শিক্ষাব্যবস্থা
শিক্ষার্থীদের ভাবার সময় দেওয়া উচিত
সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক

পরশুর কাজ আমি কাল করি না- মার্ক টোয়েনের এ কথার মতো অস্কার ওয়াইল্ডেরও একটি উদ্ৃব্দতি প্রায়ই ব্যবহূত হয়। কথাটা তাঁরা মজা করে বলেছিলেন কিনা, জানি না। তবে এতে একটা গভীর সত্য লুকিয়ে আছে। কালকের কাজ আজ পারলে আজকেই করতে হবে বলে যে কথাটা প্রচলিত, সেটাকে ব্যঙ্গ করে তাঁরা বলেছেন- পরশুর কাজ তাঁরা পরশুই করবেন। তাড়াহুড়া করে সেটা কাল করতে যাবেন না। তাঁরা সম্ভবত যেটা বলতে চেয়েছেন তা হলো, হাতে যদি সময় থাকে তাহলে চট করে কিছু একটা না করে তা তাঁরা ধীরেসুস্থে বিচার-বিবেচনা করেই করতে চান। এতে তাঁদের সূক্ষ্ণচিন্তন কিংবা সৃষ্টিশীল কাজ করা সহজ হয়।
এই ধীরগতি বা বিচার-বিবেচনা কিন্তু অলসতা নয়। এটা হলো আপনি যা করছেন সেটাকে আরও ভালোভাবে করার চেষ্টা। আমরা যদি বিখ্যাত লোকদের উল্লেখযোগ্য কাজ দেখি; তাঁরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ধীরে চলা নীতি গ্রহণ করেছেন; মন খুলে চিন্তা করেছেন এবং প্রয়োজন হলে একেবারে শেষ মুহূর্তেও নিজের চিন্তা, বক্তৃতা বা শিল্পকর্মে সংযোজন-বিয়োজন করেছেন।
লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মোনালিসা আঁকার প্রক্রিয়াটা লক্ষ্য করা যাক। ভিঞ্চি ছবিটা আঁকা শুরু করেন ১৫০৩ সালে। কিছুদিন পরই অন্য কাজের চাপে সেটা ফেলে রাখেন। তার পর ১৬ বছর চলে যায়। ঐতিহাসিক প্যানাপ্যাকারের মতে, ভিঞ্চি আসলে ওই সময়টায় ছবিটা নিয়ে ভেবেছেন এবং অপটিক্যাল ইলিউশন ও ছবি আঁকার কলাকৌশল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। এরপর যখন ওই ছবি আঁকায় ফিরে যান তখন তিনি অন্য মানুষ। তাঁর ধ্যান-ধারণা-জ্ঞান-দক্ষতায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। তিনি যদি তাড়াহুড়া করে ১৬ বছর আগেই ছবিটা শেষ করে ফেলতেন, তাহলে মানুষ বুঝতেও পারত না মানব জাতির কী অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল! একইভাবে ‘দ্য লাস্ট সাপার’ ছবির জন্যও ভিঞ্চি প্রায় ১৫ বছর সময় নিয়েছেন।
১৯৬৩ সালে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র ‘আই হ্যাভ আ ড্রিম’ নামে খ্যাত যে বক্তৃতাটা দেন, সে ঘটনাটা মাত্র একদিনের হলেও, এ রকমই। তিনি এ বক্তৃতা লেখেন আগের দিন রাতে। লেখা হয়ে গেলেও তাঁর মনে হচ্ছিল, কী যেন সেখানে নেই! বক্তৃতা দিতে দিতেও সে কথা ভাবছিলেন। হঠাৎ একজন গায়িকা মাহালিয়া জ্যাকসনের কথা তাঁর কানে আটকে যায়। মাহালিয়া চিৎকার করে বলছিলেন- ওদেরকে স্বপ্নের কথা বলো। তাতেই কিং তাঁর জগদ্বিখ্যাত সেই চারটি শব্দ পেয়ে গেলেন- ‘আই হ্যাভ আ ড্রিম।’ এতে যে শুধু তাঁর ভিশনটি উপস্থিত শ্রোতাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল, তা নয়; দেশ-দেশান্তরে মানুষের মনে তা একেবারে চিরকালের জন্য গেঁথে গেল।
অনেকে এ ঘটনাকে ‘জেইগারনিক ইফেক্ট’ দিয়ে ব্যাখ্যা করেন। রাশিয়ান মনোবিজ্ঞানী জেইগারনিক বলেছেন, আপনি যদি কোনো একটা চিন্তা বা কাজকে চূড়ান্ত বলে ধরে নেন তাহলে আপনার মনে আর নতুন আইডিয়া আসবে না। কিন্তু আপনি যদি সেটাকে খসড়া হিসেবে বিবেচনা করেন তাহলে আপনিও কিংয়ের মতো একেবারে শেষ মুহূর্তে একটা অলৌকিক কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলতে পারেন।
আব্রাহাম লিংকনের ‘গেটিসবার্গ অ্যাড্রেস’ও তা-ই। তিনি বেশ আগেই এ বক্তৃতার কয়েকটা ড্রাফট তৈরি করেছিলেন। তবে শেষ মুহূর্তে মঞ্চে বসে কাটাকুটি করে তার চূড়ান্ত রূপ দেন। মতান্তরে তিনি মঞ্চে বসেই একটা এনভেলপের পেছনে পুরো বক্তৃতা লিখে ফেলেছিলেন।
গেটিসবার্গ অ্যাড্রেসের সঙ্গে ৭ মার্চের ভাষণের তুলনা করা হয়। কিন্তু দু’জন বক্তাই যে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভাবার সুযোগটাকে পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছিলেন এবং এটাই যে তাঁদের আকাশছোঁয়া উচ্চতায় পৌঁছানোর অন্যতম কারণ, সেটা আলোচনা হয় না। আমরা যদি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভাবার কথাটা বিবেচনা করি, তাহলে বলতেই হবে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনেক এগিয়ে। কারণ তাঁর হাতে স্ট্ক্রিপ্ট, নোট- কিছুই ছিল না। কেউ যদি গাড়ি থেকে মঞ্চে ওঠা পর্যন্ত তাঁর মুখ কিংবা হাঁটার ভঙ্গি খেয়াল করেন তো বুঝবেন, তিনি তখনও গভীরভাবে তাঁর ভাষণের কথা ভাবছিলেন। পাকিস্তান সরকারের ছড়ানো আতঙ্ক এবং তাঁকেই উদ্দেশ করে দেওয়া লাখ লাখ মানুষের স্লোগান তাঁর ভাবনায় কোনো ছেদ টানতে পেরেছিল বলে মনে হয় না। হাঁটতে হাঁটতে তিনি তাঁর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন, সংগ্রাম ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে সেই বিশাল সমাবেশের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে মিলিয়েছেন এবং কৌশলে স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়ার জন্য কিছু বাক্য মনে মনে ঝালাই করে নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু জানতেন, ঘরে বসে কাগজে লেখা স্ট্ক্রিপ্টের চেয়ে লাখো মানুষের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও স্বাধীনতা লাভের প্রবল আকাঙ্ক্ষায় জারিত করোটির ভেতর তাৎক্ষণিক রচিত বাক্য অনেক বেশি কার্যকর ও শক্তিশালী হবে।
এ ক্ষেত্রে বড় মানুষের সঙ্গে আমাদের সাধারণ মানুষের তেমন কোনো পার্থক্য নেই। আমরা হয়তো তাঁদের মতো পৃথিবী কাঁপাতে পারব না। কিন্তু এভাবে চেষ্টা করলে নিজের জীবনটাকে আরেকটু অর্থময় করে তুলতে পারব। বিখ্যাত সাংগঠনিক মনোবিজ্ঞানী অ্যাডাম গ্রান্ট ও তাঁর টিম কিছু মানুষকে একটি সমস্যার সৃজনশীল সমাধান করার গেম খেলতে দিয়েছিলেন। দেখা গেল যারা দ্রুত খেলল, তাদের চেয়ে যারা ধীরে খেলল তাদের সাফল্যের হার ২৮ শতাংশ বেশি। অথচ শিক্ষার্থীদের আমরা সবসময় উল্টো কথা বলি- যেটা আজ করা যাবে সেটা কালকের জন্য ফেলে রেখো না। ঊর্ধ্বশ্বাসে যত বেশি লিখতে পারবে, পরীক্ষায় তত ভালো নম্বর পাবে। চিন্তা করার সময় না দিয়েই তাদের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দিতে বলি। অর্থাৎ লিখতে বলি; ভাবতে বলি না। প্রকারান্তরে মুখস্থ করতে উৎসাহিত করি। ওদের প্রতিটা দিন আমরা কোচিং-স্কুল-কোচিংয়ের রুটিনে বেঁধে রাখি।
ফলে না ভাবতে ভাবতে যেটুকু সৃজনশীলতা ও সূক্ষ্ণচিন্তন দক্ষতা নিয়ে তারা স্কুলে এসেছিল, তাও একসময় ভোঁতা হয়ে যায়। এ অবস্থার পরিবর্তন করতে হলে তাদের ভাবার পর্যাপ্ত সুযোগ দিতে হবে। তা না হলে সৃজনশীলতা, সূক্ষ্ণচিন্তন দক্ষতা দূরে থাক; কেন ছুটছে- সেটা না বুঝেই তারা আমাদের মতো সারাজীবন ধরে ঊর্ধ্বশ্বাসে উদ্দেশ্যহীনভাবে পড়িমরি করে ছুটতে থাকবে।
সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক: মাউশি ও নায়েমের সাবেক মহাপরিচালক

শিক্ষাব্যবস্থা
শিক্ষার্থীদের ভাবার সময় দেওয়া উচিত
সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক

পরশুর কাজ আমি কাল করি না- মার্ক টোয়েনের এ কথার মতো অস্কার ওয়াইল্ডেরও একটি উদ্ৃব্দতি প্রায়ই ব্যবহূত হয়। কথাটা তাঁরা মজা করে বলেছিলেন কিনা, জানি না। তবে এতে একটা গভীর সত্য লুকিয়ে আছে। কালকের কাজ আজ পারলে আজকেই করতে হবে বলে যে কথাটা প্রচলিত, সেটাকে ব্যঙ্গ করে তাঁরা বলেছেন- পরশুর কাজ তাঁরা পরশুই করবেন। তাড়াহুড়া করে সেটা কাল করতে যাবেন না। তাঁরা সম্ভবত যেটা বলতে চেয়েছেন তা হলো, হাতে যদি সময় থাকে তাহলে চট করে কিছু একটা না করে তা তাঁরা ধীরেসুস্থে বিচার-বিবেচনা করেই করতে চান। এতে তাঁদের সূক্ষ্ণচিন্তন কিংবা সৃষ্টিশীল কাজ করা সহজ হয়।
এই ধীরগতি বা বিচার-বিবেচনা কিন্তু অলসতা নয়। এটা হলো আপনি যা করছেন সেটাকে আরও ভালোভাবে করার চেষ্টা। আমরা যদি বিখ্যাত লোকদের উল্লেখযোগ্য কাজ দেখি; তাঁরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ধীরে চলা নীতি গ্রহণ করেছেন; মন খুলে চিন্তা করেছেন এবং প্রয়োজন হলে একেবারে শেষ মুহূর্তেও নিজের চিন্তা, বক্তৃতা বা শিল্পকর্মে সংযোজন-বিয়োজন করেছেন।
লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মোনালিসা আঁকার প্রক্রিয়াটা লক্ষ্য করা যাক। ভিঞ্চি ছবিটা আঁকা শুরু করেন ১৫০৩ সালে। কিছুদিন পরই অন্য কাজের চাপে সেটা ফেলে রাখেন। তার পর ১৬ বছর চলে যায়। ঐতিহাসিক প্যানাপ্যাকারের মতে, ভিঞ্চি আসলে ওই সময়টায় ছবিটা নিয়ে ভেবেছেন এবং অপটিক্যাল ইলিউশন ও ছবি আঁকার কলাকৌশল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। এরপর যখন ওই ছবি আঁকায় ফিরে যান তখন তিনি অন্য মানুষ। তাঁর ধ্যান-ধারণা-জ্ঞান-দক্ষতায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। তিনি যদি তাড়াহুড়া করে ১৬ বছর আগেই ছবিটা শেষ করে ফেলতেন, তাহলে মানুষ বুঝতেও পারত না মানব জাতির কী অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল! একইভাবে ‘দ্য লাস্ট সাপার’ ছবির জন্যও ভিঞ্চি প্রায় ১৫ বছর সময় নিয়েছেন।
১৯৬৩ সালে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র ‘আই হ্যাভ আ ড্রিম’ নামে খ্যাত যে বক্তৃতাটা দেন, সে ঘটনাটা মাত্র একদিনের হলেও, এ রকমই। তিনি এ বক্তৃতা লেখেন আগের দিন রাতে। লেখা হয়ে গেলেও তাঁর মনে হচ্ছিল, কী যেন সেখানে নেই! বক্তৃতা দিতে দিতেও সে কথা ভাবছিলেন। হঠাৎ একজন গায়িকা মাহালিয়া জ্যাকসনের কথা তাঁর কানে আটকে যায়। মাহালিয়া চিৎকার করে বলছিলেন- ওদেরকে স্বপ্নের কথা বলো। তাতেই কিং তাঁর জগদ্বিখ্যাত সেই চারটি শব্দ পেয়ে গেলেন- ‘আই হ্যাভ আ ড্রিম।’ এতে যে শুধু তাঁর ভিশনটি উপস্থিত শ্রোতাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল, তা নয়; দেশ-দেশান্তরে মানুষের মনে তা একেবারে চিরকালের জন্য গেঁথে গেল।
অনেকে এ ঘটনাকে ‘জেইগারনিক ইফেক্ট’ দিয়ে ব্যাখ্যা করেন। রাশিয়ান মনোবিজ্ঞানী জেইগারনিক বলেছেন, আপনি যদি কোনো একটা চিন্তা বা কাজকে চূড়ান্ত বলে ধরে নেন তাহলে আপনার মনে আর নতুন আইডিয়া আসবে না। কিন্তু আপনি যদি সেটাকে খসড়া হিসেবে বিবেচনা করেন তাহলে আপনিও কিংয়ের মতো একেবারে শেষ মুহূর্তে একটা অলৌকিক কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলতে পারেন।
আব্রাহাম লিংকনের ‘গেটিসবার্গ অ্যাড্রেস’ও তা-ই। তিনি বেশ আগেই এ বক্তৃতার কয়েকটা ড্রাফট তৈরি করেছিলেন। তবে শেষ মুহূর্তে মঞ্চে বসে কাটাকুটি করে তার চূড়ান্ত রূপ দেন। মতান্তরে তিনি মঞ্চে বসেই একটা এনভেলপের পেছনে পুরো বক্তৃতা লিখে ফেলেছিলেন।
গেটিসবার্গ অ্যাড্রেসের সঙ্গে ৭ মার্চের ভাষণের তুলনা করা হয়। কিন্তু দু’জন বক্তাই যে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভাবার সুযোগটাকে পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছিলেন এবং এটাই যে তাঁদের আকাশছোঁয়া উচ্চতায় পৌঁছানোর অন্যতম কারণ, সেটা আলোচনা হয় না। আমরা যদি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভাবার কথাটা বিবেচনা করি, তাহলে বলতেই হবে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনেক এগিয়ে। কারণ তাঁর হাতে স্ট্ক্রিপ্ট, নোট- কিছুই ছিল না। কেউ যদি গাড়ি থেকে মঞ্চে ওঠা পর্যন্ত তাঁর মুখ কিংবা হাঁটার ভঙ্গি খেয়াল করেন তো বুঝবেন, তিনি তখনও গভীরভাবে তাঁর ভাষণের কথা ভাবছিলেন। পাকিস্তান সরকারের ছড়ানো আতঙ্ক এবং তাঁকেই উদ্দেশ করে দেওয়া লাখ লাখ মানুষের স্লোগান তাঁর ভাবনায় কোনো ছেদ টানতে পেরেছিল বলে মনে হয় না। হাঁটতে হাঁটতে তিনি তাঁর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন, সংগ্রাম ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে সেই বিশাল সমাবেশের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে মিলিয়েছেন এবং কৌশলে স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়ার জন্য কিছু বাক্য মনে মনে ঝালাই করে নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু জানতেন, ঘরে বসে কাগজে লেখা স্ট্ক্রিপ্টের চেয়ে লাখো মানুষের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও স্বাধীনতা লাভের প্রবল আকাঙ্ক্ষায় জারিত করোটির ভেতর তাৎক্ষণিক রচিত বাক্য অনেক বেশি কার্যকর ও শক্তিশালী হবে।
এ ক্ষেত্রে বড় মানুষের সঙ্গে আমাদের সাধারণ মানুষের তেমন কোনো পার্থক্য নেই। আমরা হয়তো তাঁদের মতো পৃথিবী কাঁপাতে পারব না। কিন্তু এভাবে চেষ্টা করলে নিজের জীবনটাকে আরেকটু অর্থময় করে তুলতে পারব। বিখ্যাত সাংগঠনিক মনোবিজ্ঞানী অ্যাডাম গ্রান্ট ও তাঁর টিম কিছু মানুষকে একটি সমস্যার সৃজনশীল সমাধান করার গেম খেলতে দিয়েছিলেন। দেখা গেল যারা দ্রুত খেলল, তাদের চেয়ে যারা ধীরে খেলল তাদের সাফল্যের হার ২৮ শতাংশ বেশি। অথচ শিক্ষার্থীদের আমরা সবসময় উল্টো কথা বলি- যেটা আজ করা যাবে সেটা কালকের জন্য ফেলে রেখো না। ঊর্ধ্বশ্বাসে যত বেশি লিখতে পারবে, পরীক্ষায় তত ভালো নম্বর পাবে। চিন্তা করার সময় না দিয়েই তাদের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দিতে বলি। অর্থাৎ লিখতে বলি; ভাবতে বলি না। প্রকারান্তরে মুখস্থ করতে উৎসাহিত করি। ওদের প্রতিটা দিন আমরা কোচিং-স্কুল-কোচিংয়ের রুটিনে বেঁধে রাখি।
ফলে না ভাবতে ভাবতে যেটুকু সৃজনশীলতা ও সূক্ষ্ণচিন্তন দক্ষতা নিয়ে তারা স্কুলে এসেছিল, তাও একসময় ভোঁতা হয়ে যায়। এ অবস্থার পরিবর্তন করতে হলে তাদের ভাবার পর্যাপ্ত সুযোগ দিতে হবে। তা না হলে সৃজনশীলতা, সূক্ষ্ণচিন্তন দক্ষতা দূরে থাক; কেন ছুটছে- সেটা না বুঝেই তারা আমাদের মতো সারাজীবন ধরে ঊর্ধ্বশ্বাসে উদ্দেশ্যহীনভাবে পড়িমরি করে ছুটতে থাকবে।
সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক: মাউশি ও নায়েমের সাবেক মহাপরিচালক