শিক্ষায় হচ্ছেটা কী

মো. শফিকুল ইসলাম 

শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ছে গত কয়েক অর্থবছরে। তার পরও বরাদ্দকৃত অর্থ অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। শিক্ষায় অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার মান বাড়ছে কিনা- এটা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাসের হার ব্যাপক। পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা নেহাত কম নয়।

কিন্তু শিক্ষায় নানা ধরনের অব্যবস্থাপনা চোখে পড়ার মতো। যেমন পরীক্ষার হলে নকলের মহড়া। কেউ কেউ বলছেন, নকলের হাটবাজার। শিক্ষকরাও নকলের কাজে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করছেন। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। ইদানীং পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে প্রচারিত নানা সংবাদ বা ঘটনা গোটা জাতিকে লজ্জাজনক অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। যার জন্য চারজন শিক্ষক বহিস্কার হয়েছেন। শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। প্রশ্ন ফাঁস খুবই দুঃখজনক ঘটনা, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। গণমাধ্যমে দেখলাম জামালপুর জেলার এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নকল করার খবর। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার হল হিসেবে কোনো কার্যকর অবস্থান সৃষ্টি করতে পারেনি। অর্থাৎ দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়া হচ্ছে। কেন এসব ঘটছে, তা খতিয়ে দেখা জরুরি। এসব রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং জড়িতদের শাস্তি এমনভাবে দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ রকম অপরাধ করতে না পারে। সম্পূর্ণভাবে এসব অপরাধ বন্ধ করতে হবে।

আবার লক্ষ্য করা যায়, শিক্ষাবর্ষ প্রায় শেষ হতে চললেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়নি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এনসিটিবির বই। ফলে শিক্ষা অফিসের বইগুলোতে উইপোকা ধরেছে। শেষ পর্যন্ত এসব বইয়ের ঠাঁই হচ্ছে ঝোপঝাড়ে। আর এ ঘটনা ঘটেছে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে। কার্যালয়ের ভবনের পেছনের জঙ্গলে মিলেছে এমনই কিছু বইয়ের বান্ডিল। গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। সাংবাদিকদের ক্যামেরায় ধরা পড়ার পর শুরু হয়েছে তোলপাড়। খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে তড়িঘড়ি করে বইগুলো ঝোপঝাড় থেকে তুলে বস্তায় ভরে আবার শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের গোডাউনে নিয়ে রাখা হয়। এটা ঘটছে কারণ, শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেশি বইয়ের তালিকা দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন গোডাউনে ফেলে রাখায় বইগুলো উইপোকা খেয়ে নষ্ট করে ফেলেছে।
আবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে নানা ধরনের অসংগতি হচ্ছে, যা সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পারছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি যে নোংরামিতে পরিণত হয়েছে, তা খুবই দুঃখজনক।

মানসম্মত শিক্ষার পূর্বশর্ত টেকসই উন্নয়নের জন্য শিক্ষা। শিক্ষা ব্যবস্থাপনাকে সম্পূর্ণভাবে ঢেলে সাজাতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কার করা প্রয়োজন। বর্তমান সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে; যেমন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়ন ও নিশ্চিত করার জন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা কার্যক্রম অ্যাক্রেডিট করতে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হয়, যা খুবই যুগান্তকারী পদক্ষেপ সরকারের।

কিন্তু শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট টিউশন ও কোচিং-নির্ভরতা, শিক্ষায় দুর্নীতি এবং শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম বন্ধ করতে হবে। তাহলে জাতি প্রকৃত মানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী পাবে বলে বিশ্বাস করি। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত মেনে চলতে হবে। শিক্ষকদের জবাবদিহিসহ শিক্ষকদের আকর্ষণীয় বেতন-ভাতা নিশ্চিত করতে সরকারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এটি সরকারে টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ভালো মানের শিক্ষক নিয়োগে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে, যাতে ক্লাসের শীর্ষস্থান অধিকারীরা ওই পদে চাকরি করতে আগ্রহী হন।
ড. মো. শফিকুল ইসলাম: সহযোগী অধ্যাপক, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ

শিক্ষায় হচ্ছেটা কী

মো. শফিকুল ইসলাম 

শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ছে গত কয়েক অর্থবছরে। তার পরও বরাদ্দকৃত অর্থ অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। শিক্ষায় অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার মান বাড়ছে কিনা- এটা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাসের হার ব্যাপক। পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা নেহাত কম নয়।

কিন্তু শিক্ষায় নানা ধরনের অব্যবস্থাপনা চোখে পড়ার মতো। যেমন পরীক্ষার হলে নকলের মহড়া। কেউ কেউ বলছেন, নকলের হাটবাজার। শিক্ষকরাও নকলের কাজে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করছেন। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। ইদানীং পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে প্রচারিত নানা সংবাদ বা ঘটনা গোটা জাতিকে লজ্জাজনক অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। যার জন্য চারজন শিক্ষক বহিস্কার হয়েছেন। শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। প্রশ্ন ফাঁস খুবই দুঃখজনক ঘটনা, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। গণমাধ্যমে দেখলাম জামালপুর জেলার এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নকল করার খবর। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার হল হিসেবে কোনো কার্যকর অবস্থান সৃষ্টি করতে পারেনি। অর্থাৎ দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়া হচ্ছে। কেন এসব ঘটছে, তা খতিয়ে দেখা জরুরি। এসব রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং জড়িতদের শাস্তি এমনভাবে দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ রকম অপরাধ করতে না পারে। সম্পূর্ণভাবে এসব অপরাধ বন্ধ করতে হবে।

আবার লক্ষ্য করা যায়, শিক্ষাবর্ষ প্রায় শেষ হতে চললেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়নি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এনসিটিবির বই। ফলে শিক্ষা অফিসের বইগুলোতে উইপোকা ধরেছে। শেষ পর্যন্ত এসব বইয়ের ঠাঁই হচ্ছে ঝোপঝাড়ে। আর এ ঘটনা ঘটেছে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে। কার্যালয়ের ভবনের পেছনের জঙ্গলে মিলেছে এমনই কিছু বইয়ের বান্ডিল। গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। সাংবাদিকদের ক্যামেরায় ধরা পড়ার পর শুরু হয়েছে তোলপাড়। খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে তড়িঘড়ি করে বইগুলো ঝোপঝাড় থেকে তুলে বস্তায় ভরে আবার শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের গোডাউনে নিয়ে রাখা হয়। এটা ঘটছে কারণ, শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেশি বইয়ের তালিকা দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন গোডাউনে ফেলে রাখায় বইগুলো উইপোকা খেয়ে নষ্ট করে ফেলেছে।
আবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে নানা ধরনের অসংগতি হচ্ছে, যা সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পারছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি যে নোংরামিতে পরিণত হয়েছে, তা খুবই দুঃখজনক।

মানসম্মত শিক্ষার পূর্বশর্ত টেকসই উন্নয়নের জন্য শিক্ষা। শিক্ষা ব্যবস্থাপনাকে সম্পূর্ণভাবে ঢেলে সাজাতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কার করা প্রয়োজন। বর্তমান সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে; যেমন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়ন ও নিশ্চিত করার জন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা কার্যক্রম অ্যাক্রেডিট করতে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হয়, যা খুবই যুগান্তকারী পদক্ষেপ সরকারের।

কিন্তু শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট টিউশন ও কোচিং-নির্ভরতা, শিক্ষায় দুর্নীতি এবং শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম বন্ধ করতে হবে। তাহলে জাতি প্রকৃত মানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী পাবে বলে বিশ্বাস করি। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত মেনে চলতে হবে। শিক্ষকদের জবাবদিহিসহ শিক্ষকদের আকর্ষণীয় বেতন-ভাতা নিশ্চিত করতে সরকারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এটি সরকারে টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ভালো মানের শিক্ষক নিয়োগে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে, যাতে ক্লাসের শীর্ষস্থান অধিকারীরা ওই পদে চাকরি করতে আগ্রহী হন।
ড. মো. শফিকুল ইসলাম: সহযোগী অধ্যাপক, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ