৩৪ বছর পর স্বপ্নপূরণ, এসএসসি পাস করলেন কৃষক
বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি

রাজশাহীর বাঘায় ছেলের সাথে বাবা এসএসসি পাস করলেন। বাবা সফের উদ্দিন মন্ডল ৩৪ বছর আগে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করেছিলেন। ওই সময় পরীক্ষার ঠিক আগে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে গ্রামে মারামারির ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় মামলা হয়।
মামলা মেটাতে প্রতিপক্ষের পরিবারের মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু পরীক্ষা আর দেওয়া হয়নি। বুকের ভেতরে সেই আক্ষেপ ছিলই। এবার তিনি সুযোগ পেয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তবে একইসঙ্গে তার ছোট ছেলেও পরীক্ষা দিয়েছিল। বাবা-ছেলে দুজনই উত্তীর্ণ হয়েছেন। অবশ্য পরীক্ষায় ছেলের চেয়ে বাবাই ভালো ফলাফল করেছেন।
সফের উদ্দিনের বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চাঁদপুর গ্রামে। তার বয়স হয়েছে ৫১ বছর। তার তিন ছেলে-মেয়ের মধ্যে ছোট ছেলে আবুল কালামও এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। তবে বাবা ও ছেলে দুই প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। বাবা দিয়েছিলেন পার্শ্বর্বর্তী লালপুর উপজেলার মনিহারপুর-রামকৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। ওই বিদ্যালয়ে কারগরি শাখাও রয়েছে। সফের উদ্দিন কারিগরী শাখা থেকে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। আর ছেলে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে বাঘা উপজেলার খানপুর জেপি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। বাবার প্রাপ্ত জিপিএ ৪ দশমিক ৬১। আর ছেলের পেয়েছে ৪ দশমিক ৬।
সফের উদ্দিন একজন কৃষক। তার তিন ছেলে মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে হাজেরা খাতুন ও বড় ছেলে আব্দুস সালাম এইচএসসি পাস করেছেন। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলে পড়াশোনা করছে।
মনিহারপুর-রামকৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক লুৎফর রহমান বলেন, তার শিক্ষকতা জীবনে সফের উদ্দিনের মতো ছাত্র কোনদিন পাননি। ৫১ বছর বয়সে তিনি এসএসসি পাস করলেন। তার মনের মধ্যে পড়াশোনা করার প্রবল ইচ্ছা ছিল। পারিবারিক সমস্যার কারণে এতদিন সেটি হয়নি। এবার তিনি সফল হয়েছেন।
গত বুধবার (৭ ডিসেম্বর) রাতে চাঁদপুর গ্রামে সফের উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়। আধাপাকা বাড়ি। তিনি একজন সচ্ছল কৃষক। তার দুই ছেলেও বাড়িতে ছিল। বাবার পড়াশোনা নিয়ে তাদেরও আগ্রহ রয়েছে।
সফের উদ্দিন বললেন, বাঘা উপজেলার জোতরাঘব উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য তিনি ফরম পূরণ করেছিলেন। সেটা ১৯৮৮ সালের কথা। পরীক্ষার ঠিক আগে বাঘা উপজেলার গড়গড়ি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হলো। সেই নির্বাচনে একজন চেয়ারম্যান প্রার্থীকে ভোট দেওয়া, না দেওয়া নিয়ে এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। সেই মারামারির মামলায় তাকে আসামি করা হলো। পালিয়ে বেড়ানোর কারণে তিনি আর পরীক্ষায় বসতে পারলেন না। পরে এই মামলা নিষ্পত্তির জন্য এলাকাবাসী প্রতিপক্ষের পরিবারের মেয়ের সঙ্গে তাকে বিয়ে দেন। বিয়ে করে মামলা নিষ্পত্তি হলো। কিন্তু পড়াশোনা থেমে গেল। সংসার শুরু করে দিলেন। আর পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেলেন না। এরই মধ্যে তিন ছেলে-মেয়ে হলো। তাদের পড়াশোনা শুরু হলো।
এতদিনে তার সংসারে সচ্ছলতা এসেছে, পড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাই তিনি পরীক্ষা দিয়েছেন। এ জন্য নবম শ্রেণিতে নাম নিবন্ধন করাতে হয়েছিল। আরো পড়াশোনা করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার ইচ্ছা রয়েছে। তবে সংসার করে পড়াশোনা করা কঠিন। এ জন্য সবাই তাকে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এইচএসসিতে ভর্তি হওয়ার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। তিনি খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। তিনি আগামীতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সাধারণ সদস্য পদে নির্বাচন করবেন বলে জানান।

৩৪ বছর পর স্বপ্নপূরণ, এসএসসি পাস করলেন কৃষক
বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি

রাজশাহীর বাঘায় ছেলের সাথে বাবা এসএসসি পাস করলেন। বাবা সফের উদ্দিন মন্ডল ৩৪ বছর আগে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করেছিলেন। ওই সময় পরীক্ষার ঠিক আগে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে গ্রামে মারামারির ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় মামলা হয়।
মামলা মেটাতে প্রতিপক্ষের পরিবারের মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু পরীক্ষা আর দেওয়া হয়নি। বুকের ভেতরে সেই আক্ষেপ ছিলই। এবার তিনি সুযোগ পেয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তবে একইসঙ্গে তার ছোট ছেলেও পরীক্ষা দিয়েছিল। বাবা-ছেলে দুজনই উত্তীর্ণ হয়েছেন। অবশ্য পরীক্ষায় ছেলের চেয়ে বাবাই ভালো ফলাফল করেছেন।
সফের উদ্দিনের বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চাঁদপুর গ্রামে। তার বয়স হয়েছে ৫১ বছর। তার তিন ছেলে-মেয়ের মধ্যে ছোট ছেলে আবুল কালামও এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। তবে বাবা ও ছেলে দুই প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। বাবা দিয়েছিলেন পার্শ্বর্বর্তী লালপুর উপজেলার মনিহারপুর-রামকৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। ওই বিদ্যালয়ে কারগরি শাখাও রয়েছে। সফের উদ্দিন কারিগরী শাখা থেকে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। আর ছেলে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে বাঘা উপজেলার খানপুর জেপি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। বাবার প্রাপ্ত জিপিএ ৪ দশমিক ৬১। আর ছেলের পেয়েছে ৪ দশমিক ৬।
সফের উদ্দিন একজন কৃষক। তার তিন ছেলে মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে হাজেরা খাতুন ও বড় ছেলে আব্দুস সালাম এইচএসসি পাস করেছেন। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলে পড়াশোনা করছে।
মনিহারপুর-রামকৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক লুৎফর রহমান বলেন, তার শিক্ষকতা জীবনে সফের উদ্দিনের মতো ছাত্র কোনদিন পাননি। ৫১ বছর বয়সে তিনি এসএসসি পাস করলেন। তার মনের মধ্যে পড়াশোনা করার প্রবল ইচ্ছা ছিল। পারিবারিক সমস্যার কারণে এতদিন সেটি হয়নি। এবার তিনি সফল হয়েছেন।
গত বুধবার (৭ ডিসেম্বর) রাতে চাঁদপুর গ্রামে সফের উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়। আধাপাকা বাড়ি। তিনি একজন সচ্ছল কৃষক। তার দুই ছেলেও বাড়িতে ছিল। বাবার পড়াশোনা নিয়ে তাদেরও আগ্রহ রয়েছে।
সফের উদ্দিন বললেন, বাঘা উপজেলার জোতরাঘব উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য তিনি ফরম পূরণ করেছিলেন। সেটা ১৯৮৮ সালের কথা। পরীক্ষার ঠিক আগে বাঘা উপজেলার গড়গড়ি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হলো। সেই নির্বাচনে একজন চেয়ারম্যান প্রার্থীকে ভোট দেওয়া, না দেওয়া নিয়ে এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। সেই মারামারির মামলায় তাকে আসামি করা হলো। পালিয়ে বেড়ানোর কারণে তিনি আর পরীক্ষায় বসতে পারলেন না। পরে এই মামলা নিষ্পত্তির জন্য এলাকাবাসী প্রতিপক্ষের পরিবারের মেয়ের সঙ্গে তাকে বিয়ে দেন। বিয়ে করে মামলা নিষ্পত্তি হলো। কিন্তু পড়াশোনা থেমে গেল। সংসার শুরু করে দিলেন। আর পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেলেন না। এরই মধ্যে তিন ছেলে-মেয়ে হলো। তাদের পড়াশোনা শুরু হলো।
এতদিনে তার সংসারে সচ্ছলতা এসেছে, পড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাই তিনি পরীক্ষা দিয়েছেন। এ জন্য নবম শ্রেণিতে নাম নিবন্ধন করাতে হয়েছিল। আরো পড়াশোনা করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার ইচ্ছা রয়েছে। তবে সংসার করে পড়াশোনা করা কঠিন। এ জন্য সবাই তাকে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এইচএসসিতে ভর্তি হওয়ার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। তিনি খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। তিনি আগামীতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সাধারণ সদস্য পদে নির্বাচন করবেন বলে জানান।