রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

উত্তর জনপদের প্রকৌশল শিক্ষার বাতিঘর

মো. আশিকুর রহমান

রুয়েটের প্রধান প্রবেশ পথ। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) দেশের প্রকৌশল শিক্ষার দ্বিতীয় প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান। প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিষয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য স্থাপিত এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টি রাজশাহী শহর থেকে পাঁচ কিমি পূর্ব দিকে কাজলা এলাকায় রাজশাহী-নাটোর-ঢাকা মহাসড়কের পাশে ১৫০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত।

যাত্রা শুরু
১৯৬৪ সালে প্রকৌশল মহাবিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু। সে সময় ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের আওতায় সিভিল, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস এবং মেকানিক্যাল বিভাগে ১২২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। চার বছরের ব্যাচেলর ডিগ্রি কোর্স চালু হয়। ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৬ সালে স্বায়ত্তশাসন লাভ করে। ২০০৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের ৩২ নম্বর আইনের অধীনে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

বিভাগ ও অনুষদ
বর্তমানে চারটি অনুষদের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এই অনুষদগুলোর আওতায় আছে ১৮টি বিভাগ। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৫ হাজার ৬৫০।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন
রুয়েট ক্যাম্পাসে ১৫টির বেশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সক্রিয় আছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রুয়েট ক্যারিয়ার ফোরাম, আইইইই রুয়েট স্টুডেন্ট ব্রাঞ্চ, অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড সায়েন্স সোসাইটি অব রুয়েট, সমানুপাতিক, রোবটিক সোসাইটি অব রুয়েট, অনুরণন কালচারাল ক্লাব অব রুয়েট, রুয়েট ইংলিশ ক্লাব, রুয়েট ডিবেটিং ক্লাব, সোসাইটি অব মোটিভেটিভ ইঞ্জিনিয়ার্স অব রুয়েট, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং সোসাইটি অব রুয়েট, আর্থকোয়াক সোসাইটি অব রুয়েট, রুয়েট ফুটবল ক্লাব, রুয়েট ক্রিকেট ক্লাব, টিম ক্রাক প্লাটুনস, নিরাপদ রক্তের বন্ধন, রুয়েট আইপিই ক্লাব ও ফটোগ্রাফিক সোসাইটি অব রুয়েট।

আবাসন সুবিধা
ক্যাম্পাসের ছাত্রদের জন্য ছয়টি ও ছাত্রীদের একটি আবাসিক হল রয়েছে। শহীদ লে. সেলিম হল, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান হল, শহীদ শহিদুল ইসলাম হল, শহীদ আব্দুল হামিদ হল, টিনশেড হল, দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল নামের হল রয়েছে রুয়েটে।

ল্যাবের সুবিধা
তথ্যপ্রযুক্তিতে উদ্ভাবনী নানা কর্মসম্পাদন করে দেশকে আরও এগিয়ে নিতে গবেষণার জন্য রুয়েটে অত্যাধুনিক বেশ কিছু ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে এবং কিছু চলমান রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মোবাইল গেমস অ্যান্ড অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট ল্যাব, হাইভোল্টেজ ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাব, রাডার অ্যান্ড স্যাটেলাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাব, অত্যাধুনিক ইলেকট্রিক্যাল মেশিন অ্যান্ড পাওয়ার সিস্টেম ল্যাব, হাই কম্পিউটিং ল্যাব, আইওটি ল্যাব, ন্যানো টেকনোলজি ল্যাব, রোবটিকস ল্যাব ইত্যাদি।

গবেষণার সুবিধা
গবেষণার মাধ্যমে দেশের প্রতিদিনের কারিগরি সমস্যার সমাধান সম্ভব। ফলে গবেষণা ও সম্প্রসারণ দপ্তরকে আরও অগ্রণী ভূমিকা পালনে সার্বিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করে রুয়েট প্রশাসন। এতে প্রকৌশল, প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও শিক্ষা-সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা প্রকল্প আহ্বান, মঞ্জুরি ও পরিচালনা; দেশি-বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথ গবেষণা কর্মসূচি গ্রহণ; মেধার স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্দেশ্যে ফেলোশিপ, পুরস্কার ও পদক প্রবর্তন ও বিতরণ; গবেষণা উন্নয়নের জন্য কর্মশালা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম আয়োজন ও পরিচালনা; নিয়মিত গবেষণা পুস্তক ও জার্নাল প্রকাশ করা হয়। প্রতিবছর গবেষণা প্রকাশনার জন্য ভ্রমণভাতা, প্রকাশনা ব্যয় ও প্রকাশনা সম্মানীসহ গবেষণায় আগ্রহী করতে বিভিন্নভাবে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করছে প্রশাসন। এ ছাড়া গবেষণা ও শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে জাপান, কানাডা, ইউএসএ, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এমওইউ চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে রুয়েট।

উদ্ভাবন
মহামারি করোনাভাইরাসের ভয়াল ছোবলে যখন সংকটাপন্ন রোগীদের জীবন বাঁচাতে উৎকণ্ঠায় সময় পার করে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব, ঠিক তখনই দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাশ্রয়ী মূল্যে রুয়েটে দুটি ভেন্টিলেটর তৈরি করা হয়। প্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি করা অত্যাধুনিক হুইলচেয়ারও দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। ব্যবহারকারী মুখ দিয়ে কথা বললেই চলাচল করবে এ হুইলচেয়ার। এ ছাড়া অর্ধেক ঠান্ডা ও অর্ধেক গরম থাকবে—এমন ফ্রিজ তৈরিও রুয়েটের গবেষকদের একটি অভাবনীয় সাফল্য। অন্যদিকে, বিদেশের মতোই তবে দেশীয় প্রযুক্তি ও উপাদান দিয়ে তেল সাশ্রয়ী গাড়ি তৈরি করেছে রুয়েট। এই লো ফুয়েল গাড়ি জাপানে প্রতিযোগিতাতেও অংশ নেওয়ার গৌরব অর্জন করে। আবার অনেকে সফটওয়্যার, ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ তৈরিসহ প্রোগ্রামিংয়ের নানা ক্ষেত্রে সফলতা দেখাচ্ছেন।

অর্জন ও সুবিধা
সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত বুক চ্যাপ্টার, জার্নাল ও কনফারেন্স পেপারের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়েছে, এর মধ্যে ২০২১ সালে প্রকাশিত হয়েছে ৬০৯টি। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৮টি গবেষণা প্রকল্প সম্পাদিত হয়েছে। সম্প্রতি ১০টির বেশি আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়েছে।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় রুয়েটের শিক্ষার্থীদের সাফল্যের মধ্যে রয়েছে ভেন্টিলেটর নির্মাণ (ইউজিসি আয়োজিত ফোরআইআর কনফারেন্সে বিজয়ী), ফর্মুলা কার প্রতিযোগিতার জন্য জ্বালানি সাশ্রয়ী রেসিং কার উদ্ভাবন, প্রোগ্রামিং কনটেস্টে ওয়ার্ল্ড ফাইনালিস্ট হওয়ার গৌরব অর্জন ইত্যাদি। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে জাইকা আয়োজিত ইকো-রান কম্পিটিশনে পুরকৌশল বিভাগের দুটি দল তিন ও চার চাকা বিভাগে অংশ নিয়ে উভয় বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করে। ফুয়েল ইফিসিয়েন্ট বিভাগে পায় দ্বিতীয় স্থান।

২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের যন্ত্রকৌশল বিভাগের ছাত্র সাদলি সালাউদ্দিন বাংলায় কথা বলা রোবট তৈরি করেছেন। ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের যন্ত্রকৌশল বিভাগের ছাত্র সৌরভ ঘোষ স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপক রোবট তৈরি করেন। পুরকৌশল বিভাগের ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র আল হেলাল স্বল্প খরচে বানিয়েছেন দূরত্বমাপক যন্ত্র। অনেক শিক্ষার্থী নিজস্ব উদ্যোগে তৈরি করেছেন কোয়াড কপ্টার। এ ছাড়া রুয়েটের শিক্ষার্থীদের আরও নানা ধরনের আবিষ্কার আছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতায় রুয়েট শিক্ষার্থীদের সাফল্যের ধারা এখনো অব্যাহত আছে।

ড. মো. সাজ্জাদ হোসেনড. মো. সাজ্জাদ হোসেনরাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উত্তর জনপদের প্রকৌশল শিক্ষার বাতিঘর।

শুধু উত্তরাঞ্চলেই নয়, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আছে আমাদের সুনাম। আমরা বিশ্বায়ন, উদীয়মান উদ্ভাবন এবং জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করতে বদ্ধপরিকর।
রুয়েটের গ্র্যাজুয়েটদের তাদের অভিযোজন যোগ্যতা ও কর্মসংস্থানে টিকিয়ে রাখার জন্য, শেখার জন্য আমাদের নিরন্তর প্রচেষ্টা চলমান। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গবেষণার পাশাপাশি নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব দিন দিন আরও বৃদ্ধি করছেন। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার ডিজিটাল বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে পাশে থাকছে রুয়েট।

ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন,উপাচার্য (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

উত্তর জনপদের প্রকৌশল শিক্ষার বাতিঘর

মো. আশিকুর রহমান

রুয়েটের প্রধান প্রবেশ পথ। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) দেশের প্রকৌশল শিক্ষার দ্বিতীয় প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান। প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিষয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য স্থাপিত এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টি রাজশাহী শহর থেকে পাঁচ কিমি পূর্ব দিকে কাজলা এলাকায় রাজশাহী-নাটোর-ঢাকা মহাসড়কের পাশে ১৫০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত।

যাত্রা শুরু
১৯৬৪ সালে প্রকৌশল মহাবিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু। সে সময় ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের আওতায় সিভিল, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস এবং মেকানিক্যাল বিভাগে ১২২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। চার বছরের ব্যাচেলর ডিগ্রি কোর্স চালু হয়। ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৬ সালে স্বায়ত্তশাসন লাভ করে। ২০০৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের ৩২ নম্বর আইনের অধীনে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

বিভাগ ও অনুষদ
বর্তমানে চারটি অনুষদের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এই অনুষদগুলোর আওতায় আছে ১৮টি বিভাগ। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৫ হাজার ৬৫০।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন
রুয়েট ক্যাম্পাসে ১৫টির বেশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সক্রিয় আছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রুয়েট ক্যারিয়ার ফোরাম, আইইইই রুয়েট স্টুডেন্ট ব্রাঞ্চ, অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড সায়েন্স সোসাইটি অব রুয়েট, সমানুপাতিক, রোবটিক সোসাইটি অব রুয়েট, অনুরণন কালচারাল ক্লাব অব রুয়েট, রুয়েট ইংলিশ ক্লাব, রুয়েট ডিবেটিং ক্লাব, সোসাইটি অব মোটিভেটিভ ইঞ্জিনিয়ার্স অব রুয়েট, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং সোসাইটি অব রুয়েট, আর্থকোয়াক সোসাইটি অব রুয়েট, রুয়েট ফুটবল ক্লাব, রুয়েট ক্রিকেট ক্লাব, টিম ক্রাক প্লাটুনস, নিরাপদ রক্তের বন্ধন, রুয়েট আইপিই ক্লাব ও ফটোগ্রাফিক সোসাইটি অব রুয়েট।

আবাসন সুবিধা
ক্যাম্পাসের ছাত্রদের জন্য ছয়টি ও ছাত্রীদের একটি আবাসিক হল রয়েছে। শহীদ লে. সেলিম হল, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান হল, শহীদ শহিদুল ইসলাম হল, শহীদ আব্দুল হামিদ হল, টিনশেড হল, দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল নামের হল রয়েছে রুয়েটে।

ল্যাবের সুবিধা
তথ্যপ্রযুক্তিতে উদ্ভাবনী নানা কর্মসম্পাদন করে দেশকে আরও এগিয়ে নিতে গবেষণার জন্য রুয়েটে অত্যাধুনিক বেশ কিছু ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে এবং কিছু চলমান রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মোবাইল গেমস অ্যান্ড অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট ল্যাব, হাইভোল্টেজ ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাব, রাডার অ্যান্ড স্যাটেলাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাব, অত্যাধুনিক ইলেকট্রিক্যাল মেশিন অ্যান্ড পাওয়ার সিস্টেম ল্যাব, হাই কম্পিউটিং ল্যাব, আইওটি ল্যাব, ন্যানো টেকনোলজি ল্যাব, রোবটিকস ল্যাব ইত্যাদি।

গবেষণার সুবিধা
গবেষণার মাধ্যমে দেশের প্রতিদিনের কারিগরি সমস্যার সমাধান সম্ভব। ফলে গবেষণা ও সম্প্রসারণ দপ্তরকে আরও অগ্রণী ভূমিকা পালনে সার্বিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করে রুয়েট প্রশাসন। এতে প্রকৌশল, প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও শিক্ষা-সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা প্রকল্প আহ্বান, মঞ্জুরি ও পরিচালনা; দেশি-বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথ গবেষণা কর্মসূচি গ্রহণ; মেধার স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্দেশ্যে ফেলোশিপ, পুরস্কার ও পদক প্রবর্তন ও বিতরণ; গবেষণা উন্নয়নের জন্য কর্মশালা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম আয়োজন ও পরিচালনা; নিয়মিত গবেষণা পুস্তক ও জার্নাল প্রকাশ করা হয়। প্রতিবছর গবেষণা প্রকাশনার জন্য ভ্রমণভাতা, প্রকাশনা ব্যয় ও প্রকাশনা সম্মানীসহ গবেষণায় আগ্রহী করতে বিভিন্নভাবে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করছে প্রশাসন। এ ছাড়া গবেষণা ও শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে জাপান, কানাডা, ইউএসএ, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এমওইউ চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে রুয়েট।

উদ্ভাবন
মহামারি করোনাভাইরাসের ভয়াল ছোবলে যখন সংকটাপন্ন রোগীদের জীবন বাঁচাতে উৎকণ্ঠায় সময় পার করে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব, ঠিক তখনই দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাশ্রয়ী মূল্যে রুয়েটে দুটি ভেন্টিলেটর তৈরি করা হয়। প্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি করা অত্যাধুনিক হুইলচেয়ারও দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। ব্যবহারকারী মুখ দিয়ে কথা বললেই চলাচল করবে এ হুইলচেয়ার। এ ছাড়া অর্ধেক ঠান্ডা ও অর্ধেক গরম থাকবে—এমন ফ্রিজ তৈরিও রুয়েটের গবেষকদের একটি অভাবনীয় সাফল্য। অন্যদিকে, বিদেশের মতোই তবে দেশীয় প্রযুক্তি ও উপাদান দিয়ে তেল সাশ্রয়ী গাড়ি তৈরি করেছে রুয়েট। এই লো ফুয়েল গাড়ি জাপানে প্রতিযোগিতাতেও অংশ নেওয়ার গৌরব অর্জন করে। আবার অনেকে সফটওয়্যার, ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ তৈরিসহ প্রোগ্রামিংয়ের নানা ক্ষেত্রে সফলতা দেখাচ্ছেন।

অর্জন ও সুবিধা
সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত বুক চ্যাপ্টার, জার্নাল ও কনফারেন্স পেপারের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়েছে, এর মধ্যে ২০২১ সালে প্রকাশিত হয়েছে ৬০৯টি। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৮টি গবেষণা প্রকল্প সম্পাদিত হয়েছে। সম্প্রতি ১০টির বেশি আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়েছে।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় রুয়েটের শিক্ষার্থীদের সাফল্যের মধ্যে রয়েছে ভেন্টিলেটর নির্মাণ (ইউজিসি আয়োজিত ফোরআইআর কনফারেন্সে বিজয়ী), ফর্মুলা কার প্রতিযোগিতার জন্য জ্বালানি সাশ্রয়ী রেসিং কার উদ্ভাবন, প্রোগ্রামিং কনটেস্টে ওয়ার্ল্ড ফাইনালিস্ট হওয়ার গৌরব অর্জন ইত্যাদি। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে জাইকা আয়োজিত ইকো-রান কম্পিটিশনে পুরকৌশল বিভাগের দুটি দল তিন ও চার চাকা বিভাগে অংশ নিয়ে উভয় বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করে। ফুয়েল ইফিসিয়েন্ট বিভাগে পায় দ্বিতীয় স্থান।

২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের যন্ত্রকৌশল বিভাগের ছাত্র সাদলি সালাউদ্দিন বাংলায় কথা বলা রোবট তৈরি করেছেন। ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের যন্ত্রকৌশল বিভাগের ছাত্র সৌরভ ঘোষ স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপক রোবট তৈরি করেন। পুরকৌশল বিভাগের ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র আল হেলাল স্বল্প খরচে বানিয়েছেন দূরত্বমাপক যন্ত্র। অনেক শিক্ষার্থী নিজস্ব উদ্যোগে তৈরি করেছেন কোয়াড কপ্টার। এ ছাড়া রুয়েটের শিক্ষার্থীদের আরও নানা ধরনের আবিষ্কার আছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতায় রুয়েট শিক্ষার্থীদের সাফল্যের ধারা এখনো অব্যাহত আছে।

ড. মো. সাজ্জাদ হোসেনড. মো. সাজ্জাদ হোসেনরাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উত্তর জনপদের প্রকৌশল শিক্ষার বাতিঘর।

শুধু উত্তরাঞ্চলেই নয়, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আছে আমাদের সুনাম। আমরা বিশ্বায়ন, উদীয়মান উদ্ভাবন এবং জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করতে বদ্ধপরিকর।
রুয়েটের গ্র্যাজুয়েটদের তাদের অভিযোজন যোগ্যতা ও কর্মসংস্থানে টিকিয়ে রাখার জন্য, শেখার জন্য আমাদের নিরন্তর প্রচেষ্টা চলমান। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গবেষণার পাশাপাশি নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব দিন দিন আরও বৃদ্ধি করছেন। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার ডিজিটাল বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে পাশে থাকছে রুয়েট।

ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন,উপাচার্য (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়