ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

‘ভিন্নমত’ দেখলেই হামলা ছাত্রলীগের, দর্শক প্রশাসন

১০ মাসে ক্যাম্পাসে ৯ হামলা

মাজহারুল ইসলাম রবিন ও যোবায়ের আহমদ

ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রাম- সবকিছুতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গুরুত্বপূর্ণ অবদান। মুক্তচিন্তার চর্চাকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত সেই ঢাবিতে এখন ক্ষমতার রাজনীতি। সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ক্যাম্পাস। বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোর ছায়াও সহ্য করতে পারেন না দলটির নেতাকর্মীরা। বছরের শুরু থেকে মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত ঢাবি ক্যাম্পাসে অন্তত ৯টি হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে ছাত্রলীগ। সবকিছু দেখেও প্রতিবারই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছিল নির্বিকার।

ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও নেই স্বস্তিতে। ঢাবির আবাসিক হলে থাকতে হলে প্রথম শর্তই থাকে ছাত্রলীগের নিয়মিত রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া। পাশাপাশি বিরোধী ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাসে ঢোকার চেষ্টা করলে প্রতিহত করার কাজটাও করতে হয় তাঁদের। প্রতিহত কিংবা মারামারি করলেই সহজে নেতাদের নজরে আসা যায় বলে মনে করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

ছাত্রলীগের যত হামলা :গেল ১২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সামনে কাওয়ালি গানের আসর বসিয়েছিলেন একদল শিক্ষার্থী। শুরু থেকেই এই অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে ছিল ছাত্রলীগ। অনুষ্ঠানের দিন বিকেল থেকেই বাধা আসছিল। এক পর্যায়ে গান শুরু হলে রাত সাড়ে ৮টার দিকে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। হামলার বিষয়টি অস্বীকার করলেও এতে ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীকে অংশ নিতে দেখা যায়।

১৯ এপ্রিল কথা কাটাকাটির জেরে ছাত্রলীগ নেতার ‘নির্দেশে’ হামলার শিকার হয়ে সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র রাকিবুল হাসান প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানীর কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। ওই অভিযোগপত্রে জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অতনু বর্মণকে হামলার নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা তা জানা যায়নি।

২২ মে সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে দলটির কয়েক নেতাকর্মীর ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এর দুই দিন পর এই হামলার ঘটনার প্রতিবাদ ও জুয়েলের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে ঢাবি সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে যাওয়ার পথে তাদের ওপর ফের হামলা করে ছাত্রলীগ। এই হামলার প্রতিবাদে সেদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ছাত্রদল। মিছিলটি ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের সামনে পৌঁছালে দুই সংগঠনের নেতাকর্মীর মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করে পুলিশ। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা করে। সরকারি কাজে বাধা, কর্মচারীকে মারধর, বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ভাঙচুর ও ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলার অভিযোগে করা এই মামলায় ৪০০ জনকে অচেনা আসামি করা হয়।

২৮ মে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল থেকেই হাইকোর্ট এলাকার আশপাশে জড়ো হতে থাকেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। দুপুর ১২টার দিকে ছাত্রদলের মিছিলটি হাইকোর্ট মোড় হয়ে দোয়েল চত্বরের দিকে গেলে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এ সময় গুলির শব্দও শোনা যায়।

সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডে দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে তাদের বিচার এবং আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবিতে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর গত ৬ জুনের বিক্ষোভ কর্মসূচিতেও হামলার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। বাম সংগঠনগুলোর নেতাদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।

১৯ আগস্ট দুপুরে ক্যাম্পাসের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির সামনের ফুটপাতে ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাবি শাখার তিন নেতা মারধরের শিকার হন। মারধরের জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করেছে পরিষদ।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাবি উপাচার্যের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে ফুল ও মিষ্টি নিয়ে তাঁর কার্যালয়ে যাওয়ার পথে নীলক্ষেতের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করে ছাত্রলীগ। হামলায় ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি খোরশেদ আলম, সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলামসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন।

সবশেষ গত ৭ অক্টোবর রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যার তিন বছরপূর্তি উপলক্ষে স্মরণসভা আয়োজন করে ছাত্র অধিকার পরিষদ। সেখানে আয়োজকদের ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাসছাড়া করে ছাত্রলীগ। হামলায় পরিষদের অন্তত ১৫ নেতাকর্মী আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানে গিয়েও তাঁদের পেটায় ছাত্রলীগ। বিকেলে মেডিকেল থেকে পরিষদের অন্তত ২০ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের দুই নেতার করা দুটি মামলায় পরিষদের ২৫ নেতাকর্মী ও অচেনা আরও ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

ছাত্রনেতারা যা বলছেন : এ ব্যাপারে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ‘এখন সরকারের কর্তৃত্ববাদী আচরণের কারণে ছাত্রলীগও অন্য সংগঠনের দিকে মারমুখী হচ্ছে। প্রশাসন চাকরি বাঁচানোর জন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এটা খুবই দুঃখজনক, শিক্ষকরাও ছাত্রলীগের সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিজেদের মর্যাদা রক্ষা করতে পারছেন না।’

ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘শুধু একটি ছাত্র সংগঠনের ওপর দায় চাপানো ঠিক হবে না। সন্ত্রাস-মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার ব্যাপারে ঢাবি শিক্ষার্থীদের একটি ঐক্য আছে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন ও শিক্ষার্থীদের সমস্যা নিয়ে কাজ করা- ছাত্রলীগের আদর্শিক অঙ্গীকার। আমরা আমাদের সাংগঠনিক দায়বদ্ধতা নিয়েই থাকার চেষ্টা করি।’

প্রশাসন যা বলছে : এ ব্যাপারে প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘আমরা দেখেছি, বহিরাগত কেউ যখন ক্যাম্পাসকে অশান্ত করতে চায়, শিক্ষার পরিবেশকে বিঘ্নিত করতে চায় তখনই এ ধরনের ঘটনা ঘটে। আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও আছে।’

উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। চাইলেও অনেক কিছু করতে পারি না। যে বিষয়গুলো আমাদের আওতাভুক্ত তার প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ব্যবস্থা নিই। সম্প্রতি যেটা ঘটেছে সেটিও আমলে নিয়েছি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

‘ভিন্নমত’ দেখলেই হামলা ছাত্রলীগের, দর্শক প্রশাসন

১০ মাসে ক্যাম্পাসে ৯ হামলা

মাজহারুল ইসলাম রবিন ও যোবায়ের আহমদ

ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রাম- সবকিছুতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গুরুত্বপূর্ণ অবদান। মুক্তচিন্তার চর্চাকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত সেই ঢাবিতে এখন ক্ষমতার রাজনীতি। সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ক্যাম্পাস। বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোর ছায়াও সহ্য করতে পারেন না দলটির নেতাকর্মীরা। বছরের শুরু থেকে মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত ঢাবি ক্যাম্পাসে অন্তত ৯টি হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে ছাত্রলীগ। সবকিছু দেখেও প্রতিবারই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছিল নির্বিকার।

ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও নেই স্বস্তিতে। ঢাবির আবাসিক হলে থাকতে হলে প্রথম শর্তই থাকে ছাত্রলীগের নিয়মিত রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া। পাশাপাশি বিরোধী ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাসে ঢোকার চেষ্টা করলে প্রতিহত করার কাজটাও করতে হয় তাঁদের। প্রতিহত কিংবা মারামারি করলেই সহজে নেতাদের নজরে আসা যায় বলে মনে করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

ছাত্রলীগের যত হামলা :গেল ১২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সামনে কাওয়ালি গানের আসর বসিয়েছিলেন একদল শিক্ষার্থী। শুরু থেকেই এই অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে ছিল ছাত্রলীগ। অনুষ্ঠানের দিন বিকেল থেকেই বাধা আসছিল। এক পর্যায়ে গান শুরু হলে রাত সাড়ে ৮টার দিকে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। হামলার বিষয়টি অস্বীকার করলেও এতে ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীকে অংশ নিতে দেখা যায়।

১৯ এপ্রিল কথা কাটাকাটির জেরে ছাত্রলীগ নেতার ‘নির্দেশে’ হামলার শিকার হয়ে সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র রাকিবুল হাসান প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানীর কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। ওই অভিযোগপত্রে জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অতনু বর্মণকে হামলার নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা তা জানা যায়নি।

২২ মে সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে দলটির কয়েক নেতাকর্মীর ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এর দুই দিন পর এই হামলার ঘটনার প্রতিবাদ ও জুয়েলের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে ঢাবি সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে যাওয়ার পথে তাদের ওপর ফের হামলা করে ছাত্রলীগ। এই হামলার প্রতিবাদে সেদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ছাত্রদল। মিছিলটি ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের সামনে পৌঁছালে দুই সংগঠনের নেতাকর্মীর মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করে পুলিশ। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা করে। সরকারি কাজে বাধা, কর্মচারীকে মারধর, বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ভাঙচুর ও ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলার অভিযোগে করা এই মামলায় ৪০০ জনকে অচেনা আসামি করা হয়।

২৮ মে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল থেকেই হাইকোর্ট এলাকার আশপাশে জড়ো হতে থাকেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। দুপুর ১২টার দিকে ছাত্রদলের মিছিলটি হাইকোর্ট মোড় হয়ে দোয়েল চত্বরের দিকে গেলে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এ সময় গুলির শব্দও শোনা যায়।

সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডে দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে তাদের বিচার এবং আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবিতে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর গত ৬ জুনের বিক্ষোভ কর্মসূচিতেও হামলার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। বাম সংগঠনগুলোর নেতাদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।

১৯ আগস্ট দুপুরে ক্যাম্পাসের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির সামনের ফুটপাতে ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাবি শাখার তিন নেতা মারধরের শিকার হন। মারধরের জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করেছে পরিষদ।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাবি উপাচার্যের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে ফুল ও মিষ্টি নিয়ে তাঁর কার্যালয়ে যাওয়ার পথে নীলক্ষেতের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করে ছাত্রলীগ। হামলায় ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি খোরশেদ আলম, সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলামসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন।

সবশেষ গত ৭ অক্টোবর রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যার তিন বছরপূর্তি উপলক্ষে স্মরণসভা আয়োজন করে ছাত্র অধিকার পরিষদ। সেখানে আয়োজকদের ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাসছাড়া করে ছাত্রলীগ। হামলায় পরিষদের অন্তত ১৫ নেতাকর্মী আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানে গিয়েও তাঁদের পেটায় ছাত্রলীগ। বিকেলে মেডিকেল থেকে পরিষদের অন্তত ২০ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের দুই নেতার করা দুটি মামলায় পরিষদের ২৫ নেতাকর্মী ও অচেনা আরও ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

ছাত্রনেতারা যা বলছেন : এ ব্যাপারে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ‘এখন সরকারের কর্তৃত্ববাদী আচরণের কারণে ছাত্রলীগও অন্য সংগঠনের দিকে মারমুখী হচ্ছে। প্রশাসন চাকরি বাঁচানোর জন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এটা খুবই দুঃখজনক, শিক্ষকরাও ছাত্রলীগের সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিজেদের মর্যাদা রক্ষা করতে পারছেন না।’

ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘শুধু একটি ছাত্র সংগঠনের ওপর দায় চাপানো ঠিক হবে না। সন্ত্রাস-মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার ব্যাপারে ঢাবি শিক্ষার্থীদের একটি ঐক্য আছে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন ও শিক্ষার্থীদের সমস্যা নিয়ে কাজ করা- ছাত্রলীগের আদর্শিক অঙ্গীকার। আমরা আমাদের সাংগঠনিক দায়বদ্ধতা নিয়েই থাকার চেষ্টা করি।’

প্রশাসন যা বলছে : এ ব্যাপারে প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘আমরা দেখেছি, বহিরাগত কেউ যখন ক্যাম্পাসকে অশান্ত করতে চায়, শিক্ষার পরিবেশকে বিঘ্নিত করতে চায় তখনই এ ধরনের ঘটনা ঘটে। আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও আছে।’

উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। চাইলেও অনেক কিছু করতে পারি না। যে বিষয়গুলো আমাদের আওতাভুক্ত তার প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ব্যবস্থা নিই। সম্প্রতি যেটা ঘটেছে সেটিও আমলে নিয়েছি।’