বিজ্ঞান প্রকল্প বানাবেন যেভাবে

মুশফিকুর প্রিয়

বিজ্ঞান প্রকল্প হচ্ছে একজন গবেষকের বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রকাশ করার মাধ্যম। শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বিজ্ঞান প্রকল্প আনন্দদায়ক ও মজাদার হয় তখনই, যখন সে সেটা নিয়ে কল্পনা করতে পারে। আর এই কল্পনাশক্তি তখনই বিকশিত হয়, যখন নিয়মতান্ত্রিকভাবে তা সম্পাদিত হয়। নিম্নলিখিত তথ্যগুলো শিক্ষার্থীদের একটি সুন্দর বিজ্ঞান প্রকল্প তৈরি করতে সাহায্য করবে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিজ্ঞান মেলায় অংশগ্রহণের জন্য এসব মেনে চললে অনেক উপকৃত হবেন বলে আশা রাখি।

বিজ্ঞান প্রকল্প তৈরি করার ধাপগুলো

  • প্রথমে একটি নোটবুক নিন। এটি লগবুক হিসেবে ব্যবহার করার জন্য এবং ওই লগবুকের পৃষ্ঠাগুলোতে নম্বর দিন। নোট করার জন্য নির্দিষ্ট একটি লগবুক থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • প্রকল্পের জন্য একটি বিষয় নির্বাচন করুন। খেয়াল রাখবেন যাতে বিষয়টি আপনার পছন্দের হয়। সহজে কাজ হয়ে যাবে বলে কোনো অসংগতিপূর্ণ বিষয় নির্বাচন করবেন না। আপনার অভিভাবক, মেন্টর অথবা শিক্ষকের সঙ্গে নির্ধারিত বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করুন। কারণ, আলোচনার মাধ্যমেই আপনি আপনার গবেষণার বিষয়ের গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে ধারণা লাভ করবেন। বিষয়টি নির্ধারণ হয়ে গেলে আপনার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের কাছ থেকে একটি অনুমোদনপত্র স্বাক্ষর করিয়ে নিন। সেই অনুমতিপত্রে আপনার অভিভাবকের স্বাক্ষর ও যোগাযোগের ঠিকানা থাকাটা জরুরি।
  • গবেষণার জন্য নির্ধারিত বিষয়টি থেকে একটি নির্দিষ্ট সমস্যার দিকে অগ্রসর হতে হবে। আপনি প্রকল্পটি সম্পন্ন হওয়ার পরে যে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন, সেটা লগবুকে লিখতে হবে।
  • গবেষণার বিষয় এবং সমস্যার একটি সাহিত্য পর্যালোচনা করুন এবং গবেষণা প্রতিবেদনের খসড়া লগবুকে লিখুন। বিভিন্ন বই, অনলাইন জার্নাল বা ম্যাগাজিন থেকে আপনি আপনার বিষয়ের ওপর বিভিন্ন তথ্য পাবেন। এই বিষয় সম্পর্কে আপনি যেখান থেকে ধারণা পেয়েছেন, সেই প্রাথমিক তথ্যও আপনার গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • একটি হাইপোথিসিস ঠিক করুন এবং আপনার গবেষণার উদ্দেশ বর্ণনা করুন।
  • একটি গবেষণা পরিকল্পনা বা পরীক্ষামূলক নকশা তৈরি করুন।
  • কোনো স্বীকৃত গবেষণাগারে আপনার প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য আবেদন করুন। এতে আপনার প্রকল্পের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে।
  • গবেষণা প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণরূপে লিখুন।
  • পরীক্ষার জন্য পরিকল্পনা করে প্রয়োজনীয় উপকরণ ও সরঞ্জাম সংগ্রহ করুন। পাশাপাশি পরীক্ষার জন্য ওই গবেষণাগারে সময় চেয়ে আবেদন করুন।
  • সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা পরিচালনা করুন এবং পরিমাণগত, গুণগত তথ্য ও উপাত্তগুলো লগবুকে সংগ্রহ করুন।
  • উপযুক্ত পরিসংখ্যান পদ্ধতি প্রয়োগ করে তথ্য ও উপাত্তগুলো বিশ্লেষণ করুন।
  • সমস্যাটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রমাণ করতে যতবার সম্ভব আপনার পরীক্ষার পুনরাবৃত্তি করুন। কারণ, যত বেশিবার আপনি পরীক্ষাটি করবেন, তত সুন্দর ও নিখুঁত ফলাফল পাবেন।
  • সম্পূর্ণ পদ্ধতিটির একটি উপসংহার লিখুন। আপনি এই গবেষণা করে কী শিখতে পারলেন, আপনি আপনার হাইপোথিসিস প্রমাণ করতে পারলেন কি না, কিংবা আপনার গবেষণার সীমাবদ্ধতাগুলো উপসংহারে তুলে ধরুন।
  • ল্যাবরেটরি রিপোর্ট লিখুন।
  • সারসংক্ষেপ লিখুন।
  • ভিজ্যুয়াল ডিসপ্লে বোর্ড তৈরি করুন। প্রকল্পের শিরোনাম, ফলাফলের চার্ট, গ্রাফ ও পরীক্ষণের ছবি অথবা ডায়াগ্রাম প্রস্তুত করুন। দূর থেকে যাতে দেখা যায়, এমনভাবে ডিসপ্লে বোর্ড তৈরি করতে হবে।
  • শিক্ষক অথবা সহপাঠীদের কাছে প্রকল্পের একটি মৌখিক উপস্থাপনা করুন।
  • বিজ্ঞান মেলার জন্য উপস্থাপনা এবং প্রদর্শন পর্যালোচনা করুন। মুশফিকুর প্রিয়। ছবি: সংগৃহীত
  • বিজ্ঞান প্রকল্প প্রদর্শনীর নিয়ম
    • প্রকল্প প্রদর্শনীর সময় কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। আপনি হয়তো ভাবছেন যে এখানেও নিয়ম! হ্যাঁ, কিছু মজার নিয়ম মেনে চললে আপনি হয়ে উঠবেন অনন্য।
    • যথাসম্ভব সর্বদা সর্বোচ্চ সতর্কতা পালন করবেন। দরকারে বড়দের বা আপনার মেন্টরের সাহায্য নিন।
    • পরীক্ষা প্রদর্শনের সময় কোনো কিছু খাওয়া বা পান করা থেকে বিরত থাকুন এবং আপনার প্রদর্শনীর চারপাশ পরিষ্কার রাখুন।
    • নিরাপত্তা চশমা ব্যবহার করুন। কারণ, পরীক্ষা চলার সময় চোখে আঘাত লাগতে পারে।
    • কোনো রাসায়নিক দ্রব্য সরাসরি স্পর্শ, জিহ্বায় স্বাদ গ্রহণ কিংবা গন্ধ শুঁকে দেখা যাবে না।
    • সব জীবের প্রতি দয়ালু হতে হবে। আপনার পরীক্ষার দ্বারা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবেও যেন কোনো প্রাণীর ক্ষতি না হয়—এদিকে খেয়াল রাখুন।

    অনুলিখনজাহিদুল ইসলাম

বিজ্ঞান প্রকল্প বানাবেন যেভাবে

মুশফিকুর প্রিয়

বিজ্ঞান প্রকল্প হচ্ছে একজন গবেষকের বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রকাশ করার মাধ্যম। শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বিজ্ঞান প্রকল্প আনন্দদায়ক ও মজাদার হয় তখনই, যখন সে সেটা নিয়ে কল্পনা করতে পারে। আর এই কল্পনাশক্তি তখনই বিকশিত হয়, যখন নিয়মতান্ত্রিকভাবে তা সম্পাদিত হয়। নিম্নলিখিত তথ্যগুলো শিক্ষার্থীদের একটি সুন্দর বিজ্ঞান প্রকল্প তৈরি করতে সাহায্য করবে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিজ্ঞান মেলায় অংশগ্রহণের জন্য এসব মেনে চললে অনেক উপকৃত হবেন বলে আশা রাখি।

বিজ্ঞান প্রকল্প তৈরি করার ধাপগুলো

  • প্রথমে একটি নোটবুক নিন। এটি লগবুক হিসেবে ব্যবহার করার জন্য এবং ওই লগবুকের পৃষ্ঠাগুলোতে নম্বর দিন। নোট করার জন্য নির্দিষ্ট একটি লগবুক থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • প্রকল্পের জন্য একটি বিষয় নির্বাচন করুন। খেয়াল রাখবেন যাতে বিষয়টি আপনার পছন্দের হয়। সহজে কাজ হয়ে যাবে বলে কোনো অসংগতিপূর্ণ বিষয় নির্বাচন করবেন না। আপনার অভিভাবক, মেন্টর অথবা শিক্ষকের সঙ্গে নির্ধারিত বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করুন। কারণ, আলোচনার মাধ্যমেই আপনি আপনার গবেষণার বিষয়ের গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে ধারণা লাভ করবেন। বিষয়টি নির্ধারণ হয়ে গেলে আপনার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের কাছ থেকে একটি অনুমোদনপত্র স্বাক্ষর করিয়ে নিন। সেই অনুমতিপত্রে আপনার অভিভাবকের স্বাক্ষর ও যোগাযোগের ঠিকানা থাকাটা জরুরি।
  • গবেষণার জন্য নির্ধারিত বিষয়টি থেকে একটি নির্দিষ্ট সমস্যার দিকে অগ্রসর হতে হবে। আপনি প্রকল্পটি সম্পন্ন হওয়ার পরে যে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন, সেটা লগবুকে লিখতে হবে।
  • গবেষণার বিষয় এবং সমস্যার একটি সাহিত্য পর্যালোচনা করুন এবং গবেষণা প্রতিবেদনের খসড়া লগবুকে লিখুন। বিভিন্ন বই, অনলাইন জার্নাল বা ম্যাগাজিন থেকে আপনি আপনার বিষয়ের ওপর বিভিন্ন তথ্য পাবেন। এই বিষয় সম্পর্কে আপনি যেখান থেকে ধারণা পেয়েছেন, সেই প্রাথমিক তথ্যও আপনার গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • একটি হাইপোথিসিস ঠিক করুন এবং আপনার গবেষণার উদ্দেশ বর্ণনা করুন।
  • একটি গবেষণা পরিকল্পনা বা পরীক্ষামূলক নকশা তৈরি করুন।
  • কোনো স্বীকৃত গবেষণাগারে আপনার প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য আবেদন করুন। এতে আপনার প্রকল্পের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে।
  • গবেষণা প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণরূপে লিখুন।
  • পরীক্ষার জন্য পরিকল্পনা করে প্রয়োজনীয় উপকরণ ও সরঞ্জাম সংগ্রহ করুন। পাশাপাশি পরীক্ষার জন্য ওই গবেষণাগারে সময় চেয়ে আবেদন করুন।
  • সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা পরিচালনা করুন এবং পরিমাণগত, গুণগত তথ্য ও উপাত্তগুলো লগবুকে সংগ্রহ করুন।
  • উপযুক্ত পরিসংখ্যান পদ্ধতি প্রয়োগ করে তথ্য ও উপাত্তগুলো বিশ্লেষণ করুন।
  • সমস্যাটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রমাণ করতে যতবার সম্ভব আপনার পরীক্ষার পুনরাবৃত্তি করুন। কারণ, যত বেশিবার আপনি পরীক্ষাটি করবেন, তত সুন্দর ও নিখুঁত ফলাফল পাবেন।
  • সম্পূর্ণ পদ্ধতিটির একটি উপসংহার লিখুন। আপনি এই গবেষণা করে কী শিখতে পারলেন, আপনি আপনার হাইপোথিসিস প্রমাণ করতে পারলেন কি না, কিংবা আপনার গবেষণার সীমাবদ্ধতাগুলো উপসংহারে তুলে ধরুন।
  • ল্যাবরেটরি রিপোর্ট লিখুন।
  • সারসংক্ষেপ লিখুন।
  • ভিজ্যুয়াল ডিসপ্লে বোর্ড তৈরি করুন। প্রকল্পের শিরোনাম, ফলাফলের চার্ট, গ্রাফ ও পরীক্ষণের ছবি অথবা ডায়াগ্রাম প্রস্তুত করুন। দূর থেকে যাতে দেখা যায়, এমনভাবে ডিসপ্লে বোর্ড তৈরি করতে হবে।
  • শিক্ষক অথবা সহপাঠীদের কাছে প্রকল্পের একটি মৌখিক উপস্থাপনা করুন।
  • বিজ্ঞান মেলার জন্য উপস্থাপনা এবং প্রদর্শন পর্যালোচনা করুন। মুশফিকুর প্রিয়। ছবি: সংগৃহীত
  • বিজ্ঞান প্রকল্প প্রদর্শনীর নিয়ম
    • প্রকল্প প্রদর্শনীর সময় কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। আপনি হয়তো ভাবছেন যে এখানেও নিয়ম! হ্যাঁ, কিছু মজার নিয়ম মেনে চললে আপনি হয়ে উঠবেন অনন্য।
    • যথাসম্ভব সর্বদা সর্বোচ্চ সতর্কতা পালন করবেন। দরকারে বড়দের বা আপনার মেন্টরের সাহায্য নিন।
    • পরীক্ষা প্রদর্শনের সময় কোনো কিছু খাওয়া বা পান করা থেকে বিরত থাকুন এবং আপনার প্রদর্শনীর চারপাশ পরিষ্কার রাখুন।
    • নিরাপত্তা চশমা ব্যবহার করুন। কারণ, পরীক্ষা চলার সময় চোখে আঘাত লাগতে পারে।
    • কোনো রাসায়নিক দ্রব্য সরাসরি স্পর্শ, জিহ্বায় স্বাদ গ্রহণ কিংবা গন্ধ শুঁকে দেখা যাবে না।
    • সব জীবের প্রতি দয়ালু হতে হবে। আপনার পরীক্ষার দ্বারা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবেও যেন কোনো প্রাণীর ক্ষতি না হয়—এদিকে খেয়াল রাখুন।

    অনুলিখনজাহিদুল ইসলাম