চাকরির পেছনের গল্প: দেশ সেবায় নিয়োজিত থাকাই লক্ষ্য

৪০তম বিসিএসে অংশ নিয়ে পুলিশ ক্যাডার পেয়েছেন মো. আবদুল আজিজ। তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অষ্টম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বর্তমানে তিনি ঢাকায় ‘পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে’ সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত। তাঁর এই সাফল্যের পেছনের কথা নিয়ে লিখেছেন মোহাম্মদ শেখ রাজীব।
মো. আবদুল আজিজ

মো. আবদুল আজিজ

মো. আবদুল আজিজের জন্ম চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায়। শৈশব কেটেছে সবুজ-শ্যামল ঘেরা গ্রামের মেঠোপথে। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। বাবা মো. আবদুল হক প্রবাসে থাকাকালে পরিবারের দায়িত্ব পড়ে মায়ের ওপর। তবু তার আদর, যত্ন, স্নেহ-মমতার কোনো কমতি ছিল না। আবদুল আজিজ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি শেষে ভর্তি হন চট্টগ্রামের বিএফ শাহীন কলেজে। সেখান থেকে নিজেকে গড়ে তোলার ব্যাপারে মনোযোগী হন। নিজেকে জানা ও অভিজ্ঞতা বাড়াতে যুক্ত হন রোভার স্কাউটসহ বিভিন্ন সৃজনশীল সংগঠনের সঙ্গে।

পুলিশ ক্যাডার হওয়ার অনুভূতি
ক্যাডার পছন্দে বিসিএস পুলিশ ছিল প্রথম পছন্দ। ছোটবেলা থেকে ঝোঁক ছিল পুলিশ ইউনিফর্ম গায়ে আমি দেশের সেবা করব। বর্তমানে মানুষের সেবায় পুলিশের অবদান অনেক। বিপদে পড়ে যেকোনো সহায়তার জন্য সাধারণ মানুষ পুলিশের কাছে এসে সহায়তা পাচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী। এ ছাড়া ক্ষমতার সুষ্ঠু প্রয়োগ আর জনগণের জন্য কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া পুলিশ যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে, যা প্রশংসনীয়। নিজের
পছন্দ অনুযায়ী চাকরি পেয়ে আমি সত্যিই আনন্দিত। এবার দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করাই আমার লক্ষ্য।

পড়াশোনা যেভাবে কাজে লাগিয়েছি 
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ডিবেটিং সোসাইটিতে যুক্ত হই। এখান থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি, যা ব্যক্তিজীবনে সব সময় কাজে লাগবে। এ ছাড়া একাডেমিক পরীক্ষা অনার্স-মাস্টার্সে যথাক্রমে সিজিপিএ ৩.৬০ ও সিজিপিএ ৩.৬৫ পেয়েছি। নিজের প্রস্তুতিতে কাউকে আদর্শ হিসেবে ভাবতাম না। সব সময় চিন্তা করতাম আমার স্বপ্নপূরণে অবশ্যই সময়কে কাজে লাগাতে হবে এবং প্রচুর বই পড়তে হবে। তাই একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরির পরীক্ষার অল্প অল্প প্রস্তুতি একসময় আমাকে খুব আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। বিসিএসের প্রস্তুতি নিয়েছি চতুর্থ বর্ষে। প্রথম বিসিএসে প্রিলিমিনারিতে টিকে যাওয়ার পরে এমবিএ প্রথম সেমিস্টার ফাইনাল দিয়ে লিখিত পরীক্ষা হয়। একই সঙ্গে সেমিস্টার ফাইনালের পড়া পড়েছি, আবার বিসিএসের পড়াও পড়েছি।

যাদের স্বপ্ন বিসিএস
বর্তমানে সবচেয়ে বেশি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা বিসিএস। পড়ালেখার বিষয় যা-ই হোক না কেন, ক্যারিয়ার গড়তে বিসিএস বা সরকারি চাকরিকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন বর্তমান প্রজন্মের বেশির ভাগ চাকরিপ্রার্থী। তরুণ প্রজন্মের কাছে বিসিএস সোশ্যাল স্ট্যাটাসকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা। প্রত্যেক গ্র্যাজুয়েট বিসিএস ক্যাডার হতে চায়, তবে এর জন্য সবচেয়ে প্রয়োজন পূর্ণাঙ্গ ও সাজানো প্রস্তুতি। নিজের দুর্বলতা খুঁজে বের করে নিজেকে তৈরি করতে হবে। সব বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে। প্রতিযোগী বেশি হওয়ায় সব বিষয়ে পারদর্শী হওয়ার বিকল্প কিছু নেই। নতুনদের বলব, রুটিন করে সাজানো ও পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নিতে পারলে চাকরির বাজারে অনেকটা এগিয়ে থাকবেন।

সবার বিসিএসমুখী হওয়ার কারণ 
সম্মান-মর্যাদা-ক্ষমতা সবই বিসিএস ক্যাডারে। তা ছাড়া সরকারি চাকরিতে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা, যেমন অবসরকালীন ভাতা বা পেনশন, রেশন, বাসস্থান সুবিধা থাকায় তরুণদের আগ্রহ বেড়েছে। বেসরকারি চাকরিতে সুযোগ-সুবিধা কম থাকায় বিসিএসের প্রতি সবার ঝোঁক বেড়েছে; বিশেষ করে বেসরকারি খাতে রয়েছে চাকরির অনিশ্চয়তা, কিন্তু সরকারি চাকরিতে রয়েছে নিশ্চয়তা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অধিকাংশ চাকরিপ্রার্থী সরকারি চাকরিকেই সবচেয়ে বেশি নিরাপদ মনে করে। তবে বর্তমানে বেশির ভাগ তরুণ ব্যাংককেন্দ্রিক ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবছে। প্রাইভেট সেক্টর আবার জেগে উঠলে সবার ক্ষেত্রে বিসিএস ক্রেজিনেস থাকবে না। সত্যি বলতে, আমাদের যেকোনো কিছুতে ক্রেজিনেস থাকাটা দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। ক্ষমতা আর স্ট্যাটাসকেন্দ্রিক বাড়তি উদ্দীপনা তৈরি এ কারণেই হচ্ছে।

মো. আবদুল আজিজ, সহকারী পুলিশ সুপার, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স (৪০তম বিসিএস)।

চাকরির পেছনের গল্প: দেশ সেবায় নিয়োজিত থাকাই লক্ষ্য

৪০তম বিসিএসে অংশ নিয়ে পুলিশ ক্যাডার পেয়েছেন মো. আবদুল আজিজ। তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অষ্টম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বর্তমানে তিনি ঢাকায় ‘পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে’ সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত। তাঁর এই সাফল্যের পেছনের কথা নিয়ে লিখেছেন মোহাম্মদ শেখ রাজীব।
মো. আবদুল আজিজ

মো. আবদুল আজিজ

মো. আবদুল আজিজের জন্ম চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায়। শৈশব কেটেছে সবুজ-শ্যামল ঘেরা গ্রামের মেঠোপথে। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। বাবা মো. আবদুল হক প্রবাসে থাকাকালে পরিবারের দায়িত্ব পড়ে মায়ের ওপর। তবু তার আদর, যত্ন, স্নেহ-মমতার কোনো কমতি ছিল না। আবদুল আজিজ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি শেষে ভর্তি হন চট্টগ্রামের বিএফ শাহীন কলেজে। সেখান থেকে নিজেকে গড়ে তোলার ব্যাপারে মনোযোগী হন। নিজেকে জানা ও অভিজ্ঞতা বাড়াতে যুক্ত হন রোভার স্কাউটসহ বিভিন্ন সৃজনশীল সংগঠনের সঙ্গে।

পুলিশ ক্যাডার হওয়ার অনুভূতি
ক্যাডার পছন্দে বিসিএস পুলিশ ছিল প্রথম পছন্দ। ছোটবেলা থেকে ঝোঁক ছিল পুলিশ ইউনিফর্ম গায়ে আমি দেশের সেবা করব। বর্তমানে মানুষের সেবায় পুলিশের অবদান অনেক। বিপদে পড়ে যেকোনো সহায়তার জন্য সাধারণ মানুষ পুলিশের কাছে এসে সহায়তা পাচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী। এ ছাড়া ক্ষমতার সুষ্ঠু প্রয়োগ আর জনগণের জন্য কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া পুলিশ যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে, যা প্রশংসনীয়। নিজের
পছন্দ অনুযায়ী চাকরি পেয়ে আমি সত্যিই আনন্দিত। এবার দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করাই আমার লক্ষ্য।

পড়াশোনা যেভাবে কাজে লাগিয়েছি 
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ডিবেটিং সোসাইটিতে যুক্ত হই। এখান থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি, যা ব্যক্তিজীবনে সব সময় কাজে লাগবে। এ ছাড়া একাডেমিক পরীক্ষা অনার্স-মাস্টার্সে যথাক্রমে সিজিপিএ ৩.৬০ ও সিজিপিএ ৩.৬৫ পেয়েছি। নিজের প্রস্তুতিতে কাউকে আদর্শ হিসেবে ভাবতাম না। সব সময় চিন্তা করতাম আমার স্বপ্নপূরণে অবশ্যই সময়কে কাজে লাগাতে হবে এবং প্রচুর বই পড়তে হবে। তাই একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরির পরীক্ষার অল্প অল্প প্রস্তুতি একসময় আমাকে খুব আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। বিসিএসের প্রস্তুতি নিয়েছি চতুর্থ বর্ষে। প্রথম বিসিএসে প্রিলিমিনারিতে টিকে যাওয়ার পরে এমবিএ প্রথম সেমিস্টার ফাইনাল দিয়ে লিখিত পরীক্ষা হয়। একই সঙ্গে সেমিস্টার ফাইনালের পড়া পড়েছি, আবার বিসিএসের পড়াও পড়েছি।

যাদের স্বপ্ন বিসিএস
বর্তমানে সবচেয়ে বেশি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা বিসিএস। পড়ালেখার বিষয় যা-ই হোক না কেন, ক্যারিয়ার গড়তে বিসিএস বা সরকারি চাকরিকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন বর্তমান প্রজন্মের বেশির ভাগ চাকরিপ্রার্থী। তরুণ প্রজন্মের কাছে বিসিএস সোশ্যাল স্ট্যাটাসকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা। প্রত্যেক গ্র্যাজুয়েট বিসিএস ক্যাডার হতে চায়, তবে এর জন্য সবচেয়ে প্রয়োজন পূর্ণাঙ্গ ও সাজানো প্রস্তুতি। নিজের দুর্বলতা খুঁজে বের করে নিজেকে তৈরি করতে হবে। সব বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে। প্রতিযোগী বেশি হওয়ায় সব বিষয়ে পারদর্শী হওয়ার বিকল্প কিছু নেই। নতুনদের বলব, রুটিন করে সাজানো ও পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নিতে পারলে চাকরির বাজারে অনেকটা এগিয়ে থাকবেন।

সবার বিসিএসমুখী হওয়ার কারণ 
সম্মান-মর্যাদা-ক্ষমতা সবই বিসিএস ক্যাডারে। তা ছাড়া সরকারি চাকরিতে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা, যেমন অবসরকালীন ভাতা বা পেনশন, রেশন, বাসস্থান সুবিধা থাকায় তরুণদের আগ্রহ বেড়েছে। বেসরকারি চাকরিতে সুযোগ-সুবিধা কম থাকায় বিসিএসের প্রতি সবার ঝোঁক বেড়েছে; বিশেষ করে বেসরকারি খাতে রয়েছে চাকরির অনিশ্চয়তা, কিন্তু সরকারি চাকরিতে রয়েছে নিশ্চয়তা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অধিকাংশ চাকরিপ্রার্থী সরকারি চাকরিকেই সবচেয়ে বেশি নিরাপদ মনে করে। তবে বর্তমানে বেশির ভাগ তরুণ ব্যাংককেন্দ্রিক ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবছে। প্রাইভেট সেক্টর আবার জেগে উঠলে সবার ক্ষেত্রে বিসিএস ক্রেজিনেস থাকবে না। সত্যি বলতে, আমাদের যেকোনো কিছুতে ক্রেজিনেস থাকাটা দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। ক্ষমতা আর স্ট্যাটাসকেন্দ্রিক বাড়তি উদ্দীপনা তৈরি এ কারণেই হচ্ছে।

মো. আবদুল আজিজ, সহকারী পুলিশ সুপার, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স (৪০তম বিসিএস)।