চট্টগ্রামে বন্ধ হয়ে গেল পথশিশুদের নৈতিক স্কুল

রেলের সেই জমি এখন বেদখল হওয়ার আশঙ্কা

এম এ কাউসার, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে বন্ধ হয়ে গেছে সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের ‘নৈতিক স্কুল’। ২০১৫ সালে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছিল এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ড. গাজী সালেহ উদ্দিন নিজ হাতে গড়ে তুলেছিলেন এটি। নিজের মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকা দিয়ে স্কুলটি পরিচালনা করতেন তিনি। গত বছরের আগস্ট মাসে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। এর এক বছর যেতেই মানবিক এই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেলওয়ের কাছ থেকে জমিটি লিজ না পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি আর পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। গাজী সালেহ উদ্দিনের পরিবার সেপ্টেম্বরে আবেদনের মাধ্যমে জমিটি রেলকে বুঝিয়ে দিয়েছে। এরপর থেকেই একটি চক্র ওই জায়গা দখলের পাঁয়তারা শুরু করেছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে যে কোনো সময় রেলের জমিটি বেদখল হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, ১৪ আগস্ট গাজী সালেহ উদ্দিনের বড় ছেলে সালেহীন তানভীর গাজী এক চিঠির মাধ্যমে রেলের কাছে স্কুলের জমিটি বুঝিয়ে দেয়। এর মাধ্যমে ইতি টানা হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, খুলশী বিজিএমইএ ভবনের সামনের এই জমিটির বাজার মূল্য অত্যধিক। আশপাশের অনেক প্রভাবশালীর নজর এই জমির ওপর রয়েছে। তাই রেলওয়ে যাতে জমিটি তাদের নিজ দখলে রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে সে বিষয়ে অনুরোধ করা হয়।

জানা যায়, ২০১৪ সালে স্কুল পরিচালনার জন্য রেলওয়ের জমিটি লিজ পেতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সমাজতত্ত্ব বিভাগের সাবেক ডিন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. গাজী সালেহ উদ্দিন। লিজ পেলে স্কুলের একটি অংশে ব্যক্তিগতভাবে মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্য ছিল তার। এরপর থেকে বছরের পর বছর রেলওয়েসহ বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়েও মেলেনি সেই লিজ অনুমতি। নৈতিক স্কুলে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের খরচ বহন করা হতো শহীদ আলী করিম ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে। গাজী সালেহ উদ্দিনের বাবার নামে করা এই ফাউন্ডেশনে নিজের মুক্তিযোদ্ধা ভাতাই ছিল অন্যতম আর্থিক খাত। গত বছরের ৬ আগস্ট করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এরপর থেকেই নৈতিক স্কুলের বাতি নিভতে শুরু করে।

বুধবার সরেজমিন নগরীর খুলশী থানার রেলওয়ে ডিজেল কলোনিসংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে নৈতিক স্কুল। সীমানা দেওয়াল অরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় পাশের আলোড়ন নার্সারি দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করা যায়। ইতোমধ্যে স্কুলের অবকাঠামো ভেঙে ফেলা হয়েছে। তবে দেওয়ালগুলোতে এখনো রয়েছে শিক্ষামূলক বিভিন্ন উক্তি ও কবিতার ছড়া। স্থানীয়রা জানান, সীমানা অরক্ষিত হওয়ায় সন্ধ্যার পর এখানে বখাটেদের আড্ডা বসে। যে কোনো সময় জায়গাটি বেদখল হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। গাজী সালাহ উদ্দীনের ভাই গাজী তাহের উদ্দীন নকি বলেন, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা প্রদান, সংস্কৃতিচর্চা ও নৈতিক মূল্যবোধ শেখানোর জন্য ‘নৈতিক স্কুল’ নামে একটি অনানুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন আমার ভাই। তিনি মুক্তিযোদ্ধার ভাতা হিসাবে যে টাকা পেতেন তার পুরোটাই খরচ করতেন সেখানে। বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এলাকার অবহেলিত পথশিশু, দিনমজুর, মানুষের ঘরের আয়া-বুয়ার সন্তানদের পাঠদান করা হতো। সর্বশেষ স্কুলে ৭৫ জন শিক্ষার্থী ছিল। গাজী সালেহ উদ্দিনের বড় ছেলে ও জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজী যুগান্তরকে বলেন, ২০০৬ সালের নীতিমালা অনুযায়ী সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য আমার বাবা ২০১৪ সালে রেলের জায়গা লিজ পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ রেলওয়ে ভূসম্পত্তি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২০ প্রণীত হওয়ায় কোনো শিক্ষা/ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ প্রদান না করার বিধান হয়। হালনাগাদ নীতিমালা অনুযায়ী ইজিপি টেন্ডারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতাকে লিজ প্রদানের বিধান হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হই। আমার বাবা বেঁচে থাকতেই বলে গিয়েছিলেন, লিজ না পেলে যেন রেলওয়ের কাছে জমিটি বুঝিয়ে দিই।

চট্টগ্রামে বন্ধ হয়ে গেল পথশিশুদের নৈতিক স্কুল

রেলের সেই জমি এখন বেদখল হওয়ার আশঙ্কা

এম এ কাউসার, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে বন্ধ হয়ে গেছে সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের ‘নৈতিক স্কুল’। ২০১৫ সালে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছিল এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ড. গাজী সালেহ উদ্দিন নিজ হাতে গড়ে তুলেছিলেন এটি। নিজের মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকা দিয়ে স্কুলটি পরিচালনা করতেন তিনি। গত বছরের আগস্ট মাসে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। এর এক বছর যেতেই মানবিক এই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেলওয়ের কাছ থেকে জমিটি লিজ না পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি আর পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। গাজী সালেহ উদ্দিনের পরিবার সেপ্টেম্বরে আবেদনের মাধ্যমে জমিটি রেলকে বুঝিয়ে দিয়েছে। এরপর থেকেই একটি চক্র ওই জায়গা দখলের পাঁয়তারা শুরু করেছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে যে কোনো সময় রেলের জমিটি বেদখল হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, ১৪ আগস্ট গাজী সালেহ উদ্দিনের বড় ছেলে সালেহীন তানভীর গাজী এক চিঠির মাধ্যমে রেলের কাছে স্কুলের জমিটি বুঝিয়ে দেয়। এর মাধ্যমে ইতি টানা হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, খুলশী বিজিএমইএ ভবনের সামনের এই জমিটির বাজার মূল্য অত্যধিক। আশপাশের অনেক প্রভাবশালীর নজর এই জমির ওপর রয়েছে। তাই রেলওয়ে যাতে জমিটি তাদের নিজ দখলে রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে সে বিষয়ে অনুরোধ করা হয়।

জানা যায়, ২০১৪ সালে স্কুল পরিচালনার জন্য রেলওয়ের জমিটি লিজ পেতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সমাজতত্ত্ব বিভাগের সাবেক ডিন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. গাজী সালেহ উদ্দিন। লিজ পেলে স্কুলের একটি অংশে ব্যক্তিগতভাবে মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্য ছিল তার। এরপর থেকে বছরের পর বছর রেলওয়েসহ বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়েও মেলেনি সেই লিজ অনুমতি। নৈতিক স্কুলে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের খরচ বহন করা হতো শহীদ আলী করিম ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে। গাজী সালেহ উদ্দিনের বাবার নামে করা এই ফাউন্ডেশনে নিজের মুক্তিযোদ্ধা ভাতাই ছিল অন্যতম আর্থিক খাত। গত বছরের ৬ আগস্ট করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এরপর থেকেই নৈতিক স্কুলের বাতি নিভতে শুরু করে।

বুধবার সরেজমিন নগরীর খুলশী থানার রেলওয়ে ডিজেল কলোনিসংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে নৈতিক স্কুল। সীমানা দেওয়াল অরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় পাশের আলোড়ন নার্সারি দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করা যায়। ইতোমধ্যে স্কুলের অবকাঠামো ভেঙে ফেলা হয়েছে। তবে দেওয়ালগুলোতে এখনো রয়েছে শিক্ষামূলক বিভিন্ন উক্তি ও কবিতার ছড়া। স্থানীয়রা জানান, সীমানা অরক্ষিত হওয়ায় সন্ধ্যার পর এখানে বখাটেদের আড্ডা বসে। যে কোনো সময় জায়গাটি বেদখল হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। গাজী সালাহ উদ্দীনের ভাই গাজী তাহের উদ্দীন নকি বলেন, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা প্রদান, সংস্কৃতিচর্চা ও নৈতিক মূল্যবোধ শেখানোর জন্য ‘নৈতিক স্কুল’ নামে একটি অনানুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন আমার ভাই। তিনি মুক্তিযোদ্ধার ভাতা হিসাবে যে টাকা পেতেন তার পুরোটাই খরচ করতেন সেখানে। বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এলাকার অবহেলিত পথশিশু, দিনমজুর, মানুষের ঘরের আয়া-বুয়ার সন্তানদের পাঠদান করা হতো। সর্বশেষ স্কুলে ৭৫ জন শিক্ষার্থী ছিল। গাজী সালেহ উদ্দিনের বড় ছেলে ও জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজী যুগান্তরকে বলেন, ২০০৬ সালের নীতিমালা অনুযায়ী সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য আমার বাবা ২০১৪ সালে রেলের জায়গা লিজ পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ রেলওয়ে ভূসম্পত্তি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২০ প্রণীত হওয়ায় কোনো শিক্ষা/ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ প্রদান না করার বিধান হয়। হালনাগাদ নীতিমালা অনুযায়ী ইজিপি টেন্ডারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতাকে লিজ প্রদানের বিধান হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হই। আমার বাবা বেঁচে থাকতেই বলে গিয়েছিলেন, লিজ না পেলে যেন রেলওয়ের কাছে জমিটি বুঝিয়ে দিই।