শিক্ষকরা কি কিছু শেখাতে পারেন!

সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক

সক্রেটিস বলেছিলেন শিক্ষক আসলে তাঁর শিক্ষার্থীকে কিছু শেখাতে পারেন না। কারণ শিক্ষার্থী সব আগে থেকেই জানে। সে শুধু জানে না যে সে জানে। শিক্ষকের কাজ হচ্ছে সে যে আসলে জানে, সেটা তাকে  জানিয়ে দেওয়া।

জানা যে বিষয় শিক্ষার্থীর নিজের কাছেই অজানা বলে ভ্রম হয়, সেই ভ্রম ভাঙানোই শিক্ষকের মূল কাজ। তাঁকে শুধু এমন একটা পরিবেশ বা প্রক্রিয়া তৈরি করে দিতে হয়, যাতে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই তাদের ভেতরে থাকা বিষয়গুলো বের করে আনতে পারে। এর চেয়ে বেশি কিছু করতে গেলে শিক্ষকের শ্রম তো পণ্ড হয়ই, শিক্ষার্থীর শেখার পথও দীর্ঘ ও দুর্গম হয়ে ওঠে।

সক্রেটিস এথেনীয়দেরকে এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেন। এথেন্সের হাটবাজারে লোকজনের পথ আটকে খুব সাধারণ প্রশ্ন করতেন, ‘করুণা কী’, ‘সাহস কী’ ইত্যাদি। উত্তরদাতারা উত্তর দিলে তিনি পাল্টা উত্তর দিতেন। যেমন—‘ন্যায়ধর্ম কী?’ এই প্রশ্নের উত্তরে সেফালোস নামের একজন ব্যবসায়ী যখন বললেন ন্যায়ধর্ম হচ্ছে সত্যি কথা বলা এবং ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া, তখন সক্রেটিস এর বিপরীত উদাহরণ দিলেন। বললেন, ধরো, তুমি একজন বন্ধুর কাছ থেকে একটা অস্ত্র ধার নিলে, তারপর ফেরত দেওয়ার সময় দেখলে যে সে অপ্রকৃতিস্থ হয়ে গেছে, তাহলে সেই অবস্থায় তাকে অস্ত্র ফেরত দেওয়াটা কি ঠিক হবে? সেফালোস হার মানলেন। কিন্তু যুক্তি-পাল্টাযুক্তি কিংবা উদাহরণ-পাল্টা উদাহরণ চলতে থাকল। এভাবে একসময় পুরনো ধারণা বদলে গিয়ে নতুন সংজ্ঞা তৈরি হলো। অর্থাৎ সক্রেটিস সেফালোসের ওপর তাঁর নিজের ধারণা চাপিয়ে দিলেন না। কিন্তু তাকে এমন একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিয়ে গেলেন, যাতে সে নিজের চেষ্টায়ই একটা যুক্তিসংগত সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে।

তবে শিক্ষার সর্বক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য কি না, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। অনেকে বলেন মানুষের বহু আগে অর্জিত বিষয়গুলো এখন আমাদের মস্তিষ্ক বা জৈব রসায়নের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত হয়ে গেছে বলে ওগুলো আমরা সহজে, নিজের চেষ্টায়ই শিখতে পারি। কিন্তু যেগুলো অপেক্ষাকৃত নতুন, সেগুলো নিজে নিজে শেখা কঠিন। ভাষার কথাই ধরা যাক। মানুষ তার ‘বলা’ ও ‘শোনা’র ক্ষমতা পেয়ে গেছে প্রায় ৭০ থেকে ৩০ হাজার বছর আগের কগনিটিভ বিপ্লবের সময়। ফলে এত দিনে এটা তার সহজাত ক্ষমতায় পরিণত হয়েছে। সে এটা এমনিতেই পারে, সরাসরি কোনো শিক্ষকের কাছে শিখতে হয় না। কিন্তু ‘পড়া’ ও ‘লেখা’র বিষয়টা যেহেতু মাত্র পাঁচ-ছয় হাজার বছরের পুরনো, সেগুলো নিজে নিজে শেখা কঠিন।

যা হোক, প্লেটো, অ্যারিস্টটল, রুশো, জন ডিউই এবং আরো অনেকে সক্রেটিসের ধারায়ই চিন্তা করেছেন। এ জন্যই হয়তো এখন মনে করা হয়, শিক্ষার্থীকে সরাসরি কিছু শেখানোর চেয়ে তাকে শেখার প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া বেশি কার্যকর। এটা যে কত কার্যকর তার একটা বড় প্রমাণ হচ্ছেন হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী সুসান ডেভিড।

সুসান টেড বক্তা এবং লেখক হিসেবেও বিখ্যাত। ২০১৮ সালে ‘দ্য গিফট অ্যান্ড পাওয়ার অব ইমোশনাল কারেজ’ শিরোনামে তাঁর টেড টকের বক্তৃতার ছয় মিলিয়ন ভিউ হয়েছিল। এবং তাঁর বই ‘ইমোশনাল এজিলিটি’ দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বেস্ট সেলার তালিকার শীর্ষে ছিল। উপরন্তু হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ এই বইয়ের বিষয়বস্তুকে বছরের সর্বোত্কৃষ্ট ম্যানেজমেন্ট আইডিয়া হিসেবে আখ্যায়িত করে। এখানে উল্লেখ্য, যে আইডিয়ার কারণে সুসান পৃথিবীবিখ্যাত হলেন তার বীজটা তাঁর ভেতর তাঁর শিক্ষকই পরোক্ষভাবে রোপণ করে দিয়েছিলেন।

সুসান বড় হয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকায়, বর্ণবাদী যুগে। তাঁর বয়স যখন ১৬ বছর, তখন হঠাৎ তাঁর ৪২ বছর বয়সী প্রিয় বাবার মারাত্মক ক্যান্সার ধরা পড়ে। এর কয়েক মাস পর তিনি মারা যান। আচমকা যেন এক অকূল পাথারে পড়ে যান ছোট্ট সুসান।

কিন্তু জীবন তো আর থেমে থাকে না। সুসানকে স্কুলে যেতে হয়। সবাই চেষ্টা করে সুসান যেন তাঁর পিতৃবিয়োগকে ভুলে থাকতে পারেন। তাঁকে নানা বিষয়ে ব্যস্ত রাখে। কেউ ভুলেও তাঁর সামনে ‘বাবা’ শব্দটা পর্যন্ত উচ্চারণ করে না। যে করেই হোক জীবনের সব কিছু পজিটিভভাবে নিতে হবে বলে যে কথাটা চালু আছে, সবাই সেটা মানার চেষ্টা করে। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন ওই স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক।

সেই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের দিয়ে প্রতিদিন ডায়েরি লেখাতেন। সুসান যখন তাঁর বাবার মৃত্যুর কথা লিখলেন, ওই শিক্ষক খুব যত্ন করে তার ওপর তাঁর মন্তব্য লিখে বাবাকে নিয়েই নানা প্রশ্ন করতে থাকলেন। এতে সুসানের এত দিন কষ্ট করে চেপে রাখা অসহনীয় দুঃখ ফল্গুধারার মতো বেরিয়ে এলো। এভাবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর নীরব কথা চালাচালি হওয়ার পর সুসান খেয়াল করলেন, দুঃখ না কমলেও এতে তাঁর দুঃখের মুখোমুখি হওয়ার শক্তি বেড়ে গেছে।

সুসানের শিক্ষক চেয়েছিলেন বাবার মৃত্যুকে জোর করে পজিটিভভাবে নিতে গিয়ে সুসান যেন তাঁর দুঃখকে এড়িয়ে না যান। দুঃখকে চেপে পাশে সরিয়ে না রেখে তিনি যেন দুঃখকে সঙ্গে নিয়ে হাঁটার শক্তি অর্জন করেন। সত্যি সত্যি সুসান মানসিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠলেন। একই প্রক্রিয়া তিনি ভয়ের ব্যাপারেও প্রয়োগ করলেন। তিনি দেখলেন সাহসী হওয়া মানে ভয়কে ভুলে যাওয়া নয়। সাহসী হওয়া মানে ভয়কে সঙ্গে নিয়ে হাঁটতে শেখা। সুসানের শিক্ষক তাঁর মধ্যে যে বোধটা তৈরি করে দিলেন, সেটাই পরে সুসানের তত্ত্বের ভিত্তি হয়ে গেল। সেটাই মনোবিজ্ঞানের মোড় ঘুরিয়ে দিয়ে তাঁকে পৃথিবীজোড়া খ্যাতি এনে দিল।

এটাই শিক্ষকের মূল কাজ। এক অর্থে কঠিন। শিক্ষার্থীর জন্য তাঁকে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হয়, প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে আলাদা করে চিনতে হয়, ভালোবাসতে হয়, অনুপ্রাণিত করতে হয়। অন্য অর্থে সোজা। কারণ এখানে গলদঘর্ম হয়ে শিক্ষার্থীকে জোর করে ধরে জ্ঞান গিলিয়ে দেওয়ার মতো গাধার খাটুনি খাটতে হয় না। তবে সোজা হোক কিংবা কঠিন, নতুন শিক্ষাক্রমে আমাদের শিক্ষকদের দায়িত্ব হবে সক্রেটিস বা সুসানের ওই শিক্ষকের মতো। দায়িত্বটা সোজা হবে, না কঠিন—সেটা শিক্ষকরাই ভালো বলতে পারবেন। তবে সঠিকভাবে পালন করতে পারলে তাঁরা যে সত্যি মানুষ গড়ার আনন্দ পাবেন, তাতে কোনো ভুল নেই।

লেখক : মাউশি ও নায়েমের সাবেক মহাপরিচালক

শিক্ষকরা কি কিছু শেখাতে পারেন!

সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক

সক্রেটিস বলেছিলেন শিক্ষক আসলে তাঁর শিক্ষার্থীকে কিছু শেখাতে পারেন না। কারণ শিক্ষার্থী সব আগে থেকেই জানে। সে শুধু জানে না যে সে জানে। শিক্ষকের কাজ হচ্ছে সে যে আসলে জানে, সেটা তাকে  জানিয়ে দেওয়া।

জানা যে বিষয় শিক্ষার্থীর নিজের কাছেই অজানা বলে ভ্রম হয়, সেই ভ্রম ভাঙানোই শিক্ষকের মূল কাজ। তাঁকে শুধু এমন একটা পরিবেশ বা প্রক্রিয়া তৈরি করে দিতে হয়, যাতে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই তাদের ভেতরে থাকা বিষয়গুলো বের করে আনতে পারে। এর চেয়ে বেশি কিছু করতে গেলে শিক্ষকের শ্রম তো পণ্ড হয়ই, শিক্ষার্থীর শেখার পথও দীর্ঘ ও দুর্গম হয়ে ওঠে।

সক্রেটিস এথেনীয়দেরকে এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেন। এথেন্সের হাটবাজারে লোকজনের পথ আটকে খুব সাধারণ প্রশ্ন করতেন, ‘করুণা কী’, ‘সাহস কী’ ইত্যাদি। উত্তরদাতারা উত্তর দিলে তিনি পাল্টা উত্তর দিতেন। যেমন—‘ন্যায়ধর্ম কী?’ এই প্রশ্নের উত্তরে সেফালোস নামের একজন ব্যবসায়ী যখন বললেন ন্যায়ধর্ম হচ্ছে সত্যি কথা বলা এবং ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া, তখন সক্রেটিস এর বিপরীত উদাহরণ দিলেন। বললেন, ধরো, তুমি একজন বন্ধুর কাছ থেকে একটা অস্ত্র ধার নিলে, তারপর ফেরত দেওয়ার সময় দেখলে যে সে অপ্রকৃতিস্থ হয়ে গেছে, তাহলে সেই অবস্থায় তাকে অস্ত্র ফেরত দেওয়াটা কি ঠিক হবে? সেফালোস হার মানলেন। কিন্তু যুক্তি-পাল্টাযুক্তি কিংবা উদাহরণ-পাল্টা উদাহরণ চলতে থাকল। এভাবে একসময় পুরনো ধারণা বদলে গিয়ে নতুন সংজ্ঞা তৈরি হলো। অর্থাৎ সক্রেটিস সেফালোসের ওপর তাঁর নিজের ধারণা চাপিয়ে দিলেন না। কিন্তু তাকে এমন একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিয়ে গেলেন, যাতে সে নিজের চেষ্টায়ই একটা যুক্তিসংগত সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে।

তবে শিক্ষার সর্বক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য কি না, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। অনেকে বলেন মানুষের বহু আগে অর্জিত বিষয়গুলো এখন আমাদের মস্তিষ্ক বা জৈব রসায়নের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত হয়ে গেছে বলে ওগুলো আমরা সহজে, নিজের চেষ্টায়ই শিখতে পারি। কিন্তু যেগুলো অপেক্ষাকৃত নতুন, সেগুলো নিজে নিজে শেখা কঠিন। ভাষার কথাই ধরা যাক। মানুষ তার ‘বলা’ ও ‘শোনা’র ক্ষমতা পেয়ে গেছে প্রায় ৭০ থেকে ৩০ হাজার বছর আগের কগনিটিভ বিপ্লবের সময়। ফলে এত দিনে এটা তার সহজাত ক্ষমতায় পরিণত হয়েছে। সে এটা এমনিতেই পারে, সরাসরি কোনো শিক্ষকের কাছে শিখতে হয় না। কিন্তু ‘পড়া’ ও ‘লেখা’র বিষয়টা যেহেতু মাত্র পাঁচ-ছয় হাজার বছরের পুরনো, সেগুলো নিজে নিজে শেখা কঠিন।

যা হোক, প্লেটো, অ্যারিস্টটল, রুশো, জন ডিউই এবং আরো অনেকে সক্রেটিসের ধারায়ই চিন্তা করেছেন। এ জন্যই হয়তো এখন মনে করা হয়, শিক্ষার্থীকে সরাসরি কিছু শেখানোর চেয়ে তাকে শেখার প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া বেশি কার্যকর। এটা যে কত কার্যকর তার একটা বড় প্রমাণ হচ্ছেন হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী সুসান ডেভিড।

সুসান টেড বক্তা এবং লেখক হিসেবেও বিখ্যাত। ২০১৮ সালে ‘দ্য গিফট অ্যান্ড পাওয়ার অব ইমোশনাল কারেজ’ শিরোনামে তাঁর টেড টকের বক্তৃতার ছয় মিলিয়ন ভিউ হয়েছিল। এবং তাঁর বই ‘ইমোশনাল এজিলিটি’ দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বেস্ট সেলার তালিকার শীর্ষে ছিল। উপরন্তু হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ এই বইয়ের বিষয়বস্তুকে বছরের সর্বোত্কৃষ্ট ম্যানেজমেন্ট আইডিয়া হিসেবে আখ্যায়িত করে। এখানে উল্লেখ্য, যে আইডিয়ার কারণে সুসান পৃথিবীবিখ্যাত হলেন তার বীজটা তাঁর ভেতর তাঁর শিক্ষকই পরোক্ষভাবে রোপণ করে দিয়েছিলেন।

সুসান বড় হয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকায়, বর্ণবাদী যুগে। তাঁর বয়স যখন ১৬ বছর, তখন হঠাৎ তাঁর ৪২ বছর বয়সী প্রিয় বাবার মারাত্মক ক্যান্সার ধরা পড়ে। এর কয়েক মাস পর তিনি মারা যান। আচমকা যেন এক অকূল পাথারে পড়ে যান ছোট্ট সুসান।

কিন্তু জীবন তো আর থেমে থাকে না। সুসানকে স্কুলে যেতে হয়। সবাই চেষ্টা করে সুসান যেন তাঁর পিতৃবিয়োগকে ভুলে থাকতে পারেন। তাঁকে নানা বিষয়ে ব্যস্ত রাখে। কেউ ভুলেও তাঁর সামনে ‘বাবা’ শব্দটা পর্যন্ত উচ্চারণ করে না। যে করেই হোক জীবনের সব কিছু পজিটিভভাবে নিতে হবে বলে যে কথাটা চালু আছে, সবাই সেটা মানার চেষ্টা করে। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন ওই স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক।

সেই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের দিয়ে প্রতিদিন ডায়েরি লেখাতেন। সুসান যখন তাঁর বাবার মৃত্যুর কথা লিখলেন, ওই শিক্ষক খুব যত্ন করে তার ওপর তাঁর মন্তব্য লিখে বাবাকে নিয়েই নানা প্রশ্ন করতে থাকলেন। এতে সুসানের এত দিন কষ্ট করে চেপে রাখা অসহনীয় দুঃখ ফল্গুধারার মতো বেরিয়ে এলো। এভাবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর নীরব কথা চালাচালি হওয়ার পর সুসান খেয়াল করলেন, দুঃখ না কমলেও এতে তাঁর দুঃখের মুখোমুখি হওয়ার শক্তি বেড়ে গেছে।

সুসানের শিক্ষক চেয়েছিলেন বাবার মৃত্যুকে জোর করে পজিটিভভাবে নিতে গিয়ে সুসান যেন তাঁর দুঃখকে এড়িয়ে না যান। দুঃখকে চেপে পাশে সরিয়ে না রেখে তিনি যেন দুঃখকে সঙ্গে নিয়ে হাঁটার শক্তি অর্জন করেন। সত্যি সত্যি সুসান মানসিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠলেন। একই প্রক্রিয়া তিনি ভয়ের ব্যাপারেও প্রয়োগ করলেন। তিনি দেখলেন সাহসী হওয়া মানে ভয়কে ভুলে যাওয়া নয়। সাহসী হওয়া মানে ভয়কে সঙ্গে নিয়ে হাঁটতে শেখা। সুসানের শিক্ষক তাঁর মধ্যে যে বোধটা তৈরি করে দিলেন, সেটাই পরে সুসানের তত্ত্বের ভিত্তি হয়ে গেল। সেটাই মনোবিজ্ঞানের মোড় ঘুরিয়ে দিয়ে তাঁকে পৃথিবীজোড়া খ্যাতি এনে দিল।

এটাই শিক্ষকের মূল কাজ। এক অর্থে কঠিন। শিক্ষার্থীর জন্য তাঁকে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হয়, প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে আলাদা করে চিনতে হয়, ভালোবাসতে হয়, অনুপ্রাণিত করতে হয়। অন্য অর্থে সোজা। কারণ এখানে গলদঘর্ম হয়ে শিক্ষার্থীকে জোর করে ধরে জ্ঞান গিলিয়ে দেওয়ার মতো গাধার খাটুনি খাটতে হয় না। তবে সোজা হোক কিংবা কঠিন, নতুন শিক্ষাক্রমে আমাদের শিক্ষকদের দায়িত্ব হবে সক্রেটিস বা সুসানের ওই শিক্ষকের মতো। দায়িত্বটা সোজা হবে, না কঠিন—সেটা শিক্ষকরাই ভালো বলতে পারবেন। তবে সঠিকভাবে পালন করতে পারলে তাঁরা যে সত্যি মানুষ গড়ার আনন্দ পাবেন, তাতে কোনো ভুল নেই।

লেখক : মাউশি ও নায়েমের সাবেক মহাপরিচালক