৩২৪ কলেজের ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী ভুগছে
নাসরুল আনোয়ার ও শরীফ শাওন

ছয় বছরেও সরকারীকরণের চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় ৩২৪টি কলেজের প্রায় ১০ লাখ শিক্ষার্থী আর্থিকভাবে বঞ্চিত হচ্ছে এবং শিক্ষা সংকটে ভুগছে। সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেশি বেতন দিতে হচ্ছে তাদের। আবার সরকারীকরণ প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ থাকায় তাদের পড়ালেখা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
২০১৬ সালে ৩২৪টি কলেজকে সরকারি করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
সরকারীকরণের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানগুলো ‘ডিড অব গিফট’ স্বাক্ষর করায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এসব প্রতিষ্ঠানে নিজ উদ্যোগে শিক্ষক নিয়োগ এবং অর্থ ব্যয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ফলে কার্যত স্থবির হয়ে আছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির (সকশিস) তথ্য মতে, নতুন সরকারি করা কলেজগুলো থেকে গত ছয় বছরে প্রায় চার হাজার ২১৬ শিক্ষক-কর্মচারী অবসরে গেছেন। এর মধ্যে শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার ২৭৮। এসব কলেজে এখনো প্রায় ১৫ হাজার ৫৫৬ শিক্ষক-কর্মচারী বেসরকারিই রয়ে গেছেন। এর মধ্যে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার ৬৯৩।
সকশিসের সভাপতি মো. জহুরুল ইসলাম জানান, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জসহ ২৩টি কলেজের মধ্যে ২২টির শিক্ষক-কর্মচারীরা আর্থিক সুবিধা পাননি। আবার অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীরা বেসরকারি আমলে যে স্কেলে বেতন পেতেন, তাঁদের গ্রেড দুটি স্তরে অবনমন করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জে ১১টি সরকারি কলেজে কর্মরত শিক্ষকের প্রায় ৫০ জন অবসরে গেছেন। এসব শিক্ষক শুধু সরকারি সুযোগ থেকে বঞ্চিত হননি, বরং বাড়িভাড়াসহ বেসরকারি কোনো ভাতাও জোটেনি তাঁদের ভাগ্যে।
শিক্ষকদের অভিযোগ, সরকারীকরণের প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় বেসরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা। বহু শিক্ষক অবসরে গেলেও নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ করা যাচ্ছে না। খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান করা হচ্ছে। আবার এসব প্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা সরকারি অংশের টাকা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। শিক্ষকদের গ্রেড অবনমন করা হচ্ছে।
গাজীপুরের কাপাসিয়া শহীদ তাজউদ্দীন সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষক নিয়োগ আমাদের হাতে না থাকায় বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির চারটি বিভাগ শিক্ষকশূন্য। এ ছাড়া ১০টি পদ খালি। খণ্ডকালীন আটজন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান করা হচ্ছে। ’
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ নেই সাত বছর। উপাধ্যক্ষ পদ শূন্য ১৮ বছর ধরে। সাতটি সহকারী অধ্যাপকের পদ শূন্য। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে একজন শিক্ষকও নেই। একজন করে শিক্ষক দিয়ে চলছে বাংলা, গণিত, অর্থনীতি, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষকসংকটে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থীর পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে।
বাজিতপুর সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মজিবুল হক জানান, গত ছয় বছরে ১৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী অবসরে গেছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞার কারণে নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যায়নি। শিক্ষকের অভাবে লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে।
শিক্ষকসংকটের মধ্য আছে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা কলেজ, ময়মনসিংহের নকলা কলেজ, রাজশাহীর চারঘাটের সরদহ কলেজ, নেত্রকোনার কেন্দুয়া কলেজ, রংপুরের পীরগাছা কলেজ এবং নরসিংদীর রায়পুরা কলেজ। এই সংকটের কারণে কেন্দুয়া কলেজের প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থী, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর কলেজের চার হাজার শিক্ষার্থী, রংপুরের পীরগাছা কলেজের প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থীর পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সরকারি কলেজ শাখার উপপরিচালক মো. ওয়াহিদুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকারীকরণের ঘোষণা এলে আমরা এসব প্রতিষ্ঠানে তথ্য যাচাই করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। আশা করছি, শিগগিরই সরকারীকরণের কাজ শেষ হবে। ’ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ফজলুর রহমান জানান, অবসরে যাওয়া শিক্ষকদের বাইরেও এসব প্রতিষ্ঠানে অনেক শিক্ষক রয়েছেন। পরবর্তী সময়ে সিনিয়র শিক্ষকদের দিয়ে শূন্যপদ পূরণ করা হচ্ছে।
অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষকস্বল্পতা বা শূন্যতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে এসব বিভাগে বিসিএস ক্যাডারভুক্ত শিক্ষক দিয়ে দেব। কোনো বিভাগ শূন্য রাখব না। ’

৩২৪ কলেজের ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী ভুগছে
নাসরুল আনোয়ার ও শরীফ শাওন

ছয় বছরেও সরকারীকরণের চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় ৩২৪টি কলেজের প্রায় ১০ লাখ শিক্ষার্থী আর্থিকভাবে বঞ্চিত হচ্ছে এবং শিক্ষা সংকটে ভুগছে। সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেশি বেতন দিতে হচ্ছে তাদের। আবার সরকারীকরণ প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ থাকায় তাদের পড়ালেখা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
২০১৬ সালে ৩২৪টি কলেজকে সরকারি করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
সরকারীকরণের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানগুলো ‘ডিড অব গিফট’ স্বাক্ষর করায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এসব প্রতিষ্ঠানে নিজ উদ্যোগে শিক্ষক নিয়োগ এবং অর্থ ব্যয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ফলে কার্যত স্থবির হয়ে আছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির (সকশিস) তথ্য মতে, নতুন সরকারি করা কলেজগুলো থেকে গত ছয় বছরে প্রায় চার হাজার ২১৬ শিক্ষক-কর্মচারী অবসরে গেছেন। এর মধ্যে শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার ২৭৮। এসব কলেজে এখনো প্রায় ১৫ হাজার ৫৫৬ শিক্ষক-কর্মচারী বেসরকারিই রয়ে গেছেন। এর মধ্যে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার ৬৯৩।
সকশিসের সভাপতি মো. জহুরুল ইসলাম জানান, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জসহ ২৩টি কলেজের মধ্যে ২২টির শিক্ষক-কর্মচারীরা আর্থিক সুবিধা পাননি। আবার অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীরা বেসরকারি আমলে যে স্কেলে বেতন পেতেন, তাঁদের গ্রেড দুটি স্তরে অবনমন করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জে ১১টি সরকারি কলেজে কর্মরত শিক্ষকের প্রায় ৫০ জন অবসরে গেছেন। এসব শিক্ষক শুধু সরকারি সুযোগ থেকে বঞ্চিত হননি, বরং বাড়িভাড়াসহ বেসরকারি কোনো ভাতাও জোটেনি তাঁদের ভাগ্যে।
শিক্ষকদের অভিযোগ, সরকারীকরণের প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় বেসরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা। বহু শিক্ষক অবসরে গেলেও নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ করা যাচ্ছে না। খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান করা হচ্ছে। আবার এসব প্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা সরকারি অংশের টাকা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। শিক্ষকদের গ্রেড অবনমন করা হচ্ছে।
গাজীপুরের কাপাসিয়া শহীদ তাজউদ্দীন সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষক নিয়োগ আমাদের হাতে না থাকায় বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির চারটি বিভাগ শিক্ষকশূন্য। এ ছাড়া ১০টি পদ খালি। খণ্ডকালীন আটজন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান করা হচ্ছে। ’
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ নেই সাত বছর। উপাধ্যক্ষ পদ শূন্য ১৮ বছর ধরে। সাতটি সহকারী অধ্যাপকের পদ শূন্য। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে একজন শিক্ষকও নেই। একজন করে শিক্ষক দিয়ে চলছে বাংলা, গণিত, অর্থনীতি, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষকসংকটে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থীর পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে।
বাজিতপুর সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মজিবুল হক জানান, গত ছয় বছরে ১৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী অবসরে গেছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞার কারণে নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যায়নি। শিক্ষকের অভাবে লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে।
শিক্ষকসংকটের মধ্য আছে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা কলেজ, ময়মনসিংহের নকলা কলেজ, রাজশাহীর চারঘাটের সরদহ কলেজ, নেত্রকোনার কেন্দুয়া কলেজ, রংপুরের পীরগাছা কলেজ এবং নরসিংদীর রায়পুরা কলেজ। এই সংকটের কারণে কেন্দুয়া কলেজের প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থী, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর কলেজের চার হাজার শিক্ষার্থী, রংপুরের পীরগাছা কলেজের প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থীর পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সরকারি কলেজ শাখার উপপরিচালক মো. ওয়াহিদুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকারীকরণের ঘোষণা এলে আমরা এসব প্রতিষ্ঠানে তথ্য যাচাই করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। আশা করছি, শিগগিরই সরকারীকরণের কাজ শেষ হবে। ’ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ফজলুর রহমান জানান, অবসরে যাওয়া শিক্ষকদের বাইরেও এসব প্রতিষ্ঠানে অনেক শিক্ষক রয়েছেন। পরবর্তী সময়ে সিনিয়র শিক্ষকদের দিয়ে শূন্যপদ পূরণ করা হচ্ছে।
অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষকস্বল্পতা বা শূন্যতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে এসব বিভাগে বিসিএস ক্যাডারভুক্ত শিক্ষক দিয়ে দেব। কোনো বিভাগ শূন্য রাখব না। ’