মানবসম্পদ উন্নয়নে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা কতটা সহায়ক
তহমিনা আফরোজা নাছরিন
![](https://shikkha-shikkhangan.com/wp-content/uploads/2022/11/Effective-education-system-–-A-must-for-nation-building.jpg)
একটি জাতি তখনই সমৃদ্ধ জাতি বলে পরিগণিত হয়, যখন তারা সুশিক্ষিত হতে পারে। আর সুশিক্ষিত জাতিই পারে বর্তমানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে। তাই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিক ও যুগোপযোগী হওয়ার দরকার। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীকে বিজ্ঞান শিক্ষায় আকৃষ্ট করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নত করা একটা ভালো পদক্ষেপ। মাদ্রাসা ও ইংরেজি শিক্ষামাধ্যমগুলোকে দেশীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ভাষার প্রতি জোর দিতে হবে। এটা করতে পারলে শিশুরা শৈশবকাল থেকে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করতে পারবে।
ফলে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি আরও সমৃদ্ধ হবে। দেশ, মাটি ও মানুষের প্রতি সম্যক জ্ঞান অর্জন করবে। তাদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত হবে। তারা হয়ে উঠবে মানবিক।
বর্তমান বিশ্ব প্রযুক্তির উন্নত শিখরে পৌঁছেছে। তাই গণিত ও বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে হবে। একমুখী শিক্ষাব্যবস্থায় কোনো বিভাগ থাকবে না দশম শ্রেণি পর্যন্ত। পরে বিজ্ঞান, মানবিক, বাণিজ্যিক বিভাগ তারা নিজেরা পছন্দ করবে। কিন্তু অনেক বিশেষজ্ঞের মতে এতে বিজ্ঞানের ওপর কম জোর দেওয়া হবে। বিজ্ঞানমনস্ক জাতি ছাড়া উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে আমরা পৌঁছাতে পারব না। এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজির প্রতি আরও একটু যত্নশীল হতে হবে। কারণ, আগামী দিনের জন্য বিজ্ঞান ও ইংরেজির জ্ঞান ছাড়া দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা কষ্টকর হবে।
কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা সম্ভব এবং বর্তমানে এ শিক্ষাই উন্নয়নের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। যেসব শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় যেতে পারবে না, তাদের কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করতে পারলে দেশে ও বিদেশে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে কাজ করানো যাবে। এতে তারা নিজেরাও আর্থিকভাবে লাভবান হবে এবং দেশের জন্য প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অবদান রাখতে পারবে। দক্ষিণ কোরিয়ায় যে প্রযুক্তির বিপ্লব সম্ভব হয়েছিল, তার ভিত্তি ছিল সরকারের সহায়তায় বিদেশে প্রশিক্ষিত বিজ্ঞানীদের শিক্ষাব্যবসার সঙ্গে যুক্ত করে গবেষণা ও শিক্ষার সমন্বয়সাধন। গবেষণা ছাড়া কোনো জাতি উন্নতির সর্বশিখরে আরোহণ করতে পারে না। গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে।
মেধাবী লোকজন এখন আর শিক্ষকতায় যেতে চায় না। তাই শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। কারণ, তিনি বন্ধু, পথপ্রদর্শক, সন্ধানী, সৃজন সহযোগী, আলোচনায় বিতর্কের সঙ্গী হয়ে নতুন উদ্ভাবন করেন, নতুন মনের সৃষ্টি করেন, নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি করেন। তাই সুশিক্ষিত জাতি পেতে হলে সুশিক্ষিত ও সুপ্রশিক্ষিত শিক্ষক দরকার। আজ উন্নত বিশ্ব এই তত্ত্বকে কাজে লাগিয়ে তারা উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করছে। মনে রাখতে হবে, শিক্ষায় বিনিয়োগ হলো সর্বশ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ। যার ফল পাওয়া যাবে আজীবন।
এখন আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষাক্ষেত্রে অপরিহার্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। প্রথম থেকেই শিক্ষার্থীকে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত করতে হবে এবং হাতে-কলমে শিক্ষা দিতে হবে। জ্ঞানের যে বৈশ্বিক পরিবর্তন, তাতে অংশীদারি হতে হলে শিক্ষায় যে নেটওয়ার্কিং প্রয়োজন, তা আমাদের দেশে বর্তমানে অনেকটা বিরাজ করছে। এখন প্রয়োজন আরও অবকাঠামোগত পরিবেশ সৃষ্টি করা। প্রতিটি বিদ্যালয় যেন হয়ে ওঠে একটি খুদে গবেষণাগার। তাহলে হয়তো ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে আমরা বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের কাতারে নিজেদেরও নাম লেখাতে পারব।
মানবসম্পদ উন্নয়নে শুধু সিলেবাস পরিবর্তন করলেই চলবে না, এর জন্য সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ নিতে হবে। তা ছাড়া শুধু শিক্ষিত জনশক্তি তৈরি করলেই চলবে না, তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ দিতে হবে। আমাদের দেশ থেকে অনেক শ্রমিক বিদেশে গিয়ে কাজ করে। তাদেরও নানাভাবে প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। তবে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থাকে পাল্টিয়ে আধুনিকায়ন করতে হলে সবকিছুতেই পরিবর্তন অপরিহার্য।
সরকারি উদ্যোগ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জনসংখ্যাকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নতি সম্ভব।
তহমিনা আফরোজা নাছরিন প্রধান শিক্ষক, ২৪ নং উত্তর লাহিনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুষ্টিয়া সদর, কুষ্টিয়া।
![](https://shikkha-shikkhangan.com/wp-content/uploads/2023/01/logo-removebg-preview-1.png)
মানবসম্পদ উন্নয়নে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা কতটা সহায়ক
তহমিনা আফরোজা নাছরিন
![](https://shikkha-shikkhangan.com/wp-content/uploads/2022/11/Effective-education-system-–-A-must-for-nation-building.jpg)
একটি জাতি তখনই সমৃদ্ধ জাতি বলে পরিগণিত হয়, যখন তারা সুশিক্ষিত হতে পারে। আর সুশিক্ষিত জাতিই পারে বর্তমানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে। তাই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিক ও যুগোপযোগী হওয়ার দরকার। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীকে বিজ্ঞান শিক্ষায় আকৃষ্ট করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নত করা একটা ভালো পদক্ষেপ। মাদ্রাসা ও ইংরেজি শিক্ষামাধ্যমগুলোকে দেশীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ভাষার প্রতি জোর দিতে হবে। এটা করতে পারলে শিশুরা শৈশবকাল থেকে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করতে পারবে।
ফলে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি আরও সমৃদ্ধ হবে। দেশ, মাটি ও মানুষের প্রতি সম্যক জ্ঞান অর্জন করবে। তাদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত হবে। তারা হয়ে উঠবে মানবিক।
বর্তমান বিশ্ব প্রযুক্তির উন্নত শিখরে পৌঁছেছে। তাই গণিত ও বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে হবে। একমুখী শিক্ষাব্যবস্থায় কোনো বিভাগ থাকবে না দশম শ্রেণি পর্যন্ত। পরে বিজ্ঞান, মানবিক, বাণিজ্যিক বিভাগ তারা নিজেরা পছন্দ করবে। কিন্তু অনেক বিশেষজ্ঞের মতে এতে বিজ্ঞানের ওপর কম জোর দেওয়া হবে। বিজ্ঞানমনস্ক জাতি ছাড়া উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে আমরা পৌঁছাতে পারব না। এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজির প্রতি আরও একটু যত্নশীল হতে হবে। কারণ, আগামী দিনের জন্য বিজ্ঞান ও ইংরেজির জ্ঞান ছাড়া দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা কষ্টকর হবে।
কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা সম্ভব এবং বর্তমানে এ শিক্ষাই উন্নয়নের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। যেসব শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় যেতে পারবে না, তাদের কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করতে পারলে দেশে ও বিদেশে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে কাজ করানো যাবে। এতে তারা নিজেরাও আর্থিকভাবে লাভবান হবে এবং দেশের জন্য প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অবদান রাখতে পারবে। দক্ষিণ কোরিয়ায় যে প্রযুক্তির বিপ্লব সম্ভব হয়েছিল, তার ভিত্তি ছিল সরকারের সহায়তায় বিদেশে প্রশিক্ষিত বিজ্ঞানীদের শিক্ষাব্যবসার সঙ্গে যুক্ত করে গবেষণা ও শিক্ষার সমন্বয়সাধন। গবেষণা ছাড়া কোনো জাতি উন্নতির সর্বশিখরে আরোহণ করতে পারে না। গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে।
মেধাবী লোকজন এখন আর শিক্ষকতায় যেতে চায় না। তাই শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। কারণ, তিনি বন্ধু, পথপ্রদর্শক, সন্ধানী, সৃজন সহযোগী, আলোচনায় বিতর্কের সঙ্গী হয়ে নতুন উদ্ভাবন করেন, নতুন মনের সৃষ্টি করেন, নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি করেন। তাই সুশিক্ষিত জাতি পেতে হলে সুশিক্ষিত ও সুপ্রশিক্ষিত শিক্ষক দরকার। আজ উন্নত বিশ্ব এই তত্ত্বকে কাজে লাগিয়ে তারা উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করছে। মনে রাখতে হবে, শিক্ষায় বিনিয়োগ হলো সর্বশ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ। যার ফল পাওয়া যাবে আজীবন।
এখন আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষাক্ষেত্রে অপরিহার্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। প্রথম থেকেই শিক্ষার্থীকে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত করতে হবে এবং হাতে-কলমে শিক্ষা দিতে হবে। জ্ঞানের যে বৈশ্বিক পরিবর্তন, তাতে অংশীদারি হতে হলে শিক্ষায় যে নেটওয়ার্কিং প্রয়োজন, তা আমাদের দেশে বর্তমানে অনেকটা বিরাজ করছে। এখন প্রয়োজন আরও অবকাঠামোগত পরিবেশ সৃষ্টি করা। প্রতিটি বিদ্যালয় যেন হয়ে ওঠে একটি খুদে গবেষণাগার। তাহলে হয়তো ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে আমরা বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের কাতারে নিজেদেরও নাম লেখাতে পারব।
মানবসম্পদ উন্নয়নে শুধু সিলেবাস পরিবর্তন করলেই চলবে না, এর জন্য সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ নিতে হবে। তা ছাড়া শুধু শিক্ষিত জনশক্তি তৈরি করলেই চলবে না, তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ দিতে হবে। আমাদের দেশ থেকে অনেক শ্রমিক বিদেশে গিয়ে কাজ করে। তাদেরও নানাভাবে প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। তবে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থাকে পাল্টিয়ে আধুনিকায়ন করতে হলে সবকিছুতেই পরিবর্তন অপরিহার্য।
সরকারি উদ্যোগ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জনসংখ্যাকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নতি সম্ভব।
তহমিনা আফরোজা নাছরিন প্রধান শিক্ষক, ২৪ নং উত্তর লাহিনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুষ্টিয়া সদর, কুষ্টিয়া।