কলেজ কেবল নামেই, লেখাপড়ায় ঠনঠন

মোশতাক আহমেদ

ফাইল ছবি: প্রথম আলো

এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সারা দেশ থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের ৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারেননি। গতবার এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল পাঁচটি।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর মালিবাগের এই কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা গেল, প্রতিষ্ঠানের আঙিনায় একদল অভিভাবক বসা, যাঁদের সঙ্গে রয়েছে শিশুরা। দোতলার অফিসকক্ষে গিয়ে কথা হয় একজন শিক্ষকের সঙ্গে। তিনি জানালেন, এখানে স্কুল ও কলেজ আলাদা চলে। এখন স্কুলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চলছে।

সেখান থেকে পরে স্কুলভবন লাগোয়া পাশের ঘরের একটি কক্ষে কলেজের অধ্যক্ষ সাহাবুদ্দিন মজুমদারের সঙ্গে কথা হয়। তিনি প্রথম আলোর কাছে দাবি করলেন, তাঁদের কলেজ থেকে এবার ২৭ জন শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করেছিলেন। কিন্তু পরীক্ষা দেন মাত্র তিনজন। তাঁর দাবি, বাকি পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র আসার পর তাঁদের বাড়িতে গিয়ে বুঝিয়েও পরীক্ষায় বসাতে পারেননি। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি চলছে ভাড়া করা এই বাড়িতে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি মিলিয়ে কলেজটিতে এখন ৩০ জন শিক্ষার্থী ও ২৪ জন শিক্ষক আছেন বলে জানালেন অধ্যক্ষ।

অবশ্য সরেজমিনে কলেজের অন্য কোনো শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে পাওয়া গেল না। অধ্যক্ষ বললেন, বিদ্যালয়ের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা থাকায় এদিন তাঁরা আসেননি।

শুধু ঢাকার এই কলেজটিই নয়, এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সারা দেশ থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের ৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারেননি। গতবার এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল পাঁচটি।

গত বুধবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির ফলাফলের তথ্য বলছে, শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৪৪টি ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন। এর মধ্যে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের ১৩টি, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের ৯টি, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ৮টি, যশোর শিক্ষা বোর্ডের ৬টি, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের ৫টি এবং ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের অধীন ৩টি কলেজ রয়েছে। অন্যদিকে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ৪টি মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন দুটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেননি।

সরেজমিনে কয়েকটি কলেজে দেখা গেছে, এগুলো মূলত নামকাওয়াস্তে চলছে। ঠিকমতো পড়াশোনা হয় না। পড়াশোনার সুযোগ–সুবিধাও কম। বেশির ভাগ কলেজেই পরীক্ষার্থী ছিলেন অল্প কয়েকজন। এমনকি কোনো কোনো কলেজ থেকে মাত্র একজন পরীক্ষা দিয়েছিলেন।

অভিযোগ আছে, এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘নানাভাবে’ পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতি পেয়ে যায়। কিন্তু সেগুলো পরে আর শিক্ষা বিভাগের পক্ষ থেকে তদারক করা হয় না। তখন প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের খেয়ালখুশিমতো চলে। অন্যদিকে অনেকেই ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি বা নামের জন্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। কিন্তু কলেজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য যেসব সুযোগ–সুবিধা নিশ্চিত করা দরকার, সে বিষয়ে তাঁরা মনোযোগী হন না।

এর আগেও বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় এ রকম কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম উঠে আসে। যেমন গত বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষাতেও ৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে একজনও পাস করেনি।

এবারের এইচএসসি ও সমমানের ফলাফলের তথ্য বলছে, এবার শূন্য পাসের বাইরেও ৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাসের হার ৫ শতাংশের মধ্যে। ১০টিতে পাসের হার ৫ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে। ৪৫টিতে পাসের হার ১০ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে। ৫১৯টিতে পাসের হার ২০ থেকে ৫০ শতাংশের মধ্যে। ৭ হাজার ১৭৮টিতে পাসের হার ৫০ থেকে ১০০ শতাংশের মধ্যে। আর ১ হাজার ৩৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সব শিক্ষার্থীই পাস করেছেন। ২০২১ সালের পরীক্ষায় এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল ১ হাজার ৯৩৪টি।

কলেজ কেবল নামেই, লেখাপড়ায় ঠনঠন

মোশতাক আহমেদ

ফাইল ছবি: প্রথম আলো

এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সারা দেশ থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের ৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারেননি। গতবার এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল পাঁচটি।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর মালিবাগের এই কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা গেল, প্রতিষ্ঠানের আঙিনায় একদল অভিভাবক বসা, যাঁদের সঙ্গে রয়েছে শিশুরা। দোতলার অফিসকক্ষে গিয়ে কথা হয় একজন শিক্ষকের সঙ্গে। তিনি জানালেন, এখানে স্কুল ও কলেজ আলাদা চলে। এখন স্কুলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চলছে।

সেখান থেকে পরে স্কুলভবন লাগোয়া পাশের ঘরের একটি কক্ষে কলেজের অধ্যক্ষ সাহাবুদ্দিন মজুমদারের সঙ্গে কথা হয়। তিনি প্রথম আলোর কাছে দাবি করলেন, তাঁদের কলেজ থেকে এবার ২৭ জন শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করেছিলেন। কিন্তু পরীক্ষা দেন মাত্র তিনজন। তাঁর দাবি, বাকি পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র আসার পর তাঁদের বাড়িতে গিয়ে বুঝিয়েও পরীক্ষায় বসাতে পারেননি। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি চলছে ভাড়া করা এই বাড়িতে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি মিলিয়ে কলেজটিতে এখন ৩০ জন শিক্ষার্থী ও ২৪ জন শিক্ষক আছেন বলে জানালেন অধ্যক্ষ।

অবশ্য সরেজমিনে কলেজের অন্য কোনো শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে পাওয়া গেল না। অধ্যক্ষ বললেন, বিদ্যালয়ের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা থাকায় এদিন তাঁরা আসেননি।

শুধু ঢাকার এই কলেজটিই নয়, এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সারা দেশ থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের ৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারেননি। গতবার এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল পাঁচটি।

গত বুধবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির ফলাফলের তথ্য বলছে, শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৪৪টি ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন। এর মধ্যে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের ১৩টি, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের ৯টি, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ৮টি, যশোর শিক্ষা বোর্ডের ৬টি, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের ৫টি এবং ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের অধীন ৩টি কলেজ রয়েছে। অন্যদিকে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ৪টি মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন দুটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেননি।

সরেজমিনে কয়েকটি কলেজে দেখা গেছে, এগুলো মূলত নামকাওয়াস্তে চলছে। ঠিকমতো পড়াশোনা হয় না। পড়াশোনার সুযোগ–সুবিধাও কম। বেশির ভাগ কলেজেই পরীক্ষার্থী ছিলেন অল্প কয়েকজন। এমনকি কোনো কোনো কলেজ থেকে মাত্র একজন পরীক্ষা দিয়েছিলেন।

অভিযোগ আছে, এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘নানাভাবে’ পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতি পেয়ে যায়। কিন্তু সেগুলো পরে আর শিক্ষা বিভাগের পক্ষ থেকে তদারক করা হয় না। তখন প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের খেয়ালখুশিমতো চলে। অন্যদিকে অনেকেই ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি বা নামের জন্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। কিন্তু কলেজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য যেসব সুযোগ–সুবিধা নিশ্চিত করা দরকার, সে বিষয়ে তাঁরা মনোযোগী হন না।

এর আগেও বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় এ রকম কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম উঠে আসে। যেমন গত বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষাতেও ৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে একজনও পাস করেনি।

এবারের এইচএসসি ও সমমানের ফলাফলের তথ্য বলছে, এবার শূন্য পাসের বাইরেও ৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাসের হার ৫ শতাংশের মধ্যে। ১০টিতে পাসের হার ৫ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে। ৪৫টিতে পাসের হার ১০ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে। ৫১৯টিতে পাসের হার ২০ থেকে ৫০ শতাংশের মধ্যে। ৭ হাজার ১৭৮টিতে পাসের হার ৫০ থেকে ১০০ শতাংশের মধ্যে। আর ১ হাজার ৩৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সব শিক্ষার্থীই পাস করেছেন। ২০২১ সালের পরীক্ষায় এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল ১ হাজার ৯৩৪টি।