কুবি সিন্ডিকেটে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত

জাভেদ রায়হান

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুনগত মান বৃদ্ধি লক্ষ্যে শিক্ষকদের পদন্নোতির জন্য এবং চাকুরী স্থায়ীকরণের জন্য নিয়োগপত্রে বর্ণিত গবেষণা প্রকাশনা বাধ্যতামূলক এবং তা অবশ্যই স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশিত হতে হবে। এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বপন চন্দ্র মজুমদার জানান, এটা এবার প্রথমবারের মত যুক্ত করা হয়েছে। আগে প্রিডেটরি জার্নালে যে কেউ গবেষণা প্রকাশ করে প্রমোশন নিয়ে নিত। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে লক্ষ্য সেটা অসম্পূর্ণ রয়ে যেত। আশা করি, আমরা উন্নত মানের গবেষণার মাধ্যমে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনে এগিয়ে নিব।

নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এন এম রবিউল আউয়াল চৌধুরী বলেন, আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রমোশনের ক্ষেত্রে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রিডেটরি জার্নাল আসলে কোনো জার্নালই না। এখানে টাকা দিয়েই গবেষণা ছাপানো যায়। পৃথিবীর কোথাও এই জার্নাল গ্রহণযোগ্য না। এখানে যা লিখা হয়, টাকা দিয়েই তা প্রকাশ করা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নামের পাশে যদি এই জার্নালের নাম থাকে তাহলে এটি খুবই অসম্মানজনক ভাবে দেখা হয়।
এই সিদ্ধান্তটি অনেক বোল্ড একটি সিদ্ধান্ত। আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষকের প্রিডেটরি জার্নালে গবেষণা প্রকাশ করে কোনো ধরনের প্রমোশন বা সুবিধা পাওয়া উচিত না।

সূত্র মতে জানা যায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৬ তম সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষকদের স্বীয় পদে চাকুরী স্থায়ীর জন্য চারটি শর্ত দেয়া হয়েছে। শর্তগুলো হলো- প্রিডেটরি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না, স্বীয় পদে চাকুরী স্থায়ীর জন্য নিয়োগপত্রে বর্ণিত গবেষণা প্রকাশনা অবশ্যই ইমপ্যাক্ট-ফ্যাক্টরসহ স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশিত হতে হবে,
স্থায়ী পদে চাকুরি স্থায়ীর আবেদন বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির মাধ্যমে প্রেরণ করতে হবে, ফার্স্ট অথর অথবা করস্পনডিং অথর ব্যতিত একই গবেষণা দিয়ে একাধিক শিক্ষকের স্থায়ী পদে চাকুরি স্থায়ীর আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না।

৮৬ তম সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ জন শিক্ষকদের স্বপদে চাকরি স্থায়ীকরণের বিষয়ে সুপারিশ করা হয় এর মধ্যে ১৭ জনের চাকরি স্থায়ীকরণ হলেও দুইজন শিক্ষকের স্বপদে চাকরি স্থায়ী হয়নি বলে জানা গেছে। এর মধ্যে একজন হলেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন। তার গবেষণাটি প্রিডেটরি জার্নালে প্রকাশিত হওয়ায় চাকুরি স্থায়ী হয়নি।

এই বিষয়ে অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘গবেষণা যত উন্নত হবে বিশ্ববিদ্যালয় তত উপরে যাবে, কিন্তু এটার জন্য যে লজিস্টিক সাপোর্ট এবং পরিবেশ তা এখনো হয়ে উঠেনি। সুযোগ সুবিধা দিয়ে তারপর বললে ঠিক আছে কিন্তু হুট করে বললে এটা কঠিন হয়ে যায়।’

প্রিডেটরি জার্নালে গবেষণা প্রকাশ করায় নিয়োগ স্থায়ী না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি আবেদন করেছি আরো আগে কিন্তু কোনো স্বীকৃত জার্নালে গবেষণা প্রকাশ করতে এই বিষয়টা এই সিন্ডিকেটে যুক্ত করা হয়েছে, আগে এটার কোনো উল্লেখ ছিলো না। আমি প্রকাশ করেছি কিন্তু পরে জানতে পেরেছি এটা প্রিডেটরি জার্নাল। এর জন্য উল্লেখ করে দেওয়া উচিত ছিলো, কোন কোন জার্নালে প্রকাশ হলে নিয়োগ স্থায়ীকরণ করা হবে।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে যে কোনো শিক্ষকের নিয়োগ স্থায়ী হতে গেলে তার প্রকাশিত গবেষণা ইম্প্যাক্ট-ফ্যাক্টরসহ স্বীকৃত কোন জার্নালে প্রকাশিত হতে হবে। কোনো প্রিডেটরি জার্নালে পাবলিশ করলে আপগ্রেডেশনে বিবেচনা করা হবে না। এর ফলে শিক্ষকরা ঐ ধরনের গবেষণায় নিয়োজিত হবে যা পজিটিভ প্রভাব ফেলবে এবং হাই কোয়ালিটি জার্নালে প্রকাশ করার জন্য প্রয়াস চালাবে। এরকম গবেষণা একজন শিক্ষককে যেমন দক্ষ করে তুলবে তেমনি শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হবে।’

এমবিএইচ/এসএস

কুবি সিন্ডিকেটে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত

জাভেদ রায়হান

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুনগত মান বৃদ্ধি লক্ষ্যে শিক্ষকদের পদন্নোতির জন্য এবং চাকুরী স্থায়ীকরণের জন্য নিয়োগপত্রে বর্ণিত গবেষণা প্রকাশনা বাধ্যতামূলক এবং তা অবশ্যই স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশিত হতে হবে। এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বপন চন্দ্র মজুমদার জানান, এটা এবার প্রথমবারের মত যুক্ত করা হয়েছে। আগে প্রিডেটরি জার্নালে যে কেউ গবেষণা প্রকাশ করে প্রমোশন নিয়ে নিত। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে লক্ষ্য সেটা অসম্পূর্ণ রয়ে যেত। আশা করি, আমরা উন্নত মানের গবেষণার মাধ্যমে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনে এগিয়ে নিব।

নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এন এম রবিউল আউয়াল চৌধুরী বলেন, আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রমোশনের ক্ষেত্রে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রিডেটরি জার্নাল আসলে কোনো জার্নালই না। এখানে টাকা দিয়েই গবেষণা ছাপানো যায়। পৃথিবীর কোথাও এই জার্নাল গ্রহণযোগ্য না। এখানে যা লিখা হয়, টাকা দিয়েই তা প্রকাশ করা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নামের পাশে যদি এই জার্নালের নাম থাকে তাহলে এটি খুবই অসম্মানজনক ভাবে দেখা হয়।
এই সিদ্ধান্তটি অনেক বোল্ড একটি সিদ্ধান্ত। আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষকের প্রিডেটরি জার্নালে গবেষণা প্রকাশ করে কোনো ধরনের প্রমোশন বা সুবিধা পাওয়া উচিত না।

সূত্র মতে জানা যায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৬ তম সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষকদের স্বীয় পদে চাকুরী স্থায়ীর জন্য চারটি শর্ত দেয়া হয়েছে। শর্তগুলো হলো- প্রিডেটরি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না, স্বীয় পদে চাকুরী স্থায়ীর জন্য নিয়োগপত্রে বর্ণিত গবেষণা প্রকাশনা অবশ্যই ইমপ্যাক্ট-ফ্যাক্টরসহ স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশিত হতে হবে,
স্থায়ী পদে চাকুরি স্থায়ীর আবেদন বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির মাধ্যমে প্রেরণ করতে হবে, ফার্স্ট অথর অথবা করস্পনডিং অথর ব্যতিত একই গবেষণা দিয়ে একাধিক শিক্ষকের স্থায়ী পদে চাকুরি স্থায়ীর আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না।

৮৬ তম সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ জন শিক্ষকদের স্বপদে চাকরি স্থায়ীকরণের বিষয়ে সুপারিশ করা হয় এর মধ্যে ১৭ জনের চাকরি স্থায়ীকরণ হলেও দুইজন শিক্ষকের স্বপদে চাকরি স্থায়ী হয়নি বলে জানা গেছে। এর মধ্যে একজন হলেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন। তার গবেষণাটি প্রিডেটরি জার্নালে প্রকাশিত হওয়ায় চাকুরি স্থায়ী হয়নি।

এই বিষয়ে অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘গবেষণা যত উন্নত হবে বিশ্ববিদ্যালয় তত উপরে যাবে, কিন্তু এটার জন্য যে লজিস্টিক সাপোর্ট এবং পরিবেশ তা এখনো হয়ে উঠেনি। সুযোগ সুবিধা দিয়ে তারপর বললে ঠিক আছে কিন্তু হুট করে বললে এটা কঠিন হয়ে যায়।’

প্রিডেটরি জার্নালে গবেষণা প্রকাশ করায় নিয়োগ স্থায়ী না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি আবেদন করেছি আরো আগে কিন্তু কোনো স্বীকৃত জার্নালে গবেষণা প্রকাশ করতে এই বিষয়টা এই সিন্ডিকেটে যুক্ত করা হয়েছে, আগে এটার কোনো উল্লেখ ছিলো না। আমি প্রকাশ করেছি কিন্তু পরে জানতে পেরেছি এটা প্রিডেটরি জার্নাল। এর জন্য উল্লেখ করে দেওয়া উচিত ছিলো, কোন কোন জার্নালে প্রকাশ হলে নিয়োগ স্থায়ীকরণ করা হবে।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে যে কোনো শিক্ষকের নিয়োগ স্থায়ী হতে গেলে তার প্রকাশিত গবেষণা ইম্প্যাক্ট-ফ্যাক্টরসহ স্বীকৃত কোন জার্নালে প্রকাশিত হতে হবে। কোনো প্রিডেটরি জার্নালে পাবলিশ করলে আপগ্রেডেশনে বিবেচনা করা হবে না। এর ফলে শিক্ষকরা ঐ ধরনের গবেষণায় নিয়োজিত হবে যা পজিটিভ প্রভাব ফেলবে এবং হাই কোয়ালিটি জার্নালে প্রকাশ করার জন্য প্রয়াস চালাবে। এরকম গবেষণা একজন শিক্ষককে যেমন দক্ষ করে তুলবে তেমনি শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হবে।’

এমবিএইচ/এসএস