ভালো চিকিৎসক হতে চাইলে

ডা. দেবশ্রী সাহা

মেডিকেলের একজন শিক্ষার্থীকে নিয়মিত ক্লাস, পরীক্ষা, টিউটোরিয়াল—এসবের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। নিয়মিত ক্লাসে যা পড়ানো হয়, সেগুলো পড়ে ফেলতে হবে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ বা প্রতিষ্ঠান থেকে মেডিকেলের পার্থক্যটা মূলত এই জায়গায়। আমাদের যেসব শিক্ষার্থী বাইরে থাকে, তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ। তারা যেন কোনোভাবেই ক্লাস মিস না দেয়। কারণ, মেডিকেলে যে পড়াগুলো পড়ানো হয় বা কাজ দেওয়া হয় অনেক ক্ষেত্রে সেগুলো একা একা করা সম্ভব নয়। এসবের জন্য প্রয়োজন গ্রুপ স্টাডি ও গ্রুপ ডিসকাশন।

অনেক শিক্ষার্থী মেডিকেলে যখন ভর্তি হয়, তখন তারা স্বপ্ন ও বাস্তবতার ফারাক দেখে হতাশ হয়ে যায়। সে মনে করে, অনেক পড়াশোনা করে ভর্তি হয়েছি, কয়েক দিন একটু বিরতি নিই। বিষয়টি মোটেই ঠিক নয়। এতে পড়া অনেক বাকি থেকে যায়, একপর্যায়ে হতাশা চলে আসে। মূলত পাঁচটি বছর তাকে পড়াশোনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকতে হবে। আবার অনেকে ভাবে—মেডিকেলের পড়াশোনা মনে হয় মুখস্থনির্ভর, পরীক্ষার দু-এক দিন আগে থেকে পড়া শুরু করলে পাস করা যাবে। ব্যাপারটা আসলে তেমনও নয়, এখানে প্রতিটি বিষয় ভালোভাবে বুঝে আত্মস্থ না করলে মনে থাকবে না। সে জন্য ছবি দেখা, পারস্পরিক-সম্পর্কিত বিষয়গুলো একসঙ্গে পড়া—এ বিষয়গুলো তাদের সাহায্য করবে।

সুযোগ কাজে লাগাতে হবে
মেডিকেলে কিছু অসুবিধা থাকলেও সুবিধাই বেশি; বিশেষ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে প্রতিটি আলাদা গ্রুপের জন্য একজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সেই শিক্ষক নির্দিষ্ট একদল শিক্ষার্থীকে দেখাশোনা করবেন, সার্বিক খোঁজখবর রাখবেন, মৌলিক কোনো সমস্যা থাকলে সেটি নিয়ে আলোচনা করবেন। শিক্ষার্থীর মানসিক কোনো সমস্যা দেখা দিলে সেটি কীভাবে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেবেন। এসব সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।

নিয়মিত ক্লাস করতে হবে যাদের বিভিন্ন টার্ম বুঝতে সমস্যা হয় তাদের উচিত—বারবার পড়া, রিভিশন দেওয়া, গ্রুপ স্টাডি করা। এ ক্ষেত্রে শিক্ষক ও সিনিয়রদের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে সুসম্পর্ক খুব কার্যকর। অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মাঝে আন্তসম্পর্ক ভালো থাকার কারণে পড়া বুঝতে বেগ পেতে হয় না, সহজেই সবকিছু বোঝা যায়। অনেক শিক্ষার্থী ক্লাসের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে না, নিয়মিত উপস্থিত থাকে না—এর পরিবর্তন আনতে হবে। নিজেকে একজন যোগ্য চিকিৎসক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে ক্লাস করতে হবে। কোনো বিষয়ে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপ করা, সমাধান করা দরকার। নিজেকে কখনো ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষকতার উপলব্ধি বলে, শুধু মা-বাবার চাপে পড়ে কিংবা সমাজের চাপে পড়ে তাকে চিকিৎসক হতে হবে—এই মানসিকতার কারণে তারা নিজের পছন্দের বিষয়ে ভর্তি হতে না পারায় হতাশ হয়ে পড়ে। হয়তো তার ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা বিজ্ঞানের কোনো বিষয়ে পড়ার কথা ছিল, কিন্তু সে পারছে না। এ ক্ষেত্রে তাকে আরেকটু শক্ত হতে হবে। নিজের প্রতি বিশ্বাস, নিজের নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে। নিয়মিত স্বাস্থ্যকর সুষম খাদ্যাভ্যাস, মেডিটেশন, প্রার্থনা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কম সময় দিতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে আসক্তি হয়ে গেলে মেডিকেলে টিকে থাকা কষ্টকর।

আয়ের দিকে ঝোঁকা যাবে না
আরেকটি বিষয় দেখা যায়—আমাদের কিছু শিক্ষার্থী প্রচুর পরিমাণে টাকার দিকে ঝুঁকে যায়; বিশেষ করে টিউশন ও কোচিংয়ের দিকে। নিজে চলতে টিউশন ও কোচিংয়ের প্রয়োজন আছে, কিন্তু এটা কোনোভাবেই যেন অতিরিক্ত না হয়। এমনটা হলে সে মৌলিক পড়াশোনা থেকে দূরে সরে যাবে। এর ফলে সঠিক সময়ে পাস করে বের হতে পারবে না। আবার দেখা যায়, আমাদের অনেক শিক্ষার্থী সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটো দিকই রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে—তার লক্ষ্যের দিকে, পারিবারিক মূল্যবোধের দিকে। সম্পর্কে জড়িয়ে পারিবারিক টানাপোড়েন হবে কি না, কিংবা ক্যারিয়ারে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না—সর্বোপরি নিজের জীবনকে বেশি ভালোবাসতে হবে। মেডিকেলে নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকার পাশাপাশি মানসিকভাবে শক্ত থাকা জরুরি।

লেখক: প্রভাষক, অ্যানাটমি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ

অনুলিখন: ফারুক ছিদ্দিক, ঢাবি

সূত্র: আজকের পত্রিকা।

ভালো চিকিৎসক হতে চাইলে

ডা. দেবশ্রী সাহা

মেডিকেলের একজন শিক্ষার্থীকে নিয়মিত ক্লাস, পরীক্ষা, টিউটোরিয়াল—এসবের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। নিয়মিত ক্লাসে যা পড়ানো হয়, সেগুলো পড়ে ফেলতে হবে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ বা প্রতিষ্ঠান থেকে মেডিকেলের পার্থক্যটা মূলত এই জায়গায়। আমাদের যেসব শিক্ষার্থী বাইরে থাকে, তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ। তারা যেন কোনোভাবেই ক্লাস মিস না দেয়। কারণ, মেডিকেলে যে পড়াগুলো পড়ানো হয় বা কাজ দেওয়া হয় অনেক ক্ষেত্রে সেগুলো একা একা করা সম্ভব নয়। এসবের জন্য প্রয়োজন গ্রুপ স্টাডি ও গ্রুপ ডিসকাশন।

অনেক শিক্ষার্থী মেডিকেলে যখন ভর্তি হয়, তখন তারা স্বপ্ন ও বাস্তবতার ফারাক দেখে হতাশ হয়ে যায়। সে মনে করে, অনেক পড়াশোনা করে ভর্তি হয়েছি, কয়েক দিন একটু বিরতি নিই। বিষয়টি মোটেই ঠিক নয়। এতে পড়া অনেক বাকি থেকে যায়, একপর্যায়ে হতাশা চলে আসে। মূলত পাঁচটি বছর তাকে পড়াশোনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকতে হবে। আবার অনেকে ভাবে—মেডিকেলের পড়াশোনা মনে হয় মুখস্থনির্ভর, পরীক্ষার দু-এক দিন আগে থেকে পড়া শুরু করলে পাস করা যাবে। ব্যাপারটা আসলে তেমনও নয়, এখানে প্রতিটি বিষয় ভালোভাবে বুঝে আত্মস্থ না করলে মনে থাকবে না। সে জন্য ছবি দেখা, পারস্পরিক-সম্পর্কিত বিষয়গুলো একসঙ্গে পড়া—এ বিষয়গুলো তাদের সাহায্য করবে।

সুযোগ কাজে লাগাতে হবে
মেডিকেলে কিছু অসুবিধা থাকলেও সুবিধাই বেশি; বিশেষ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে প্রতিটি আলাদা গ্রুপের জন্য একজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সেই শিক্ষক নির্দিষ্ট একদল শিক্ষার্থীকে দেখাশোনা করবেন, সার্বিক খোঁজখবর রাখবেন, মৌলিক কোনো সমস্যা থাকলে সেটি নিয়ে আলোচনা করবেন। শিক্ষার্থীর মানসিক কোনো সমস্যা দেখা দিলে সেটি কীভাবে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেবেন। এসব সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।

নিয়মিত ক্লাস করতে হবে যাদের বিভিন্ন টার্ম বুঝতে সমস্যা হয় তাদের উচিত—বারবার পড়া, রিভিশন দেওয়া, গ্রুপ স্টাডি করা। এ ক্ষেত্রে শিক্ষক ও সিনিয়রদের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে সুসম্পর্ক খুব কার্যকর। অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মাঝে আন্তসম্পর্ক ভালো থাকার কারণে পড়া বুঝতে বেগ পেতে হয় না, সহজেই সবকিছু বোঝা যায়। অনেক শিক্ষার্থী ক্লাসের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে না, নিয়মিত উপস্থিত থাকে না—এর পরিবর্তন আনতে হবে। নিজেকে একজন যোগ্য চিকিৎসক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে ক্লাস করতে হবে। কোনো বিষয়ে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপ করা, সমাধান করা দরকার। নিজেকে কখনো ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষকতার উপলব্ধি বলে, শুধু মা-বাবার চাপে পড়ে কিংবা সমাজের চাপে পড়ে তাকে চিকিৎসক হতে হবে—এই মানসিকতার কারণে তারা নিজের পছন্দের বিষয়ে ভর্তি হতে না পারায় হতাশ হয়ে পড়ে। হয়তো তার ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা বিজ্ঞানের কোনো বিষয়ে পড়ার কথা ছিল, কিন্তু সে পারছে না। এ ক্ষেত্রে তাকে আরেকটু শক্ত হতে হবে। নিজের প্রতি বিশ্বাস, নিজের নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে। নিয়মিত স্বাস্থ্যকর সুষম খাদ্যাভ্যাস, মেডিটেশন, প্রার্থনা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কম সময় দিতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে আসক্তি হয়ে গেলে মেডিকেলে টিকে থাকা কষ্টকর।

আয়ের দিকে ঝোঁকা যাবে না
আরেকটি বিষয় দেখা যায়—আমাদের কিছু শিক্ষার্থী প্রচুর পরিমাণে টাকার দিকে ঝুঁকে যায়; বিশেষ করে টিউশন ও কোচিংয়ের দিকে। নিজে চলতে টিউশন ও কোচিংয়ের প্রয়োজন আছে, কিন্তু এটা কোনোভাবেই যেন অতিরিক্ত না হয়। এমনটা হলে সে মৌলিক পড়াশোনা থেকে দূরে সরে যাবে। এর ফলে সঠিক সময়ে পাস করে বের হতে পারবে না। আবার দেখা যায়, আমাদের অনেক শিক্ষার্থী সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটো দিকই রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে—তার লক্ষ্যের দিকে, পারিবারিক মূল্যবোধের দিকে। সম্পর্কে জড়িয়ে পারিবারিক টানাপোড়েন হবে কি না, কিংবা ক্যারিয়ারে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না—সর্বোপরি নিজের জীবনকে বেশি ভালোবাসতে হবে। মেডিকেলে নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকার পাশাপাশি মানসিকভাবে শক্ত থাকা জরুরি।

লেখক: প্রভাষক, অ্যানাটমি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ

অনুলিখন: ফারুক ছিদ্দিক, ঢাবি

সূত্র: আজকের পত্রিকা।