জাপানে উচ্চশিক্ষা: নিখরচায় পড়ার সুযোগ

সাদিয়া আফরিন হীরা

প্রতীকী ছবি

জাপান প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের দিক থেকে বিশ্বে অনেক এগিয়ে। তাদের আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা ও বিচিত্র সংস্কৃতিধারা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আকর্ষণের বড় কারণ। পাশাপাশি নিখরচায় পড়াশোনার সুযোগ। এসব নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন টোকিও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ডিজিটাল বিজনেস অ্যান্ড ইনোভেশন বিষয়ের শিক্ষার্থী ফয়সাল ইরফান।

অনেক আগে থেকেই বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার ইচ্ছা ছিল। যেহেতু প্রযুক্তি নিয়ে আগ্রহ, তাই উচ্চশিক্ষার গন্তব্য হিসেবে জাপান প্রথম পছন্দ। কেননা প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের জন্য জাপান অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তাই টোকিও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ডিজিটাল বিজনেস অ্যান্ড ইনোভেশন বিষয়ে আবেদন করা। আবেদনের সঙ্গে টিউশন রিডাকশন স্কলারশিপের জন্যও আবেদন করি। এর আওতায় প্রতি সেমিস্টারে আর কোনো টিউশন ফি দেওয়া লাগবে না।

টিউশন রিডাকশন স্কলারশিপ
টোকিও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টিউশন ফির জন্য প্রতিবছর ৯ লাখ ইয়েন গুনতে হবে। চার বছরে যা প্রায় ৫৬ লাখ ৫০ হাজার ইয়েন। টিউশন রিডাকশন স্কলারশিপের মাধ্যমে সম্পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ করতে পারবেন। তবে এর আওতায় মাসিক ভাতা, ডরমিটরি, মেডিকেল ইনস্যুরেন্সসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে না। এই স্কলারশিপ ধরে রাখার জন্য প্রতি সেমিস্টারে একটি নির্দিষ্ট সিজিপিএ (৩.০) মেইনটেইন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার সময়ই আপনি স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ ছাড়া জাপানে শিক্ষার্থীদের জন্য পার্টটাইম জবের সুযোগ আছে। প্যাকেজিং জব, ফুড ডেলিভারি, ডিপার্টমেন্ট স্টোর, বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় কাজ করে সহজেই আপনি নিজের বাড়তি খরচ চুকিয়ে নিতে পারবেন।

বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাপ্লিকেশন প্রসেস
বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লিকেশন প্রসেস আসলে অতটা জটিল নয়। টোকিও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে মূলত দুটি ইনটেকে ভর্তি নেওয়া হয়। স্প্রিং; যা শুরু হয় এপ্রিল থেকে এবং ফল; যা শুরু হয় সেপ্টেম্বর থেকে। প্রতিটি ইনটেকের জন্য তিনটি করে অ্যাপ্লিকেশন স্লট আছে। নিজের সুবিধামতো যেকোনো স্লটে আবেদন করতে হবে। সব কাগজপত্র ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে (https://www.tiu.ac.jp/etrack) আপলোড করতে হবে। আবেদনের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন পোর্টালে একটি অ্যাকাউন্ট খুলে করতে হবে। জাপানে সব ইউনিভার্সিটিতে আবেদনের জন্য একটি নির্দিষ্ট অ্যাপ্লিকেশন ফি (পাঁচ হাজার ইয়েন আবেদন শুরুর আগে জমা করতে হবে। আবেদনের পর নির্দিষ্ট তারিখে পোর্টালে রেজাল্ট জানা যাবে।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  • এসএসসি ও এইচএসসির সার্টিফিকেট ও মার্কশিট
  • পাসপোর্টের কপি
  • ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট
  • পাসপোর্ট সাইজ ছবি
  • রিকমেন্ডেশন লেটার
  • স্টেটমেন্ট অব পারপাস
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট
  • স্টেটমেন্ট অব ফাইন্যান্সিয়াল সাপোর্ট
  • স্কলারশিপের জন্য ১০০ শব্দের পারসোনাল স্টেটমেন্ট

ভিসা প্রসেসিং
জাপানের ভিসা প্রসেসিং তুলনামূলক সহজ। ভিসা পাওয়ার জন্য ইমিগ্রেশন ব্যুর‍োতে প্রথমে সার্টিফিকেট অব ইলিজিবিলিটির (সিওই) জন্য আবেদন করতে হয়। আবেদনপত্রের সঙ্গে ব্যাংক স্টেটমেন্ট, স্টেটমেন্ট অব ফাইন্যান্সিয়াল দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ই আপনার হয়ে সিওই-এর আবেদন করবে। এ জন্য সব কাগজপত্র বিশ্ববিদ্যালয়কে ই-মেইল করে রাখতে হবে। আবেদনের দুই মাস পর সিওই দেওয়া হয়। এরপর জাপান দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। ভিসা পেতে ৫-৭ দিন লাগে।

ভাষা
অনেকে মনে করে, জাপানে শুধু জাপানিজ ভাষাতেই পড়াশোনা করতে হয়। এটি সঠিক নয়। এখানকার প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে জাপানিজ ও ইংরেজি—দুই ভাষায় পড়াশোনা করার সুযোগ আছে। টোকিও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ব্যাচেলরে যে তিনটি প্রোগ্রাম রয়েছে, সব কটি ইংরেজিতে পড়া যায়। এ ছাড়া জাপানের সরকারি ও বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজিতে প্রোগ্রাম রয়েছে। তবে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথোপকথন এবং পার্টটাইম জবের সুবিধার জন্য জাপানিজ ভাষা জানা জরুরি। পড়াশোনা শেষে যদি জাপানে স্থায়ীভাবে থাকতে চান, তবে অবশ্যই জাপানিজ ভাষা জানতে হবে। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় অথবা যেকোনো ভাষা ইনস্টিটিউট থেকে জাপানিজ ভাষার ওপর কোর্স করার সুযোগ রয়েছে।

যেভাবে এগিয়ে থাকবেন
একটি স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটিস অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। এই বিভাগ একজন আবেদনকারীকে আরও কয়েক শ আবেদনকারী থেকে আলাদা করে তোলে। এ জন্য আগ্রহের যেকোনো ছোট-বড় কাজই একটি পটেনশিয়াল ইসিএ হতে পারে। অনলাইনে স্টাডি ইন জাপান নিয়ে প্রচুর রিসোর্স রয়েছে, যেগুলোর সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেকে ভালোভাবে প্রস্তুত করতে পারবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে সব গাইডলাইন দেওয়া আছে, যা অবশ্যই ভালোভাবে জানতে হবে। আর আবেদনের জন্য যত কাগজপত্র দরকার, সব যাতে নির্ভুল থাকে এবং তা সময়ের মধ্যে জোগাড় করতে হবে। বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়া অনেক বড় একটি সিদ্ধান্ত এবং প্রক্রিয়াও কিছুটা জটিল। তবে নিজেকে ভালোভাবে প্রস্তুত করা এবং সাবধানতার সঙ্গে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলে খুব দ্রুত এবং সহজেই এসব সেরে উঠতে পারবেন।

অনুলিখন: সাদিয়া আফরিন হীরা

জাপানে উচ্চশিক্ষা: নিখরচায় পড়ার সুযোগ

সাদিয়া আফরিন হীরা

প্রতীকী ছবি

জাপান প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের দিক থেকে বিশ্বে অনেক এগিয়ে। তাদের আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা ও বিচিত্র সংস্কৃতিধারা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আকর্ষণের বড় কারণ। পাশাপাশি নিখরচায় পড়াশোনার সুযোগ। এসব নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন টোকিও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ডিজিটাল বিজনেস অ্যান্ড ইনোভেশন বিষয়ের শিক্ষার্থী ফয়সাল ইরফান।

অনেক আগে থেকেই বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার ইচ্ছা ছিল। যেহেতু প্রযুক্তি নিয়ে আগ্রহ, তাই উচ্চশিক্ষার গন্তব্য হিসেবে জাপান প্রথম পছন্দ। কেননা প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের জন্য জাপান অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তাই টোকিও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ডিজিটাল বিজনেস অ্যান্ড ইনোভেশন বিষয়ে আবেদন করা। আবেদনের সঙ্গে টিউশন রিডাকশন স্কলারশিপের জন্যও আবেদন করি। এর আওতায় প্রতি সেমিস্টারে আর কোনো টিউশন ফি দেওয়া লাগবে না।

টিউশন রিডাকশন স্কলারশিপ
টোকিও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টিউশন ফির জন্য প্রতিবছর ৯ লাখ ইয়েন গুনতে হবে। চার বছরে যা প্রায় ৫৬ লাখ ৫০ হাজার ইয়েন। টিউশন রিডাকশন স্কলারশিপের মাধ্যমে সম্পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ করতে পারবেন। তবে এর আওতায় মাসিক ভাতা, ডরমিটরি, মেডিকেল ইনস্যুরেন্সসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে না। এই স্কলারশিপ ধরে রাখার জন্য প্রতি সেমিস্টারে একটি নির্দিষ্ট সিজিপিএ (৩.০) মেইনটেইন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার সময়ই আপনি স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ ছাড়া জাপানে শিক্ষার্থীদের জন্য পার্টটাইম জবের সুযোগ আছে। প্যাকেজিং জব, ফুড ডেলিভারি, ডিপার্টমেন্ট স্টোর, বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় কাজ করে সহজেই আপনি নিজের বাড়তি খরচ চুকিয়ে নিতে পারবেন।

বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাপ্লিকেশন প্রসেস
বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লিকেশন প্রসেস আসলে অতটা জটিল নয়। টোকিও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে মূলত দুটি ইনটেকে ভর্তি নেওয়া হয়। স্প্রিং; যা শুরু হয় এপ্রিল থেকে এবং ফল; যা শুরু হয় সেপ্টেম্বর থেকে। প্রতিটি ইনটেকের জন্য তিনটি করে অ্যাপ্লিকেশন স্লট আছে। নিজের সুবিধামতো যেকোনো স্লটে আবেদন করতে হবে। সব কাগজপত্র ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে (https://www.tiu.ac.jp/etrack) আপলোড করতে হবে। আবেদনের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন পোর্টালে একটি অ্যাকাউন্ট খুলে করতে হবে। জাপানে সব ইউনিভার্সিটিতে আবেদনের জন্য একটি নির্দিষ্ট অ্যাপ্লিকেশন ফি (পাঁচ হাজার ইয়েন আবেদন শুরুর আগে জমা করতে হবে। আবেদনের পর নির্দিষ্ট তারিখে পোর্টালে রেজাল্ট জানা যাবে।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  • এসএসসি ও এইচএসসির সার্টিফিকেট ও মার্কশিট
  • পাসপোর্টের কপি
  • ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট
  • পাসপোর্ট সাইজ ছবি
  • রিকমেন্ডেশন লেটার
  • স্টেটমেন্ট অব পারপাস
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট
  • স্টেটমেন্ট অব ফাইন্যান্সিয়াল সাপোর্ট
  • স্কলারশিপের জন্য ১০০ শব্দের পারসোনাল স্টেটমেন্ট

ভিসা প্রসেসিং
জাপানের ভিসা প্রসেসিং তুলনামূলক সহজ। ভিসা পাওয়ার জন্য ইমিগ্রেশন ব্যুর‍োতে প্রথমে সার্টিফিকেট অব ইলিজিবিলিটির (সিওই) জন্য আবেদন করতে হয়। আবেদনপত্রের সঙ্গে ব্যাংক স্টেটমেন্ট, স্টেটমেন্ট অব ফাইন্যান্সিয়াল দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ই আপনার হয়ে সিওই-এর আবেদন করবে। এ জন্য সব কাগজপত্র বিশ্ববিদ্যালয়কে ই-মেইল করে রাখতে হবে। আবেদনের দুই মাস পর সিওই দেওয়া হয়। এরপর জাপান দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। ভিসা পেতে ৫-৭ দিন লাগে।

ভাষা
অনেকে মনে করে, জাপানে শুধু জাপানিজ ভাষাতেই পড়াশোনা করতে হয়। এটি সঠিক নয়। এখানকার প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে জাপানিজ ও ইংরেজি—দুই ভাষায় পড়াশোনা করার সুযোগ আছে। টোকিও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ব্যাচেলরে যে তিনটি প্রোগ্রাম রয়েছে, সব কটি ইংরেজিতে পড়া যায়। এ ছাড়া জাপানের সরকারি ও বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজিতে প্রোগ্রাম রয়েছে। তবে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথোপকথন এবং পার্টটাইম জবের সুবিধার জন্য জাপানিজ ভাষা জানা জরুরি। পড়াশোনা শেষে যদি জাপানে স্থায়ীভাবে থাকতে চান, তবে অবশ্যই জাপানিজ ভাষা জানতে হবে। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় অথবা যেকোনো ভাষা ইনস্টিটিউট থেকে জাপানিজ ভাষার ওপর কোর্স করার সুযোগ রয়েছে।

যেভাবে এগিয়ে থাকবেন
একটি স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটিস অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। এই বিভাগ একজন আবেদনকারীকে আরও কয়েক শ আবেদনকারী থেকে আলাদা করে তোলে। এ জন্য আগ্রহের যেকোনো ছোট-বড় কাজই একটি পটেনশিয়াল ইসিএ হতে পারে। অনলাইনে স্টাডি ইন জাপান নিয়ে প্রচুর রিসোর্স রয়েছে, যেগুলোর সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেকে ভালোভাবে প্রস্তুত করতে পারবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে সব গাইডলাইন দেওয়া আছে, যা অবশ্যই ভালোভাবে জানতে হবে। আর আবেদনের জন্য যত কাগজপত্র দরকার, সব যাতে নির্ভুল থাকে এবং তা সময়ের মধ্যে জোগাড় করতে হবে। বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়া অনেক বড় একটি সিদ্ধান্ত এবং প্রক্রিয়াও কিছুটা জটিল। তবে নিজেকে ভালোভাবে প্রস্তুত করা এবং সাবধানতার সঙ্গে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলে খুব দ্রুত এবং সহজেই এসব সেরে উঠতে পারবেন।

অনুলিখন: সাদিয়া আফরিন হীরা