রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মহান শিক্ষক দিবস পালন
শিক্ষা-শিক্ষাঙ্গন ডেস্ক
শ্রদ্ধা নিবেদন করা হচ্ছে।
আজ ১৮ ফেব্রুয়ারি শনিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান শিক্ষক দিবস পালন করা হয়েছে। ঊনসত্তরের এই দিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড. সৈয়দ মহম্মদ শামসুজ্জোহা প্রক্টরের দায়িত্ব পালনকালে পাকিস্তানী সেনাদের গুলিতে নিহত হন। তিনিই এদেশের প্রথম শহিদ বুদ্ধিজীবী।
দিবসের কর্মসূচিতে আজ ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবন, উপাচার্যভবনসহ অন্যান্য ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল ৯টায় উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিকসহ প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্মকর্তাগণ শহীদ ড. জোহার সমাধি ও জোহা স্মৃতিফলকে পুস্পার্ঘ্য অর্পণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন ও মোনাজাত করেন। এরপর জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক ও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. শাহ্ আজম পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। ক্রমে রসায়ন বিভাগ ও শহীদ শামসুজ্জোহা হলসহ অন্যান্য আবাসিক হল, বিভাগ, রাবি স্কুল ও শেখ রাসেল মডেল স্কুল, শিক্ষক সমিতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ, অফিসার সমিতি এবং অন্যান্য পেশাজীবী সমিতি ও ইউনিয়ন শহীদ জোহার সমাধি ও স্মৃতিফলকে পুস্পার্ঘ্য অর্পণ করে।
অতিথিবৃন্দ।
সকাল ১০টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হয় জোহা স্মারক বক্তৃতা। এতে ‘বাংলাদেশে বিজ্ঞান শিক্ষা’ শীর্ষক বক্তৃতা দেন রাবি রসায়ন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম লুৎফর রহমান। এই আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক, বিশেষ অতিথি ছিলেন রাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুল ইসলাম, প্রধান পৃষ্ঠপোষক উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। রসায়ন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হাসান আহমদ এতে সভাপতিত্ব করেন। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক, বিশিষ্ট শিক্ষক, কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
স্মারক বক্তৃতায় অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, বাংলাদেশের সমাজে বিজ্ঞান তেমন কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর মেঘনাদ সাহা, সত্যেন বোস প্রমুখ বিজ্ঞানী অসমান্য অবদান রেখেছেন। বোস নাম থেকে নেয়া বোজন একটি বহুল প্রচলিত বৈজ্ঞানিক শব্দ। আচার্য জগদ্বীশচন্দ্র বসু ও আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় অত্যন্ত উঁচু স্তরের বিজ্ঞানী ছিলেন। এই চার জনের মধ্যে তিন জনেরই জন্ম এপার বাংলায়। কিন্তু সামগ্রিক সমাজ বিবেচনা করলে কয়েক দশক আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে দু একটি রেডিও ব্যতীত বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি খুব কমই ব্যবহৃত হয়েছে। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেকটাই অগ্রসর হয়েছে। যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে; শহরের সঙ্গে গ্রামের যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে; গ্রামবাসীদের অনেকেই এখন বিদ্যুতের সুবিধা পাচ্ছেন। চাষ-আবাদে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বেড়েছে। একটি ছোট যন্ত্র যা ঘরে ঘরে পৌঁছেছে সেটি হচ্ছে মোবাইল ফোন। শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রামের কিছু লোক চাকরির সুযোগ পাচ্ছে, ফলে দারিদ্র হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমান প্রজন্ম চতুর্দিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান প্রয়োগ দেখতে পাচ্ছে।
স্মারক বক্তৃতা দিচ্ছেন অধ্যাপক লুৎফর রহমান।
অনুষ্ঠানে উপাচার্য বলেন, বঙ্গবন্ধুর শিক্ষানীতিতে শিক্ষকদের বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছিল। সেই শিক্ষকদের একজন ড. জোহাকে পেয়েছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। যিনি কেবল শিক্ষকই ছিলেন না, ছিলেন প্রেরণা। যাঁর আত্মহুতির মাধ্যমে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন তরান্বিত হয়েছিল, পাক হানাদারের বিরুদ্ধে বাঙালি গড়ে তুলেছিল দুর্বার আন্দোলন। ছাত্রদের জন্য জীবন দেয়া এই শহিদ বুদ্ধিজীবী বাঙালির জাতীয় জীবনে এক অবিস্মরণীয় নাম হয়ে আছে।
উপাচার্য আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে ড. জোহা আমাদের চির অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষিত শিক্ষক দিবসকে জাতীয়ভাবে পালনের স্বীকৃতির জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানান।
দিবসের কর্মসূচিতে আরও আছে বাদ জোহর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন খানি ও বিশেষ মোনাজাত, বিকেল ৪টায় শহিদ শামসুজ্জোহা হলে বিশেষ আলোচনা, সন্ধ্যা ৬.১৫ মিনিটে শহীদ জোহা চত্বরে প্রদীপ প্রজ্বালন ও সন্ধ্যা ৭.১৫ মিনিটে শহিদ শামসুজ্জোহা হলে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। এদিন শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪.৩০ মিনিট পর্যন্ত দর্শকদের জন্য খোলা রয়েছে।
এমবিএইচ/এসএস
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মহান শিক্ষক দিবস পালন
শিক্ষা-শিক্ষাঙ্গন ডেস্ক
শ্রদ্ধা নিবেদন করা হচ্ছে।
আজ ১৮ ফেব্রুয়ারি শনিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান শিক্ষক দিবস পালন করা হয়েছে। ঊনসত্তরের এই দিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড. সৈয়দ মহম্মদ শামসুজ্জোহা প্রক্টরের দায়িত্ব পালনকালে পাকিস্তানী সেনাদের গুলিতে নিহত হন। তিনিই এদেশের প্রথম শহিদ বুদ্ধিজীবী।
দিবসের কর্মসূচিতে আজ ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবন, উপাচার্যভবনসহ অন্যান্য ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল ৯টায় উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিকসহ প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্মকর্তাগণ শহীদ ড. জোহার সমাধি ও জোহা স্মৃতিফলকে পুস্পার্ঘ্য অর্পণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন ও মোনাজাত করেন। এরপর জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক ও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. শাহ্ আজম পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। ক্রমে রসায়ন বিভাগ ও শহীদ শামসুজ্জোহা হলসহ অন্যান্য আবাসিক হল, বিভাগ, রাবি স্কুল ও শেখ রাসেল মডেল স্কুল, শিক্ষক সমিতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ, অফিসার সমিতি এবং অন্যান্য পেশাজীবী সমিতি ও ইউনিয়ন শহীদ জোহার সমাধি ও স্মৃতিফলকে পুস্পার্ঘ্য অর্পণ করে।
অতিথিবৃন্দ।
সকাল ১০টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হয় জোহা স্মারক বক্তৃতা। এতে ‘বাংলাদেশে বিজ্ঞান শিক্ষা’ শীর্ষক বক্তৃতা দেন রাবি রসায়ন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম লুৎফর রহমান। এই আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক, বিশেষ অতিথি ছিলেন রাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুল ইসলাম, প্রধান পৃষ্ঠপোষক উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। রসায়ন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হাসান আহমদ এতে সভাপতিত্ব করেন। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক, বিশিষ্ট শিক্ষক, কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
স্মারক বক্তৃতায় অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, বাংলাদেশের সমাজে বিজ্ঞান তেমন কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর মেঘনাদ সাহা, সত্যেন বোস প্রমুখ বিজ্ঞানী অসমান্য অবদান রেখেছেন। বোস নাম থেকে নেয়া বোজন একটি বহুল প্রচলিত বৈজ্ঞানিক শব্দ। আচার্য জগদ্বীশচন্দ্র বসু ও আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় অত্যন্ত উঁচু স্তরের বিজ্ঞানী ছিলেন। এই চার জনের মধ্যে তিন জনেরই জন্ম এপার বাংলায়। কিন্তু সামগ্রিক সমাজ বিবেচনা করলে কয়েক দশক আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে দু একটি রেডিও ব্যতীত বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি খুব কমই ব্যবহৃত হয়েছে। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেকটাই অগ্রসর হয়েছে। যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে; শহরের সঙ্গে গ্রামের যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে; গ্রামবাসীদের অনেকেই এখন বিদ্যুতের সুবিধা পাচ্ছেন। চাষ-আবাদে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বেড়েছে। একটি ছোট যন্ত্র যা ঘরে ঘরে পৌঁছেছে সেটি হচ্ছে মোবাইল ফোন। শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রামের কিছু লোক চাকরির সুযোগ পাচ্ছে, ফলে দারিদ্র হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমান প্রজন্ম চতুর্দিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান প্রয়োগ দেখতে পাচ্ছে।
স্মারক বক্তৃতা দিচ্ছেন অধ্যাপক লুৎফর রহমান।
অনুষ্ঠানে উপাচার্য বলেন, বঙ্গবন্ধুর শিক্ষানীতিতে শিক্ষকদের বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছিল। সেই শিক্ষকদের একজন ড. জোহাকে পেয়েছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। যিনি কেবল শিক্ষকই ছিলেন না, ছিলেন প্রেরণা। যাঁর আত্মহুতির মাধ্যমে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন তরান্বিত হয়েছিল, পাক হানাদারের বিরুদ্ধে বাঙালি গড়ে তুলেছিল দুর্বার আন্দোলন। ছাত্রদের জন্য জীবন দেয়া এই শহিদ বুদ্ধিজীবী বাঙালির জাতীয় জীবনে এক অবিস্মরণীয় নাম হয়ে আছে।
উপাচার্য আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে ড. জোহা আমাদের চির অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষিত শিক্ষক দিবসকে জাতীয়ভাবে পালনের স্বীকৃতির জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানান।
দিবসের কর্মসূচিতে আরও আছে বাদ জোহর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন খানি ও বিশেষ মোনাজাত, বিকেল ৪টায় শহিদ শামসুজ্জোহা হলে বিশেষ আলোচনা, সন্ধ্যা ৬.১৫ মিনিটে শহীদ জোহা চত্বরে প্রদীপ প্রজ্বালন ও সন্ধ্যা ৭.১৫ মিনিটে শহিদ শামসুজ্জোহা হলে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। এদিন শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪.৩০ মিনিট পর্যন্ত দর্শকদের জন্য খোলা রয়েছে।
এমবিএইচ/এসএস