ফোন না ধরার আক্ষেপ কুরে খাচ্ছে মাকে
ইমন রহমান

তিনি বলেন, ‘ভার্সিটির হলে থাকতে দিতাম না যে ভয়ে, আজ তাই হলো।’ বুকে কষ্ট চেপে এখন তার একটাই চাওয়া ছেলে হত্যার সুষ্ঠু বিচার।
তবে ইতিমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বুশরার সঙ্গে ফারদিনের প্রেম এবং ফারদিন মাদকাসক্ত ছিলেন এমন সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে তার মৃত ছেলের চরিত্র হনন না করতে অনুরোধ জানিয়েছেন ফারহানা।
এদিকে ফারদিনের ফেইসবুকের টাইমলাইন ঘেঁটে দেখা গেছে, গত ১৩ আগস্ট ‘সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতির পুনরুত্থানের আশঙ্কায় বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিবৃতি’ শিরোনামে এক পৃষ্ঠার একটি লেখা শেয়ার করেছেন। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার পরও ১৩ আগস্ট বুয়েটের অডিটরিয়াম কমপ্লেক্সে ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বুয়েটের সাবেক নেতৃবৃন্দ’-এর একটি ব্যানার শেয়ার করা নিয়ে ওই পোস্ট দেন তিনি।
ফারদিনের সহপাঠীদের দাবি, বুয়েটে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে আবরার ফাহাদ খুন হওয়ার পর থেকে বুয়েট ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধের আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন ফারদিন। হত্যাকান্ডের সঙ্গে এর কোনো কুরে খাচ্ছে মা’কে সম্পৃক্ততা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার অনুরোধ তাদের।
এদিকে নিখোঁজের আট দিন আর মরদেহ উদ্ধারের পাঁচ দিন অতিবাহিত হলেও হত্যাকা-ের গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত কোনো ক্লু খুঁজে পায়নি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তারা বলছে, তদন্তের জন্য পাওয়া যাচ্ছে না সড়কের পর্যাপ্ত সিসিটিভি ফুটেজ। এখনো শনাক্ত করা যায়নি ফারদিনকে হত্যার স্থান। তবে প্রথমে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ফারদিনের মোবাইল ফোন জুরাইনে বন্ধ হয়ে যায় বললেও এবার ডিবির দাবি ফোন সর্বশেষ রূপগঞ্জের কায়েতপাড়ায় বন্ধ হয়। নিখোঁজের দিন অর্থাৎ ৪ নভেম্বর রাত ২টায় কায়েতপাড়ার চনপাড়া বস্তিতে ফোনটি বন্ধ হয় বলে দেশ রূপান্তরকে জানান তদন্তসংশ্লিষ্ট ডিবির মতিঝিল বিভাগের এক অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি)। তবে সেখানে কীভাবে গেলেন ফারদিন, জীবিত না মৃত অবস্থায় গেছেন, কারা সেখানে নিয়ে গেছেন, মরদেহ শীতলক্ষ্যায় কীভাবে গেল সেসব বিষয়ে নিশ্চিত করে বলতে পারেননি ডিবির এ কর্মকর্তা।
লাশ উদ্ধারের পরপরই ডিবি দাবি করেছিল, ফারদিনের মোবাইল ফোন বন্ধের সর্বশেষ অবস্থান ছিল রাজধানীর জুরাইনে। আর গত বৃহস্পতিবার ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বুয়েটের যে শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, তার সবশেষ লোকেশন (অবস্থান) আমরা গাজীপুর পেয়েছিলাম। গাজীপুর থেকে পরবর্তী সময়ে কীভাবে লাশ শীতলক্ষ্যায় এলো এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
ডিএমপির রামপুরা থানায় ফারদিনের বাবা কাজী নূরউদ্দিন রানার করা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ফারদিনের বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরার কাছ থেকেও কোনো তথ্য পায়নি ডিবি। পাঁচ দিনের রিমান্ডের প্রথম দিনে বুশরা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন এমন তথ্যই পেয়েছে ডিবি।
তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিবি মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রাজীব আল মাসুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘থানা থেকে মামলাটি ডিবিতে আসার পর আমরা সার্বিক বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত শুরু করি। সর্বশেষ দুটি বিষয় নিয়ে কাজ করছি। তবে নতুন করে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আমরা এখনো হত্যার কোনো ক্লু খুঁজে পাইনি।’
হত্যাকারীকে খুঁজে না পাওয়ায় তদন্ত ধীরে চলছে দাবি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শোকার্ত পরিবারটি। তারা দ্রুত হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর ডেমরার শান্তিবাগের শুভেচ্ছা টাওয়ারের ফারদিনদের ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখা যায়, শোকে মুষড়ে পড়েছে পরিবারটি। ছয়তলা ভবনটির পঞ্চমতলার পূর্বদিকের ফ্ল্যাটে থাকে ফারদিনের পরিবার। বাসার সামনে যেতেই এ প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা হয় বাবা নূরউদ্দিন রানার। তিনি জুমার নামাজ শেষ করে বাসায় ফিরছিলেন। সাংবাদিক পরিচয় দিতেই হাত ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকেন তিনি। একপর্যায়ে ভবনের নিচতলার গ্যারেজে থাকা কাঠের বেঞ্চে বসে পড়েন। এরপরই অনর্গল বলতে থাকেন ফারদিনের নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে লাশ পাওয়া পর্যন্ত সব ঘটনা। ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়েও তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন। বারবার বলছিলেন, ‘আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তারা সাধারণ কেউ না। এরা জাতির মেধা ধ্বংস করতে চায়।’
নিখোঁজের পর রামপুরা থানা পুলিশ সহায়তা করলেও লাশ উদ্ধারের পর পুলিশের নানা অসহযোগিতার কথা তুলে ধরেন ফারদিনের বাবা। লাশ উদ্ধারের তিন দিন পর মামলা করার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘পুলিশের দুই ডিসি আমাকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা করতে বলেন। কিন্তু আমি রাজি হইনি।’
বুশরাকে মূল অভিযুক্ত করার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ফারদিন মারা যাওয়ার আগে অন্তত সাত ঘণ্টা বুশরার সঙ্গে কাটিয়েছে। অথচ মৃত্যুর খবর শুনে তাকে শোকার্ত মনে হয়নি। সাবলীলভাবে কথা বলেছে আমাদের সামনে। আমাকে বিষয়টি অবাক করেছে।’
নূরউদ্দিন রানা বলেন, ‘তদন্তকারীরা বলেছেন ফারদিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গিয়েছে। কিন্তু বান্ধবী বুশরাকে রামপুরা রেখে যাওয়ার মুহূর্তের একটি ভিডিও ফুটেজ ছাড়া আমাকে আর কোনো ভিডিও দেখাতে পারেনি। আমি তথ্য-প্রমাণ ছাড়া তাদের বানানো কোনো গল্প বিশ্বাস করি না।’
ভবনের সিঁড়ি ভেঙে পাঁচতলায় গিয়ে দেখা যায়, ফ্ল্যাটে বেশ কিছু আত্মীয়স্বজন রয়েছেন। ফারদিনের মা ফারহানা ইয়াসমিন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার ছেলে হত্যার সুষ্ঠু বিচার না করে তার চরিত্র হনন করা হচ্ছে। অমুক প্রেমিকা, তমুক স্থানে মাদক কিনতে যাওয়ার নাটক সাজানো হচ্ছে। আমার মৃত ছেলেকে নিয়ে যে তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, তা প্রমাণ করতে না পারলে আমি তাদের বিচার চাইব।’ তিনি বলেন, ‘ফারদিন মাদক সেবন করে এটা অবিশ্বাস্য। সে আমার চোখের সামনে বেড়ে উঠেছে। বুয়েটে ভর্তি হওয়ার পরও বাসায় রেখেছি। ক্লাস শেষ করে সোজা বাসায় আসত, এরপর টিউশনি করতে বের হতো। কোনো দিন কারও সঙ্গে ঝগড়াবিবাদও করেনি।’
ফ্ল্যাটটির উত্তর-পূর্ব দিকের কক্ষে ছোট দুই ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন ফারদিন। ওই কক্ষে দুটি পড়ার টেবিল আর একটি কাপড় রাখার আলনা। ফারদিনের পড়ার টেবিল অগোছালো পড়ে আছে। তার মেজো ভাই আবদুল্লাহ বিন নূর তাজিম বলেন, ‘ভাইয়ার লাইফ ডিসিপ্লিনড (সুশৃঙ্খল জীবন) ছিল। তার সার্কেল খুবই ছোট। অবসর সময়ে কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনে গেম খেলতেন।’

ফোন না ধরার আক্ষেপ কুরে খাচ্ছে মাকে
ইমন রহমান

তিনি বলেন, ‘ভার্সিটির হলে থাকতে দিতাম না যে ভয়ে, আজ তাই হলো।’ বুকে কষ্ট চেপে এখন তার একটাই চাওয়া ছেলে হত্যার সুষ্ঠু বিচার।
তবে ইতিমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বুশরার সঙ্গে ফারদিনের প্রেম এবং ফারদিন মাদকাসক্ত ছিলেন এমন সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে তার মৃত ছেলের চরিত্র হনন না করতে অনুরোধ জানিয়েছেন ফারহানা।
এদিকে ফারদিনের ফেইসবুকের টাইমলাইন ঘেঁটে দেখা গেছে, গত ১৩ আগস্ট ‘সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতির পুনরুত্থানের আশঙ্কায় বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিবৃতি’ শিরোনামে এক পৃষ্ঠার একটি লেখা শেয়ার করেছেন। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার পরও ১৩ আগস্ট বুয়েটের অডিটরিয়াম কমপ্লেক্সে ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বুয়েটের সাবেক নেতৃবৃন্দ’-এর একটি ব্যানার শেয়ার করা নিয়ে ওই পোস্ট দেন তিনি।
ফারদিনের সহপাঠীদের দাবি, বুয়েটে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে আবরার ফাহাদ খুন হওয়ার পর থেকে বুয়েট ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধের আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন ফারদিন। হত্যাকান্ডের সঙ্গে এর কোনো কুরে খাচ্ছে মা’কে সম্পৃক্ততা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার অনুরোধ তাদের।
এদিকে নিখোঁজের আট দিন আর মরদেহ উদ্ধারের পাঁচ দিন অতিবাহিত হলেও হত্যাকা-ের গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত কোনো ক্লু খুঁজে পায়নি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তারা বলছে, তদন্তের জন্য পাওয়া যাচ্ছে না সড়কের পর্যাপ্ত সিসিটিভি ফুটেজ। এখনো শনাক্ত করা যায়নি ফারদিনকে হত্যার স্থান। তবে প্রথমে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ফারদিনের মোবাইল ফোন জুরাইনে বন্ধ হয়ে যায় বললেও এবার ডিবির দাবি ফোন সর্বশেষ রূপগঞ্জের কায়েতপাড়ায় বন্ধ হয়। নিখোঁজের দিন অর্থাৎ ৪ নভেম্বর রাত ২টায় কায়েতপাড়ার চনপাড়া বস্তিতে ফোনটি বন্ধ হয় বলে দেশ রূপান্তরকে জানান তদন্তসংশ্লিষ্ট ডিবির মতিঝিল বিভাগের এক অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি)। তবে সেখানে কীভাবে গেলেন ফারদিন, জীবিত না মৃত অবস্থায় গেছেন, কারা সেখানে নিয়ে গেছেন, মরদেহ শীতলক্ষ্যায় কীভাবে গেল সেসব বিষয়ে নিশ্চিত করে বলতে পারেননি ডিবির এ কর্মকর্তা।
লাশ উদ্ধারের পরপরই ডিবি দাবি করেছিল, ফারদিনের মোবাইল ফোন বন্ধের সর্বশেষ অবস্থান ছিল রাজধানীর জুরাইনে। আর গত বৃহস্পতিবার ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বুয়েটের যে শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, তার সবশেষ লোকেশন (অবস্থান) আমরা গাজীপুর পেয়েছিলাম। গাজীপুর থেকে পরবর্তী সময়ে কীভাবে লাশ শীতলক্ষ্যায় এলো এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
ডিএমপির রামপুরা থানায় ফারদিনের বাবা কাজী নূরউদ্দিন রানার করা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ফারদিনের বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরার কাছ থেকেও কোনো তথ্য পায়নি ডিবি। পাঁচ দিনের রিমান্ডের প্রথম দিনে বুশরা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন এমন তথ্যই পেয়েছে ডিবি।
তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিবি মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রাজীব আল মাসুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘থানা থেকে মামলাটি ডিবিতে আসার পর আমরা সার্বিক বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত শুরু করি। সর্বশেষ দুটি বিষয় নিয়ে কাজ করছি। তবে নতুন করে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আমরা এখনো হত্যার কোনো ক্লু খুঁজে পাইনি।’
হত্যাকারীকে খুঁজে না পাওয়ায় তদন্ত ধীরে চলছে দাবি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শোকার্ত পরিবারটি। তারা দ্রুত হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর ডেমরার শান্তিবাগের শুভেচ্ছা টাওয়ারের ফারদিনদের ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখা যায়, শোকে মুষড়ে পড়েছে পরিবারটি। ছয়তলা ভবনটির পঞ্চমতলার পূর্বদিকের ফ্ল্যাটে থাকে ফারদিনের পরিবার। বাসার সামনে যেতেই এ প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা হয় বাবা নূরউদ্দিন রানার। তিনি জুমার নামাজ শেষ করে বাসায় ফিরছিলেন। সাংবাদিক পরিচয় দিতেই হাত ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকেন তিনি। একপর্যায়ে ভবনের নিচতলার গ্যারেজে থাকা কাঠের বেঞ্চে বসে পড়েন। এরপরই অনর্গল বলতে থাকেন ফারদিনের নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে লাশ পাওয়া পর্যন্ত সব ঘটনা। ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়েও তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন। বারবার বলছিলেন, ‘আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তারা সাধারণ কেউ না। এরা জাতির মেধা ধ্বংস করতে চায়।’
নিখোঁজের পর রামপুরা থানা পুলিশ সহায়তা করলেও লাশ উদ্ধারের পর পুলিশের নানা অসহযোগিতার কথা তুলে ধরেন ফারদিনের বাবা। লাশ উদ্ধারের তিন দিন পর মামলা করার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘পুলিশের দুই ডিসি আমাকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা করতে বলেন। কিন্তু আমি রাজি হইনি।’
বুশরাকে মূল অভিযুক্ত করার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ফারদিন মারা যাওয়ার আগে অন্তত সাত ঘণ্টা বুশরার সঙ্গে কাটিয়েছে। অথচ মৃত্যুর খবর শুনে তাকে শোকার্ত মনে হয়নি। সাবলীলভাবে কথা বলেছে আমাদের সামনে। আমাকে বিষয়টি অবাক করেছে।’
নূরউদ্দিন রানা বলেন, ‘তদন্তকারীরা বলেছেন ফারদিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গিয়েছে। কিন্তু বান্ধবী বুশরাকে রামপুরা রেখে যাওয়ার মুহূর্তের একটি ভিডিও ফুটেজ ছাড়া আমাকে আর কোনো ভিডিও দেখাতে পারেনি। আমি তথ্য-প্রমাণ ছাড়া তাদের বানানো কোনো গল্প বিশ্বাস করি না।’
ভবনের সিঁড়ি ভেঙে পাঁচতলায় গিয়ে দেখা যায়, ফ্ল্যাটে বেশ কিছু আত্মীয়স্বজন রয়েছেন। ফারদিনের মা ফারহানা ইয়াসমিন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার ছেলে হত্যার সুষ্ঠু বিচার না করে তার চরিত্র হনন করা হচ্ছে। অমুক প্রেমিকা, তমুক স্থানে মাদক কিনতে যাওয়ার নাটক সাজানো হচ্ছে। আমার মৃত ছেলেকে নিয়ে যে তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, তা প্রমাণ করতে না পারলে আমি তাদের বিচার চাইব।’ তিনি বলেন, ‘ফারদিন মাদক সেবন করে এটা অবিশ্বাস্য। সে আমার চোখের সামনে বেড়ে উঠেছে। বুয়েটে ভর্তি হওয়ার পরও বাসায় রেখেছি। ক্লাস শেষ করে সোজা বাসায় আসত, এরপর টিউশনি করতে বের হতো। কোনো দিন কারও সঙ্গে ঝগড়াবিবাদও করেনি।’
ফ্ল্যাটটির উত্তর-পূর্ব দিকের কক্ষে ছোট দুই ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন ফারদিন। ওই কক্ষে দুটি পড়ার টেবিল আর একটি কাপড় রাখার আলনা। ফারদিনের পড়ার টেবিল অগোছালো পড়ে আছে। তার মেজো ভাই আবদুল্লাহ বিন নূর তাজিম বলেন, ‘ভাইয়ার লাইফ ডিসিপ্লিনড (সুশৃঙ্খল জীবন) ছিল। তার সার্কেল খুবই ছোট। অবসর সময়ে কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনে গেম খেলতেন।’