এবার শামুক ও কাঁকড়ায় প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণার সন্ধান

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, জাবি

 

মাটি, পানি, চা, চিনি, লবণ, মাছের পর শামুক ও কাঁকড়ায় মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের একদল গবেষক। গবেষকরা বলছেন, মাইক্রোপ্লাস্টিক বা প্লাস্টিকের এই ক্ষুদ্র কণা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে উঠতে পারে। এখনই এর লাগাম টানা না গেলে ভবিষ্যতে আরও অনেক বেশি জটিলতার মুখোমুখি হতে হবে।

এই গবেষণা রিপোর্টটি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক জার্নাল সায়েন্স অব দ্য টোটাল এনভায়রনমেন্টে প্রকাশিত হয়েছে।গবেষণাটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান, শিক্ষার্থী মো. রাশেদুল হক ও ওয়াহিদা আহমেদ। গবেষণায় তারা বুড়িগঙ্গা নদীর মাটি, পানি, ১১ প্রজাতির মাছ, শামুক এবং কাঁকড়া ব্যবহার করেছেন। যেখানে তারা ক্ষতিকর মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি খুঁজে পেয়েছেন।

গবেষক দলের প্রধান পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মাইক্রোপ্লাস্টিক আমাদের খাদ্য জালে প্রবেশের ফলে খাদ্য জালের প্রতিটি উপাদান এবং মানব প্রজাতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মাইক্রোপ্লাস্টিক সাধারণত কোষ ক্ষতিগ্রস্ত, ইমিউনোলজিক্যাল পরিবর্তন, জিনোটক্সিসিটি, এন্ডোক্রাইনে ব্যাঘাত, নিউরোটক্সিসিটি, প্রজনন অস্বাভাবিকতা, আচরণগত পরিবর্তন সাধন করে।মাইক্রোপ্লাস্টিক হচ্ছে প্লাস্টিকের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা। আকারে এটি সর্বোচ্চ পাঁচ মিলিমিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে।বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক বর্জ্য পানিতে ফেলে দিলে সেসব ফটোকেমিক্যালি ও বায়োলজিক্যালি ভেঙে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়।

অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্য ব্যবহার করি, যেমন টুথপেস্ট, ফেসওয়াশ, যেগুলোতে ছোট ছোট বীজ থাকে। এগুলো আসলে মাইক্রোপ্লাস্টিক বা প্লাস্টিকের বীজ। এগুলো পানিতে চলে যায়, মাটিতে মিশে যায়। এই ক্ষুদ্র কণাগুলো এক সময় মানবদেহসহ প্রকৃতির আরও নানা অংশে মিশে যায়। প্লাস্টিকের এই ক্ষুদ্র কণা যেটাকে আমরা মাইক্রোপ্লাস্টিক বলছি সেটা আমাদের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। আমরা তাৎক্ষণিক এই ক্ষতির মাত্রা নির্ধারণ করতে না পারলেও তার সুদুরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে।

গবেষক দলটি গবেষণা পরিচালনা করার জন্য বুড়িগঙ্গা নদী থেকে ৫টি কাঁকড়া, ৪টি শামুক ও ৭০টা মাছ সংগ্রহ করে। সংগ্রহ করা মাছের মধ্যে ছিলো পুঁটি, পাবদা, সাকার, শিং, কাকিলা, মলা, টাটকিনি, বাছা, বাইম, কালবাউশ এবং কৈ।

গবেষণায় বুড়িগঙ্গা নদীর মাটি, পানি, ১১ প্রজাতির মাছ, শামুক এবং কাঁকড়াতে ক্ষতিকর মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি খুজেঁ পাওয়া যায়। এগুলোতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ ছিল পানিতে ০.১২-০.২৫ টি/মিলিলিটার, মাটিতে ৩.৫-৮.১৭ টি/গ্রাম, ১১ প্রজাতির মাছে ০.৬৫-৩.৮২ টি/গ্রাম, শামুকে ৩.৭৫-৪.২৮ টি/গ্রাম, এবং কাঁকড়াতে ০.৮৪-১.১২ টি/গ্রাম।

গবেষকরা বলছেন, এবারের গবেষণায় মাইক্রোপ্লাস্টিকের যে পরিমাণ ধরা পড়েছে তা বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের গবেষণা থেকে অনেক বেশি ছিল। নদীর পানি ও মাটিতে আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম এবং লেডের পরিমাণ ও পরিমাপ করেছেন তারা। সেখানে সব ভারী ধাতুর পরিমাণ পূর্বের গবেষণা থেকে তুলনামূলক অনেক বেশি ছিল বলে দাবি এই গবেষক দলের। এছাড়াও মাইক্রোপ্লাস্টিকের পৃষ্ঠতলে বিভিন্ন দূষক হেবিমেটাললের উপস্থিতি পেয়েছেন তারা। যার সম্মলিত ক্ষতির পরিমাণ আরও ভয়াবহ।

মাটিতে যার পরিমাণ ছিল আর্সেনিক ৩৭.৬৮ মিলিগ্রাম প্রতি কেজিতে, ক্রোমিয়ামের উপস্থিতি ছিল ১৫৩ মিলিগ্রাম প্রতি কেজিতে, কেডমিয়ামের উপস্থিতি ছিল ৮.৩২ মিলিগ্রাম প্রতি কেজিতে এবং লেডের উপস্থিতি ছিল ৮৭.১২ মিলিগ্রাম প্রতি কেজিতে।

অন্যদিকে পানিতে আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম, কেডমিয়াম ও লেডের উপস্থিতি ছিল যথাক্রমে ৩৬.৬২ মাইক্রোগ্রাম/লিটার, ১৪৬.৬৬ মাইক্রোগ্রাম/লিটার, ৮.১৬ মাইক্রোগ্রাম/লিটার, ৮১.৭২ মাইক্রোগ্রাম/ লিটারে। যা তূলণামূলক অনেক বেশি বলে মনে করছেন গবেষকরা।

গবেষক দলের আরেক সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রাশেদুল হক বলেন, বুড়িগঙ্গা নদী ঢাকার প্রাণ। ঢাকা ও আশপাশের মানুষের জীবন ও জীবিকা এ নদীর পানির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। আমাদের এই নদী ও সারা বিশ্বের জন্য মাইক্রোপ্লাস্টিক একটি নতুন দূষক। এরপর আবার মাইক্রোপ্লাস্টিক থেকে তৈরি হচ্ছে ন্যানো প্লাস্টিক। এর সম্মলিত ক্ষতির পরিমাণ হবে আরও ভায়াবহ। আমরা যদি এখনই প্লাস্টিকের নতুন উৎপাদন থেকে সরে এসে পুনঃব্যবহারে মনোনিবেশ না করি, তাহলে আমাদের অস্তিত্ব পৃথিবীতে হুমকির মুখোমুখি হবে। এর প্রভাব হবে অনেকটা রেডিয়েশনের প্রভাবের মতো। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মও এর ক্ষতিকর ফলাফল ভোগ করবে।

এবার শামুক ও কাঁকড়ায় প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণার সন্ধান

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, জাবি

 

মাটি, পানি, চা, চিনি, লবণ, মাছের পর শামুক ও কাঁকড়ায় মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের একদল গবেষক। গবেষকরা বলছেন, মাইক্রোপ্লাস্টিক বা প্লাস্টিকের এই ক্ষুদ্র কণা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে উঠতে পারে। এখনই এর লাগাম টানা না গেলে ভবিষ্যতে আরও অনেক বেশি জটিলতার মুখোমুখি হতে হবে।

এই গবেষণা রিপোর্টটি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক জার্নাল সায়েন্স অব দ্য টোটাল এনভায়রনমেন্টে প্রকাশিত হয়েছে।গবেষণাটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান, শিক্ষার্থী মো. রাশেদুল হক ও ওয়াহিদা আহমেদ। গবেষণায় তারা বুড়িগঙ্গা নদীর মাটি, পানি, ১১ প্রজাতির মাছ, শামুক এবং কাঁকড়া ব্যবহার করেছেন। যেখানে তারা ক্ষতিকর মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি খুঁজে পেয়েছেন।

গবেষক দলের প্রধান পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মাইক্রোপ্লাস্টিক আমাদের খাদ্য জালে প্রবেশের ফলে খাদ্য জালের প্রতিটি উপাদান এবং মানব প্রজাতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মাইক্রোপ্লাস্টিক সাধারণত কোষ ক্ষতিগ্রস্ত, ইমিউনোলজিক্যাল পরিবর্তন, জিনোটক্সিসিটি, এন্ডোক্রাইনে ব্যাঘাত, নিউরোটক্সিসিটি, প্রজনন অস্বাভাবিকতা, আচরণগত পরিবর্তন সাধন করে।মাইক্রোপ্লাস্টিক হচ্ছে প্লাস্টিকের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা। আকারে এটি সর্বোচ্চ পাঁচ মিলিমিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে।বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক বর্জ্য পানিতে ফেলে দিলে সেসব ফটোকেমিক্যালি ও বায়োলজিক্যালি ভেঙে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়।

অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্য ব্যবহার করি, যেমন টুথপেস্ট, ফেসওয়াশ, যেগুলোতে ছোট ছোট বীজ থাকে। এগুলো আসলে মাইক্রোপ্লাস্টিক বা প্লাস্টিকের বীজ। এগুলো পানিতে চলে যায়, মাটিতে মিশে যায়। এই ক্ষুদ্র কণাগুলো এক সময় মানবদেহসহ প্রকৃতির আরও নানা অংশে মিশে যায়। প্লাস্টিকের এই ক্ষুদ্র কণা যেটাকে আমরা মাইক্রোপ্লাস্টিক বলছি সেটা আমাদের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। আমরা তাৎক্ষণিক এই ক্ষতির মাত্রা নির্ধারণ করতে না পারলেও তার সুদুরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে।

গবেষক দলটি গবেষণা পরিচালনা করার জন্য বুড়িগঙ্গা নদী থেকে ৫টি কাঁকড়া, ৪টি শামুক ও ৭০টা মাছ সংগ্রহ করে। সংগ্রহ করা মাছের মধ্যে ছিলো পুঁটি, পাবদা, সাকার, শিং, কাকিলা, মলা, টাটকিনি, বাছা, বাইম, কালবাউশ এবং কৈ।

গবেষণায় বুড়িগঙ্গা নদীর মাটি, পানি, ১১ প্রজাতির মাছ, শামুক এবং কাঁকড়াতে ক্ষতিকর মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি খুজেঁ পাওয়া যায়। এগুলোতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ ছিল পানিতে ০.১২-০.২৫ টি/মিলিলিটার, মাটিতে ৩.৫-৮.১৭ টি/গ্রাম, ১১ প্রজাতির মাছে ০.৬৫-৩.৮২ টি/গ্রাম, শামুকে ৩.৭৫-৪.২৮ টি/গ্রাম, এবং কাঁকড়াতে ০.৮৪-১.১২ টি/গ্রাম।

গবেষকরা বলছেন, এবারের গবেষণায় মাইক্রোপ্লাস্টিকের যে পরিমাণ ধরা পড়েছে তা বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের গবেষণা থেকে অনেক বেশি ছিল। নদীর পানি ও মাটিতে আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম এবং লেডের পরিমাণ ও পরিমাপ করেছেন তারা। সেখানে সব ভারী ধাতুর পরিমাণ পূর্বের গবেষণা থেকে তুলনামূলক অনেক বেশি ছিল বলে দাবি এই গবেষক দলের। এছাড়াও মাইক্রোপ্লাস্টিকের পৃষ্ঠতলে বিভিন্ন দূষক হেবিমেটাললের উপস্থিতি পেয়েছেন তারা। যার সম্মলিত ক্ষতির পরিমাণ আরও ভয়াবহ।

মাটিতে যার পরিমাণ ছিল আর্সেনিক ৩৭.৬৮ মিলিগ্রাম প্রতি কেজিতে, ক্রোমিয়ামের উপস্থিতি ছিল ১৫৩ মিলিগ্রাম প্রতি কেজিতে, কেডমিয়ামের উপস্থিতি ছিল ৮.৩২ মিলিগ্রাম প্রতি কেজিতে এবং লেডের উপস্থিতি ছিল ৮৭.১২ মিলিগ্রাম প্রতি কেজিতে।

অন্যদিকে পানিতে আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম, কেডমিয়াম ও লেডের উপস্থিতি ছিল যথাক্রমে ৩৬.৬২ মাইক্রোগ্রাম/লিটার, ১৪৬.৬৬ মাইক্রোগ্রাম/লিটার, ৮.১৬ মাইক্রোগ্রাম/লিটার, ৮১.৭২ মাইক্রোগ্রাম/ লিটারে। যা তূলণামূলক অনেক বেশি বলে মনে করছেন গবেষকরা।

গবেষক দলের আরেক সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রাশেদুল হক বলেন, বুড়িগঙ্গা নদী ঢাকার প্রাণ। ঢাকা ও আশপাশের মানুষের জীবন ও জীবিকা এ নদীর পানির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। আমাদের এই নদী ও সারা বিশ্বের জন্য মাইক্রোপ্লাস্টিক একটি নতুন দূষক। এরপর আবার মাইক্রোপ্লাস্টিক থেকে তৈরি হচ্ছে ন্যানো প্লাস্টিক। এর সম্মলিত ক্ষতির পরিমাণ হবে আরও ভায়াবহ। আমরা যদি এখনই প্লাস্টিকের নতুন উৎপাদন থেকে সরে এসে পুনঃব্যবহারে মনোনিবেশ না করি, তাহলে আমাদের অস্তিত্ব পৃথিবীতে হুমকির মুখোমুখি হবে। এর প্রভাব হবে অনেকটা রেডিয়েশনের প্রভাবের মতো। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মও এর ক্ষতিকর ফলাফল ভোগ করবে।