বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকে ডুবে দুই শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু

রাব্বি

অনন্যা জাহান হিয়া (বামে), তাসপিয়া জাহান ঋতু (ডানে)।

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) লেকে ডুবে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (১ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বৃষ্টিতে ভিজতে লেকপাড়ে যায় ওই দুই শিক্ষার্থী, তখন পা পিছলে লেকে পড়ে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

পরে দুপুর ১টার দিকে তাদের উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে নেওয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক একজনকে মৃত ঘোষণা করেন। সেখান থেকে দুই শিক্ষার্থীকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ড. কাজী ইসমাইল হোসেন হাসপাতালে নেওয়ার আগেই শিক্ষার্থীরা মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করেন।

মৃত দুই শিক্ষার্থী হলেন পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা (ইএসডি) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের অনন্যা হিয়া ও তাসপিয়া জাহান ঋতু। হিয়ার বাড়ি খুলনা সদরে বয়রাতে ও ঋতুর বাড়ি বাগেরহাট জেলার ফকিরহাটে। শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, সাঁতার না জানা বান্ধুবী হিয়াকে পা পিছলে লেকে পড়ে ডুবতে দেখে রিতু এগিয়ে আসেন। একপর্যায়ে দুজনই ডুবে যান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. কামরুজ্জামান দুই ছাত্রীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। ওই সময় পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের দুই শিক্ষার্থী লেকপাড়ে বৃষ্টিতে ভিজছিল। বৃষ্টিতে ভেজার পর তারা লেকে পড়ে নিখোঁজ হয়। পরে একটার দিকে তাদের উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন”।

উদ্ধারকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শী ইংরেজি বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাজেদুর রহমান আকাশ বলেন, “প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। ওই সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত দুইজন মেয়ে এসে আমাকে বলে ভাইয়া ওরা পড়ে গেছে উঠতে পারছে না, ওদেরকে উঠান। আমি সাথে সাথে লেকে লাফ দিয়ে পড়ি। ওরা যেখানে পড়ে যায় সেখানে ছিলো না কিছুদূর সরে গিয়েছে, একবার একটা সিগন্যাল পেয়ে আমি সেখানে যায়। আমাদের লেক অনেক গভীর, আমি ডুব দিয়ে লেকের তলদেশে পৌছাতে পারিনি। বৃষ্টি হচ্ছিল আশেপাশে কেউ ছিলো না। দুইজন ছেলে লেকে সাঁতার কাটছিল ওদের ডাক দিলে ওরাও আসলো, আমরা ৩ জন খুঁজেছি। আমরা অন্যদের ডাকাডাকি করছি, বৃষ্টির শব্দে অন্যরা আমাদের শুনতে পাচ্ছে না, পরে আরো ৪-৫ জন আসলো। আমরা তখন বেশ কিছু সময় ওদের খুঁজেছি। পাশে মাঠে ছেলেরা ফুটবল খেলছিল, সেখান থেকে ১৫-১৬ জন আসার পর আমরা ২০-২৫ জন খোঁজা শুরু করছি। ইতিমধ্যে ২০-৩০ মিনিট অতিবাহিত হয়ে গেছে। এরপর লেকের মাঝ থেকে একজন ওড়না খুঁজে পেল। আমরা তখন সবাই ওইখানে গিয়ে ওদের টেনে তুললাম। তখন ওদের কোন সেন্স ছিলো না, পেটে প্রেস করার পর নাক দিয়ে ফেনা উঠছিল। এসময় অ্যাম্বুলেন্স চলে আসে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। প্রাথমিকভাবে যা করা হয় যেমন হাতে ডলা ও পেটে প্রেস করা আমরা তা করেছি। হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক ওদের দুজনেরই মৃত্যু ঘোষণা করেন”।

খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ. কিউ. এম. মাহবুব, প্রক্টর ড. মো. কামরুজ্জামান,
কোষাধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ড. মোবারক হোসেন, রেজিস্ট্রার মো. দলিলুর রহমান, জনসংযোগ দপ্তরের উপ-পরিচালক মাহবুবুল আলম, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. শাহজাহানসহ অন্যান্য শিক্ষকরা হাসপাতালে যান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ. কিউ. এম. মাহবুব বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় লেকে শিক্ষার্থীদের গোসল করা নিষেধ। তারপরও দুই শিক্ষার্থী বৃষ্টির মধ্যে গোসল করতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে মারা গিয়েছে। ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ও হৃদয় বিদারক। আমরা এ ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি”।

এদিকে দুই শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি ক্ষুব্ধতা জানিয়ে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ করেছে পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ ও সেবা না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, এই মৃত্যুর দ্বায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও মেডিক্যাল সেন্টারের। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারের কোনো অক্সিজেন পায়নি। চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল সেন্টার থেকে টোকেন নিতে বলা হয়েছে, যেখানে দুইজন শিক্ষার্থীর জীবন সংকটাপন্ন ছিল।

ঋতু ও হিয়ার মৃত্যুতে শোকে কাতর হয়ে পড়েছেন তার সহপাঠীসহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয়। সহপাঠী হারানোর শোকে চিৎকার করে কান্না ও আর্তনাদ করে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন একাধিক শিক্ষার্থী। আর্তনাদ করতে দেখা গেছে মৃতদের স্বজনদেরও।

ইবিহো/এসএস

বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকে ডুবে দুই শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু

রাব্বি

অনন্যা জাহান হিয়া (বামে), তাসপিয়া জাহান ঋতু (ডানে)।

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) লেকে ডুবে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (১ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বৃষ্টিতে ভিজতে লেকপাড়ে যায় ওই দুই শিক্ষার্থী, তখন পা পিছলে লেকে পড়ে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

পরে দুপুর ১টার দিকে তাদের উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে নেওয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক একজনকে মৃত ঘোষণা করেন। সেখান থেকে দুই শিক্ষার্থীকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ড. কাজী ইসমাইল হোসেন হাসপাতালে নেওয়ার আগেই শিক্ষার্থীরা মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করেন।

মৃত দুই শিক্ষার্থী হলেন পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা (ইএসডি) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের অনন্যা হিয়া ও তাসপিয়া জাহান ঋতু। হিয়ার বাড়ি খুলনা সদরে বয়রাতে ও ঋতুর বাড়ি বাগেরহাট জেলার ফকিরহাটে। শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, সাঁতার না জানা বান্ধুবী হিয়াকে পা পিছলে লেকে পড়ে ডুবতে দেখে রিতু এগিয়ে আসেন। একপর্যায়ে দুজনই ডুবে যান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. কামরুজ্জামান দুই ছাত্রীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। ওই সময় পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের দুই শিক্ষার্থী লেকপাড়ে বৃষ্টিতে ভিজছিল। বৃষ্টিতে ভেজার পর তারা লেকে পড়ে নিখোঁজ হয়। পরে একটার দিকে তাদের উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন”।

উদ্ধারকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শী ইংরেজি বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাজেদুর রহমান আকাশ বলেন, “প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। ওই সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত দুইজন মেয়ে এসে আমাকে বলে ভাইয়া ওরা পড়ে গেছে উঠতে পারছে না, ওদেরকে উঠান। আমি সাথে সাথে লেকে লাফ দিয়ে পড়ি। ওরা যেখানে পড়ে যায় সেখানে ছিলো না কিছুদূর সরে গিয়েছে, একবার একটা সিগন্যাল পেয়ে আমি সেখানে যায়। আমাদের লেক অনেক গভীর, আমি ডুব দিয়ে লেকের তলদেশে পৌছাতে পারিনি। বৃষ্টি হচ্ছিল আশেপাশে কেউ ছিলো না। দুইজন ছেলে লেকে সাঁতার কাটছিল ওদের ডাক দিলে ওরাও আসলো, আমরা ৩ জন খুঁজেছি। আমরা অন্যদের ডাকাডাকি করছি, বৃষ্টির শব্দে অন্যরা আমাদের শুনতে পাচ্ছে না, পরে আরো ৪-৫ জন আসলো। আমরা তখন বেশ কিছু সময় ওদের খুঁজেছি। পাশে মাঠে ছেলেরা ফুটবল খেলছিল, সেখান থেকে ১৫-১৬ জন আসার পর আমরা ২০-২৫ জন খোঁজা শুরু করছি। ইতিমধ্যে ২০-৩০ মিনিট অতিবাহিত হয়ে গেছে। এরপর লেকের মাঝ থেকে একজন ওড়না খুঁজে পেল। আমরা তখন সবাই ওইখানে গিয়ে ওদের টেনে তুললাম। তখন ওদের কোন সেন্স ছিলো না, পেটে প্রেস করার পর নাক দিয়ে ফেনা উঠছিল। এসময় অ্যাম্বুলেন্স চলে আসে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। প্রাথমিকভাবে যা করা হয় যেমন হাতে ডলা ও পেটে প্রেস করা আমরা তা করেছি। হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক ওদের দুজনেরই মৃত্যু ঘোষণা করেন”।

খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ. কিউ. এম. মাহবুব, প্রক্টর ড. মো. কামরুজ্জামান,
কোষাধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ড. মোবারক হোসেন, রেজিস্ট্রার মো. দলিলুর রহমান, জনসংযোগ দপ্তরের উপ-পরিচালক মাহবুবুল আলম, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. শাহজাহানসহ অন্যান্য শিক্ষকরা হাসপাতালে যান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ. কিউ. এম. মাহবুব বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় লেকে শিক্ষার্থীদের গোসল করা নিষেধ। তারপরও দুই শিক্ষার্থী বৃষ্টির মধ্যে গোসল করতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে মারা গিয়েছে। ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ও হৃদয় বিদারক। আমরা এ ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি”।

এদিকে দুই শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি ক্ষুব্ধতা জানিয়ে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ করেছে পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ ও সেবা না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, এই মৃত্যুর দ্বায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও মেডিক্যাল সেন্টারের। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারের কোনো অক্সিজেন পায়নি। চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল সেন্টার থেকে টোকেন নিতে বলা হয়েছে, যেখানে দুইজন শিক্ষার্থীর জীবন সংকটাপন্ন ছিল।

ঋতু ও হিয়ার মৃত্যুতে শোকে কাতর হয়ে পড়েছেন তার সহপাঠীসহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয়। সহপাঠী হারানোর শোকে চিৎকার করে কান্না ও আর্তনাদ করে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন একাধিক শিক্ষার্থী। আর্তনাদ করতে দেখা গেছে মৃতদের স্বজনদেরও।

ইবিহো/এসএস