গৌরব-ঐতিহ্যের ২৪ বছরে পবিপ্রবি

আশিকুর রহমান
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রকৃতির মনোলোভা সৌন্দর্যমণ্ডিত পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) নিজস্ব ঐতিহ্য ও স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ২৪ বছরে পদার্পণ করল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অবদানের জন্য আজ দেশ-বিদেশে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নিয়ে ‘শিক্ষা-শিক্ষাঙ্গন’-এর পবিপ্রবি প্রতিনিধি আশিকুর রহমান বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় হলো যেভাবে: একসময় পুরো বরিশাল বিভাগে ছিল না কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। সাগর-নদীঘেরা এবং অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এই বিপুল জনপদের উচ্চশিক্ষা অর্জন একরকম অসাধ্য ছিল। ৯০-এর দশকে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর প্রাণের দাবি হয়ে ওঠে পটুয়াখালী কৃষি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার। এই লক্ষ্যে স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন পরিষদ। পরিষদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৮ সালের ১৫ মার্চ সরকার পটুয়াখালী কৃষি কলেজকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীতকরণের ঘোষণা প্রদান করেন এবং ২০০০ সালের আজকের এই দিনে (৮ জুলাই) পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ২০০১ সালের ১২ জুলাই জাতীয় সংসদে পবিপ্রবি আইন পাস হয় এবং ২০০২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ‘পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ বাস্তব রূপ লাভ করে।

ক্যাম্পাস পরিচিতি: মূল ক্যাম্পাস ৭৭ একর ও বহিক্যাম্পাস (বাবুগঞ্জ, বরিশাল) ১২.৯৭ একরসহ মোট ৮৯.৯৭ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই দৃষ্টিনন্দন বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিশাল মনোরম ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসের উত্তর-পশ্চিমাংশে অত্যাধুনিক ছাত্র-ছাত্রী হল। এর পাশেই রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ এবং মসজিদের পাশে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র বা হেলথ কেয়ার সেন্টার। এর উল্টো দিকে রয়েছে গ্রন্থাগার ভবন আর ক্যাম্পাসের পশ্চিম অংশ জুড়ে রয়েছে বিস্তৃত খেলার মাঠ। রয়েছে লালকমল, নীলকমল, তরঙ্গতনু নামে বেশ কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন পুকুর। মূল ক্যাম্পাসের পূর্বদিকে পীরতলা বাজার পেরুলেই ৩৭ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত কৃষি গবেষণা খামার ও ছাত্র হল।

নীল কমল সেতু।

বর্তমান অবস্থা: বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পাবার পর এ পর্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে এ বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। বর্তমানে ৮টি অনুষদে ৪ হাজার ১৪৬ জন ছাত্রছাত্রী ২৫৩ জন শিক্ষক, ১৮৩ জন কর্মকর্তা ও ৫২২ জন কর্মচারী রয়েছে। কেবলমাত্র কৃষি অনুষদ নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে দেশ ও জাতির সময়োপযোগী চাহিদা পূরণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮টি অনুষদের অধীনে ৯টি ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের অন্যতম আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। মূল ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের জন্য ৫টি হল রয়েছে। বরিশালের বাবুগঞ্জের বহিস্থ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে আরো ২টি হল। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ ডিজিটাল লাইব্রেরি। লাইব্রেরি ভবনে ৫৫ হাজারেরও বেশি বিভিন্ন ধরনের বই, ইন্টারনেট ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক ভলিউম ও সাময়িকী রয়েছে। রয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাতায়াতের জন্য রয়েছে বাস, মিনিবাস ও মাইক্রোবাস এবং অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ডিজিটাল পরিচয়পত্র (ইলেকট্রনিক চিপ) করা হয়েছে। চলমান রয়েছে অটোমেশন প্রক্রিয়ার।

অবকাঠামো উন্নয়ন: অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলমান৷ এর মধ্যে ১০ তলা বিশিষ্ট শেখ হাসিনা হল এবং শেখ রাসেল হল, ১০ তলা ও ৬ তলাবিশিষ্ট দুটি একাডেমি ভবন, মুক্তমঞ্চ, মিনি স্টেডিয়াম, আধুনিক ব্যায়ামাগার, সবুজ বেষ্টনীবিশিষ্ট প্রাচীর নির্মাণসহ নানাবিধ অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলমান রয়েছে।

জয়বাংলা চত্বর।

গবেষণা কার্যক্রম: পবিপ্রবিতে বেশ কয়েকটি উন্নত ও উচ্চফলনশীল ফলের জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। যেগুলোর মধ্যে পিএসটিইউ বিলাতী গাব-১, পিএসটিইউ বিলাতী গাব-২, পিএসটিইউ ডেউয়া-১, পিএসটিইউ ডেউয়া-২, পিএসটিইউ বাতাবি লেবু-১, পিএসটিইউ কামরাঙ্গা-১, পিএসটিইউ কামরাঙ্গা-২, পিএসটিইউ তেঁতুল-১, পিএসটিইউ বৈচী-১ অন্যতম। এছাড়াও, উদ্ভিদ ও প্রাণী নিয়ে প্রায় দেড় শতাধিক গবেষণা চলমান। সমুদ্র সম্পদের যথাযথ ব্যবহার ও গবেষণার জন্য কাজ চলছে কুয়াকাটায় মেরিন ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউট স্থাপনের। কৃষিকে সমৃদ্ধ করতে প্রতিনিয়ত চলছে নানা ধরনের গবেষণা কার্যক্রম। এছাড়াও প্রোগাম বেজড গবেষণা কার্যক্রম এগিয়ে চলছে।

শিক্ষার মান: অত্যাধুনিক শিক্ষাদান পদ্ধতি হিসেবে খ্যাত আমেরিকার ক্রেডিট কোর্স সিস্টেম পদ্ধতি চালু রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়েই সর্বপ্রথম ২০০২ সালে স্নাতক পর্যায়ে কৃষি শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি ভাষা চালু করা হয়। হাতে-কলমে শিক্ষাদানের জন্য এখানে রয়েছে ৩২টি গবেষণাগার। রয়েছে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম সংবলিত একটি সুবৃহৎ কেন্দ্রীয় গবেষণাগার। অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষার মানেরও উন্নয়ন ঘটেছে৷ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়ন করতে কোর্স কারিকুলাম কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে। চালু হয়েছে আউটকাম বেজড কারিকুলাম। একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম শতভাগ ডিজিটালের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সহশিক্ষা কার্যক্রম: একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমগুলোতে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বার্ষিক ক্রিড়া এবং আন্তঅনুষদীয় টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়। সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য রয়েছে কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং ব্যান্ড দল। বিশ্ববিদ্যালয় সকল খবরাখবর তুলে ধরা এবং সাংবাদিকতা চর্চার জন্য রয়েছে একটি নিবন্ধিত সাংবাদিক সমিতি। রয়েছে প্রায় অর্ধ শতাধিক সমাজিক সংগঠন যা সেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত বলেন, ‘ গ্র্যাজুয়েটরা যেন সফল উদ্যোক্তা এবং একজন সফল গবেষক হতে পারে, সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে এবং স্মার্ট শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসাবে আউটকাম বেজড কারিকুলাম চালু করেছি। শিক্ষার্থীদের একজন দক্ষ গ্র্যাজুয়েট এবং অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তুলতে আমার সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে। তিনি আরও বলেন, গবেষণার কার্যক্রম আরও ত্বরান্বিত করতে খুব শীঘ্রই গবেষণা নীতিমালা তৈরি করা হবে।’

ইবিহো/এসএস

গৌরব-ঐতিহ্যের ২৪ বছরে পবিপ্রবি

আশিকুর রহমান
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রকৃতির মনোলোভা সৌন্দর্যমণ্ডিত পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) নিজস্ব ঐতিহ্য ও স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ২৪ বছরে পদার্পণ করল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অবদানের জন্য আজ দেশ-বিদেশে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নিয়ে ‘শিক্ষা-শিক্ষাঙ্গন’-এর পবিপ্রবি প্রতিনিধি আশিকুর রহমান বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় হলো যেভাবে: একসময় পুরো বরিশাল বিভাগে ছিল না কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। সাগর-নদীঘেরা এবং অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এই বিপুল জনপদের উচ্চশিক্ষা অর্জন একরকম অসাধ্য ছিল। ৯০-এর দশকে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর প্রাণের দাবি হয়ে ওঠে পটুয়াখালী কৃষি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার। এই লক্ষ্যে স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন পরিষদ। পরিষদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৮ সালের ১৫ মার্চ সরকার পটুয়াখালী কৃষি কলেজকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীতকরণের ঘোষণা প্রদান করেন এবং ২০০০ সালের আজকের এই দিনে (৮ জুলাই) পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ২০০১ সালের ১২ জুলাই জাতীয় সংসদে পবিপ্রবি আইন পাস হয় এবং ২০০২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ‘পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ বাস্তব রূপ লাভ করে।

ক্যাম্পাস পরিচিতি: মূল ক্যাম্পাস ৭৭ একর ও বহিক্যাম্পাস (বাবুগঞ্জ, বরিশাল) ১২.৯৭ একরসহ মোট ৮৯.৯৭ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই দৃষ্টিনন্দন বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিশাল মনোরম ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসের উত্তর-পশ্চিমাংশে অত্যাধুনিক ছাত্র-ছাত্রী হল। এর পাশেই রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ এবং মসজিদের পাশে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র বা হেলথ কেয়ার সেন্টার। এর উল্টো দিকে রয়েছে গ্রন্থাগার ভবন আর ক্যাম্পাসের পশ্চিম অংশ জুড়ে রয়েছে বিস্তৃত খেলার মাঠ। রয়েছে লালকমল, নীলকমল, তরঙ্গতনু নামে বেশ কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন পুকুর। মূল ক্যাম্পাসের পূর্বদিকে পীরতলা বাজার পেরুলেই ৩৭ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত কৃষি গবেষণা খামার ও ছাত্র হল।

নীল কমল সেতু।

বর্তমান অবস্থা: বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পাবার পর এ পর্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে এ বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। বর্তমানে ৮টি অনুষদে ৪ হাজার ১৪৬ জন ছাত্রছাত্রী ২৫৩ জন শিক্ষক, ১৮৩ জন কর্মকর্তা ও ৫২২ জন কর্মচারী রয়েছে। কেবলমাত্র কৃষি অনুষদ নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে দেশ ও জাতির সময়োপযোগী চাহিদা পূরণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮টি অনুষদের অধীনে ৯টি ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের অন্যতম আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। মূল ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের জন্য ৫টি হল রয়েছে। বরিশালের বাবুগঞ্জের বহিস্থ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে আরো ২টি হল। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ ডিজিটাল লাইব্রেরি। লাইব্রেরি ভবনে ৫৫ হাজারেরও বেশি বিভিন্ন ধরনের বই, ইন্টারনেট ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক ভলিউম ও সাময়িকী রয়েছে। রয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাতায়াতের জন্য রয়েছে বাস, মিনিবাস ও মাইক্রোবাস এবং অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ডিজিটাল পরিচয়পত্র (ইলেকট্রনিক চিপ) করা হয়েছে। চলমান রয়েছে অটোমেশন প্রক্রিয়ার।

অবকাঠামো উন্নয়ন: অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলমান৷ এর মধ্যে ১০ তলা বিশিষ্ট শেখ হাসিনা হল এবং শেখ রাসেল হল, ১০ তলা ও ৬ তলাবিশিষ্ট দুটি একাডেমি ভবন, মুক্তমঞ্চ, মিনি স্টেডিয়াম, আধুনিক ব্যায়ামাগার, সবুজ বেষ্টনীবিশিষ্ট প্রাচীর নির্মাণসহ নানাবিধ অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলমান রয়েছে।

জয়বাংলা চত্বর।

গবেষণা কার্যক্রম: পবিপ্রবিতে বেশ কয়েকটি উন্নত ও উচ্চফলনশীল ফলের জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। যেগুলোর মধ্যে পিএসটিইউ বিলাতী গাব-১, পিএসটিইউ বিলাতী গাব-২, পিএসটিইউ ডেউয়া-১, পিএসটিইউ ডেউয়া-২, পিএসটিইউ বাতাবি লেবু-১, পিএসটিইউ কামরাঙ্গা-১, পিএসটিইউ কামরাঙ্গা-২, পিএসটিইউ তেঁতুল-১, পিএসটিইউ বৈচী-১ অন্যতম। এছাড়াও, উদ্ভিদ ও প্রাণী নিয়ে প্রায় দেড় শতাধিক গবেষণা চলমান। সমুদ্র সম্পদের যথাযথ ব্যবহার ও গবেষণার জন্য কাজ চলছে কুয়াকাটায় মেরিন ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউট স্থাপনের। কৃষিকে সমৃদ্ধ করতে প্রতিনিয়ত চলছে নানা ধরনের গবেষণা কার্যক্রম। এছাড়াও প্রোগাম বেজড গবেষণা কার্যক্রম এগিয়ে চলছে।

শিক্ষার মান: অত্যাধুনিক শিক্ষাদান পদ্ধতি হিসেবে খ্যাত আমেরিকার ক্রেডিট কোর্স সিস্টেম পদ্ধতি চালু রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়েই সর্বপ্রথম ২০০২ সালে স্নাতক পর্যায়ে কৃষি শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি ভাষা চালু করা হয়। হাতে-কলমে শিক্ষাদানের জন্য এখানে রয়েছে ৩২টি গবেষণাগার। রয়েছে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম সংবলিত একটি সুবৃহৎ কেন্দ্রীয় গবেষণাগার। অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষার মানেরও উন্নয়ন ঘটেছে৷ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়ন করতে কোর্স কারিকুলাম কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে। চালু হয়েছে আউটকাম বেজড কারিকুলাম। একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম শতভাগ ডিজিটালের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সহশিক্ষা কার্যক্রম: একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমগুলোতে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বার্ষিক ক্রিড়া এবং আন্তঅনুষদীয় টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়। সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য রয়েছে কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং ব্যান্ড দল। বিশ্ববিদ্যালয় সকল খবরাখবর তুলে ধরা এবং সাংবাদিকতা চর্চার জন্য রয়েছে একটি নিবন্ধিত সাংবাদিক সমিতি। রয়েছে প্রায় অর্ধ শতাধিক সমাজিক সংগঠন যা সেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত বলেন, ‘ গ্র্যাজুয়েটরা যেন সফল উদ্যোক্তা এবং একজন সফল গবেষক হতে পারে, সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে এবং স্মার্ট শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসাবে আউটকাম বেজড কারিকুলাম চালু করেছি। শিক্ষার্থীদের একজন দক্ষ গ্র্যাজুয়েট এবং অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তুলতে আমার সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে। তিনি আরও বলেন, গবেষণার কার্যক্রম আরও ত্বরান্বিত করতে খুব শীঘ্রই গবেষণা নীতিমালা তৈরি করা হবে।’

ইবিহো/এসএস