ভর্তি প্রস্তুতির পরামর্শ: ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিট

ফাহিম শাহরিয়ার
ফাহিম শাহরিয়ার

উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীদের অনেকেরই স্বপ্ন থাকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে প্রয়োজন হয় সঠিক পরিকল্পনার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। তবে আমাদের আজকের আয়োজনে ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে পরামর্শ।

মানসিক প্রস্তুতি 
এইচএসসির মতো গুরুত্বপূর্ণ এবং কঠিন একটি পরীক্ষা শেষে ছাত্র-ছাত্রীদের আরও একটি কঠিনতর এক যুদ্ধ তথা ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয়। তবে হাজার হাজার ভর্তিচ্ছুর স্বপ্নের সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের একটি আসন নিশ্চিত করা চাট্টিখানি কথা নয়। এর জন্য প্রথমেই আমি কোন ইউনিটে পরীক্ষা দেব সেই সিদ্ধান্ত একদম শুরুতেই পাকাপোক্ত করে নিলে অ্যাডমিশন জার্নিটা অনেকটা সহজ হয়ে যায়। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং সে অনুযায়ী প্রথম থেকেই পড়াশোনা ছাড়া ভর্তি পরীক্ষায় সফল হওয়া প্রায় অসম্ভব। অনেক বেশি পড়াশোনা, অনেক বেশি শ্রম, অনেক বেশি ধৈর্য এবং অনেক বেশি ত্যাগের মানসিক প্রস্তুতি এবং সৃষ্টিকর্তার ওপর অটল বিশ্বাস নিয়েই এই যুদ্ধের ময়দানে নামা উচিত।

বিগত বছরের প্রশ্ন সম্পর্কে ধারণা
প্রস্তুতির একদম শুরুতেই একজন ভর্তিচ্ছু যে ইউনিটে পরীক্ষা দেবে সেই ইউনিটে কেমন প্রশ্ন হয় সে সম্পর্কে জানতে হবে। অনেকেই পরীক্ষার একদম শেষ মুহূর্তে এটি করে থাকে। এই কাজটি একটি মারাত্মক ভুল। কেননা, এই প্রশ্ন বিশ্লেষণ করার মাধ্যমেই বুঝে ওঠা সম্ভব ঠিক কোন কোন জায়গা থেকে প্রশ্ন হয় এবং কোন কোন টপিক গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে আর কী কী বিষয় বাদ দিতে হবে। সেই সঙ্গে সেই ইউনিটের প্রশ্নের মানবণ্টন, সময় সম্পর্কেও পুঙ্খানুপুঙ্খ ধারণা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলে পরীক্ষায় অনেক ভালো করা যায়। এটি মনে রাখা উচিত যে প্রতিযোগিতামূলক এই পরীক্ষায় কঠোর পরিশ্রমের চাইতে ‘স্মার্ট পরিশ্রম’ বেশি জরুরি। আর স্মার্ট এই কাজের অংশ হিসেবে প্রশ্নব্যাংক বিশ্লেষণ অপরিহার্য।

টেক্সট পড়ার গুরুত্ব
অ্যাডমিশনে একটি জনপ্রিয় ভ্রান্ত ধারণা হচ্ছে কোচিং না করলে এবং বাজারে প্রচলিত মুখরোচক বই না পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন ছোঁয়া যায় না। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা শিক্ষা বোর্ড অনুমোদিত পাঠ্যবই এবং সেই বইয়ের শিখনফলের ওপর ভিত্তি করেই ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন করে থাকেন। টেক্সট বইয়ের কনসেপ্ট যদি ক্লিয়ার না থাকে তবে অ্যাডভান্স কোনো বিষয়েই ভালো করা সম্ভব নয়।

লিখিত নিয়ে দুশ্চিন্তা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই মানবিকের ইউনিটগুলোতে এখন লিখিত অংশ যুক্ত হয়েছে আর এই লিখিত পরীক্ষা ভর্তি-ইচ্ছুকদের ঘুম হারামের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এই দুশ্চিন্তা দূর করার একটি সহজ উপায় হচ্ছে নিয়মিত বাংলা ও ইংরেজিতে নিজের মতো করে যেকোনো বিষয়ে প্রতিদিন দু-এক পৃষ্ঠা করে লেখা এবং টিউটরের মাধ্যমে ভুল-ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে সংশোধন করা। এভাবে প্রতিদিন লিখলে এক থেকে দুই মাস পর খুব দারুণভাবে নির্ভুল লেখনশৈলী এবং ‘ফ্রি-হ্যান্ড রাইটিং’ আয়ত্তে আসবে। আর লেখার মান উন্নত করতে হলে নিয়মিত জাতীয় দৈনিকের মতামত পাতা পড়ার কোনো বিকল্প নেই।

পত্রিকা পড়া
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা কেন জাতির বিরহ-মিলন-আনন্দ-বেদনা-সংকট প্রত্যেকটি সময়ে পাশে থেকে দেশকে পথ দেখিয়েছে? কারণ তারা পরিস্থিতি সম্পর্কে সদা সজাগ। সুতরাং সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হতে হলে অবশ্যই প্রতিদিন বিশ্বে কোথায় কী হচ্ছে তা জানতে হবে। সাধারণ জ্ঞানের সাম্প্রতিক অংশের জন্য নিয়মিত পত্রিকা পড়লে খুব সহজেই সাম্প্রতিক প্রশ্নের অংশে অনেক ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব।

মডেল টেস্ট
প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করতে যেকোনো প্রসিদ্ধ কোচিং কিংবা একটি ভালো মডেল টেস্টের বই কিনে ঘড়ি ধরে নির্দিষ্ট সময়ে কমপক্ষে ৩০-৪০টি মডেল টেস্ট দিতে পারলে প্রশ্নপত্রের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার এবং সময় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা তৈরি হবে।

ওপরের কৌশলগুলো অবলম্বন, স্মার্ট পরিশ্রম এবং সৃষ্টিকর্তার ওপর অগাধ বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব ‘বুলেট কিংবা কবিতার ক্যাম্পাস’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির চায়ের সঙ্গে সফলতার হাসি। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড তোমার সেই হাসি দেখার অপেক্ষায়। সবার জন্য শুভ কামনা।

ফাহিম শাহরিয়ার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ‘ঘ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষায় মেধাক্রম ৩য় (বিজ্ঞান)

অনুলিখন: জুবায়ের আহম্মেদ

ভর্তি প্রস্তুতির পরামর্শ: ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিট

ফাহিম শাহরিয়ার
ফাহিম শাহরিয়ার

উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীদের অনেকেরই স্বপ্ন থাকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে প্রয়োজন হয় সঠিক পরিকল্পনার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। তবে আমাদের আজকের আয়োজনে ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে পরামর্শ।

মানসিক প্রস্তুতি 
এইচএসসির মতো গুরুত্বপূর্ণ এবং কঠিন একটি পরীক্ষা শেষে ছাত্র-ছাত্রীদের আরও একটি কঠিনতর এক যুদ্ধ তথা ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয়। তবে হাজার হাজার ভর্তিচ্ছুর স্বপ্নের সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের একটি আসন নিশ্চিত করা চাট্টিখানি কথা নয়। এর জন্য প্রথমেই আমি কোন ইউনিটে পরীক্ষা দেব সেই সিদ্ধান্ত একদম শুরুতেই পাকাপোক্ত করে নিলে অ্যাডমিশন জার্নিটা অনেকটা সহজ হয়ে যায়। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং সে অনুযায়ী প্রথম থেকেই পড়াশোনা ছাড়া ভর্তি পরীক্ষায় সফল হওয়া প্রায় অসম্ভব। অনেক বেশি পড়াশোনা, অনেক বেশি শ্রম, অনেক বেশি ধৈর্য এবং অনেক বেশি ত্যাগের মানসিক প্রস্তুতি এবং সৃষ্টিকর্তার ওপর অটল বিশ্বাস নিয়েই এই যুদ্ধের ময়দানে নামা উচিত।

বিগত বছরের প্রশ্ন সম্পর্কে ধারণা
প্রস্তুতির একদম শুরুতেই একজন ভর্তিচ্ছু যে ইউনিটে পরীক্ষা দেবে সেই ইউনিটে কেমন প্রশ্ন হয় সে সম্পর্কে জানতে হবে। অনেকেই পরীক্ষার একদম শেষ মুহূর্তে এটি করে থাকে। এই কাজটি একটি মারাত্মক ভুল। কেননা, এই প্রশ্ন বিশ্লেষণ করার মাধ্যমেই বুঝে ওঠা সম্ভব ঠিক কোন কোন জায়গা থেকে প্রশ্ন হয় এবং কোন কোন টপিক গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে আর কী কী বিষয় বাদ দিতে হবে। সেই সঙ্গে সেই ইউনিটের প্রশ্নের মানবণ্টন, সময় সম্পর্কেও পুঙ্খানুপুঙ্খ ধারণা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলে পরীক্ষায় অনেক ভালো করা যায়। এটি মনে রাখা উচিত যে প্রতিযোগিতামূলক এই পরীক্ষায় কঠোর পরিশ্রমের চাইতে ‘স্মার্ট পরিশ্রম’ বেশি জরুরি। আর স্মার্ট এই কাজের অংশ হিসেবে প্রশ্নব্যাংক বিশ্লেষণ অপরিহার্য।

টেক্সট পড়ার গুরুত্ব
অ্যাডমিশনে একটি জনপ্রিয় ভ্রান্ত ধারণা হচ্ছে কোচিং না করলে এবং বাজারে প্রচলিত মুখরোচক বই না পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন ছোঁয়া যায় না। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা শিক্ষা বোর্ড অনুমোদিত পাঠ্যবই এবং সেই বইয়ের শিখনফলের ওপর ভিত্তি করেই ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন করে থাকেন। টেক্সট বইয়ের কনসেপ্ট যদি ক্লিয়ার না থাকে তবে অ্যাডভান্স কোনো বিষয়েই ভালো করা সম্ভব নয়।

লিখিত নিয়ে দুশ্চিন্তা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই মানবিকের ইউনিটগুলোতে এখন লিখিত অংশ যুক্ত হয়েছে আর এই লিখিত পরীক্ষা ভর্তি-ইচ্ছুকদের ঘুম হারামের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এই দুশ্চিন্তা দূর করার একটি সহজ উপায় হচ্ছে নিয়মিত বাংলা ও ইংরেজিতে নিজের মতো করে যেকোনো বিষয়ে প্রতিদিন দু-এক পৃষ্ঠা করে লেখা এবং টিউটরের মাধ্যমে ভুল-ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে সংশোধন করা। এভাবে প্রতিদিন লিখলে এক থেকে দুই মাস পর খুব দারুণভাবে নির্ভুল লেখনশৈলী এবং ‘ফ্রি-হ্যান্ড রাইটিং’ আয়ত্তে আসবে। আর লেখার মান উন্নত করতে হলে নিয়মিত জাতীয় দৈনিকের মতামত পাতা পড়ার কোনো বিকল্প নেই।

পত্রিকা পড়া
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা কেন জাতির বিরহ-মিলন-আনন্দ-বেদনা-সংকট প্রত্যেকটি সময়ে পাশে থেকে দেশকে পথ দেখিয়েছে? কারণ তারা পরিস্থিতি সম্পর্কে সদা সজাগ। সুতরাং সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হতে হলে অবশ্যই প্রতিদিন বিশ্বে কোথায় কী হচ্ছে তা জানতে হবে। সাধারণ জ্ঞানের সাম্প্রতিক অংশের জন্য নিয়মিত পত্রিকা পড়লে খুব সহজেই সাম্প্রতিক প্রশ্নের অংশে অনেক ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব।

মডেল টেস্ট
প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করতে যেকোনো প্রসিদ্ধ কোচিং কিংবা একটি ভালো মডেল টেস্টের বই কিনে ঘড়ি ধরে নির্দিষ্ট সময়ে কমপক্ষে ৩০-৪০টি মডেল টেস্ট দিতে পারলে প্রশ্নপত্রের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার এবং সময় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা তৈরি হবে।

ওপরের কৌশলগুলো অবলম্বন, স্মার্ট পরিশ্রম এবং সৃষ্টিকর্তার ওপর অগাধ বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব ‘বুলেট কিংবা কবিতার ক্যাম্পাস’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির চায়ের সঙ্গে সফলতার হাসি। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড তোমার সেই হাসি দেখার অপেক্ষায়। সবার জন্য শুভ কামনা।

ফাহিম শাহরিয়ার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ‘ঘ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষায় মেধাক্রম ৩য় (বিজ্ঞান)

অনুলিখন: জুবায়ের আহম্মেদ