রাবি ছাত্রের পড়ে যাওয়ার কারণ এখনো অজানা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ হবিবুর রহমান হলের ফটকের সামনে থেকে শুরু করে তৃতীয় ব্লক পর্যন্ত পুরো রাস্তায় এখনো ফোটা ফোটা রক্তের দাগ। নলকূপের পাশে বেশকিছু জায়গাজুড়ে পড়ে আছে জমাটবদ্ধ রক্ত। যা ঢেকে দেওয়া হয়েছে। তার একটু দূরেই পড়ে আছে তিন তলার বারান্দা থেকে পড়ে মারা যাওয়া হলটির আবাসিক শিক্ষার্থী শাহরিয়ারের ডান পায়ের স্যান্ডেল, আর বাঁ পায়েরটা পড়ে আছে দ্বিতীয় তলার মসজিদের দরজার সামনে। গত বুধবার রাত ৮টার দিকে বারান্দা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন শাহরিয়ার। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে মৃত্যু হয় তার। তার মৃত্যুতে চিকিৎসকের অবহেলার অভিযোগে বিক্ষুব্ধ সহপাঠীরা হাসপাতালে ভাঙচুর করেন। যার জেরে রামেক হাসপাতালের চিকিৎসাসেবায় অচলাবস্থা দেখা দেয়। কিন্তু শাহরিয়ার কীভাবে বারান্দা থেকে পড়ে গেলেন তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য মিলছে না। এটি কি শুধুই দুর্ঘটনা, নাকি কেউ তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিল, তা নিশ্চিত করে কেউই বলতে পারছেন না।

ওই ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট অধিকাংশেরই ধারণা, তৃতীয় তলার বারান্দা পার হয়ে দ্বিতীয় তলার মসজিদের ছাদে যেতে গিয়েই পড়ে যান শাহরিয়ার। তিনি পড়ে যাওয়ার পর ছুটে যান নিচতলার ১৩৯ নম্বর কক্ষের শিক্ষার্থী আমিরুল ইসলাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, “আমি খেতে যাওয়ার জন্য বাইরে এসে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখন এক চাচা মসজিদে নামাজের জন্য যাচ্ছিলেন। ঠিক তখন জোরে একটি আওয়াজ হলো। ওই চাচা তখন চিৎকার দিয়ে বলেন, ‘একটা ছেলে পড়ে মারা যাচ্ছে, সবাই তাড়াতাড়ি আসেন।’ সঙ্গে সঙ্গে এসে দেখি, শাহরিয়ারের নাক-মুখ দিয়ে প্রচুর রক্ত পড়ছে। পরে আমি, চাচা ও আরেকজন ধরে বাইরে নিয়ে গেলাম। অটোতে করে সিলসিলা রেস্তোরাঁর কাছে যেতেই অ্যাম্বুলেন্স আসে। সেখান থেকে তাকে মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়।”

শাহরিয়ারের পড়ে যাওয়ার বিষয়ে আমিরুল বলেন, ‘ওর স্যান্ডেলের একটা পার্ট নিচে তার পাশে পড়েছিল। আরেকটি দোতলার মসজিদের সামনে। তাই মনে করছি, সে দ্বিতীয় তলার ছাদে যেতে চাচ্ছিল। তখন হাত ফসকে হয়তো পড়ে গেছে। তা ছাড়া অন্য কোনো কারণ তো এখানে দেখছি না। আর অ্যাম্বুলেন্সে যাওয়ার সময় শাহরিয়ারের ট্রাউজারের পকেটে মোবাইল পেয়েছি। ওই পকেটে চেন লাগানো ছিল। শাহরিয়ার যদি ঘটনার সময় মোবাইল ব্যবহার করা অবস্থায় থাকত, তাহলে তার মোবাইল পকেটে থাকত না। সুতরাং মোবাইল ব্যবহার করতে গিয়ে সে কিন্তু পড়ে যায়নি। তাই ধারণা করছি, ছাদ পার হতে গিয়েই সে পড়ে গেছে।’

ওই হলের আরেক শিক্ষার্থী মিলন হোসাইন বলেন, ‘ভাইয়ের (শাহরিয়ার) রুম পূর্ব ব্লকে। কিন্তু ভাই সবসময় পশ্চিম ব্লক হয়ে উঠতেন। প্রতিদিনই দেখা হতো। সঠিক বলা যাচ্ছে না আসলে কী হয়েছে। তবে ভাইয়ের ‘হাইট’ (উচ্চতা) খুব বেশি ছিল না। তাই মনে হয়ে পার হতে গিয়েই পড়ে গেছে।’

হলটির আরেক আবাসিক শিক্ষার্থী সুজন আলী বলেন, ‘আমার কাছেও মনে হয় যে, দ্বিতীয় তলার মসজিদের ছাদে যেতে গিয়েই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। কারণ অনেক শিক্ষার্থীই এভাবে পার হয়ে ওই ছাদে যায়। তবে আমি কখনো শাহরিয়ারকে পার হতে দেখিনি। অন্যদের দেখাদেখি সে হয়তো পার হতে গিয়েই এমনটি হয়েছে বলে আমার ধারণা। কারণ ওখানের দেয়ালে হাতের একটা দাগও আছে।’

নিহত শাহরিয়ার ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র। ওই বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক শুভ্রা রানী দাস বলেন, ‘ছাত্রদের কাছ থেকে যতটা শুনেছি ফোনে কথা বলতে যাওয়ার জন্য দ্বিতীয় তলার ছাদে যেতে গিয়ে এই দুর্ঘটনা হয়েছে। তারপরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করে, তাহলে ভালো হবে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। তবে আমাদের শিক্ষার্থী কীভাবে পড়েছে এটা দেখা দরকার। তাই আমরা একটা তদন্ত কমিটি গঠন করব।’

রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার রফিকুল আলম বলেন, ‘রাবি ছাত্র শাহরিয়ারের মৃত্যুর ঘটনায় মতিহার থানায় একটি ইউডি মামলা হয়েছে। তা ছাড়া পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করেছে। ওই হলের ছাত্রদের সঙ্গেও কথা বলেছে। তাতে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, অসাবধানতাবশত এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এরপরও ঘটনার পর হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি করেছে। দেখা যাক সেটিতে কী উঠে আসে। এরপর আমরা আরও বিস্তারিত জানতে পারব।’

রাবি ছাত্রের পড়ে যাওয়ার কারণ এখনো অজানা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ হবিবুর রহমান হলের ফটকের সামনে থেকে শুরু করে তৃতীয় ব্লক পর্যন্ত পুরো রাস্তায় এখনো ফোটা ফোটা রক্তের দাগ। নলকূপের পাশে বেশকিছু জায়গাজুড়ে পড়ে আছে জমাটবদ্ধ রক্ত। যা ঢেকে দেওয়া হয়েছে। তার একটু দূরেই পড়ে আছে তিন তলার বারান্দা থেকে পড়ে মারা যাওয়া হলটির আবাসিক শিক্ষার্থী শাহরিয়ারের ডান পায়ের স্যান্ডেল, আর বাঁ পায়েরটা পড়ে আছে দ্বিতীয় তলার মসজিদের দরজার সামনে। গত বুধবার রাত ৮টার দিকে বারান্দা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন শাহরিয়ার। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে মৃত্যু হয় তার। তার মৃত্যুতে চিকিৎসকের অবহেলার অভিযোগে বিক্ষুব্ধ সহপাঠীরা হাসপাতালে ভাঙচুর করেন। যার জেরে রামেক হাসপাতালের চিকিৎসাসেবায় অচলাবস্থা দেখা দেয়। কিন্তু শাহরিয়ার কীভাবে বারান্দা থেকে পড়ে গেলেন তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য মিলছে না। এটি কি শুধুই দুর্ঘটনা, নাকি কেউ তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিল, তা নিশ্চিত করে কেউই বলতে পারছেন না।

ওই ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট অধিকাংশেরই ধারণা, তৃতীয় তলার বারান্দা পার হয়ে দ্বিতীয় তলার মসজিদের ছাদে যেতে গিয়েই পড়ে যান শাহরিয়ার। তিনি পড়ে যাওয়ার পর ছুটে যান নিচতলার ১৩৯ নম্বর কক্ষের শিক্ষার্থী আমিরুল ইসলাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, “আমি খেতে যাওয়ার জন্য বাইরে এসে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখন এক চাচা মসজিদে নামাজের জন্য যাচ্ছিলেন। ঠিক তখন জোরে একটি আওয়াজ হলো। ওই চাচা তখন চিৎকার দিয়ে বলেন, ‘একটা ছেলে পড়ে মারা যাচ্ছে, সবাই তাড়াতাড়ি আসেন।’ সঙ্গে সঙ্গে এসে দেখি, শাহরিয়ারের নাক-মুখ দিয়ে প্রচুর রক্ত পড়ছে। পরে আমি, চাচা ও আরেকজন ধরে বাইরে নিয়ে গেলাম। অটোতে করে সিলসিলা রেস্তোরাঁর কাছে যেতেই অ্যাম্বুলেন্স আসে। সেখান থেকে তাকে মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়।”

শাহরিয়ারের পড়ে যাওয়ার বিষয়ে আমিরুল বলেন, ‘ওর স্যান্ডেলের একটা পার্ট নিচে তার পাশে পড়েছিল। আরেকটি দোতলার মসজিদের সামনে। তাই মনে করছি, সে দ্বিতীয় তলার ছাদে যেতে চাচ্ছিল। তখন হাত ফসকে হয়তো পড়ে গেছে। তা ছাড়া অন্য কোনো কারণ তো এখানে দেখছি না। আর অ্যাম্বুলেন্সে যাওয়ার সময় শাহরিয়ারের ট্রাউজারের পকেটে মোবাইল পেয়েছি। ওই পকেটে চেন লাগানো ছিল। শাহরিয়ার যদি ঘটনার সময় মোবাইল ব্যবহার করা অবস্থায় থাকত, তাহলে তার মোবাইল পকেটে থাকত না। সুতরাং মোবাইল ব্যবহার করতে গিয়ে সে কিন্তু পড়ে যায়নি। তাই ধারণা করছি, ছাদ পার হতে গিয়েই সে পড়ে গেছে।’

ওই হলের আরেক শিক্ষার্থী মিলন হোসাইন বলেন, ‘ভাইয়ের (শাহরিয়ার) রুম পূর্ব ব্লকে। কিন্তু ভাই সবসময় পশ্চিম ব্লক হয়ে উঠতেন। প্রতিদিনই দেখা হতো। সঠিক বলা যাচ্ছে না আসলে কী হয়েছে। তবে ভাইয়ের ‘হাইট’ (উচ্চতা) খুব বেশি ছিল না। তাই মনে হয়ে পার হতে গিয়েই পড়ে গেছে।’

হলটির আরেক আবাসিক শিক্ষার্থী সুজন আলী বলেন, ‘আমার কাছেও মনে হয় যে, দ্বিতীয় তলার মসজিদের ছাদে যেতে গিয়েই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। কারণ অনেক শিক্ষার্থীই এভাবে পার হয়ে ওই ছাদে যায়। তবে আমি কখনো শাহরিয়ারকে পার হতে দেখিনি। অন্যদের দেখাদেখি সে হয়তো পার হতে গিয়েই এমনটি হয়েছে বলে আমার ধারণা। কারণ ওখানের দেয়ালে হাতের একটা দাগও আছে।’

নিহত শাহরিয়ার ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র। ওই বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক শুভ্রা রানী দাস বলেন, ‘ছাত্রদের কাছ থেকে যতটা শুনেছি ফোনে কথা বলতে যাওয়ার জন্য দ্বিতীয় তলার ছাদে যেতে গিয়ে এই দুর্ঘটনা হয়েছে। তারপরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করে, তাহলে ভালো হবে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। তবে আমাদের শিক্ষার্থী কীভাবে পড়েছে এটা দেখা দরকার। তাই আমরা একটা তদন্ত কমিটি গঠন করব।’

রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার রফিকুল আলম বলেন, ‘রাবি ছাত্র শাহরিয়ারের মৃত্যুর ঘটনায় মতিহার থানায় একটি ইউডি মামলা হয়েছে। তা ছাড়া পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করেছে। ওই হলের ছাত্রদের সঙ্গেও কথা বলেছে। তাতে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, অসাবধানতাবশত এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এরপরও ঘটনার পর হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি করেছে। দেখা যাক সেটিতে কী উঠে আসে। এরপর আমরা আরও বিস্তারিত জানতে পারব।’