স্কুলের বদলে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছে আফগান মেয়েরা

ভেড়া ছাগলের দামে কন্যা বিক্রি

সেলিম কামাল

মেয়েটির বয়স মাত্র তেরো বছর। বছরের এই সময়টিতে কথা ছিল স্কুলের নতুন ইউনিফর্ম কিনবে। স্কুলের বাগান থেকে টুপ করে তুলবে ভরা শরতের শিউলি ফুল। কিন্তু নিয়তির দুর্গতি মেয়েটিকে পাঠশালার বদলে পাঠিয়ে দিয়েছে শ্বশুরবাড়ি। স্কুল ইউনিফর্মের পরিবর্তে জয়নবের শরীরে এখন চেপে বসেছে বিয়ের পোশাক। এএফপি। গত বছরের আগস্টে তালেবানরা যখন দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল, তখন অনেকেই ভেবেছিলেন নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী পাল্টাবে তালেবান। কিন্তু ধীরে ধীরে সব আশার গুড়ে বালি ঢেলেছেন শাসকরা। তালেবান নারীদের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। শুধু পড়াশোনাই নয়, বৈধ সঙ্গী ছাড়া রাস্তায় চলাফেরা বন্ধ হয়েছে নারীদের। হিজাব এবং বোরকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে বন্ধ হয়েছে পার্কে ঘোরা, জিমে যাওয়া।

ক্ষমতা দখলের পরপরই মেয়েদের পায়ে শেকল পরিয়ে দিয়েছে তালেবান। আফগানিস্তানই বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে মেয়েদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ। পড়ালেখা নিষিদ্ধ করে ঘরবন্দি করেছে তাদের। এ কারণে মেয়েদের ঘরে রাখতে চাইছেন না তাদের বাবা-মা। অনেকটা জোর করেই বিয়ে দিচ্ছেন অপরিণত মেয়েটিকে। বাবা আব্দুল কাদিরের পছন্দেই অনিচ্ছ সত্ত্বেও তাকে যেতে হচ্ছে শ্বশুরবাড়ি নামের নতুন ঠিকানায়। অর্থনৈতিক সংকট আর পিতৃতান্ত্রিক মূল্যবোধের গভীর শেকড় মেয়েটিকে তার বাবার বাড়ি থেকে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে। যেখানে দেরি ঘুম থেকে জাগাতে তার বাবা বলতেন, ‘মা ওঠো, অনেক দেরি হয়ে গেছে।’ সেই জয়নবেরই এখন ঘুম থেকে দেরি করে ওঠায় শুনতে হয় তিরস্কার। শুনতে হয়, ‘তোমাকে আনতে আমাদের অনেক খরচ হয়েছে। ঘুমিয়ে থাকলে চলবে?’

কান্দাহারের কিশোরী জয়নবের বিশ্বাস ছিল স্কুল একদিন খুলবেই। এ কারণে সে বিয়েতে রাজি হচ্ছিল না। অনেক কান্নাকাটি করেও কোনো লাভ হয়নি। উলটো তার বাবা বললেন, ‘তোমার অপেক্ষা বৃথা যাবে। তালেবান মেয়েদের আর স্কুলে যেতে দেবে না। বাড়িতে অলস বসে থাকার চেয়ে তোমার বিয়ে করা ভালো।’ তার মতামতের তোয়াক্কা না করে বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়েছিল বর আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। কনের মূল্য হিসাবে কয়েকটা ভেড়া, ছাগল এবং চার বস্তা চাল দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল জয়নবের শ্বশুরপক্ষ। আফগানিস্তানের গ্রামীণ সমাজে এটা শতাব্দীপ্রাচীন রীতি। জয়নবের স্বামী তার চেয়ে ১৭ বছরের বড়। শাশুড়ি-ননদের ধমকে কাঁপা-কাঁপা পায়ে কলতলায় এগিয়ে যায় জয়নব। ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে থালা বাসন ধুতে বসে। আর অজান্তেই মাজতে থাকা বাসনের ওপর টপ টপ করে ঝরা ট্যাপের পানিতে একাকার হয়ে যায় জয়নবের অশ্রু।

স্কুলের বদলে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছে আফগান মেয়েরা

ভেড়া ছাগলের দামে কন্যা বিক্রি

সেলিম কামাল

মেয়েটির বয়স মাত্র তেরো বছর। বছরের এই সময়টিতে কথা ছিল স্কুলের নতুন ইউনিফর্ম কিনবে। স্কুলের বাগান থেকে টুপ করে তুলবে ভরা শরতের শিউলি ফুল। কিন্তু নিয়তির দুর্গতি মেয়েটিকে পাঠশালার বদলে পাঠিয়ে দিয়েছে শ্বশুরবাড়ি। স্কুল ইউনিফর্মের পরিবর্তে জয়নবের শরীরে এখন চেপে বসেছে বিয়ের পোশাক। এএফপি। গত বছরের আগস্টে তালেবানরা যখন দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল, তখন অনেকেই ভেবেছিলেন নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী পাল্টাবে তালেবান। কিন্তু ধীরে ধীরে সব আশার গুড়ে বালি ঢেলেছেন শাসকরা। তালেবান নারীদের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। শুধু পড়াশোনাই নয়, বৈধ সঙ্গী ছাড়া রাস্তায় চলাফেরা বন্ধ হয়েছে নারীদের। হিজাব এবং বোরকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে বন্ধ হয়েছে পার্কে ঘোরা, জিমে যাওয়া।

ক্ষমতা দখলের পরপরই মেয়েদের পায়ে শেকল পরিয়ে দিয়েছে তালেবান। আফগানিস্তানই বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে মেয়েদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ। পড়ালেখা নিষিদ্ধ করে ঘরবন্দি করেছে তাদের। এ কারণে মেয়েদের ঘরে রাখতে চাইছেন না তাদের বাবা-মা। অনেকটা জোর করেই বিয়ে দিচ্ছেন অপরিণত মেয়েটিকে। বাবা আব্দুল কাদিরের পছন্দেই অনিচ্ছ সত্ত্বেও তাকে যেতে হচ্ছে শ্বশুরবাড়ি নামের নতুন ঠিকানায়। অর্থনৈতিক সংকট আর পিতৃতান্ত্রিক মূল্যবোধের গভীর শেকড় মেয়েটিকে তার বাবার বাড়ি থেকে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে। যেখানে দেরি ঘুম থেকে জাগাতে তার বাবা বলতেন, ‘মা ওঠো, অনেক দেরি হয়ে গেছে।’ সেই জয়নবেরই এখন ঘুম থেকে দেরি করে ওঠায় শুনতে হয় তিরস্কার। শুনতে হয়, ‘তোমাকে আনতে আমাদের অনেক খরচ হয়েছে। ঘুমিয়ে থাকলে চলবে?’

কান্দাহারের কিশোরী জয়নবের বিশ্বাস ছিল স্কুল একদিন খুলবেই। এ কারণে সে বিয়েতে রাজি হচ্ছিল না। অনেক কান্নাকাটি করেও কোনো লাভ হয়নি। উলটো তার বাবা বললেন, ‘তোমার অপেক্ষা বৃথা যাবে। তালেবান মেয়েদের আর স্কুলে যেতে দেবে না। বাড়িতে অলস বসে থাকার চেয়ে তোমার বিয়ে করা ভালো।’ তার মতামতের তোয়াক্কা না করে বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়েছিল বর আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। কনের মূল্য হিসাবে কয়েকটা ভেড়া, ছাগল এবং চার বস্তা চাল দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল জয়নবের শ্বশুরপক্ষ। আফগানিস্তানের গ্রামীণ সমাজে এটা শতাব্দীপ্রাচীন রীতি। জয়নবের স্বামী তার চেয়ে ১৭ বছরের বড়। শাশুড়ি-ননদের ধমকে কাঁপা-কাঁপা পায়ে কলতলায় এগিয়ে যায় জয়নব। ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে থালা বাসন ধুতে বসে। আর অজান্তেই মাজতে থাকা বাসনের ওপর টপ টপ করে ঝরা ট্যাপের পানিতে একাকার হয়ে যায় জয়নবের অশ্রু।