক্ষকই দেশে প্রয়োজন ইত্যাদি। কেউ কেউ লিখেছেন স্যার আপনার ক্লাস আমি প্রতিদিন দেখি, অনেকে তার ভিডিও পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেছেন। আবার লেখা আছে ভিডিওটি বারবার দেখার জন্য ক্লিক দিয়ে রাখুন ইত্যাদি। এবার দেখা যাক তারা কেমন ইংরেজি শেখাচ্ছেন। দেখলাম জনৈক শিক্ষক ইংরেজি শেখাচ্ছেন আই অর্থ আমি, অ্যাম অর্থ হয়/বি অর্থ হয়, টু বি অর্থ হতে/এটি কি অ্যাকটিভ ভয়েস, এটি কি প্যাসিভ ভয়েস/অ্যাকটিভ ভয়েসের গঠনপ্রণালি কী/প্যাসিভের গঠন প্রণালি কী। সাবজেক্টকে অবজেক্ট করতে হয়, তারপর অকজিলারি ভার্ব বসাতে হয়, তারপর ভার্বের পাস্ট পার্টিসিপল ফরম বসাতে হয়। মাঝে মাঝে আবার শিক্ষার্থীদের লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছেন। আই অর্থ আমি, ইট মানে খাওয়া আর আমি খাই : আই ইট, কী খাই? ভাত মানে : রাইস। ‘অ্যাম টু’, ‘ইজ টু’ মানে ‘তে হয়’। আসলে এভাবে কি ইংরেজি শেখা যায়? এই জাতীয় ইংরেজি পড়ানোর মধ্যে নতুনত্ব কী আছে? আমরা তো এভাবেই পড়ে এসেছি কিন্তু বাস্তব জীবনে কী ব্যবহার করা হচ্ছে? কজন ইংরেজি ব্যবহার করতে পারছে? এভাবে গ্রামার ট্রান্সলেশন মেথডে ইংরেজি পড়িয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষ করা যাচ্ছে না অর্থাৎ বাস্তব জীবনে তারা শোনা, বলা, পড়া ও লেখা এর কোনোটিতেই ফলপ্রসূভাবে ইংরেজি ব্যবহার করতে পারছে না। তাই আমদানি করা হলো তথাকথিত ‘কমিউনিকেটিভ ইংলিশ’।

কমিউনিকেটিভ ইংরেজির মূল বৈশিষ্ট্যগুলো কী? ‘পার্সোনাল এনগেজমেন্ট’ অর্থাৎ শিক্ষার্থীকে অ্যাক্টিভিটি করতে হবে, গ্রামারের নিয়ম মুখস্থ করবে না, গ্রামার পড়বে কনটেক্সটচুয়ালি অর্থাৎ টেকস্ট থেকে, কোনো গল্প পড়ে সেখান থেকেই গ্রামার শিখবে, শিক্ষার্থীদের ফ্লুয়েন্সির ওপর অর্থাৎ ভাষা ব্যবহারের ওপর জোর দিতে হবে বেশি ভাষার সঠিকত্বের চেয়ে। যে ট্রান্সলেশন মেথডের বিপরীতে ‘কমিউনিকেটিভ ল্যাংগুয়েজ টিচিং’ বা ‘সিএলটি’ এলো, দুনিয়াব্যাপী এখন যা নিয়ে চর্চা হচ্ছে, গবেষণা হচ্ছে, আলোচনা হচ্ছে সেখানে এখনো শিক্ষকরা ‘আই অর্থ আমি’, ‘কুক অর্থ রান্না করা’, ‘রাইস অর্থ ভাত’ শেখাচ্ছেন আর বলছেন ‘আমি ভাত রান্না করি’ এটি হচ্ছে অ্যাকটিভ ফর্ম এবং প্যাসিভ ফর্ম হচ্ছে ‘রাইস ইজ কুকড বাই মি’। দেখলাম টিচারই সব বলে দিচ্ছেন, প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার পর শিক্ষার্থীরা উত্তর দিচ্ছে বিষয়টি এমনভাবেও করাচ্ছেন না। শিক্ষক নিজে নিজেই সব বলে দিচ্ছেন। ‘সিএলটি’তে পার্সোনাল এনগেজমেন্ট বলতে যা বোঝাচ্ছে তার ধারে-কাছেও নেই এমন শিক্ষকরা।

কমিউনিকেটিভ ইংরেজিতে টার্গেট ল্যাংগুয়েজ যত বেশি বেশি ব্যবহার করানো হবে, শিক্ষার্থীদের জন্য তা ততই মঙ্গলজনক, শিক্ষার্থীরা কনটেক্সট থেকে, সিচুয়েশন থেকে ইংরেজি শিখবে, পারিপার্শি^ক অবস্থা থেকে শুনে শুনে ইংরেজি শিখবে কিন্তু সেই পরিবেশ স্বাভাবিক কারণে আমাদের থাকবে না কারণ আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। আমরা আমাদের চারপাশে বাংলা শুনব, সবাই বাংলা ব্যবহার করবে, এটিই স্বাভাবিক। যেহেতু কমিউনিকেটিভ ইংরেজিতে ইংরেজি চর্চার একটি পরিবেশ তৈরি করতে বলা হয়, সেটি শিক্ষককেই নিশ্চিত করতে হয়। তিনি সর্বদাই সহজ ইংরেজিতে কথা বলবেন, কিছু কিছু শিক্ষার্থী সেগুলো শুনে প্রথমে সবটুকু কিংবা অনেক অংশই বুঝবে না, তার পরও বলতে হবে। শুনে শুনে তারা শিখতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। এ বিষয়টি কন্টেজিয়াস অর্থাৎ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষক নিজে যদি ইংরেজি ব্যবহার করেন, সেটি শিক্ষার্থীদের ভেতর সংক্রমিত হয়। শিক্ষার্থীরাও তখন ইংরেজি বলা শুরু করতে চাইবে। কিন্তু ফেইসবুকে যারা ইংরেজি শেখাচ্ছেন এক-দুজন ছাড়া সবাই বাংলায় শুধু গ্রামার ব্যাখ্যা করছেন, ভাষার ব্যবহার নেই বললেই চলে। পুরোটাই বাংলা বলছেন। বাকি যে কাজটুকু করছেন তা হচ্ছে ট্রান্সলেট করছেন বাক্য, শব্দ যা বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি নয়। কিছু ক্ষেত্রে হয়তো ট্রান্সলেশন ব্যবহার করা যেতে পারে, কিন্তু তারা যেটি করছেন পুরো ইংরেজি গ্রামার পড়াচ্ছেন, আর পড়াচ্ছেন বাংলায়, যে বিষয়গুলো আমাদের স্কুল ও কলেজ জীবনে ঘটেছে, তা-ই এখনো ঘটছে। ফলে শিক্ষার্থীরা ভাষা ব্যবহারের অর্থাৎ ইংরেজি শুনে বোঝা, নিজে ইংরেজিতে কিছু বলা, ইংরেজি পড়ে মর্মোদ্ধার করা এবং নিজে কিছু ইংরেজি লেখাÑএসবের কোনোটাই কিন্তু ফেইসবুকে শিক্ষাদানরত শিক্ষকরা করাচ্ছেন না, শুধু গ্রামারের নিয়ম আর স্ট্রাকচার করাচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা থাকছেন অধিকাংশ সময়ই ইন-অ্যাকটিভ।

ভাষা শিখতে হলে নিজেকে এনগেজড হতে হবে, নিজেকে খেলোয়াড় হতে হবে। মাঠের ভেতর খেলোয়াড়রা খেলছেন আর আপনি যদি মাঠের বাইরে বসে হাততালি দেন তাতে আপনি খেলোয়াড় হতে পারবেন না। খেলোয়াড় হতে হলে আপনাকে মাঠে নামতে হবে, ফুটবলে লাথি দিতে হবে, ক্রিকেট-ব্যাট হাতে নিতে হবে, প্র্যাকটিস করতেই হবে। অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক বলে থাকেন, ‘ওমুক স্যার সুন্দর করে গ্রামার বুঝিয়ে দেন, কাজেই তার কাছে পড়লেই কেল্লা ফতে।’ গ্রামার বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়, বোঝার বিষয়। একটি ভাষা কীভাবে গঠিত হয়েছে তার ব্যবহার থেকে, এপ্লিকেশন থেকে, টেক্সট থেকে আপনাকে বুঝতে হবে এবং নিজে নিজে আবিষ্কার করতে হবে এটি যেভাবে হলো তার র‌্যাশনালটা কী, যুক্তিটি কী। নিজে আবিষ্কার করলে সারাজীবন মনে থাকবে। একজন শিক্ষক আপনাকে বলে দিল ‘থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার হলে ভার্বের শেষে এস বা ই-এস যোগ করতে হয়। আপনি বুঝলেন, সেটি অনেক দিন ধরে রাখতে পারবেন না। ধরে রাখলেও ব্যবহার করতে পারবেন না, আপনার ব্যবহার করে করে অটোমেটিক আপনার ঠোঁটে, আপনার হাতে লেখায় নিয়ে আসতে হবে। সেটি না হলে ভাষা শিক্ষা হচ্ছে না। সাইকেল কিংবা মোটরসাইকেলে আপনার সামনে যিনি আছে তিনি যদি সব সময় চালান তাতে আপনার কষ্ট কম হয়, টেনশন কম, আপনি আরামে থাকেন কিন্তু আপনি কখনো চালানো শিখতে পারছেন না। বিষয়টি ঠিক এ রকমই। যখন কোনো শিক্ষক আপনাকে বারবার বলে দিচ্ছেন, তাতে আপনার কষ্ট হয়তো কম হচ্ছে কিন্তু আপনি ভাষা ব্যবহার করা শিখছেন না। সাঁতার কাটতে হলে আপনাকে পানিতে নামতে হবে, পানিতে নেমে সাঁতার কাটতে হবে। এখানে শিক্ষকের ভূমিকা হবে ‘ফেসিলিটেশন’ অর্থাৎ সাঁতার কাটার সময় আপনার পাশে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন, মাঝে মাঝে প্রয়োজনে আপনাকে সহায়তা করছেন কিন্তু সাঁতার আপনাকেই দিতে হবে। ভাষা শেখার বিষয়টি ঠিক তাই। শিক্ষক নিজে সাঁতার কাটতে থাকলে শিক্ষার্থীরা সাঁতার কাটা শিখবে কীভাবে?

লেখক : শিক্ষক ও শিক্ষাবিষয়ক লেখক

ফেইসবুকে ইংরেজি শেখানোর ধুম নিয়ে দুই কথা

মাছুম বিল্লাহ

ফেইসবুক খুললেই দেখা যায় কিছু কিছু শিক্ষক, শিক্ষার্থী কিংবা কোচিংয়ের মালিক ইংরেজি শেখাচ্ছেন। অনেক শিক্ষার্থী, আগ্রহী লোকজন আবার প্রচুর কমেন্ট করছেন এভাবে : ইংরেজি শেখার সঠিক মাধ্যমটি পেলাম/এত দিন ইংরেজি শেখা থেকে বঞ্চিত ছিলাম/যথার্থ ইংরেজি ক্লাস, সাকসেসফুল ইংলিশ টিচার/এমন ইংরেজি শিক্ষকই দেশে প্রয়োজন ইত্যাদি। কেউ কেউ লিখেছেন স্যার আপনার ক্লাস আমি প্রতিদিন দেখি, অনেকে তার ভিডিও পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেছেন। আবার লেখা আছে ভিডিওটি বারবার দেখার জন্য ক্লিক দিয়ে রাখুন ইত্যাদি। এবার দেখা যাক তারা কেমন ইংরেজি শেখাচ্ছেন। দেখলাম জনৈক শিক্ষক ইংরেজি শেখাচ্ছেন আই অর্থ আমি, অ্যাম অর্থ হয়/বি অর্থ হয়, টু বি অর্থ হতে/এটি কি অ্যাকটিভ ভয়েস, এটি কি প্যাসিভ ভয়েস/অ্যাকটিভ ভয়েসের গঠনপ্রণালি কী/প্যাসিভের গঠন প্রণালি কী। সাবজেক্টকে অবজেক্ট করতে হয়, তারপর অকজিলারি ভার্ব বসাতে হয়, তারপর ভার্বের পাস্ট পার্টিসিপল ফরম বসাতে হয়। মাঝে মাঝে আবার শিক্ষার্থীদের লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছেন। আই অর্থ আমি, ইট মানে খাওয়া আর আমি খাই : আই ইট, কী খাই? ভাত মানে : রাইস। ‘অ্যাম টু’, ‘ইজ টু’ মানে ‘তে হয়’। আসলে এভাবে কি ইংরেজি শেখা যায়? এই জাতীয় ইংরেজি পড়ানোর মধ্যে নতুনত্ব কী আছে? আমরা তো এভাবেই পড়ে এসেছি কিন্তু বাস্তব জীবনে কী ব্যবহার করা হচ্ছে? কজন ইংরেজি ব্যবহার করতে পারছে? এভাবে গ্রামার ট্রান্সলেশন মেথডে ইংরেজি পড়িয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষ করা যাচ্ছে না অর্থাৎ বাস্তব জীবনে তারা শোনা, বলা, পড়া ও লেখা এর কোনোটিতেই ফলপ্রসূভাবে ইংরেজি ব্যবহার করতে পারছে না। তাই আমদানি করা হলো তথাকথিত ‘কমিউনিকেটিভ ইংলিশ’।

কমিউনিকেটিভ ইংরেজির মূল বৈশিষ্ট্যগুলো কী? ‘পার্সোনাল এনগেজমেন্ট’ অর্থাৎ শিক্ষার্থীকে অ্যাক্টিভিটি করতে হবে, গ্রামারের নিয়ম মুখস্থ করবে না, গ্রামার পড়বে কনটেক্সটচুয়ালি অর্থাৎ টেকস্ট থেকে, কোনো গল্প পড়ে সেখান থেকেই গ্রামার শিখবে, শিক্ষার্থীদের ফ্লুয়েন্সির ওপর অর্থাৎ ভাষা ব্যবহারের ওপর জোর দিতে হবে বেশি ভাষার সঠিকত্বের চেয়ে। যে ট্রান্সলেশন মেথডের বিপরীতে ‘কমিউনিকেটিভ ল্যাংগুয়েজ টিচিং’ বা ‘সিএলটি’ এলো, দুনিয়াব্যাপী এখন যা নিয়ে চর্চা হচ্ছে, গবেষণা হচ্ছে, আলোচনা হচ্ছে সেখানে এখনো শিক্ষকরা ‘আই অর্থ আমি’, ‘কুক অর্থ রান্না করা’, ‘রাইস অর্থ ভাত’ শেখাচ্ছেন আর বলছেন ‘আমি ভাত রান্না করি’ এটি হচ্ছে অ্যাকটিভ ফর্ম এবং প্যাসিভ ফর্ম হচ্ছে ‘রাইস ইজ কুকড বাই মি’। দেখলাম টিচারই সব বলে দিচ্ছেন, প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার পর শিক্ষার্থীরা উত্তর দিচ্ছে বিষয়টি এমনভাবেও করাচ্ছেন না। শিক্ষক নিজে নিজেই সব বলে দিচ্ছেন। ‘সিএলটি’তে পার্সোনাল এনগেজমেন্ট বলতে যা বোঝাচ্ছে তার ধারে-কাছেও নেই এমন শিক্ষকরা।

কমিউনিকেটিভ ইংরেজিতে টার্গেট ল্যাংগুয়েজ যত বেশি বেশি ব্যবহার করানো হবে, শিক্ষার্থীদের জন্য তা ততই মঙ্গলজনক, শিক্ষার্থীরা কনটেক্সট থেকে, সিচুয়েশন থেকে ইংরেজি শিখবে, পারিপার্শি^ক অবস্থা থেকে শুনে শুনে ইংরেজি শিখবে কিন্তু সেই পরিবেশ স্বাভাবিক কারণে আমাদের থাকবে না কারণ আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। আমরা আমাদের চারপাশে বাংলা শুনব, সবাই বাংলা ব্যবহার করবে, এটিই স্বাভাবিক। যেহেতু কমিউনিকেটিভ ইংরেজিতে ইংরেজি চর্চার একটি পরিবেশ তৈরি করতে বলা হয়, সেটি শিক্ষককেই নিশ্চিত করতে হয়। তিনি সর্বদাই সহজ ইংরেজিতে কথা বলবেন, কিছু কিছু শিক্ষার্থী সেগুলো শুনে প্রথমে সবটুকু কিংবা অনেক অংশই বুঝবে না, তার পরও বলতে হবে। শুনে শুনে তারা শিখতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। এ বিষয়টি কন্টেজিয়াস অর্থাৎ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষক নিজে যদি ইংরেজি ব্যবহার করেন, সেটি শিক্ষার্থীদের ভেতর সংক্রমিত হয়। শিক্ষার্থীরাও তখন ইংরেজি বলা শুরু করতে চাইবে। কিন্তু ফেইসবুকে যারা ইংরেজি শেখাচ্ছেন এক-দুজন ছাড়া সবাই বাংলায় শুধু গ্রামার ব্যাখ্যা করছেন, ভাষার ব্যবহার নেই বললেই চলে। পুরোটাই বাংলা বলছেন। বাকি যে কাজটুকু করছেন তা হচ্ছে ট্রান্সলেট করছেন বাক্য, শব্দ যা বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি নয়। কিছু ক্ষেত্রে হয়তো ট্রান্সলেশন ব্যবহার করা যেতে পারে, কিন্তু তারা যেটি করছেন পুরো ইংরেজি গ্রামার পড়াচ্ছেন, আর পড়াচ্ছেন বাংলায়, যে বিষয়গুলো আমাদের স্কুল ও কলেজ জীবনে ঘটেছে, তা-ই এখনো ঘটছে। ফলে শিক্ষার্থীরা ভাষা ব্যবহারের অর্থাৎ ইংরেজি শুনে বোঝা, নিজে ইংরেজিতে কিছু বলা, ইংরেজি পড়ে মর্মোদ্ধার করা এবং নিজে কিছু ইংরেজি লেখাÑএসবের কোনোটাই কিন্তু ফেইসবুকে শিক্ষাদানরত শিক্ষকরা করাচ্ছেন না, শুধু গ্রামারের নিয়ম আর স্ট্রাকচার করাচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা থাকছেন অধিকাংশ সময়ই ইন-অ্যাকটিভ।

ভাষা শিখতে হলে নিজেকে এনগেজড হতে হবে, নিজেকে খেলোয়াড় হতে হবে। মাঠের ভেতর খেলোয়াড়রা খেলছেন আর আপনি যদি মাঠের বাইরে বসে হাততালি দেন তাতে আপনি খেলোয়াড় হতে পারবেন না। খেলোয়াড় হতে হলে আপনাকে মাঠে নামতে হবে, ফুটবলে লাথি দিতে হবে, ক্রিকেট-ব্যাট হাতে নিতে হবে, প্র্যাকটিস করতেই হবে। অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক বলে থাকেন, ‘ওমুক স্যার সুন্দর করে গ্রামার বুঝিয়ে দেন, কাজেই তার কাছে পড়লেই কেল্লা ফতে।’ গ্রামার বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়, বোঝার বিষয়। একটি ভাষা কীভাবে গঠিত হয়েছে তার ব্যবহার থেকে, এপ্লিকেশন থেকে, টেক্সট থেকে আপনাকে বুঝতে হবে এবং নিজে নিজে আবিষ্কার করতে হবে এটি যেভাবে হলো তার র‌্যাশনালটা কী, যুক্তিটি কী। নিজে আবিষ্কার করলে সারাজীবন মনে থাকবে। একজন শিক্ষক আপনাকে বলে দিল ‘থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার হলে ভার্বের শেষে এস বা ই-এস যোগ করতে হয়। আপনি বুঝলেন, সেটি অনেক দিন ধরে রাখতে পারবেন না। ধরে রাখলেও ব্যবহার করতে পারবেন না, আপনার ব্যবহার করে করে অটোমেটিক আপনার ঠোঁটে, আপনার হাতে লেখায় নিয়ে আসতে হবে। সেটি না হলে ভাষা শিক্ষা হচ্ছে না। সাইকেল কিংবা মোটরসাইকেলে আপনার সামনে যিনি আছে তিনি যদি সব সময় চালান তাতে আপনার কষ্ট কম হয়, টেনশন কম, আপনি আরামে থাকেন কিন্তু আপনি কখনো চালানো শিখতে পারছেন না। বিষয়টি ঠিক এ রকমই। যখন কোনো শিক্ষক আপনাকে বারবার বলে দিচ্ছেন, তাতে আপনার কষ্ট হয়তো কম হচ্ছে কিন্তু আপনি ভাষা ব্যবহার করা শিখছেন না। সাঁতার কাটতে হলে আপনাকে পানিতে নামতে হবে, পানিতে নেমে সাঁতার কাটতে হবে। এখানে শিক্ষকের ভূমিকা হবে ‘ফেসিলিটেশন’ অর্থাৎ সাঁতার কাটার সময় আপনার পাশে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন, মাঝে মাঝে প্রয়োজনে আপনাকে সহায়তা করছেন কিন্তু সাঁতার আপনাকেই দিতে হবে। ভাষা শেখার বিষয়টি ঠিক তাই। শিক্ষক নিজে সাঁতার কাটতে থাকলে শিক্ষার্থীরা সাঁতার কাটা শিখবে কীভাবে?

লেখক : শিক্ষক ও শিক্ষাবিষয়ক লেখক