বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ বছর

বর্ষপূর্তি ও স্বপ্নপূরণ

দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাউবি আরও গতিশীল ভূমিকা রাখবে। ছবি: সংগৃহীত

ড. মেজবাহ উদ্দিন তুহিন

শিক্ষার সঙ্গে কর্মসংস্থানের যোগসাজশ তৈরির লক্ষ্যে আজ থেকে ৩০ বছর আগে ১৯৯২ সালের ২১ অক্টোবর জাতীয় সংসদের এক অনুমোদিত আইনবলে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। ৩০ বছরের পথচলায় জায়গার মানুষকে জায়গায় রেখে শিক্ষাসেবা পৌঁছে দেওয়ার স্বপ্ন পূরণ করেছে বাউবি, যা উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতারের নেতৃত্বে সবার জন্য উন্মুক্ত। কর্মমুখী, গণমুখী ও জীবনব্যাপী শিক্ষা এই নবতর দীক্ষা নিয়ে বাউবি কাজ করে যাচ্ছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী, পিছিয়ে পড়া নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাউবি শিক্ষাসেবা পৌঁছে দিয়ে তাদের শিক্ষার মহাসোপানে ফিরিয়ে এনে কর্মমুখী শিক্ষায় দক্ষতা বৃদ্ধি করে জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর বাউবির অঙ্গীকার।

ভৌগোলিক সীমারেখা ছাড়িয়ে বাউবির শিক্ষার প্রসারে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ও মিডিয়াভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম দেশে ও বিদেশে ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ও লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম কাজে লাগিয়ে দক্ষ জনশক্তি গঠন, মানবসম্পদ তৈরি, নারীশিক্ষার প্রসার ও পেশাগত শিক্ষার প্রয়োজনে বাউবি নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। বাউবির মাধ্যমে বিপুল জনগোষ্ঠী জাতীয় উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।

বাউবিতে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা কার্যক্রম চালু হওয়ায় শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। আজ আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির প্রায় সবকিছুই বাউবির শিক্ষা কার্যক্রমে প্রয়োগ হচ্ছে। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন, পরীক্ষার ফল প্রকাশ, ই-বুক, ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ওপেন বাংলা ওয়েব টিভি, ওপেন বাংলা ওয়েব রেডিও, বাউবি টিউব, বাউবি অ্যাপস ও ই-প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এখন বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তিবান্ধব শিক্ষাধারা গড়ে তুলেছে। অনলাইনে বাউবির বিভিন্ন প্রোগ্রামের লেকচার আপলোড থাকায় শিক্ষার্থী ও আগ্রহী যে কেউ বাউবির ওয়েবসাইট থেকে বিনা মূল্যে সেই সব ই-বুক ও লেকচার ডাউনলোড করতে পারছেন। নিজের সুবিধামতো সময়ে, কাজের ফাঁকে, কাজের শেষে, রাতে-দিনে যেকোনো সময় ঘরে অথবা নিজ কর্মস্থলে বসে শিক্ষালাভের সুযোগ তৈরি করেছে বাউবি। শিক্ষার্থী ছাড়াও যে কেউ নিজের প্রয়োজনীয় ও পছন্দের বিষয় বাউবির ওয়েবসাইট থেকে নিয়ে নিজ জ্ঞানভান্ডার সমৃদ্ধ করতে পারছেন। বাউবির শিক্ষার্থী ও স্টেকহোল্ডারদের জন্য নিয়মিতভাবে নানা তথ্য বাউবির ওয়েবসাইটে আপডেট করা হয়। মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে ভর্তি, রেজিস্ট্রেশনসহ একাডেমিক তথ্য সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

শিক্ষা প্রোগ্রামের কোয়ালিটি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে চালু করা হয়েছে কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল। বাউবির শিক্ষা ব্লেনডেড মোডে পরিচালিত। শিক্ষার্থীরা যেমন ভার্চুয়াল শিক্ষাব্যবস্থায় ঘরে বসে লেখাপড়া করতে পারছে, অন্যদিকে তাঁদের জন্য রয়েছে টিউটোরিয়াল ক্লাসের ব্যবস্থা। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে স্টাডি সেন্টারে গিয়ে তাঁরা টিউটোরিয়াল ক্লাসে মিলিত হন। শিক্ষার্থীর কাছে পাঠ্যবইয়ের কোনো অনুশীলনী কঠিন মনে হলে টিউটোরিয়াল ক্লাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ে পাঠ আলোচনায় অংশ নিয়ে সমস্যাগুলো সমাধান করে নেন।

মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও সময় ও সুযোগের অভাবে যাঁরা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে লেখাপড়া করতে পারছেন না, বাউবি তাঁদের উপযোগী করে শিক্ষাকাঠামো তৈরি করেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বইগুলো মডিউলার পদ্ধতিতে এমনভাবে সরল-সহজ করে লেখা, যা একবার পড়লেই শিক্ষার্থী অনায়াসে বুঝতে পারেন। নিজে নিজে প্রশ্ন করে উত্তর পেতে সক্ষম হন। মুখস্থের প্রয়োজন হয় না এবং নিয়মিতভাবে কোনো শিক্ষকেরও প্রয়োজন হয় না। ‘দ্য বুক ইটসেলফ ইজ দ্য টিচার’, অর্থাৎ বইটিই শিক্ষক। বাউবি সব শিক্ষার্থীকে বই বা পাঠসামগ্রী সরবরাহ করে থাকে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো পরীক্ষার্থী একবার যে বিষয়ে পাস করেন, তাঁকে আর দ্বিতীয়বার সে বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হয় না। এটি একটি যুগান্তকারী ব্যবস্থা, যা এ দেশের অন্য কোনো শিক্ষা বোর্ড এখনো চালু করতে পারেনি।

বাউবির রয়েছে একটি অত্যাধুনিক মিডিয়া সেন্টার। এই মিডিয়া সেন্টারের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলী দ্বারা শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচি ও মডিউল অনুযায়ী অডিও-ভিডিও ক্লাস লেকচার নির্মাণ করে ইন্টারনেটভিত্তিক ওয়েব রেডিও এবং ওয়েব টিভির মাধ্যমে প্রচার করা হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভির মাধ্যমেও পাঠ প্রচার করা হয়ে থাকে।

সমাজের সকল পর্যায়ের মানুষ, নর-নারী, গৃহবধূ, বেকার যুবক-যুবতী, কর্মজীবী ও শিক্ষার সুযোগবঞ্চিত, শিক্ষা লাভে আগ্রহী বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত যেকোনো বয়সের জনগোষ্ঠীকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাহায্যে হাতের নাগালে শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়ার লক্ষ্যে বাউবি নানামুখী কর্মকাণ্ড গ্রহণ করেছে।

ঘরের কাছে থেকে মানুষ যাতে বাউবির সেবা পেতে পারে, সে জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্র।

বিদেশে অবস্থানরত বাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষাসেবা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে সৌদি আরব, কাতার ও দক্ষিণ কোরিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের জন্য বাউবি শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছে। রেমিট্যান্সযোদ্ধারা বাউবির শিক্ষায় দক্ষ হয়ে দেশের জিডিপি বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে।

সময়ের চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে বাউবি নিডবেইস প্রোগ্রাম চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বর্তমানে বাউবিতে এসএসসি থেকে পিএইচডি পর্যন্ত শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। সব পেশাজীবীর হাতের নাগালে শিক্ষাসেবা পৌঁছে দেওয়া এবং পেশাজীবী জনগোষ্ঠী তৈরি করতে চালু করেছে নানা ধরনের প্রফেশনাল প্রোগ্রাম।

একজন পোশাককর্মী বা শিল্পকারখানার শ্রমিক বা রিকশাওয়ালা যেমন বাউবির শিক্ষার্থী, অন্যদিকে সরকারি-বেসরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, গবেষক, শিক্ষক, নার্স, রাজনীতিবিদ, গণমাধ্যমকর্মী সবাই বাউবির শিক্ষার্থী।

বিভিন্ন বিষয়ে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে বাউবির রয়েছে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম, যা দেশের প্রয়োজন ও উন্নয়ন কর্মধারার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। গ্রামগঞ্জসহ বিভিন্ন পরিবেশে অবস্থানরত বেকার যুবক-যুবতীদের বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে।

দেশমাতৃকার উন্নয়নে শিক্ষায় উন্নত বাংলাদেশ সৃজন, সরকারের ডিজিটাল শিক্ষা বাস্তবায়ন, ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়ন এবং দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাউবি আরও গতিশীল ভূমিকা রাখবে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের গতিময়তা রক্ষা পাবে এই আমাদের প্রত্যাশা।

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ বছর

বর্ষপূর্তি ও স্বপ্নপূরণ

দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাউবি আরও গতিশীল ভূমিকা রাখবে। ছবি: সংগৃহীত

ড. মেজবাহ উদ্দিন তুহিন

শিক্ষার সঙ্গে কর্মসংস্থানের যোগসাজশ তৈরির লক্ষ্যে আজ থেকে ৩০ বছর আগে ১৯৯২ সালের ২১ অক্টোবর জাতীয় সংসদের এক অনুমোদিত আইনবলে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। ৩০ বছরের পথচলায় জায়গার মানুষকে জায়গায় রেখে শিক্ষাসেবা পৌঁছে দেওয়ার স্বপ্ন পূরণ করেছে বাউবি, যা উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতারের নেতৃত্বে সবার জন্য উন্মুক্ত। কর্মমুখী, গণমুখী ও জীবনব্যাপী শিক্ষা এই নবতর দীক্ষা নিয়ে বাউবি কাজ করে যাচ্ছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী, পিছিয়ে পড়া নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাউবি শিক্ষাসেবা পৌঁছে দিয়ে তাদের শিক্ষার মহাসোপানে ফিরিয়ে এনে কর্মমুখী শিক্ষায় দক্ষতা বৃদ্ধি করে জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর বাউবির অঙ্গীকার।

ভৌগোলিক সীমারেখা ছাড়িয়ে বাউবির শিক্ষার প্রসারে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ও মিডিয়াভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম দেশে ও বিদেশে ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ও লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম কাজে লাগিয়ে দক্ষ জনশক্তি গঠন, মানবসম্পদ তৈরি, নারীশিক্ষার প্রসার ও পেশাগত শিক্ষার প্রয়োজনে বাউবি নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। বাউবির মাধ্যমে বিপুল জনগোষ্ঠী জাতীয় উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।

বাউবিতে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা কার্যক্রম চালু হওয়ায় শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। আজ আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির প্রায় সবকিছুই বাউবির শিক্ষা কার্যক্রমে প্রয়োগ হচ্ছে। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন, পরীক্ষার ফল প্রকাশ, ই-বুক, ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ওপেন বাংলা ওয়েব টিভি, ওপেন বাংলা ওয়েব রেডিও, বাউবি টিউব, বাউবি অ্যাপস ও ই-প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এখন বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তিবান্ধব শিক্ষাধারা গড়ে তুলেছে। অনলাইনে বাউবির বিভিন্ন প্রোগ্রামের লেকচার আপলোড থাকায় শিক্ষার্থী ও আগ্রহী যে কেউ বাউবির ওয়েবসাইট থেকে বিনা মূল্যে সেই সব ই-বুক ও লেকচার ডাউনলোড করতে পারছেন। নিজের সুবিধামতো সময়ে, কাজের ফাঁকে, কাজের শেষে, রাতে-দিনে যেকোনো সময় ঘরে অথবা নিজ কর্মস্থলে বসে শিক্ষালাভের সুযোগ তৈরি করেছে বাউবি। শিক্ষার্থী ছাড়াও যে কেউ নিজের প্রয়োজনীয় ও পছন্দের বিষয় বাউবির ওয়েবসাইট থেকে নিয়ে নিজ জ্ঞানভান্ডার সমৃদ্ধ করতে পারছেন। বাউবির শিক্ষার্থী ও স্টেকহোল্ডারদের জন্য নিয়মিতভাবে নানা তথ্য বাউবির ওয়েবসাইটে আপডেট করা হয়। মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে ভর্তি, রেজিস্ট্রেশনসহ একাডেমিক তথ্য সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

শিক্ষা প্রোগ্রামের কোয়ালিটি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে চালু করা হয়েছে কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল। বাউবির শিক্ষা ব্লেনডেড মোডে পরিচালিত। শিক্ষার্থীরা যেমন ভার্চুয়াল শিক্ষাব্যবস্থায় ঘরে বসে লেখাপড়া করতে পারছে, অন্যদিকে তাঁদের জন্য রয়েছে টিউটোরিয়াল ক্লাসের ব্যবস্থা। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে স্টাডি সেন্টারে গিয়ে তাঁরা টিউটোরিয়াল ক্লাসে মিলিত হন। শিক্ষার্থীর কাছে পাঠ্যবইয়ের কোনো অনুশীলনী কঠিন মনে হলে টিউটোরিয়াল ক্লাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ে পাঠ আলোচনায় অংশ নিয়ে সমস্যাগুলো সমাধান করে নেন।

মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও সময় ও সুযোগের অভাবে যাঁরা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে লেখাপড়া করতে পারছেন না, বাউবি তাঁদের উপযোগী করে শিক্ষাকাঠামো তৈরি করেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বইগুলো মডিউলার পদ্ধতিতে এমনভাবে সরল-সহজ করে লেখা, যা একবার পড়লেই শিক্ষার্থী অনায়াসে বুঝতে পারেন। নিজে নিজে প্রশ্ন করে উত্তর পেতে সক্ষম হন। মুখস্থের প্রয়োজন হয় না এবং নিয়মিতভাবে কোনো শিক্ষকেরও প্রয়োজন হয় না। ‘দ্য বুক ইটসেলফ ইজ দ্য টিচার’, অর্থাৎ বইটিই শিক্ষক। বাউবি সব শিক্ষার্থীকে বই বা পাঠসামগ্রী সরবরাহ করে থাকে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো পরীক্ষার্থী একবার যে বিষয়ে পাস করেন, তাঁকে আর দ্বিতীয়বার সে বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হয় না। এটি একটি যুগান্তকারী ব্যবস্থা, যা এ দেশের অন্য কোনো শিক্ষা বোর্ড এখনো চালু করতে পারেনি।

বাউবির রয়েছে একটি অত্যাধুনিক মিডিয়া সেন্টার। এই মিডিয়া সেন্টারের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলী দ্বারা শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচি ও মডিউল অনুযায়ী অডিও-ভিডিও ক্লাস লেকচার নির্মাণ করে ইন্টারনেটভিত্তিক ওয়েব রেডিও এবং ওয়েব টিভির মাধ্যমে প্রচার করা হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভির মাধ্যমেও পাঠ প্রচার করা হয়ে থাকে।

সমাজের সকল পর্যায়ের মানুষ, নর-নারী, গৃহবধূ, বেকার যুবক-যুবতী, কর্মজীবী ও শিক্ষার সুযোগবঞ্চিত, শিক্ষা লাভে আগ্রহী বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত যেকোনো বয়সের জনগোষ্ঠীকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাহায্যে হাতের নাগালে শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়ার লক্ষ্যে বাউবি নানামুখী কর্মকাণ্ড গ্রহণ করেছে।

ঘরের কাছে থেকে মানুষ যাতে বাউবির সেবা পেতে পারে, সে জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্র।

বিদেশে অবস্থানরত বাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষাসেবা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে সৌদি আরব, কাতার ও দক্ষিণ কোরিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের জন্য বাউবি শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছে। রেমিট্যান্সযোদ্ধারা বাউবির শিক্ষায় দক্ষ হয়ে দেশের জিডিপি বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে।

সময়ের চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে বাউবি নিডবেইস প্রোগ্রাম চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বর্তমানে বাউবিতে এসএসসি থেকে পিএইচডি পর্যন্ত শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। সব পেশাজীবীর হাতের নাগালে শিক্ষাসেবা পৌঁছে দেওয়া এবং পেশাজীবী জনগোষ্ঠী তৈরি করতে চালু করেছে নানা ধরনের প্রফেশনাল প্রোগ্রাম।

একজন পোশাককর্মী বা শিল্পকারখানার শ্রমিক বা রিকশাওয়ালা যেমন বাউবির শিক্ষার্থী, অন্যদিকে সরকারি-বেসরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, গবেষক, শিক্ষক, নার্স, রাজনীতিবিদ, গণমাধ্যমকর্মী সবাই বাউবির শিক্ষার্থী।

বিভিন্ন বিষয়ে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে বাউবির রয়েছে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম, যা দেশের প্রয়োজন ও উন্নয়ন কর্মধারার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। গ্রামগঞ্জসহ বিভিন্ন পরিবেশে অবস্থানরত বেকার যুবক-যুবতীদের বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে।

দেশমাতৃকার উন্নয়নে শিক্ষায় উন্নত বাংলাদেশ সৃজন, সরকারের ডিজিটাল শিক্ষা বাস্তবায়ন, ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়ন এবং দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাউবি আরও গতিশীল ভূমিকা রাখবে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের গতিময়তা রক্ষা পাবে এই আমাদের প্রত্যাশা।