চাকরির জন্য ব্যাকরণের প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে

তারিক মনজুর
ব্যাকরণের প্রশ্নের উত্তর ভালো করার জন্য নিয়ম বোঝা ও অনুশীলনের ওপর জোর দিতে হবেছবি: আশরাফুল আলম

চাকরির পরীক্ষায় ব্যাকরণ থেকে প্রশ্ন হয় সবচেয়ে বেশি। এ ধরনের প্রশ্নে নম্বরও ভালো পাওয়া যায়। বিভিন্ন বাছাই পরীক্ষায় এমসিকিউ বা বহুনির্বাচনী প্রশ্ন দেখা যায়। আজ এসব প্রশ্নের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে, তা নিয়ে আলোচনা করা হলো।

নতুন ব্যাকরণ, না পুরোনো ব্যাকরণ

ব্যাকরণের প্রস্তুতির জন্য অধিকাংশ চাকরিপ্রার্থী সাধারণভাবে নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড বই অনুসরণ করে থাকেন। কিন্তু ২০২১ সাল থেকে শিক্ষা বোর্ড নবম-দশম শ্রেণির জন্য নতুন ব্যাকরণ বই প্রণয়ন করেছে। এরপর থেকে এই দ্বিধা তৈরি হয়েছে: কোন বই অনুসরণ করতে হবে। নতুন ব্যাকরণ, না পুরোনো ব্যাকরণ? উত্তর হলো নতুন ব্যাকরণ অনুসরণ করতে হবে।

ধারাবাহিকভাবে প্রস্তুতি

নতুন ব্যাকরণ বইয়ে মোটামুটি ৪০টি পরিচ্ছেদ আছে। এগুলো প্রস্তুতির জন্য অন্তত ২০ দিন সময় হাতে রাখতে হবে। অর্থাৎ দিনে দুটি করে পরিচ্ছেদ পড়তে পারলে ২০ দিনে পুরো বই শেষ করা সম্ভব। তবে আরও ভালো হয়, যদি দিনে একটি করে পরিচ্ছেদ পড়া যায়। সে ক্ষেত্রে পুরো ব্যাকরণ শেষ করতে ৪০ দিন সময় লাগবে। ধারাবাহিকভাবে প্রথম পরিচ্ছেদ থেকে পড়া শুরু করতে হবে।

খাতায় অনুশীলন করা

ব্যাকরণের জন্য একটি আলাদা খাতা বানাতে হবে। বই থেকে পড়ার সময়ে প্রয়োজনীয় অংশ খাতায় লিখে অনুশীলন করতে হবে। সম্ভব হলে বইয়ের উদাহরণের বাইরে নিজের মতো করে নতুন উদাহরণ বানানোর চেষ্টা করতে হবে। এ জন্য বইয়ের আলোচনা থেকে বিষয়টি আগে ভালো করে বুঝে নিতে হবে।

ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয়

ব্যাকরণের প্রধান ভাগ চারটি: ধ্বনিতত্ত্ব, রূপতত্ত্ব, বাক্যতত্ত্ব ও অর্থতত্ত্ব। বাগযন্ত্র, স্বরধ্বনি, ব্যঞ্জনধ্বনি, অক্ষর বা ধ্বনি দল ইত্যাদি ধ্বনি-সম্পর্কিত বিষয়গুলো ধ্বনিতত্ত্বে আলোচনা করা হয়। বিশেষ্য, সর্বনাম, বিশেষণ, ক্রিয়া, ক্রিয়াবিশেষণ, অনুসর্গ, যোজক ও আবেগ শব্দের এ আট শ্রেণি রূপতত্ত্বে আলোচনা করা হয়। এমনকি শব্দ গঠন ও শব্দ-সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়, যেমন শব্দদ্বিত্ব, নরবাচক ও নারীবাচক শব্দ, সংখ্যাবাচক শব্দ, নির্দেশক, বচন ইত্যাদি বিষয়ও রূপতত্ত্বে আলোচনা করা হয়। আর বাক্যতত্ত্বে আলোচনা করা হয় বাক্যের বিষয়সমূহ, যেমন বাক্যের প্রকারভেদ, বাক্য রূপান্তর, বাচ্য, উক্তি ইত্যাদি। অর্থতত্ত্বের আলোচ্য বিষয় বিপরীত শব্দ, প্রতিশব্দ, শব্দজোড়, বাগধারা ইত্যাদি। ধ্বনি, শব্দ, বাক্য ও অর্থ ভাষার এ চার উপাদানের ওপর ভিত্তি করে ব্যাকরণের চারটি ভাগ করা হয়েছে। ফলে কোনটা কোথায় আলোচনা করা হয়, এ ধরনের প্রশ্নের জন্য খেয়াল করুন বিষয়টি কী সম্পর্কিত।

দ্বিধার জায়গাগুলো

পুরোনো ব্যাকরণের সঙ্গে নতুন ব্যাকরণের মিল নেই অনেক জায়গায়। যেমন পুরোনো ব্যাকরণে পদ ছিল পাঁচ প্রকার, নতুন ব্যাকরণে পদকে আটটি শ্রেণিতে ভাগ করে আলোচনা করা হয়েছে। পুরোনো ব্যাকরণে উপসর্গকে বাংলা, সংস্কৃত, বিদেশি তিনটি ভাগে দেখানো হয়েছিল; নতুন ব্যাকরণে উপসর্গের এ ধরনের বিভাজন নেই। প্রত্যয়ের ক্ষেত্রেও এ রকম বাংলা, সংস্কৃত ও বিদেশি তিনটি ভাগ নেই। অব্যয়ীভাব সমাস নতুন ব্যাকরণে বাদ দেওয়া হয়েছে। উপকূল, প্রতিদিন এ ধরনের শব্দের উপ, প্রতি ইত্যাদি হলো উপসর্গ। শব্দের আগে বসে এরা শব্দ গঠন করে।

সংস্কৃত ব্যাকরণে উপসর্গ বসে ধাতুর আগে; আর শব্দের আগে উপসর্গ বসলে সেগুলো অব্যয়ীভাব সমাসের মধ্যে পড়ে। অন্যদিকে বাংলা ভাষায় উপসর্গ বসে শব্দের আগে, তাই আলাদা করে এখানে অব্যয়ীভাব সমাস আলোচনা করার প্রয়োজন নেই। তা ছাড়া নতুন ব্যাকরণে দ্বিগু সমাসকে কর্মধারয় সমাসের একটি প্রকার হিসেবে দেখানো হয়েছে। কারকের ক্ষেত্রে সম্প্রদান কারকের প্রয়োজন নেই। সম্প্রদান কারক কর্মকারক দিয়েই ব্যাখ্যা করা যায়। আর সম্বন্ধ পদকে নতুন ব্যাকরণে সম্বন্ধ কারক হিসেবে দেখানো হয়েছে। প্রথমা, দ্বিতীয়, তৃতীয়া ইত্যাদি সাত রকম বিভক্তির বদলে এখন তিন রকম বিভক্তি দেখানো হয়েছে: -এ বিভক্তি, -কে বিভক্তি, -র বিভক্তি। তা ছাড়া বাক্যের মধ্যে বর্গ নামে নতুন আলোচনা যুক্ত হয়েছে।

মুখস্থ নয়, নিয়ম বোঝা

ব্যাকরণ হলো ভাষার সূত্র। ব্যাকরণের নিয়ম বুঝতে পারলে এখান থেকে যেকোনো উত্তর পারা যায়। তাই নিয়ম বুঝতে হবে আগে। যেমন, কখন উপমান কর্মধারয় হয়, কখন উপমিত কর্মধারয় হয়, আর কখন রূপক কর্মধারয় হয়, তা শুধু নিয়ম বুঝেই নির্ধারণ করা সম্ভব। বইয়ে দেওয়া দু-একটি উদাহরণ মুখস্থ করে মনে করলে হবে না প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আর নিয়ম মনে রাখার জন্য বারবার অনুশীলনের বিকল্প নেই। পরীক্ষায় সাহিত্যের এমসিকিউ প্রশ্নগুলো হয় সাধারণত তথ্যমূলক, ফলে মুখস্থ করতে হয়। কিন্তু ব্যাকরণের প্রশ্নের উত্তর ভালো করার জন্য নিয়ম বোঝা ও অনুশীলনের ওপর জোর দিতে হবে।

বানানের নিয়ম

বানান থেকে ইদানীং বিভিন্ন পরীক্ষায় অনেক প্রশ্ন দেখা যায়। তাই বাংলা একাডেমির বানানের নিয়ম ভালো করে দেখতে হবে। অনলাইনে বাংলা একাডেমির ‘প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম’ বইয়ের পিডিএফ কপি পাওয়া যায়। পরীক্ষার জন্য ণত্ব-ষত্ব বিধানও দেখতে পারেন। তা ছাড়া সন্ধির সূত্র কীভাবে বানানকে প্রভাবিত করে, লক্ষ করুন। যেমন, ব্যতীত/ব্যাতীত কোন বানানটি সঠিক, এটি বোঝার জন্য সূত্র খেয়াল করুন: বি + অতীত = ব্যতীত। যোগচিহ্নের পরে অ থাকলে য-ফলার সাথে ‘অ’ হয়। আবার, বি + আঘাত = ব্যাঘাত।

যোগচিহ্নের পরে আ থাকার কারণে য-ফলার সঙ্গে এখানে ‘আ’ হলো। সন্ধির পরিচ্ছেদে এ রকম কিছু নিয়ম দেখানো আছে। সেগুলো লিখে লিখে অনুশীলন করুন। তা ছাড়া পরীক্ষায় এমন কিছু বানান থাকে, যেগুলো পারা না-পারা আপনার চর্চার ওপর নির্ভর করে। এগুলোর জন্য বাংলা একাডেমির সর্বশেষ অভিধানের (আধুনিক বাংলা অভিধান) পিডিএফ কপি ডাউনলোড করে মুঠোফোনে রাখুন। যখনই বানান নিয়ে সমস্যা তৈরি হবে, অভিধান থেকে মিলিয়ে নেবেন।

পুরোনো প্রশ্ন দেখা

ব্যাকরণ থেকে কী ধরনের প্রশ্ন হয়, তা বোঝার জন্য পুরোনো প্রশ্ন দেখতে পারেন। ব্যাকরণ অনুশীলন শুরু করার আগে কিংবা ব্যাকরণ প্রস্তুতি শেষ করার পরে এসব প্রশ্ন দেখুন। তবে এগুলো ব্যাপকভাবে অনুশীলন করতে যাবেন না। কারণ, ব্যাকরণের অনেক ধারণা পুরোনো ব্যাকরণের সঙ্গে মিলবে না।

মডেল টেস্ট

ব্যাকরণ প্রস্তুতির জন্য মডেল টেস্ট দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে একেকটি অধ্যায় শেষ করার পর ওই অধ্যায়ের শেষে দেওয়া অনুশীলনী করে ফেলতে হবে। অনেকে চাকরির পরীক্ষায় আসা বিভিন্ন প্রশ্ন এলোমেলোভাবে পড়তে থাকে। এটি মোটেও করবেন না, বরং একেকটি পরিচ্ছেদ পড়ার সময়ে ওই পরিচ্ছেদ-সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন পড়তে পারলে ভালো।

মুখস্থের বিষয়

ব্যাকরণ বইয়ের কিছু বিষয় মুখস্থ করতে হয়। যেমন প্রতিশব্দ, বাগধারা, শব্দজোড়, ইংরেজি প্রবাদের বাংলা ইত্যাদি। এগুলো পড়ারও ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম আছে। প্রতিশব্দ বা সমার্থক শব্দ পড়ার সময়ে খেয়াল করুন কোন শব্দগুলো কঠিন কিংবা আপনার জানা নেই। সেগুলো প্রথমে বই থেকে দাগিয়ে নিন। এরপর দাগানো শব্দগুলো খাতায় লিখুন। বাগধারার প্রস্তুতির জন্য বাগধারাটির অর্থ বুঝে নিন। তারপর সেই অনুযায়ী বাক্য বানানোর চেষ্টা করুন। এভাবে সহজেই বাগধারার অর্থ মনে থাকবে।

শব্দজোড় বলতে বোঝায় এমন একজোড়া শব্দ যেগুলো উচ্চারণে একই রকম, কিন্তু অর্থ আলাদা। যেমন, ‘অন্ন’ মানে ভাত, ‘অন্য’ মানে অপর। এগুলো পড়ার সময়ে প্রতিজোড়া শব্দের জন্য একটি করে বাক্য বানান। বাক্যটি এমন হবে, যাতে ওই একটি বাক্যেই জোড়ার দুটি শব্দই থাকে। উদাহরণ: ‘আমি অন্যের অন্ন খাই না।’ আর ইংরেজি প্রবাদ বাংলায় পড়ার সময়ে প্রবাদটির অন্তর্নিহিত ভাবটি বোঝার চেষ্টা করুন। বাংলা বা ইংরেজি কোনো প্রবাদই সরাসরি অর্থ প্রকাশ করে না।

রিভিশন দেওয়া

একবার পুরো বই শেষ করার পরে ব্যাকরণ রিভিশন দেওয়ার প্রয়োজন হয়। সে ক্ষেত্রে আগের মতো ধারাবাহিকভাবে পড়ার দরকার নেই। বরং যে বিষয়গুলো আপনার কাছে বেশি কঠিন লাগে, কিংবা যেসব বিষয় থেকে বেশি প্রশ্ন হয়, সেগুলো আগে পড়ুন।

  • তারিক মনজুর
    শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

চাকরির জন্য ব্যাকরণের প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে

তারিক মনজুর
ব্যাকরণের প্রশ্নের উত্তর ভালো করার জন্য নিয়ম বোঝা ও অনুশীলনের ওপর জোর দিতে হবেছবি: আশরাফুল আলম

চাকরির পরীক্ষায় ব্যাকরণ থেকে প্রশ্ন হয় সবচেয়ে বেশি। এ ধরনের প্রশ্নে নম্বরও ভালো পাওয়া যায়। বিভিন্ন বাছাই পরীক্ষায় এমসিকিউ বা বহুনির্বাচনী প্রশ্ন দেখা যায়। আজ এসব প্রশ্নের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে, তা নিয়ে আলোচনা করা হলো।

নতুন ব্যাকরণ, না পুরোনো ব্যাকরণ

ব্যাকরণের প্রস্তুতির জন্য অধিকাংশ চাকরিপ্রার্থী সাধারণভাবে নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড বই অনুসরণ করে থাকেন। কিন্তু ২০২১ সাল থেকে শিক্ষা বোর্ড নবম-দশম শ্রেণির জন্য নতুন ব্যাকরণ বই প্রণয়ন করেছে। এরপর থেকে এই দ্বিধা তৈরি হয়েছে: কোন বই অনুসরণ করতে হবে। নতুন ব্যাকরণ, না পুরোনো ব্যাকরণ? উত্তর হলো নতুন ব্যাকরণ অনুসরণ করতে হবে।

ধারাবাহিকভাবে প্রস্তুতি

নতুন ব্যাকরণ বইয়ে মোটামুটি ৪০টি পরিচ্ছেদ আছে। এগুলো প্রস্তুতির জন্য অন্তত ২০ দিন সময় হাতে রাখতে হবে। অর্থাৎ দিনে দুটি করে পরিচ্ছেদ পড়তে পারলে ২০ দিনে পুরো বই শেষ করা সম্ভব। তবে আরও ভালো হয়, যদি দিনে একটি করে পরিচ্ছেদ পড়া যায়। সে ক্ষেত্রে পুরো ব্যাকরণ শেষ করতে ৪০ দিন সময় লাগবে। ধারাবাহিকভাবে প্রথম পরিচ্ছেদ থেকে পড়া শুরু করতে হবে।

খাতায় অনুশীলন করা

ব্যাকরণের জন্য একটি আলাদা খাতা বানাতে হবে। বই থেকে পড়ার সময়ে প্রয়োজনীয় অংশ খাতায় লিখে অনুশীলন করতে হবে। সম্ভব হলে বইয়ের উদাহরণের বাইরে নিজের মতো করে নতুন উদাহরণ বানানোর চেষ্টা করতে হবে। এ জন্য বইয়ের আলোচনা থেকে বিষয়টি আগে ভালো করে বুঝে নিতে হবে।

ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয়

ব্যাকরণের প্রধান ভাগ চারটি: ধ্বনিতত্ত্ব, রূপতত্ত্ব, বাক্যতত্ত্ব ও অর্থতত্ত্ব। বাগযন্ত্র, স্বরধ্বনি, ব্যঞ্জনধ্বনি, অক্ষর বা ধ্বনি দল ইত্যাদি ধ্বনি-সম্পর্কিত বিষয়গুলো ধ্বনিতত্ত্বে আলোচনা করা হয়। বিশেষ্য, সর্বনাম, বিশেষণ, ক্রিয়া, ক্রিয়াবিশেষণ, অনুসর্গ, যোজক ও আবেগ শব্দের এ আট শ্রেণি রূপতত্ত্বে আলোচনা করা হয়। এমনকি শব্দ গঠন ও শব্দ-সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়, যেমন শব্দদ্বিত্ব, নরবাচক ও নারীবাচক শব্দ, সংখ্যাবাচক শব্দ, নির্দেশক, বচন ইত্যাদি বিষয়ও রূপতত্ত্বে আলোচনা করা হয়। আর বাক্যতত্ত্বে আলোচনা করা হয় বাক্যের বিষয়সমূহ, যেমন বাক্যের প্রকারভেদ, বাক্য রূপান্তর, বাচ্য, উক্তি ইত্যাদি। অর্থতত্ত্বের আলোচ্য বিষয় বিপরীত শব্দ, প্রতিশব্দ, শব্দজোড়, বাগধারা ইত্যাদি। ধ্বনি, শব্দ, বাক্য ও অর্থ ভাষার এ চার উপাদানের ওপর ভিত্তি করে ব্যাকরণের চারটি ভাগ করা হয়েছে। ফলে কোনটা কোথায় আলোচনা করা হয়, এ ধরনের প্রশ্নের জন্য খেয়াল করুন বিষয়টি কী সম্পর্কিত।

দ্বিধার জায়গাগুলো

পুরোনো ব্যাকরণের সঙ্গে নতুন ব্যাকরণের মিল নেই অনেক জায়গায়। যেমন পুরোনো ব্যাকরণে পদ ছিল পাঁচ প্রকার, নতুন ব্যাকরণে পদকে আটটি শ্রেণিতে ভাগ করে আলোচনা করা হয়েছে। পুরোনো ব্যাকরণে উপসর্গকে বাংলা, সংস্কৃত, বিদেশি তিনটি ভাগে দেখানো হয়েছিল; নতুন ব্যাকরণে উপসর্গের এ ধরনের বিভাজন নেই। প্রত্যয়ের ক্ষেত্রেও এ রকম বাংলা, সংস্কৃত ও বিদেশি তিনটি ভাগ নেই। অব্যয়ীভাব সমাস নতুন ব্যাকরণে বাদ দেওয়া হয়েছে। উপকূল, প্রতিদিন এ ধরনের শব্দের উপ, প্রতি ইত্যাদি হলো উপসর্গ। শব্দের আগে বসে এরা শব্দ গঠন করে।

সংস্কৃত ব্যাকরণে উপসর্গ বসে ধাতুর আগে; আর শব্দের আগে উপসর্গ বসলে সেগুলো অব্যয়ীভাব সমাসের মধ্যে পড়ে। অন্যদিকে বাংলা ভাষায় উপসর্গ বসে শব্দের আগে, তাই আলাদা করে এখানে অব্যয়ীভাব সমাস আলোচনা করার প্রয়োজন নেই। তা ছাড়া নতুন ব্যাকরণে দ্বিগু সমাসকে কর্মধারয় সমাসের একটি প্রকার হিসেবে দেখানো হয়েছে। কারকের ক্ষেত্রে সম্প্রদান কারকের প্রয়োজন নেই। সম্প্রদান কারক কর্মকারক দিয়েই ব্যাখ্যা করা যায়। আর সম্বন্ধ পদকে নতুন ব্যাকরণে সম্বন্ধ কারক হিসেবে দেখানো হয়েছে। প্রথমা, দ্বিতীয়, তৃতীয়া ইত্যাদি সাত রকম বিভক্তির বদলে এখন তিন রকম বিভক্তি দেখানো হয়েছে: -এ বিভক্তি, -কে বিভক্তি, -র বিভক্তি। তা ছাড়া বাক্যের মধ্যে বর্গ নামে নতুন আলোচনা যুক্ত হয়েছে।

মুখস্থ নয়, নিয়ম বোঝা

ব্যাকরণ হলো ভাষার সূত্র। ব্যাকরণের নিয়ম বুঝতে পারলে এখান থেকে যেকোনো উত্তর পারা যায়। তাই নিয়ম বুঝতে হবে আগে। যেমন, কখন উপমান কর্মধারয় হয়, কখন উপমিত কর্মধারয় হয়, আর কখন রূপক কর্মধারয় হয়, তা শুধু নিয়ম বুঝেই নির্ধারণ করা সম্ভব। বইয়ে দেওয়া দু-একটি উদাহরণ মুখস্থ করে মনে করলে হবে না প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আর নিয়ম মনে রাখার জন্য বারবার অনুশীলনের বিকল্প নেই। পরীক্ষায় সাহিত্যের এমসিকিউ প্রশ্নগুলো হয় সাধারণত তথ্যমূলক, ফলে মুখস্থ করতে হয়। কিন্তু ব্যাকরণের প্রশ্নের উত্তর ভালো করার জন্য নিয়ম বোঝা ও অনুশীলনের ওপর জোর দিতে হবে।

বানানের নিয়ম

বানান থেকে ইদানীং বিভিন্ন পরীক্ষায় অনেক প্রশ্ন দেখা যায়। তাই বাংলা একাডেমির বানানের নিয়ম ভালো করে দেখতে হবে। অনলাইনে বাংলা একাডেমির ‘প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম’ বইয়ের পিডিএফ কপি পাওয়া যায়। পরীক্ষার জন্য ণত্ব-ষত্ব বিধানও দেখতে পারেন। তা ছাড়া সন্ধির সূত্র কীভাবে বানানকে প্রভাবিত করে, লক্ষ করুন। যেমন, ব্যতীত/ব্যাতীত কোন বানানটি সঠিক, এটি বোঝার জন্য সূত্র খেয়াল করুন: বি + অতীত = ব্যতীত। যোগচিহ্নের পরে অ থাকলে য-ফলার সাথে ‘অ’ হয়। আবার, বি + আঘাত = ব্যাঘাত।

যোগচিহ্নের পরে আ থাকার কারণে য-ফলার সঙ্গে এখানে ‘আ’ হলো। সন্ধির পরিচ্ছেদে এ রকম কিছু নিয়ম দেখানো আছে। সেগুলো লিখে লিখে অনুশীলন করুন। তা ছাড়া পরীক্ষায় এমন কিছু বানান থাকে, যেগুলো পারা না-পারা আপনার চর্চার ওপর নির্ভর করে। এগুলোর জন্য বাংলা একাডেমির সর্বশেষ অভিধানের (আধুনিক বাংলা অভিধান) পিডিএফ কপি ডাউনলোড করে মুঠোফোনে রাখুন। যখনই বানান নিয়ে সমস্যা তৈরি হবে, অভিধান থেকে মিলিয়ে নেবেন।

পুরোনো প্রশ্ন দেখা

ব্যাকরণ থেকে কী ধরনের প্রশ্ন হয়, তা বোঝার জন্য পুরোনো প্রশ্ন দেখতে পারেন। ব্যাকরণ অনুশীলন শুরু করার আগে কিংবা ব্যাকরণ প্রস্তুতি শেষ করার পরে এসব প্রশ্ন দেখুন। তবে এগুলো ব্যাপকভাবে অনুশীলন করতে যাবেন না। কারণ, ব্যাকরণের অনেক ধারণা পুরোনো ব্যাকরণের সঙ্গে মিলবে না।

মডেল টেস্ট

ব্যাকরণ প্রস্তুতির জন্য মডেল টেস্ট দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে একেকটি অধ্যায় শেষ করার পর ওই অধ্যায়ের শেষে দেওয়া অনুশীলনী করে ফেলতে হবে। অনেকে চাকরির পরীক্ষায় আসা বিভিন্ন প্রশ্ন এলোমেলোভাবে পড়তে থাকে। এটি মোটেও করবেন না, বরং একেকটি পরিচ্ছেদ পড়ার সময়ে ওই পরিচ্ছেদ-সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন পড়তে পারলে ভালো।

মুখস্থের বিষয়

ব্যাকরণ বইয়ের কিছু বিষয় মুখস্থ করতে হয়। যেমন প্রতিশব্দ, বাগধারা, শব্দজোড়, ইংরেজি প্রবাদের বাংলা ইত্যাদি। এগুলো পড়ারও ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম আছে। প্রতিশব্দ বা সমার্থক শব্দ পড়ার সময়ে খেয়াল করুন কোন শব্দগুলো কঠিন কিংবা আপনার জানা নেই। সেগুলো প্রথমে বই থেকে দাগিয়ে নিন। এরপর দাগানো শব্দগুলো খাতায় লিখুন। বাগধারার প্রস্তুতির জন্য বাগধারাটির অর্থ বুঝে নিন। তারপর সেই অনুযায়ী বাক্য বানানোর চেষ্টা করুন। এভাবে সহজেই বাগধারার অর্থ মনে থাকবে।

শব্দজোড় বলতে বোঝায় এমন একজোড়া শব্দ যেগুলো উচ্চারণে একই রকম, কিন্তু অর্থ আলাদা। যেমন, ‘অন্ন’ মানে ভাত, ‘অন্য’ মানে অপর। এগুলো পড়ার সময়ে প্রতিজোড়া শব্দের জন্য একটি করে বাক্য বানান। বাক্যটি এমন হবে, যাতে ওই একটি বাক্যেই জোড়ার দুটি শব্দই থাকে। উদাহরণ: ‘আমি অন্যের অন্ন খাই না।’ আর ইংরেজি প্রবাদ বাংলায় পড়ার সময়ে প্রবাদটির অন্তর্নিহিত ভাবটি বোঝার চেষ্টা করুন। বাংলা বা ইংরেজি কোনো প্রবাদই সরাসরি অর্থ প্রকাশ করে না।

রিভিশন দেওয়া

একবার পুরো বই শেষ করার পরে ব্যাকরণ রিভিশন দেওয়ার প্রয়োজন হয়। সে ক্ষেত্রে আগের মতো ধারাবাহিকভাবে পড়ার দরকার নেই। বরং যে বিষয়গুলো আপনার কাছে বেশি কঠিন লাগে, কিংবা যেসব বিষয় থেকে বেশি প্রশ্ন হয়, সেগুলো আগে পড়ুন।

  • তারিক মনজুর
    শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।