বিদেশে ক্যারিয়ার: ঢাকার ছেলের গুগল জয়

শেখ মঈনুল হাসান

শেখ মঈনুল হাসান।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক করেছেন শেখ মঈনুল হাসান। এরপর সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেন। পাশাপাশি আবেদন করেন গুগলে। ২০১৮ সালের শেষদিকে ডাক পান। গুগলে চাকরি পাওয়ার গল্প ও নতুনদের পরামর্শ নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন তিনি।

বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল পাওয়ার পর থেকে গুগলে চাকরি করার স্বপ্ন নিয়ে প্রোগ্রামিং শুরু করি। প্রথম বর্ষ থেকে কম্পেটিটিভ প্রোগ্রামিং নিয়ে সব সময় পড়ে থাকতাম।

গুগলে চাকরির সুযোগ
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, প্রডাক্ট ডিজাইনার, ইঞ্জিনিয়ার ম্যানেজার, রিক্রুটার, ডেটা সায়েন্স রিলেটেডসহ অনেক চাকরি রয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়াও সেলস, মার্কেটিং, লিগালে অনেক বাংলাদেশি গুগলে কাজ করেন। যদিও বাংলাদেশিরা বেশির ভাগই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আছেন।

আবেদনের প্রক্রিয়া
নতুন গ্র্যাজুয়েটরা ডিরেক্ট গুগল ক্যারিয়ার সাইটে আবেদন করতে পারে এবং এখান থেকে অনেকে ইন্টারভিউর সুযোগ পায়। ইন্টারভিউ ভালো করলে চূড়ান্ত প্রস্তাব দেয়। আবেদন করার সময় রিক্রুটারের কল পাওয়ার জন্য সিভি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গুগলে জব করে তাঁদের রেফারাল নিয়ে আবেদন করলে রিক্রুটারের কল পাওয়া যায়। চাকরি পাওয়ার জন্য ফোন ইন্টারভিউ এবং অন-সাইট ইন্টারভিউয়ে ভালো করতে হবে।

চাকরির ইন্টারভিউ
সিভি জমা দেওয়ার পর প্রথমে রিক্রুটারের কল আসে। যার উদ্দেশ্য মূলত পরিচিত হওয়া। তারপর আমার টোটাল সাতটি ইন্টারভিউ দিতে হয়। প্রথমে দুইটা ফোন কোডিং ইন্টারভিউ দিই, প্রতিটি এক ঘণ্টা করে। তখন আমি সিঙ্গাপুরে পেপালে জব করি। ফোন ইন্টারভিউ পজিটিভ হলে ওরা আমাকে ডাবলিন, আয়ারল্যান্ডে অন-সাইট ইন্টারভিউর জন্য ডাকে। আয়ারল্যান্ডের ভিসা প্রসেসিং করতে প্রায় দুই মাস সময় লাগে। সেখানে গিয়ে ফেইস-টু-ফেইস একদিনে আমার চারটি কোডিং এবং একটা লারজ সিস্টেম ডিজাইন ইন্টারভিউ দিতে হয়। প্রতিটি ইন্টারভিউ ছিল ৪৫ মিনিট করে; যা গুগলের ইঞ্জিনিয়াররাই পরিচালনা করেন। আসা-যাওয়া, থাকাসহ অন-সাইট ইন্টারভিউর সব খরচই গুগল বহন করে। এটা ছিল প্রি-করোনা প্রসেস। করোনার কারণে অন-সাইট ইন্টারভিউ অনলাইনে নেওয়া শুরু হয় এবং এখনো সেটাই চলছে।

যত সময় লাগতে পারে
পারসোনালি আমার অনেক বেশি সময় লেগেছিল। কারণ আমি অন-সাইট ইন্টারভিউ ফেইস-টু-ফেইস দিই। এটা এখন অনলাইনে হয়। আমার ফোন ইন্টারভিউ তারিখ থেকে অফার পেতে চার মাস লাগে। এখন যেহেতু ভিসা প্রসেসিং টাইম নেই, তাই আনুমানিক দেড়-দুই মাস লাগতে পারে। আর জয়েনিং তারিখ কবে হবে, সেটা ওই দেশের ওয়ার্ক পারমিটের সময়ের ওপর নির্ভরশীল।

বাংলাদেশিদের জন্য সুযোগ
গুগলের মতো প্রতিষ্ঠান কেয়ার করে শুধু আপনার ক্যাপাবিলিটি। আপনি কোন দেশের, সেটা কেয়ার করবে না। বাংলাদেশ থেকে অনেকেই গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানে কাজ করে। আয়ারল্যান্ডে টোটাল ১৮ জন ইঞ্জিনিয়ার আছে এবং আরও যোগদান করার প্রক্রিয়ায় আছে। তাই অন্য সব দেশের মানুষের মতো বাংলাদেশিদেরও সুযোগ রয়েছে। কিন্তু অর্থনৈতিক মন্দার কারণে অনেক কোম্পানি নিয়োগ কমিয়ে এনেছে। তাই হয়তো আপাতত সুযোগ কিছুটা কমে এসেছে। তবে এটা অদূর ভবিষ্যতে ঠিক হয়ে যাবে।

তরুণদের জন্য পরামর্শ
গুগলে জব অফার পাওয়ার জন্য কোডিং অবশ্যই ভালো জানতে হবে এবং সেটা ভালো কমিউনিকেশনের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে হবে। এর অনুশীলন বিশ্ববিদ্যালয় লাইফের প্রথম থেকেই করা উচিত। আর এ জন্যই কম্পেটিটিভ প্রোগ্রামিংয়ে অংশগ্রহণকারীরা টেকজায়ান্ট কোম্পানির জবের ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকে। যদি কেউ কম্পেটিটিভ প্রোগ্রামিংয়ে টাইম না দিতে পারো, তাহলে রেগুলারলি লিটকোড অনুশীলন করা উচিত। আরেকটা উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, গুগল সিজিপিএ কেয়ার না করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট ওয়ার্ক পারমিট পেতে অনেক সাহায্য করে। যদি জব অফার পাওয়ার পরও ওয়ার্ক পারমিট না পাওয়া যায়, তবে গুগল অফার প্রত্যাহার করতে পারে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার দিকেও খেয়াল রাখা উচিত।

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম 

বিদেশে ক্যারিয়ার: ঢাকার ছেলের গুগল জয়

শেখ মঈনুল হাসান

শেখ মঈনুল হাসান।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক করেছেন শেখ মঈনুল হাসান। এরপর সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেন। পাশাপাশি আবেদন করেন গুগলে। ২০১৮ সালের শেষদিকে ডাক পান। গুগলে চাকরি পাওয়ার গল্প ও নতুনদের পরামর্শ নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন তিনি।

বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল পাওয়ার পর থেকে গুগলে চাকরি করার স্বপ্ন নিয়ে প্রোগ্রামিং শুরু করি। প্রথম বর্ষ থেকে কম্পেটিটিভ প্রোগ্রামিং নিয়ে সব সময় পড়ে থাকতাম।

গুগলে চাকরির সুযোগ
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, প্রডাক্ট ডিজাইনার, ইঞ্জিনিয়ার ম্যানেজার, রিক্রুটার, ডেটা সায়েন্স রিলেটেডসহ অনেক চাকরি রয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়াও সেলস, মার্কেটিং, লিগালে অনেক বাংলাদেশি গুগলে কাজ করেন। যদিও বাংলাদেশিরা বেশির ভাগই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আছেন।

আবেদনের প্রক্রিয়া
নতুন গ্র্যাজুয়েটরা ডিরেক্ট গুগল ক্যারিয়ার সাইটে আবেদন করতে পারে এবং এখান থেকে অনেকে ইন্টারভিউর সুযোগ পায়। ইন্টারভিউ ভালো করলে চূড়ান্ত প্রস্তাব দেয়। আবেদন করার সময় রিক্রুটারের কল পাওয়ার জন্য সিভি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গুগলে জব করে তাঁদের রেফারাল নিয়ে আবেদন করলে রিক্রুটারের কল পাওয়া যায়। চাকরি পাওয়ার জন্য ফোন ইন্টারভিউ এবং অন-সাইট ইন্টারভিউয়ে ভালো করতে হবে।

চাকরির ইন্টারভিউ
সিভি জমা দেওয়ার পর প্রথমে রিক্রুটারের কল আসে। যার উদ্দেশ্য মূলত পরিচিত হওয়া। তারপর আমার টোটাল সাতটি ইন্টারভিউ দিতে হয়। প্রথমে দুইটা ফোন কোডিং ইন্টারভিউ দিই, প্রতিটি এক ঘণ্টা করে। তখন আমি সিঙ্গাপুরে পেপালে জব করি। ফোন ইন্টারভিউ পজিটিভ হলে ওরা আমাকে ডাবলিন, আয়ারল্যান্ডে অন-সাইট ইন্টারভিউর জন্য ডাকে। আয়ারল্যান্ডের ভিসা প্রসেসিং করতে প্রায় দুই মাস সময় লাগে। সেখানে গিয়ে ফেইস-টু-ফেইস একদিনে আমার চারটি কোডিং এবং একটা লারজ সিস্টেম ডিজাইন ইন্টারভিউ দিতে হয়। প্রতিটি ইন্টারভিউ ছিল ৪৫ মিনিট করে; যা গুগলের ইঞ্জিনিয়াররাই পরিচালনা করেন। আসা-যাওয়া, থাকাসহ অন-সাইট ইন্টারভিউর সব খরচই গুগল বহন করে। এটা ছিল প্রি-করোনা প্রসেস। করোনার কারণে অন-সাইট ইন্টারভিউ অনলাইনে নেওয়া শুরু হয় এবং এখনো সেটাই চলছে।

যত সময় লাগতে পারে
পারসোনালি আমার অনেক বেশি সময় লেগেছিল। কারণ আমি অন-সাইট ইন্টারভিউ ফেইস-টু-ফেইস দিই। এটা এখন অনলাইনে হয়। আমার ফোন ইন্টারভিউ তারিখ থেকে অফার পেতে চার মাস লাগে। এখন যেহেতু ভিসা প্রসেসিং টাইম নেই, তাই আনুমানিক দেড়-দুই মাস লাগতে পারে। আর জয়েনিং তারিখ কবে হবে, সেটা ওই দেশের ওয়ার্ক পারমিটের সময়ের ওপর নির্ভরশীল।

বাংলাদেশিদের জন্য সুযোগ
গুগলের মতো প্রতিষ্ঠান কেয়ার করে শুধু আপনার ক্যাপাবিলিটি। আপনি কোন দেশের, সেটা কেয়ার করবে না। বাংলাদেশ থেকে অনেকেই গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানে কাজ করে। আয়ারল্যান্ডে টোটাল ১৮ জন ইঞ্জিনিয়ার আছে এবং আরও যোগদান করার প্রক্রিয়ায় আছে। তাই অন্য সব দেশের মানুষের মতো বাংলাদেশিদেরও সুযোগ রয়েছে। কিন্তু অর্থনৈতিক মন্দার কারণে অনেক কোম্পানি নিয়োগ কমিয়ে এনেছে। তাই হয়তো আপাতত সুযোগ কিছুটা কমে এসেছে। তবে এটা অদূর ভবিষ্যতে ঠিক হয়ে যাবে।

তরুণদের জন্য পরামর্শ
গুগলে জব অফার পাওয়ার জন্য কোডিং অবশ্যই ভালো জানতে হবে এবং সেটা ভালো কমিউনিকেশনের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে হবে। এর অনুশীলন বিশ্ববিদ্যালয় লাইফের প্রথম থেকেই করা উচিত। আর এ জন্যই কম্পেটিটিভ প্রোগ্রামিংয়ে অংশগ্রহণকারীরা টেকজায়ান্ট কোম্পানির জবের ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকে। যদি কেউ কম্পেটিটিভ প্রোগ্রামিংয়ে টাইম না দিতে পারো, তাহলে রেগুলারলি লিটকোড অনুশীলন করা উচিত। আরেকটা উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, গুগল সিজিপিএ কেয়ার না করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট ওয়ার্ক পারমিট পেতে অনেক সাহায্য করে। যদি জব অফার পাওয়ার পরও ওয়ার্ক পারমিট না পাওয়া যায়, তবে গুগল অফার প্রত্যাহার করতে পারে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার দিকেও খেয়াল রাখা উচিত।

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম