সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ সংকট সমস্যায় ৭৩ বছর পার

মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। ছবি: দৈনিক বাংলা

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। প্রতিষ্ঠা ১৯৪৯ সালের ১১ নভেম্বর। প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থীর এই কলেজে পর্যাপ্ত ভবন না থাকায় নেই শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ। শিক্ষার্থীদের জন্য নেই আবাসন কিংবা পরিবহন সুবিধা। রয়েছে শিক্ষকসংকটও। এতসব সংকট নিয়ে আজ শুক্রবার ৭৩ বছরের পথচলা পূর্ণ করছে কলেজটি।

প্রতিষ্ঠার সময় পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর উপাধি অনুযায়ী কলেজটির নাম রাখা হয় ‘কায়েদ-ই-আজম কলেজ’। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে কলেজটির নাম বদলে রাখা হয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। ১৯৮৪ সালে সরকারি করা হয় কলেজটি। ২০০৪-২০০৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চালু করা হয় স্নাতক (সম্মান) কোর্স। সর্বশেষ যে সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়, তার মধ্যেও রাখা হয় সোহরাওয়ার্দী কলেজকে। তবে এত পুরোনো বিদ্যাপীঠ হলেও কলেজটি সবদিক থেকেই অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তুলনায় পিছিয়ে আছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

বর্তমানে বিভিন্ন অনুষদের ১৭টি বিভাগে এই কলেজের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। শিক্ষক রয়েছেন ১০১ জন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, এক একরের একটু বেশি জমিতে গড়ে ওঠা কলেজের শ্রেণিকক্ষগুলো আয়তনে ছোট। শ্রেণিকক্ষের সংখ্যাও পর্যাপ্ত নয়। মসজিদের পাশে রয়েছে একটি গ্রন্থাগার, যেটি নামেমাত্র চলছে। সেখানে নেই ক্যাটালগ। বই নেয়ার ব্যবস্থাপনাও গোছালো নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের ছয়টিতেই ছাত্রাবাস থাকলেও সে সুবিধা থেকে বঞ্চিত সোহরাওয়ার্দী কলেজ। অন্যদিকে কলেজের শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশই আসে গ্রামাঞ্চলের মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে। কলেজের আবাসন সুবিধা না থাকায় এসব শিক্ষার্থীকে কলেজের আশপাশে বাসা ভাড়া নিয়ে বা বিভিন্ন মেসে থাকতে হয়। তাতে তাদের খরচ বাড়ে, মেলে না শিক্ষার্থীদের উপযোগী পরিবেশ। আবার সাত কলেজের বাকি ছয়টিতে পরিবহন সুবিধা থাকলেও এই কলেজে সেই সুবিধাও নেই।

কলেজের প্রথম বর্ষ থেকে শুরু করে শেষ বর্ষ পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীই কলেজের আয়তন বাড়ানো, নিজস্ব আবাসনব্যবস্থা, খেলার মাঠ সম্প্রসারণ, পরিবহন সুবিধা, পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ ও গ্রন্থাগার, ক্যানটিন চালুসহ নানা দাবি জানিয়ে আসছেন।

জানতে চাইলে কলেজটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মোহসিন কবীর দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে জায়গা ও স্থাপনা। এত বছর পেরিয়ে গেলেও ভৌত অবকাঠামো সমস্যার সমাধান হয়নি। পর্যাপ্ত শিক্ষকও নেই। তবে শিক্ষামন্ত্রী সম্প্রতি মাউশি থেকে কিছু অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।’

কলেজটি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমরা শিফট ভাগ করে ক্লাস-পরীক্ষা নিচ্ছি। ভবনের জন্য শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে নিয়মিত যোগাযোগ করছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আলাপ-আলোচনা করে নতুন জায়গার জন্য চেষ্টা করছি, যেন আমাদের সংকটগুলো কিছুটা হলেও দূর করা যায়।’

সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ সংকট সমস্যায় ৭৩ বছর পার

মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। ছবি: দৈনিক বাংলা

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। প্রতিষ্ঠা ১৯৪৯ সালের ১১ নভেম্বর। প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থীর এই কলেজে পর্যাপ্ত ভবন না থাকায় নেই শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ। শিক্ষার্থীদের জন্য নেই আবাসন কিংবা পরিবহন সুবিধা। রয়েছে শিক্ষকসংকটও। এতসব সংকট নিয়ে আজ শুক্রবার ৭৩ বছরের পথচলা পূর্ণ করছে কলেজটি।

প্রতিষ্ঠার সময় পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর উপাধি অনুযায়ী কলেজটির নাম রাখা হয় ‘কায়েদ-ই-আজম কলেজ’। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে কলেজটির নাম বদলে রাখা হয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। ১৯৮৪ সালে সরকারি করা হয় কলেজটি। ২০০৪-২০০৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চালু করা হয় স্নাতক (সম্মান) কোর্স। সর্বশেষ যে সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়, তার মধ্যেও রাখা হয় সোহরাওয়ার্দী কলেজকে। তবে এত পুরোনো বিদ্যাপীঠ হলেও কলেজটি সবদিক থেকেই অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তুলনায় পিছিয়ে আছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

বর্তমানে বিভিন্ন অনুষদের ১৭টি বিভাগে এই কলেজের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। শিক্ষক রয়েছেন ১০১ জন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, এক একরের একটু বেশি জমিতে গড়ে ওঠা কলেজের শ্রেণিকক্ষগুলো আয়তনে ছোট। শ্রেণিকক্ষের সংখ্যাও পর্যাপ্ত নয়। মসজিদের পাশে রয়েছে একটি গ্রন্থাগার, যেটি নামেমাত্র চলছে। সেখানে নেই ক্যাটালগ। বই নেয়ার ব্যবস্থাপনাও গোছালো নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের ছয়টিতেই ছাত্রাবাস থাকলেও সে সুবিধা থেকে বঞ্চিত সোহরাওয়ার্দী কলেজ। অন্যদিকে কলেজের শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশই আসে গ্রামাঞ্চলের মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে। কলেজের আবাসন সুবিধা না থাকায় এসব শিক্ষার্থীকে কলেজের আশপাশে বাসা ভাড়া নিয়ে বা বিভিন্ন মেসে থাকতে হয়। তাতে তাদের খরচ বাড়ে, মেলে না শিক্ষার্থীদের উপযোগী পরিবেশ। আবার সাত কলেজের বাকি ছয়টিতে পরিবহন সুবিধা থাকলেও এই কলেজে সেই সুবিধাও নেই।

কলেজের প্রথম বর্ষ থেকে শুরু করে শেষ বর্ষ পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীই কলেজের আয়তন বাড়ানো, নিজস্ব আবাসনব্যবস্থা, খেলার মাঠ সম্প্রসারণ, পরিবহন সুবিধা, পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ ও গ্রন্থাগার, ক্যানটিন চালুসহ নানা দাবি জানিয়ে আসছেন।

জানতে চাইলে কলেজটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মোহসিন কবীর দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে জায়গা ও স্থাপনা। এত বছর পেরিয়ে গেলেও ভৌত অবকাঠামো সমস্যার সমাধান হয়নি। পর্যাপ্ত শিক্ষকও নেই। তবে শিক্ষামন্ত্রী সম্প্রতি মাউশি থেকে কিছু অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।’

কলেজটি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমরা শিফট ভাগ করে ক্লাস-পরীক্ষা নিচ্ছি। ভবনের জন্য শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে নিয়মিত যোগাযোগ করছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আলাপ-আলোচনা করে নতুন জায়গার জন্য চেষ্টা করছি, যেন আমাদের সংকটগুলো কিছুটা হলেও দূর করা যায়।’