বর্ণিল আয়োজনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন

বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা।

শিক্ষা-শিক্ষাঙ্গন ডেস্ক 

দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ৫৭তম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস মহাসমারোহে আজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে সকাল ৯:৩০ টায় চবি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বেলুন-ফেস্টুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন এবং শান্তির প্রতীক পায়রা অবমুক্ত করেন।

এরপর সুসজ্জিত ব্যান্ড দলের ব্যান্ডের সুরের মূর্ছনায় শুরু হয় আনন্দ শোভাযাত্রা। আনন্দ শোভাযাত্রা চবি বঙ্গবন্ধু চত্বরে এসে শেষ হয়। এরপর চবি বঙ্গবন্ধু চত্বরে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার এবং অতিথিবৃন্দকে সাথে নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সকাল ১১টায় চবি জারুলতলা অনুষ্ঠান মঞ্চে উপাচার্য অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ও চবি অ্যালামনাই ড. হাছান মাহমুদ এম.পি, অতিথিবৃন্দ এবং উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে ৫৭তম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কেক কাটেন।

কেক কাটা শেষে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, এম.পি.। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চবি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক বেনু কুমার দে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আবদুল করিম এবং সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম।

আলোচনা সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু চেয়ার বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ। এছাড়া সম্মানিত অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন চবি সাবেক উপ-উপাচার্য ও উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. আলাউদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ, সাবেক চাকসু ভিপি মাজহারুল হক শাহ ও চাকসু ভিপি নাজিম উদ্দিন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চবি প্রক্টর ও ৫৭তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য-সচিব ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সহকারী প্রক্টর মরিয়ম ইসলাম।

বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে বক্তব্য দিচ্ছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ও চবি অ্যালামনাই ড. হাছান মাহমুদ এম.পি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (তথ্য) খন্দকার মোয়াজ্জেম হোসেনের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের অনুষ্ঠানে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোয় উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, প্রায় ৪১ বছর আগে আমি এখানে ছাত্র হিসেবে ভর্তি হয়েছিলাম; চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আমার হৃদয়ের মনিকোঠায় সবসময় সবুজ ও সতেজ। দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সবচেয়ে সুন্দর। এখানে যখন আসি তখন আমি স্মৃতিকাতর হয়ে যাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু পাঠদান নয়, ডিগ্রী প্রদান নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ হলো জ্ঞানের চর্চা করা এবং এ জ্ঞানের চর্চার মাধ্যমে বিশ্বকে জয় করা।’ তিনি বলেন, ‘অবয়ব বা অবকাঠামো উন্নয়ন সার্বিক উন্নয়ন নয়; প্রকৃত উন্নয়ন হলো পাঠদানের উন্নয়ন, জ্ঞানের উন্নয়ন এবং বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক চর্চার উন্নয়ন।’

মন্ত্রী বাৎসরিক কর্ম-ক্যালেন্ডার তৈরীর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশি বেশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার-সিম্পোজিয়াম আয়োজন করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে শিক্ষক-গবেষকবৃন্দের গবেষণা কার্যক্রমসহ সকল অর্জন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরতে সক্ষম হবে পাশাপাশি বিশ্বদরবারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা শিক্ষা-গবেষণা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন এবং দেশ ও সমাজ গঠনে অপরিসীম ভূমিকা রেখে চলেছেন। মন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে ধারাবাহিক ভাবে মানসম্মত জার্নাল প্রকাশের বিষয় উল্লেখ করে বলেন, এ জার্নালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশ বিদেশের গবেষকদের গবেষণা কার্যক্রম প্রকাশিত হবে যা বহির্বিশ্বে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ব বৃদ্ধি করবে। মন্ত্রী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞান-গবেষণাসহ সার্বিক ভাবে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বেলুন-ফেস্টুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন।

উপাচার্য তাঁর বক্তব্যে শত ব্যস্ততার মাঝেও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী চবি অ্যালামনাই ড. হাছান মাহমুদ এম.পি. কে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ায় আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। একইসাথে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে চবির সবুজ ক্যাম্পাসে স্বাগত ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের শুভেচ্ছা জানান। উপাচার্য তাঁর বক্তব্যের শুরুতে মহাকালের মহানায়ক, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চারনেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাৎ বরণকারী ত্রিশলক্ষ শহীদ, মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের এবং ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে শাহাদাৎ বরণকারী বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যবর্গ ও ’৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত দু’লক্ষ জায়া-জননী-কন্যার প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করেন এবং শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

তিনি বলেন, দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞান-গবেষণার অন্যতম তীর্থস্থান। দেশে বহুমাত্রিক দক্ষতা সম্পন্ন যোগ্য ও আলোকিত মানবসম্পদ তৈরীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার নিরিখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমান প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাতারে সামিল করতে উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। ৫৭ তম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস অত্যন্ত সুন্দরভাবে সফল করায় উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন কমিটি এবং বিভিন্ন উপকমিটির আহবায়ক ও সদস্যবৃন্দসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিকবৃন্দ ও আইন-শৃংখলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যবৃন্দ এবং শিক্ষার্থীবৃন্দকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠান সূচিত হয়। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রধান অতিথি এবং অতিথিবৃন্দকে ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। এ ছাড়া ৫৭তম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে চবি ক্যাম্পাসকে অপরূপ সাজে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানে চবি সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ, অনুষদের ডিনবৃন্দ, শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ, রেজিস্ট্রার, কলেজ পরিদর্শক, হলের প্রভোস্টবৃন্দ ও ওয়ার্ডেন, বিভাগীয় সভাপতি এবং ইনস্টিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালকবৃন্দ, ছাত্র-ছাত্রী পরামর্শ ও নির্দেশনা’র পরিচালক, আইকিউএসি’র অতিরিক্ত পরিচালকবৃন্দ, আইসিটি সেলের পরিচালক ও সহকারী পরিচালকবৃন্দ, সহকারী প্রক্টরবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ, অফিস প্রধানবৃন্দ, অফিসার সমিতি-কর্মচারী সমিতি-কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চবি শাখার নেতৃবৃন্দ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ এবং সুধীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এমবিএইচ/এসএস

বর্ণিল আয়োজনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন

বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা।

শিক্ষা-শিক্ষাঙ্গন ডেস্ক 

দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ৫৭তম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস মহাসমারোহে আজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে সকাল ৯:৩০ টায় চবি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বেলুন-ফেস্টুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন এবং শান্তির প্রতীক পায়রা অবমুক্ত করেন।

এরপর সুসজ্জিত ব্যান্ড দলের ব্যান্ডের সুরের মূর্ছনায় শুরু হয় আনন্দ শোভাযাত্রা। আনন্দ শোভাযাত্রা চবি বঙ্গবন্ধু চত্বরে এসে শেষ হয়। এরপর চবি বঙ্গবন্ধু চত্বরে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার এবং অতিথিবৃন্দকে সাথে নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সকাল ১১টায় চবি জারুলতলা অনুষ্ঠান মঞ্চে উপাচার্য অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ও চবি অ্যালামনাই ড. হাছান মাহমুদ এম.পি, অতিথিবৃন্দ এবং উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে ৫৭তম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কেক কাটেন।

কেক কাটা শেষে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, এম.পি.। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চবি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক বেনু কুমার দে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আবদুল করিম এবং সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম।

আলোচনা সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু চেয়ার বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ। এছাড়া সম্মানিত অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন চবি সাবেক উপ-উপাচার্য ও উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. আলাউদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ, সাবেক চাকসু ভিপি মাজহারুল হক শাহ ও চাকসু ভিপি নাজিম উদ্দিন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চবি প্রক্টর ও ৫৭তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য-সচিব ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সহকারী প্রক্টর মরিয়ম ইসলাম।

বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে বক্তব্য দিচ্ছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ও চবি অ্যালামনাই ড. হাছান মাহমুদ এম.পি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (তথ্য) খন্দকার মোয়াজ্জেম হোসেনের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের অনুষ্ঠানে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোয় উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, প্রায় ৪১ বছর আগে আমি এখানে ছাত্র হিসেবে ভর্তি হয়েছিলাম; চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আমার হৃদয়ের মনিকোঠায় সবসময় সবুজ ও সতেজ। দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সবচেয়ে সুন্দর। এখানে যখন আসি তখন আমি স্মৃতিকাতর হয়ে যাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু পাঠদান নয়, ডিগ্রী প্রদান নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ হলো জ্ঞানের চর্চা করা এবং এ জ্ঞানের চর্চার মাধ্যমে বিশ্বকে জয় করা।’ তিনি বলেন, ‘অবয়ব বা অবকাঠামো উন্নয়ন সার্বিক উন্নয়ন নয়; প্রকৃত উন্নয়ন হলো পাঠদানের উন্নয়ন, জ্ঞানের উন্নয়ন এবং বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক চর্চার উন্নয়ন।’

মন্ত্রী বাৎসরিক কর্ম-ক্যালেন্ডার তৈরীর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশি বেশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার-সিম্পোজিয়াম আয়োজন করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে শিক্ষক-গবেষকবৃন্দের গবেষণা কার্যক্রমসহ সকল অর্জন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরতে সক্ষম হবে পাশাপাশি বিশ্বদরবারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা শিক্ষা-গবেষণা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন এবং দেশ ও সমাজ গঠনে অপরিসীম ভূমিকা রেখে চলেছেন। মন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে ধারাবাহিক ভাবে মানসম্মত জার্নাল প্রকাশের বিষয় উল্লেখ করে বলেন, এ জার্নালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশ বিদেশের গবেষকদের গবেষণা কার্যক্রম প্রকাশিত হবে যা বহির্বিশ্বে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ব বৃদ্ধি করবে। মন্ত্রী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞান-গবেষণাসহ সার্বিক ভাবে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বেলুন-ফেস্টুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন।

উপাচার্য তাঁর বক্তব্যে শত ব্যস্ততার মাঝেও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী চবি অ্যালামনাই ড. হাছান মাহমুদ এম.পি. কে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ায় আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। একইসাথে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে চবির সবুজ ক্যাম্পাসে স্বাগত ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের শুভেচ্ছা জানান। উপাচার্য তাঁর বক্তব্যের শুরুতে মহাকালের মহানায়ক, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চারনেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাৎ বরণকারী ত্রিশলক্ষ শহীদ, মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের এবং ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে শাহাদাৎ বরণকারী বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যবর্গ ও ’৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত দু’লক্ষ জায়া-জননী-কন্যার প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করেন এবং শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

তিনি বলেন, দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞান-গবেষণার অন্যতম তীর্থস্থান। দেশে বহুমাত্রিক দক্ষতা সম্পন্ন যোগ্য ও আলোকিত মানবসম্পদ তৈরীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার নিরিখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমান প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাতারে সামিল করতে উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। ৫৭ তম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস অত্যন্ত সুন্দরভাবে সফল করায় উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন কমিটি এবং বিভিন্ন উপকমিটির আহবায়ক ও সদস্যবৃন্দসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিকবৃন্দ ও আইন-শৃংখলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যবৃন্দ এবং শিক্ষার্থীবৃন্দকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠান সূচিত হয়। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রধান অতিথি এবং অতিথিবৃন্দকে ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। এ ছাড়া ৫৭তম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে চবি ক্যাম্পাসকে অপরূপ সাজে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানে চবি সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ, অনুষদের ডিনবৃন্দ, শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ, রেজিস্ট্রার, কলেজ পরিদর্শক, হলের প্রভোস্টবৃন্দ ও ওয়ার্ডেন, বিভাগীয় সভাপতি এবং ইনস্টিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালকবৃন্দ, ছাত্র-ছাত্রী পরামর্শ ও নির্দেশনা’র পরিচালক, আইকিউএসি’র অতিরিক্ত পরিচালকবৃন্দ, আইসিটি সেলের পরিচালক ও সহকারী পরিচালকবৃন্দ, সহকারী প্রক্টরবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ, অফিস প্রধানবৃন্দ, অফিসার সমিতি-কর্মচারী সমিতি-কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চবি শাখার নেতৃবৃন্দ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ এবং সুধীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এমবিএইচ/এসএস