জলজের জন্য এক ফাগুন

মো. আকিমুন হাসান রাফি, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক অংকুর চোধুরীও (ডানে) যুক্ত আছেন ফাগুনের গবেষণা কাজে।ছবি : কালবেলা

বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকদের হাত ধরে তার গবেষণার কার্যক্রমের যাত্রা শুরু। ক্রমে আকৃষ্ট হতে থাকেন গবেষণা। পড়তে শুরু করেন দেশ-বিদেশের জার্নাল।২০১৯ সালে প্রথম তার গবেষণাপত্র প্রকাশ হয়। বিষয়বস্তু ছিল জেলেদের আর্থসামাজিক অবস্থার পর্যালোচনা। এরপরই জলজসম্পদ উন্নয়ন বিভাগে স্নাতকোত্তরে অধ্যয়ন শুরু ইফতেখার আহমেদ ফাগুনের।ইতোমধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে তার ১০টি গবেষণা প্রবন্ধ এবং নিজের লেখা দুটি নিবন্ধ একটি গবেষণা বইয়ের দুটি অধ্যায় হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন সম্মেলনে উপস্থাপিত হয়েছে তার ১১টি প্রবন্ধ।

কী কী বিষয় নিয়ে গবেষণা চলছে? জানতে চাইলে একাধারে ফাগুন জানালেন অনেক বিষয়ের নাম—জেলেদের আর্থসামাজিক অবস্থা, দেশের বিভিন্ন জলাশয়ের জলজ জীববৈচিত্র্য, মৎস্য খাতভিত্তিক পর্যটনের সম্ভাবনা, ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীদের জীবিকা, উপকূলীয় অঞ্চলে জেলে সম্প্রদায়ের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, মৎস্য খাতের উন্নয়নে ও সম্প্রসারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সম্ভাবনা যাচাই, অ্যাকুয়ারিয়াম ও রঙিন মাছের বাজার বিশ্লেষণ, হাওর অঞ্চলে ইলিশের মাইগ্রেশন ইত্যাদি।

কানাডাভিত্তিক গবেষণা নেটওয়ার্ক ‘টু বিগ টু ইগনোর’ থেকে প্রকাশিত বইয়ে তার লেখা দুটি অধ্যায় ছাপানো হয়েছে। ওই দুটি অধ্যায়ে ফাগুন লিখেছেন, বাংলাদেশের মাদার ফিশারিজখ্যাত টাঙ্গুয়ার হাওরের মৎস্য খাতের ব্যবস্থাপনার জটিলতা সম্পর্কিত পর্যালোচনা এবং কুয়াকাটায় মৎস্যজীবীদের জীবিকা নিয়ে।মূলত স্যাটেলাইটের ছবি ও স্থানীয়দের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে গবেষণা করেন ফাগুন।

আগে বাংলাদেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট বা মিঠাপানির জলাবন হিসেবে সিলেটের রাতারগুল পরিচিত থাকলেও অনুসন্ধানের পর হবিগঞ্জের বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় লক্ষ্মীবাঁওড় নামের আরেকটি জলাবন খুঁজে পান ফাগুন। স্নাতকোত্তরের অভিসন্দর্ভের বিষয় বেছে নেন লক্ষ্মীবাঁওড়কে। এখানে তিনি বৃক্ষের ঘনত্ব কমে যাওয়া পর্যালোচনা করেন। স্যাটেলাইটের ছবি এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মত পর্যালোচনা করে দেখেন, এলাকায় প্রভাবশালীদের মদদেই প্রচুর বৃক্ষ নিধন হচ্ছে।

ওই অঞ্চলে আরও কিছু ছোটখাটো জলাবনের খোঁজ পান ফাগুন। এখন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ড ও ড. আহমেদ হারুন আর রশীদের তত্ত্বাবধানে এবং খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই প্রভাষক অংকুর চৌধুরী ও দেবাশীষ পণ্ডিতের সঙ্গে সিলেটের মায়াবন-জলাবন এলাকায় নতুন গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত নানা গবেষণাপত্রে তার গবেষণাগুলো সাতবার উদ্ধৃত হয়েছে। সম্প্রতি সিলেটে আয়োজিত টেকসই মৎস্য খাতবিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা সম্মেলনে পেয়েছেন সেরা গবেষণাপত্র উপস্থাপকের পুরস্কার।

ফাগুন বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী রিমোট সেন্সিং এবং জিওলজিকাল ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে মৎস্য ও জলজসম্পদ নিয়ে গবেষণা ব্যাপকভাবে হচ্ছে। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে অতীতে জলাভূমি, জলাশয়, জলাবন কিংবা নদনদীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা যায়। আগামীতে কী হতে যাচ্ছে তাও অনুমাণ করা যায়।’

এ প্রসঙ্গে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞানের জলজসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমেদ হারুন আর রশীদ বলেন, ‘রিমোট সেন্সিং ব্যবহার করে বাংলাদেশে কৃষি ও মৎস্য খাতে ব্যাপক উন্নয়নের সুযোগ আছে। কোন অঞ্চলের নাব্য কমেছে, কোথায় ড্রেজিং দরকার, কোন অঞ্চলে আরও মৎস্য চারণ ও সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে, কোন অঞ্চলে কতটা ফলন হতে পারে, ফসলের স্বাস্থ্য নির্ণয়—এসব করা যায় এ প্রযুক্তিতে।’

স্নাতকোত্তর শেষ করে ভূতাত্ত্বিক তথ্য-উপাত্ত (জিআইএস) বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে বাংলাদেশের মৎস্য ও জলজসম্পদ উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চান ইফতেখার আহমেদ ফাগুন।

জলজের জন্য এক ফাগুন

মো. আকিমুন হাসান রাফি, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক অংকুর চোধুরীও (ডানে) যুক্ত আছেন ফাগুনের গবেষণা কাজে।ছবি : কালবেলা

বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকদের হাত ধরে তার গবেষণার কার্যক্রমের যাত্রা শুরু। ক্রমে আকৃষ্ট হতে থাকেন গবেষণা। পড়তে শুরু করেন দেশ-বিদেশের জার্নাল।২০১৯ সালে প্রথম তার গবেষণাপত্র প্রকাশ হয়। বিষয়বস্তু ছিল জেলেদের আর্থসামাজিক অবস্থার পর্যালোচনা। এরপরই জলজসম্পদ উন্নয়ন বিভাগে স্নাতকোত্তরে অধ্যয়ন শুরু ইফতেখার আহমেদ ফাগুনের।ইতোমধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে তার ১০টি গবেষণা প্রবন্ধ এবং নিজের লেখা দুটি নিবন্ধ একটি গবেষণা বইয়ের দুটি অধ্যায় হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন সম্মেলনে উপস্থাপিত হয়েছে তার ১১টি প্রবন্ধ।

কী কী বিষয় নিয়ে গবেষণা চলছে? জানতে চাইলে একাধারে ফাগুন জানালেন অনেক বিষয়ের নাম—জেলেদের আর্থসামাজিক অবস্থা, দেশের বিভিন্ন জলাশয়ের জলজ জীববৈচিত্র্য, মৎস্য খাতভিত্তিক পর্যটনের সম্ভাবনা, ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীদের জীবিকা, উপকূলীয় অঞ্চলে জেলে সম্প্রদায়ের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, মৎস্য খাতের উন্নয়নে ও সম্প্রসারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সম্ভাবনা যাচাই, অ্যাকুয়ারিয়াম ও রঙিন মাছের বাজার বিশ্লেষণ, হাওর অঞ্চলে ইলিশের মাইগ্রেশন ইত্যাদি।

কানাডাভিত্তিক গবেষণা নেটওয়ার্ক ‘টু বিগ টু ইগনোর’ থেকে প্রকাশিত বইয়ে তার লেখা দুটি অধ্যায় ছাপানো হয়েছে। ওই দুটি অধ্যায়ে ফাগুন লিখেছেন, বাংলাদেশের মাদার ফিশারিজখ্যাত টাঙ্গুয়ার হাওরের মৎস্য খাতের ব্যবস্থাপনার জটিলতা সম্পর্কিত পর্যালোচনা এবং কুয়াকাটায় মৎস্যজীবীদের জীবিকা নিয়ে।মূলত স্যাটেলাইটের ছবি ও স্থানীয়দের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে গবেষণা করেন ফাগুন।

আগে বাংলাদেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট বা মিঠাপানির জলাবন হিসেবে সিলেটের রাতারগুল পরিচিত থাকলেও অনুসন্ধানের পর হবিগঞ্জের বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় লক্ষ্মীবাঁওড় নামের আরেকটি জলাবন খুঁজে পান ফাগুন। স্নাতকোত্তরের অভিসন্দর্ভের বিষয় বেছে নেন লক্ষ্মীবাঁওড়কে। এখানে তিনি বৃক্ষের ঘনত্ব কমে যাওয়া পর্যালোচনা করেন। স্যাটেলাইটের ছবি এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মত পর্যালোচনা করে দেখেন, এলাকায় প্রভাবশালীদের মদদেই প্রচুর বৃক্ষ নিধন হচ্ছে।

ওই অঞ্চলে আরও কিছু ছোটখাটো জলাবনের খোঁজ পান ফাগুন। এখন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ড ও ড. আহমেদ হারুন আর রশীদের তত্ত্বাবধানে এবং খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই প্রভাষক অংকুর চৌধুরী ও দেবাশীষ পণ্ডিতের সঙ্গে সিলেটের মায়াবন-জলাবন এলাকায় নতুন গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত নানা গবেষণাপত্রে তার গবেষণাগুলো সাতবার উদ্ধৃত হয়েছে। সম্প্রতি সিলেটে আয়োজিত টেকসই মৎস্য খাতবিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা সম্মেলনে পেয়েছেন সেরা গবেষণাপত্র উপস্থাপকের পুরস্কার।

ফাগুন বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী রিমোট সেন্সিং এবং জিওলজিকাল ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে মৎস্য ও জলজসম্পদ নিয়ে গবেষণা ব্যাপকভাবে হচ্ছে। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে অতীতে জলাভূমি, জলাশয়, জলাবন কিংবা নদনদীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা যায়। আগামীতে কী হতে যাচ্ছে তাও অনুমাণ করা যায়।’

এ প্রসঙ্গে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞানের জলজসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমেদ হারুন আর রশীদ বলেন, ‘রিমোট সেন্সিং ব্যবহার করে বাংলাদেশে কৃষি ও মৎস্য খাতে ব্যাপক উন্নয়নের সুযোগ আছে। কোন অঞ্চলের নাব্য কমেছে, কোথায় ড্রেজিং দরকার, কোন অঞ্চলে আরও মৎস্য চারণ ও সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে, কোন অঞ্চলে কতটা ফলন হতে পারে, ফসলের স্বাস্থ্য নির্ণয়—এসব করা যায় এ প্রযুক্তিতে।’

স্নাতকোত্তর শেষ করে ভূতাত্ত্বিক তথ্য-উপাত্ত (জিআইএস) বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে বাংলাদেশের মৎস্য ও জলজসম্পদ উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চান ইফতেখার আহমেদ ফাগুন।